নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্পষ্টভাষি

স্পষ্টভাষি › বিস্তারিত পোস্টঃ

লঙ্কায়( কাচামরিচ) যত ঝাল-তত উপকার

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:৩৮



আমেরিকান জার্নাল অফ ক্লিনিকাল নিউট্রিশনে অস্ট্রেলিয় গবেষকরা জানিয়েছেন, খাবারে নিয়মিত লঙ্কা খেলে ইনসুলিনের চাহিদা অনেকটাই কমে যায়। তাই টাইপ-টু ডায়াবেটিসে যারা ভুগছেন; তাদের খাবারদাবারে লঙ্কা থাকা উপকারী। লঙ্কার মাধ্যমে রক্তে সুগারের মাত্রা হ্রাস পেয়ে থকে। ক্যাপসায়কিন ছাড়াও লঙ্কায় থাকা ভিটামিন সি, খাদ্যআঁশ, ক্যারোটিনয়েড তথা ভিটামিন-এ এক্ষেত্রে ভূমিকা নিয়ে থাকে। লঙ্কায় প্রচুর খাদ্যআঁশ থাকে। লঙ্কা খেলে পাকস্থলিতে ক্যান্সার হয়, ধারনাটা ভুল। ঘটনা হলো, লঙ্কা পাকস্থলিতে আলসার তথা ঘা হওয়া আটকায়। ঘায়ের বাড়বৃদ্ধি রোধ করে পাকস্থলির প্রচীরকে সুরক্ষা দেয়, পাকস্থলীর কোষকলাকে পুননির্মাণ করে। তবে এটা ঠিক প্রচুর পরিমাণে লঙ্কা খেলে শরীরের কোন না কোন ক্ষতি হবেই।

লঙ্কা যত বেশি ঝাল, তত উপকার। কারণ, উপকারটা করে থাকে লঙ্কা নামক ফলের ডগা থেকে বীজাধারের গায়ে সেঁটে থাকা প্ল্যাসেনটা তথা গর্ভনাড়ি সঞ্জাত ক্যাপসায়কিন নামক যৌগ। লঙ্কার ঝাঁজ কম-বেশি হয় এই ক্যাপসায়কিন যৌগটির পরিমাণের উপর। লঙ্কার ক্যাপসায়কিন গলায় সংক্রমণ ঘটতে দেয় না। এজন্য লতা মঙ্গেশকর মুম্বাইয়ে থাকলে কাঁচা কোলাপুরি লঙ্কা খান, বাইরে গেলে সঙ্গে থাকে লঙ্কার গুঁড়ো। খাবারে মিশিয়ে খান। লঙ্কা রক্তে কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড অর্থাৎ সব ধরনের বাজে চর্বির পরিমাণ কমায়। লঙ্কা পাকস্থলিতে ক্যানসার হওয়া আটকায়। লঙ্কা ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য উপকারী। লঙ্কা ভালো ঘুম উপহার দিতে পারে, সাইনাসের নাকবদ্ধতা খুলে দিতে পারে। খাওয়ার ২০ মিনিটের মধ্যে লঙ্কা শরীরে তাপ বৃদ্ধি ঘটাতে থাকে। অক্সিজেন আত্মীকরণের গতিও বাড়িয়ে তোলে। লঙ্কা খেলে অতিরিক্ত ক্যালোরি তথা চর্বি পোড়ে। মুটিয়ে যেতে থাকা এবং মুটিয়ে যাওয়াদের জন্য লঙ্কা খুবই উপকারী। লঙ্কা মেশানো খাবার শরীর দ্রুত আত্মস্থ করতে পারে, কারণ হজম প্রণালীকে উদ্দীপ্ত করার মতো উপাদান রয়েছে লঙ্কায়। ফুসফুসে জমে থাকা কফ-শ্লেষ্মা তাড়াতে পারে লঙ্কা। হার্টে রক্ত প্রবাহ বাড়িয়ে তোলে। অনুচক্রিকার ধ্বংস রোধ করে রক্তের তঞ্চন প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখে। রক্তবহা নালীগুলোর সম্প্রসারণশীলতা বাড়িয়ে দিয়ে হাই ব্লাড প্রেসারের আধিক্য হ্রাস করে। লঙ্কা খিদেও বাড়ায়। রুমাটাইড আর্থাইটিসের প্রদাহ উপশম করে। লঙ্কা অবসাদ বিরোধী।

অন্যদিকে, ইউনিভার্সিটি অফ নটিংহামের গবেষকদের দাবি, ক্যান্সার ছড়ায় যে টিউমার কোষ, লঙ্কা থাকা ক্যাপসিয়াম তাদের ভাতে মারে। বেঁচে থাকার জন্য যে উৎস থেকে শক্তি পাচ্ছিল ওরা, সেই উৎসকে সরাসরি আক্রমণ করে ক্যাপসায়কিন।

