![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১৯৩৭ সাল। একটি জনপদ। প্রচন্ড পানির কষ্ট। তৎকালিন সম্ভ্রান্ত পরিবারগুলি। নগরিতে স্থাপিত হয় ঢোপকল। লাঘব হয় পানির অভাব। রুপান্তরিত হয় শহরে। শহর থেকে নগরে। নগর থেকে শিক্ষানগরীতে। বলছি রাজশাহীর কথা। শুধু আম, লিচু ও মিষ্টান্নসামগ্রীর জন্য প্রসিদ্ধই নয়। শহরটি এখনো রেশম নগরী নামে পরিচিত। যেখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে যাদের অনেকগুলির খ্যাতি দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। নামকরা এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য শহর নামের সাথে জুটেছে শিক্ষানগরীর খেতাবেও। সাথে বোনাস তো আছেই বেশ কিছু বিখ্যাত এবং ঐতিহাসিক মসজিদ, মন্দির ও উপাসনালয়। রাজশাহী, উত্তরবঙ্গের একটি প্রধান বিভাগীয় শহর। যে শহর প্রবাহিত পদ্মার তীরে। রাজশাহী ছিল প্রাচীন বাংলার পুন্ড্র সাম্রাজ্যের অংশ। ঐতিহাসিক সেন বংশের রাজা বিজয় সেনের আমলে রাজধানী ছিল, বর্তমান রাজশাহী শহর থেকে মাত্র ৯ কিমি দূরে। মধ্যযুগে বর্তমান রাজশাহী পরিচিত ছিল রামপুর বোয়ালিয়া নামে। এর সূত্র ধরে এখনও রাজশাহী শহরের একটি থানার নাম ‘বোয়ালিয়া’ । ৯৭ বর্গকিলোমিটার আয়তন নিয়ে গড়ে ওঠেছে শান্তির এক নগরী রাজশাহী। রাজশাহী বিভাগের মাঝে রয়েছে ৮ টি জেলা। সপ্তদশ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকেই এ শহরের নাম লোকমুখে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। রেশম ছিল এর মূল কারণ। রেশম উৎপাদন, ভারতের সাথে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা ও পদ্মা নদীর তীরবর্তী হওয়ায় যাতায়াতের সুবিধার কারণে ইংরেজ বণিকদের কাছে শহরটি ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে। এজন্যই এই শান্তির নগরীকে ‘সিল্ক সিটি’ অর্থাৎ ‘রেশম নগরী’ বলা হয়। ফলে ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে দেশের ইতিহাসে রাজশাহী গুরত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।
যখন থকে রাজশাহীতে উন্নয়নের ছোয়া লাগে : রাজশাহী শহরকে কেন্দ্র করে ১৭৭২ সালে জেলা গঠন করা হয়। ১৮৭৬ সালে গঠিত হয় রাজশাহী পৌরসভা। পরবর্তীতে ১৯৯১ সালে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনে রূপান্তরিত হয়। ব্রিটিশ রাজত্বের সময়েও রাজশাহী পরিচিত ছিল ‘বোয়ালিয়া’ নামে। তখন এটি ছিল তৎকালীন পূর্ববঙ্গ ও আসাম অঞ্চলের অর্ন্তগত রাজশাহী জেলার প্রশাসনিক কেন্দ্র। রাজশাহীকে সে সময়ে রেশম চাষের প্রধান কেন্দ্র হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছিল। তখন রাজশাহীতে একটি সরকারী কলেজ ও রেশম শিল্পের জন্য একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়। সেসময় থেকে দেশ ভাগের আগ পর্যন্ত পদ্মা নদীর উপর দিয়ে প্রতিদিন যাত্রীবাহী স্টিমার চলাচল করত। ১২ জুন ১৮৯৭ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে রাজশাহী শহরের বেশীরভাগ ভবন ক্ষতিগ্রস্থ হয়। পরবর্তীতে অনেক ভবন আবার নতুন করে স্থাপিত হয়।
রাজশাহী শহরটি দীর্ঘদিন ধরে পুরনো সংস্কৃতি বজায় রেখে এক প্রকার অপরিবর্তিত অবস্থায় ছিলো। কিন্তু প্রাচীন এই শহরটি আধুনিকতার পরশে নতুন রুপে সজ্জিত হয় ২০০৯ সালের পর থেকে ।
বরেন্দ্র গবেষণা যাদুঘর :
