নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মোহাম্মদ মইন উদ্দীন। ডাক নাম মাঈনু। কিছু কিছু ফ্রেন্ডের কাছে কিশোর। বাড়ি চট্রগ্রাম। পড়ালেখার কারণে ঢাকায় থাকি। কৌতুহল একটু বেশী, হয়তো বাড়াবাড়ি ধরনের ই বেশী। দূঃসাহসী, কিন্তু সাহসী কিনা এখনো জানতে পারিনি।

কিশোর মাইনু

কিছু কিছু জিনিস জানি। সেগুলা মানুষের সাথে share করার জন্য ব্লগে প্রবেশ। তাতে দুটো সুবিধে। প্রথমত, আমার জানার ভুলভ্রান্তিগুলো দূর হবে। দ্বিতীয়ত, নতুন কিছু জানার সুযোগ সৃষ্টি হবে। দুনিয়াতে জানার কোন শেষ নেই। এবং আমার আগ্রহের ও কমতি নেই। ইনশাল্লাহ কোনদিন হবে ও না।

কিশোর মাইনু › বিস্তারিত পোস্টঃ

গ্রীক মিথোলজি(৪): মানবজাতির সৃষ্ঠি, পান্ডোরার বাক্স এবং প্রমিথিউস

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ২:৪৫

গ্রীক মিথোলজির সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক অধ্যায় মানবজাতির সৃষ্টি ও পান্ডোরার উপাখ্যান। হেসিওড তার থিওগনিতে এ সম্পর্কে সব কিছুর ব্যাখ্যা দেননি। পরবর্তীতে তার আরেকটি বই 'ওয়ার্ক্স এন্ড ডেইজ' বইয়ে তিনি সম্পুর্ণ করেন। থিওগনিতে যা কিছু অসম্পুর্ণতা ছিল হোমারের 'ইলিয়ড' তা সম্পুর্ণ করে দেয়। আর বাকী কাজটা সম্পুর্ণ করেন ট্রাজিক লেখক ইফাস্টাস। থিওগনি, ইলিয়ড, ওয়ার্ক এন্ড ডেইজ সহ আরো অনেক বই মিলিয়ে এই চিত্তাকর্ষক অধ্যায়ের পরিপুর্ণ একটি বর্ণনা পাওয়া যায়। যে কাহিনীতে প্রমিথিউস নায়ক ও জিউস খলনায়ক হিসেবে আবির্ভুত হয়। যে কাহিনীর সমাপ্তি ঘটে প্রমিথিউসের শাস্তিভোগ ও তার থেকে মুক্তির মাধ্যমে।
টাইট্যানোম্যাকি যুদ্ধে জয়ের পর থেকে বহুতদিন পৃথিবীতে কেউ বাস করতনা দেবকুল ছাড়া। তাই দেবরাজ জিউস পৃথিবীতে বসবাস করার জন্য প্রাণী সৃষ্টির আদেশ দিলেন দুই ভাই প্রমিথিউস ও এপিমেথিউস কে। এবং সাথে সাথে তাদের বেশ কিছু উপকরণ দিলেন যেমন ধারালো নখ, প্রখর দৃষ্টিশুক্তি, ডানা, প্রখর ঘ্রাণশক্তি, খোলস ইত্যাদি ইত্যাদি।এপিমেথিউস দুমদাম একের পর এক অনেক প্রাণি সৃষ্টি করে ফেললেন আকাশে, মাটিতে ও পানির নিচে থাকার জন্য, এবং এতে তিনি জিউসের দেওয়া প্রায় সব উপকরণ ই শেষ করে ফেললেন। আর অপরদিকে প্রমিথিউস খুবই যত্নের সাথে আবেগের সাথে কাদামাটি দিয়ে মানুষ বানানোই ব্যস্ত। তিনি মানুষকে বানালেন দেবতার স্বাভাবিক রুপের আদলে। পরবর্রীতে এথেনা যা দেখে খুশী হয়ে তাতে মানবীয় গুণাবলী ঢেলে দিয়েছিলেন।যাই হোক মানুষ সৃষ্টির পর যখন জিউসের দেওয়া উপকরণ ব্যাবহার করতে গিয়ে প্রমিথিউস দেখে তার ভাই সব শেষ করে ফেলেছে। যেখানে অন্যান্য প্রাণীরা পৃথিবীতে রাজ করে বেড়াচ্ছে সেখানে মানুষ দুর্বল, অসহায়। প্রমিথিউসের মায়া হল। সে জিউসের কাছ থেকে মানুষের জন্য আগুন উপহার চাইল। কিন্তু জিউস দেবতাদের জিনিস মানুষকে দিতে রাজি হল না। প্রমিথিউস তখন দেবরাজের বিপক্ষে গিয়ে মানুষের জন্য আগুন নিয়ে আসলেন। কিভাবে