এই গবেষক দলের প্রধান ডা. টিমেথি বেটসের বক্তব্য, ক্যান্সার আক্রান্তদের খাবারদাবারে অবশ্যই লঙ্কা থাকা উচিত, ক্যান্সার রোগীরা তাতে ব্যাপক উপকৃত হবেন। ধূমপান করেন যারা, তাদেরও নিয়মিত লঙ্কা খাওয়া উচিত, কেননা ফুসফুসে ক্যান্সার হওয়া আটকানোরও ক্ষমতা আছে এ লঙ্কায়।

পাকস্থলির নিকটবর্তী যে গ্রন্থি থেকে পাচক রস ও ইনসুলিন নির্গত হয়, সেই প্যাংক্রিয়াস তথা অগ্ন্যাশয়ে ক্যান্সার হওয়া আটকাতে পারে লঙ্কা। প্রস্টেট গ্ল্যান্ড থেকে মূত্রথলিতে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়াও রুখতে পারে। ইউনির্ভাসিটি অব পিটসবার্গ স্কুল অফ মেডিসিনের ফার্মাকোলজি বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ড. সঞ্জয় জানিয়েছেন, লঙ্কা ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার হওয়াও আটকাতে পারে।

ইউনির্ভাসিটি অফ তাসমানিয়ার গবেষকরা জানিয়েছেন লঙ্কা খেলে ভালো ঘুম হয়। লনসেস্টেনে ১৮ মাস ধরে মানুষের উপর লঙ্কার ঘুম উন্নতিকারক গুণ দিয়ে লঙ্কা খাইয়ে এই ফল পাওয়া গিয়েছে। লঙ্কার প্রভাবে ঘুম যখন ভালো হয়, তখন হার্টও চাঙ্গা থাকে।

১০০ গ্রাম কাঁচা লঙ্কায় প্রোটিন থাকে ২.৯ গ্রাম। ফ্যাট ০.৬ গ্রাম। খনিজ পদার্থ ১ গ্রাম। খাদ্যআঁশ ৬.৮ গ্রাম। কার্বোহাইড্রেট ৩ গ্রাম। ক্যালসিয়াম ৩০ মিলিগ্রাম। ফসফরাস ৮০ মিলিগ্রাম। আয়রন ৪৪ মিলিগ্রাম। সবুজ কাঁচালঙ্কার ১০০ গ্রামে জলীয় ভাগ ৮৫.৭ গ্রাম। শুকনো লঙ্কার ১০০ গ্রামে জলীয় ভাগ ১০ গ্রাম। প্রোটিন ১৫.৯ গ্রাম। ফ্যাট ৬.২ গ্রাম। খনিজ পদার্থ ৬.১ গ্রাম। খাদ্যআঁশ ৩০.২ গ্রাম। কার্বোহাইড্রেট ৩১.৬ গ্রাম। ক্যালসিয়াম ১৬০ মিলিগ্রাম। ফসফরাস ৩৭০ মিলিগ্রাম। আয়রন ২.৩ মিলিগ্রাম।

১০০ গ্রাম কাঁচা লঙ্কায় ক্যারোটিন থাকে ১৭৫ মাইক্রোগ্রাম। শুকনো লঙ্কায় ৩৪৫ মাইক্রোগ্রাম। ১০০ গ্রাম কাঁচা লঙ্কায় ভিটামিন সি থাকে ১১১ মিলিগ্রাম। থিয়ামিন, রাইবোফ্ল্যাভিন, নিয়াসিন থাকে যথাক্রমে ০.১৯, ০.৩৯ এবং ০.৯ মিলিগ্রাম। সমপরিমাণ শুকনো লঙ্কায় এই ভিটামিনগুলোর পরিমাণ যথাক্রমে ০.৯৩, ০.৪৩ এবং ৯.৫ মিলিগ্রাম। ১০০ গ্রাম শুকনো লঙ্কায় ভিটামিন সি থাকে ৫০ মিলিগ্রাম। কাঁচালঙ্কায় ফলিক অ্যাসিড তাকে ১০০ গ্রামে ২৯ মাইক্রোগ্রাম।

শুকনো লঙ্কায় অনেকটা পটাসিয়াম থাকে। ১০০ গ্রামে ৫৩০ মিলিগ্রাম। সোডিয়াম থাকে ১৪ কিলোগ্রাম।

কাঁচালঙ্কায় ম্যাগনেসিয়াম মেলে ২৭২ মিলিগ্রাম। কপার থাকে ১.৪০ মিলিগ্রাম। ম্যাঙ্গানিজ ১.৩৮ মিলিগ্রাম। মলিবডেনাম ০.০৭০ মিলিগ্রাম। জিংক ১.৭৮ মিলিগ্রাম। ক্রোমিয়াম ০.০৪০ মিলিগ্রাম। অক্সালিক অ্যাসিড ৬৭ মিলিগ্রাম। ১০০ গ্রাম কাঁচা লঙ্কায় শক্তি ২৯ ক্যালোরি। শুকনো লঙ্কায় ২৪৬ ক্যালোরি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.