![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লেখকের কথাঃ ভেবেছিলাম উপন্যাস লিখবো, কিন্তু হয়ে গেলো ছোট্ট একটা গল্প। ভেবেছিলাম কিছু খুনসুটি তুলে ধরবো, কিন্তু হয়ে গেলো কেমনতরো একটা গল্প!
বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। সাদেক জানালার পাশে দাড়িয়ে খানিকটা আনমনে বাইরের দিকে কোথায় যেন তাকিয়ে আছে। দৃষ্টি উদাস। অবশ্য ইট-কাঠার এই শহরে জানালা খুলে খুব বেশী দূরে তাকানোর অবকাশ নেই। তার নিতান্ত ভাগ্য ভালো বলতে হবে। নতুবা ৩ তলায় জানালার পাশে এতো টা খোলা আকাশ দেখা যায় ! তিনজন বন্ধু মিলে একটা ফ্ল্যাট ভাগাভাগি করে থাকে। তিনজনেই এক ইউনিভারসিটি তে পড়ছে। স্বপ্ন ছিল ঢাকা ভার্সিটিতে পড়ার। কিন্তু ভর্তি যুদ্ধে হেরে গেলো। এখন জগন্নাত ভার্সিটি তে পড়ে। বাবা-মা তিনজনেরই গ্রামের বাড়িতে থাকে। তিনজনের বাড়িই কুমিল্লায়। ঢাকায় অবশ্য ওদের বেশ ভালোই আত্মীয়-স্বজন আছে।
রাহাত ও সুজন, সাদেক এর রুমম্যাট, পড়ছে। সাদেক একবার চকিতে ওদের দিকে তাকায়। তারপর, আবার জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়। কত কিছু মনে পরছে এখন! পল্লীকবির কথা টা ও মনে পরছে,"মন যেন কারে চায়"। সাদেক আরও আনমনা হয়ে যায়। মন কারে চায় ? সাদেক প্রস্ন করে নিজেকে। পায়েলের সাথে তিলে তিলে গড়া গত ৩ বছরের দীর্ঘ সম্পর্ক ভেঙ্গে গেলো গত মাসে। তারপর থেকে জীবন টা কেমন যেন পানসে লাগে। জীবন থেকে কি যেন নাই হয়ে গেলো !
আচ্ছা, পায়েল আছে কেমন এখন ! তার এলাকায় কি বৃষ্টি হচ্ছে ? সে ও কি এখন জানালার পাশে দাড়িয়ে বৃষ্টি দেখছে ? সে ও কি ভাবছে কারো কথা ? কার কথা আর ভাববে, ওর তো এখন সব ই আছে। আমার কিছু নেই। সব নিয়ে গেলো আমার! সাদেক আনমনে ভেবে চলে।
রাহাত ডাকে। কিরে কি ভাবছিস ! চল ভাত খেয়ে আসি। ২ টা তো বেজে গেছে। চল আমাদের সাথে। সাদেক বলে, তোর নামাজ পড়া হয়েছে ? রাহাত বলে, হ্যাঁ আমরা পড়ে নিয়েছি। তোকে ডাক দিলাম। তুই কোন সাড়া দিলিনা। নামাজ পড়াটা ভালো করে ধর। মনে শান্তি পাবি। আর ওইসব চিন্তা ছেড়ে দে। যা হয়ে গেছে তা নিয়ে আর ভেবে লাভ নাই। যে চলে যাবার সে চলেই যাবে। তার চলে যাওয়া নিয়ে ভাবতে নেই। বলে, রাহাত ও একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে গোপনে। মিথিলা ও কি তাকে ছেড়ে চলে যাবে? তাকে ভুলে যাবে ? কি জানি হতে পারে! এক মুহূর্তের মধ্যে মাথার গোপন ভাবনা থেকে ফিরে আসে রাহাত। তারপর সাদেককে আবার ধমক দেয়, কিরে ব্যাটা ! কানে কথা ডুকে না !! আয় !! সুজন, ততক্ষণে বই-খাতা গুছায়। গুছিয়ে সাদেকের হাত ধরে নিয়ে আসে রাহাতের কাছে। সাদেক কিছু বলে না। তার মাথায় এখনো চলছে, বৃষ্টি এবং কিছু এলোমেলো কথা।
বাইরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে, যাকে বলে মুষল ধারে বৃষ্টি। সাদেক ক্যান্টিন এ বসে বসে সিগারেট টানছে ধুমছে। থার্ড সেমিস্টারের রেজাল্ট দিয়েছে। একটুর জন্য 4 মিস হয়ে গেলো! গত দুই সেমিস্টারে 4 ছিল, এই সেমিস্টারে এসে মিস হয়ে গেলো! কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে!