বাংলাদেশের প্রাচীনতম জাদুঘর হচ্ছে রাজশাহীর বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর। ১৯১৩ সালের ১৩ নভেম্বর বাংলার তৎকালীন গভর্নর লর্ড কারমাইকেল এটি উদ্বোধন করেন। বাঙালি ইতিহাস, ঐতিহ্য আর স্থাপত্যশিল্পের বিশাল সম্ভার রয়েছে এই বরেন্দ্র যাদুঘরে। এই জাদুঘর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রাচীন ইতিহাস, সংস্কৃতি আর প্রত্নতত্ব নিয়ে গবেষণার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রহশালা।
মহারানীর ঢোপকল যাচ্ছে জাদুঘরে
পুঠিয়ার মহারানী হেমন্ত কুমারীর আর্থিক সহায়তায় ১৯৩৭ সালে বসানো হয়েছিল ঢোপকল। তখন এই ঢোপকলের মাধ্যমেই রাজশাহী মহানগরীর মোড়ে মোড়ে পৌছে যেত বিশুদ্ধ পানি। কিন্তু আধুনিক যুগের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টিকে থাকতে পারেনি প্রাচীন ঐতিহ্যের ঢোপকলগুলো। রাস্তা সম্প্রসারণসহ নানা কারণে প্রতিনিয়ত ভাঙা পড়ছে ঢোপকল। ফলে ঐতিহ্য হারাচ্ছে রাজশাহী। স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখতে এখন জাদুঘরে স্থান মিলেছে মহারানীর ঢোপকলের।
ঢোপের ইতিহাস
এই ঢোপকল তৈরীর সময়ে রাজশাহী পৌরসভার (বর্তমানে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন) দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ছিলেন রায় ডি এন দাশগুপ্ত। সে সময় রাজশাহী শহরে পানযোগ্য পানির খুব কষ্ট ছিল। বিশুদ্ধ পানির খুবই অভাব ঘটেছিল তখন। যার ফলশ্রুতিতে ছড়িয়ে পড়েছিল কলেরা-আমাশয় সহ নানারকম পেটের পীড়া। বেশ কিছু লোকের মৃত্যুও ঘটেছিল সেই সময় এই অসুখের জন্য। রায় ডিএন দাশগুপ্ত রাজশাহী পৌরসভার চেয়ারম্যান (১৯৩৪-৩৯) থাকাকালে রাজশাহী অ্যাসোসিয়েশনের সহযোগিতায় নগরবাসীকে সুপেয় পানি সরবরাহের উদ্যোগ নেন। সিদ্ধান্ত নেয়া হয় রাস্তার মোড়ে মোড়ে পানির কল স্থাপন করা হবে। ১৯৩৭ সালের আগাষ্ট মাসের কোন একটি দিনে মিনিষ্ট্রি অব ক্যালকাটার অধীনে রাজশাহী ওয়াটার ওয়াকর্স নামে পানি সরবরাহ ও বিশুদ্ধকরণ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। ব্যায় করা হয় প্রায় আড়াই লক্ষাধিক টাকা। এই কাজে নগরীর নামকরা ধণী লোকেদের এগিয়ে আসার জন্য অনুরোধ করা হয়। সেই সূত্র ধরেই মহারাণী হেমন্তকুমারী নিজেই দান করেন প্রায় ৬৫ হাজার টাকা। বিশাল অঙ্কের একক অনুদানের কারণে রাজশাহী জেলা বোর্ডের দান করা জমিতে মহারানী হেমন্ত কুমারীর নামেই ওয়াটার ওয়ার্কস স্থাপিত হয়। কালক্রমে তার নামেই (হেমন্তকুমারী) ঢোপকল নামে পরিচিত হতে থাকে।
২৫ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১০:১৭
বনী জয়সোয়াল পান্ডে বলেছেন: ধন্যবাদ @আহলান
২| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ৮:৩১
আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: শেষ ছবিটিতে যে অনুরাগ কমিউনিটি সেন্টারের নাম দেখা যাচ্ছে, তার একটু আগে (দক্ষিনে) মালোপাড়ায় আমার পৈতৃক বাড়ি। আমার নিজেরও বাড়ি আছে শাহ মখদুম থানার কাছে। রাজশাহী নিয়ে লেখার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ বনী জয়সোয়াল পাণ্ডে।
২৫ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১০:১৮
বনী জয়সোয়াল পান্ডে বলেছেন: আমারও পৈতৃক বাড়ি রাজশাহী। তাই রাজশাহীর প্রতি আলাদা টান রয়েছে। এই শহর আমার প্রাণের।
©somewhere in net ltd.
১|
২৩ শে আগস্ট, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪৯
আহলান বলেছেন: চমৎকার লেখা .... ভালো লেগেছে ...!