হঠাৎ করে বাইরে নজর গেলো তার। দেখে একটা মেয়ে বৃষ্টিতে ভিজছে। কিছু মানুষ মজা দেখছে। তার কাছে ছাতা ও নেই যে এগিয়ে যাবে। আবার সবার সাথে তাল মিলিয়ে কুদৃষ্টি দিয়ে তার পক্ষে এই দৃশ্য দেখা ও সম্ভব না। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে তার মন থেকে পরীক্ষায় কম পাওয়াতে যে কষ্ট হচ্ছিলো, তা কিছুক্ষণের জন্য চলে গেলো। সে এক কাপ চা নিয়ে ভিতরের দিকে চলে গেলো ঠিক ই, কিন্তু মেয়েটার মুখ তার চোখে গেঁথে গেছে মনে হচ্ছে। খালি চোখে ভাসছে। চা শেষ করে আরেকটা সিগারেট ধরিয়ে সে আগের জায়গায় ফিরে এলো, কিন্তু মেয়েটা নেই। চলে গেছে মনে হয়, ভেবে সে সিগারেট শেষ করে তার হলের দিকে রউনা দেয় বৃষ্টি মাথায় করেই। চরম এলোমেলো লাগছে, সবকিছু কেমন যেন মনে হচ্ছে ! কিসের লক্ষন এইটা ! সাদেক বুজতে পারছে না।
পরের দিন, সাদেক ক্লাসে গেলো। ক্লাস শেষ করে বাইরে বেরুতেই গতকালের মেয়টাকে দেখল। কি সুন্দর মুখ! সে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। পরে রাহাত ডাকে তাকে। ক্লাসরুমের বারান্দার এককোনে রাহাত ও আরও কয়েকজন আড্ডা মারা শুরু করেছে। সেখানে গিয়ে এক পাশে দাঁড়ায় সাদেক। ওইখান থেকে মেয়েটার প্রতি লক্ষ্য রাখা যাচ্ছে। রাহত গলা ঝাড়ি দিয়ে উঠে। মাম্মা, কি ব্যাপার, আজকাল উদাসীন মনে হয়! সাদেক নিসচুপ। রাহাত, আরও জোরে বলে। সাদেক একটু কেঁপে উঠে। কি হয়েছে, বলে কড়া চোখে রাহাত এর দিকে তাকায়। ততক্ষণে সবার কেন্দবিন্দু হয়ে গেছে সাদেক। তারা কি মিন করছে বুজে যায়। সে একটু আড় চোখে তাকায় মেয়েটার দিকে। তারপর বলে, কিছু না। রাহাত বলে, ওইটা নিপুর চাচাতো বোন। থার্ড সেমিস্টারে উঠেছে এইবার। নিপুর সাথে দেখা করতে এসেছে। লেগে যেতে পারোস। জিনিষ ভালোই ! সাদেক এর চোখ মুখ লাল হয়ে উঠে। মিনমিন গলায় বলে, কিসব আবোল তাবোল বকছিস! রাহাত চটে উঠে। দেখো মামা, পরে কিন্তু আমাদের কাছে আবার সুপারিস এর জন্য আসতে পারবা না। এখন বোলো, যদি পছন্দ হয়, তবে আমরা হেল্প করি। পরে কিন্তু কিছু বলতে পারবা না, হুম বলে রাখলাম। সাদেক, বলে আমার কোন হেল্প লাগবে না। মানে, কিসের মধ্যে কি ! আমি কি করতে যাবো ওই মেয়ের সাথে! যা যা ফালতু প্যাঁচাল পারিস না। আমি যাই, আমার কাজ আছে। বলে সাদেক দাঁড়ায় না আর, অন্যদিকে চলে যায়। রাহাতরা জোরে হেসে উঠে।
এর পরের দুইমাসে, সাদেক কে দেখা যায় পায়েলের সাথে বাদাম কিনে খেতে। গাছের ফাকে বসে আড্ডা মারতে। ভার্সিটির রাস্তায় হাঁটতে। রাহাত, শরীফ,সুজন আর নিপুর কারনে আর তার মনের প্রবল ইচ্ছার কারনে, গত এক মাসে আগে পায়েলের সাথে সাদেকের জোড়া ফিট হয়ে যায় !!
গভীর প্রেমে মগ্ন থাকলে মানুষ নাকি অনেক কিছু ভুলে যায়। চোখ এড়িয়ে যায়। সাদেকের আজকাল তেমন হয়েছে। বন্ধুদের সাথে সময় কম দেয়া নিয়ে বন্ধুদের কথা শুনতে হয়। আবার পড়াশোনায় খারাপ করার কারনে বাবা-মা এর ঝাড়ি। এই নিয়ে মন খারাপ হয়ে যায়। কিন্তু যখন পায়েলের ফোন আসে মনটা অসম্ভব ভালো হয়ে যায়। যখন দেখা হয়, মনে হয় সাদেক আকাশে উড়াল দিবে এই ডানাকাঁটা পরীটাকে নিয়ে! টিউশনি করে নিজের খরচ চালায়। ভালোই পায়। আজকাল টিউশনির সব টাকা পায়েলের পিছনে খরচ করতে হচ্ছে। কিছু একটা গিফট করলে মেয়েটা এত্ত খুশি হয় যে সাদেকের বুক ভরে যায়। মনেই থাকেনা যে ক্যান্টিনে বাকির পর বাকি জমছে। বন্ধুদের কাছে ঋণ বাড়ছে।
তিন বছর চলে এইভাবে। সাদেকের সাথে অনেক বন্ধুর ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। সাদেক ভাবে যারা রিয়েল বন্ধু না তারা এমনি হবে। ছেড়ে চলে যাবে। সংসারের বড় ছেলে সাদেক। বাবা এখন বলে, আমি তো বুড়ো হয়ে গেলাম, এইবার পারলে একটু সংসারের হাল ধর। সাদেক বলে, বাবা ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে নেই, তারপর ধরছি। বাবা, অপেক্ষায় থাকে। মা শান্তনা দেয়। বলে, বাবা এতো চিন্তা করিস না। ঠিক মতো পড়াশোনা কর। আমরা চালিয়ে নিতে পারবো। সাদেক এর চোখে এই সব পরে না। সে মনে করে ঠিক ই চালিয়ে নিতে পারবে। আজকাল ঋণ এর পরিমান এতো বেড়েছে যে বাইরে বেরুতে গেলে, পাওনাদারের ভয়ে থাকতে হয়।
পায়েল সেদিন এসে বলে গেলো, তোমাকে বিয়ে কড়া আমার সম্ভব না। আকাশ থেকে পরলে যে অবস্থা হয় মানুষের। সাদেকের হয়েছিলো সেই অবস্থা। সে আতঙ্কিত গলায় কোনমতে মিনমিন করে বলছিল, কেন ! পায়েলের সোজা সাপটা জবাব, বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছে। ছেলে বড় বিজেনেস মেগনেট। আমিও ভেবে দেখলাম, তোমার চেয়ে সেই আমার যোগ্য বেশী। সাদেক অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। কিছু বলতে পারে না। ভাবে,যে মেয়ে পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ হয়েছে বলে বৃষ্টিতে সবার সামনে এক ঘণ্টা ভিজার পাগলামি করতে পারে, সেই মেয়ে কিভাবে আবার এতো স্বার্থপর হয় !
এরপর সাদেক অনেক চেষ্টাই করে পায়েলকে বোজানোর জন্য। বিয়েটা হয়ে যায় পায়েলের। সাদেক, রাহাতের ফ্ল্যাটে এসে উঠে। রাহাত আগের পুরনো বন্ধুকে সাহায্য করে সবকিছু গুছিয়ে নিতে। রাহাত, সুজন আর সাদেক মিলে অনেক জায়গায় ঘুরতে যায়। আত্মীয় স্বজনের বাসা থেকে ঘুরে আসে। রাহাত সাদেক কে নামাজের দিকে নিয়ে আসার চেষ্টা করছে। এতে অবশ্য লাভ হচ্ছে। সাদেক এর মনটা নামাজের পর একটু ভালো লাগে। সাদেক ঠিক করেছে, সে মচকাবে কিন্তু ভাংবে না! সে আর পায়লের ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করে না। বিষের উপর বিষফোঁড়ার মতো ঋণগুলো এখন মনে হচ্ছে একেকটা পর্বত! সাদেক ঋণ মিটাতে চেষ্টা করে যাচ্ছে। দিনে ৭ টা টিউশনি করে। পায়েল কে নিয়ে ভাবার সময় কই তার!!!
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
My Blog--- For Free Bangla EBook Download PDF: Bangla Book Download. You are always welcome at the Large Online Bangla Book Store.
©somewhere in net ltd.