আনলেন তা নিয়ে অনেক মতভেদ আছে। কোন মিথে আছে প্রমিথিউস সূর্যদেবের রথ থেকে এক স্ফুলিংগ আগুন বিশেষ এক ধরণের নলখাগড়ার মধ্যে লুকিয়ে নিয়ে আসেন। কোথাও আছে দেবী হেরার সাহায্য নিয়ে অলিম্পাস থেকে চুরি করেন। যাই হোক প্রমিথিউস ধীরে ধীরে মানবজাতিকে আগুনের ব্যবহারসহ আরো অনেক কিছুই শিখালেন। মানুষের জীবন হয়ে উটল আনন্দ ও প্রাচুর্যময়। ভালমতই চলত সবকিছু যদি জিউস নিচে না তাকাতেন। জিউস যখন নিচে তাকিয়ে দেখলেন মানুষের এ অবস্থা তিনি মারাত্মক রেগে গেলেন। খোজ নিয়ে জানতে পারলেন মানুষের এ উন্নতির কারণ, মানুষকে আগুন দেওয়া দেবতাটি হল প্রমিথিউস। তিনি একে একে মানুষ ও প্রমিথিউস-কে শাস্তি দেওয়ার অভিনব ব্যবস্থা গ্রহণ করলেন।জিউস হেফাস্টাসকে দিয়ে এক মানবী বানালেন। তারপর বাকী সব দেবতাদের বললেন ভালো ভালো সব কিছু দিতে এই মানবীর মধ্যে। জ্ঞানের দেবী এথেনা তাকে সুইসুতার ব্যবহার শেখালেন, আফ্রোদিতি দিলেন অতুলনীয় রুপ, হার্মিস দিলেন বিনয়ী ও কৌতুহলী স্বভাব এবং কোকিলের থেকেও মিষ্টি-মধুর কন্ঠস্বর। হার্মিস তার নাম দিলেন 'পান্ডোরা' অর্থ্যাৎ 'সর্ব উপহার প্রাপ্ত'। এথেনা পান্ডোরাকে রুপালী গাউনে আবৃত করে দিলেন, ক্যারিস দেবীকুল তাকে অলংকারে সুসজ্জিত করলেন, হোরাই দেবীকুল তাকে ফুলের মুকুট পড়িয়ে দিলেন। তারপর জিউস একটি বাক্সের মধ্যে ব্যাধি, লোভ, হিংসা, বিদ্বেষ,দুর্ভিক্ষ সহ অনেক কিছু ভরে পান্ডোরাকে দেন। এথেনা শেষ মুহুর্তে সাবধান করে দেন পান্ডোরাকে যে কখনো যেন বাক্সটি না খোলা হয়।যাই হোক পান্ডোরকে নিয়ে জিউসের বার্তাবাহক হার্মিস আসলেন এপিমেথিয়াসের কাছে। এপিমেথিয়াস পান্ডোরার সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হয়ে প্রমিথিউসের নিষেধবাণী সত্ত্বেও পান্ডোরাকে গ্রহণ করলেন, বিয়ে করলেন। যদিও পরবর্তীতে তাদের সুখী জীবন দেখে প্রমিথিউস ও মেনে নেন।কিন্তু পান্ডোরার সুখী জীবন ভাল লাগল না। তিনি জিউসের দেওয়া বাক্সের ভিতরের কি আছে দেখার জন্য অধৈর্য হয়ে গেলেন। অবশেষে এথেনার সতর্কবাণী হার মানল পান্ডোরার প্রবল কৌতুহলের কাছে। পান্ডোরা কয়েক সেকেন্ডের জন্য হাল্কা করে বাক্সের ডালা খুললেন। কিন্তু তথক্ষণে যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গিয়েছে। বাক্স থেকে লোভ-লালসা, হিংসা, রোগসহ যা কিছু ছিল সব বের হয়ে গিয়েছে ততক্ষণে। আর বের হয়েই তারা নেমে গেল মানবজাতিকে ধংস করার কাজে।
মানুষের ব্যবস্থা করার পর জিউস নজর দিলেন প্রমিথিউসের দিকে। যেই জিউসকে অসংখ্যবার প্রমিথিউস সাহায্য করেছিলেন সেই জিউস ই তার দুই ভৃত্য ক্রাটোস ও বিয়াকে পাঠান প্রমিথিউসকে ধরে নিয়ে আসার জন্য। ক্রাটোস ও বিয়া তাকে ধরে নিয়ে আসেন সাইবেরিয়া পাথুরে পর্বতমালার সবচেয়ে উচু শিখরে। হেফাস্টাস কে নিয়ে আসেন তারা। হেফাস্টাস নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জিউসের আদেশনুসারে তার পুরোনো বন্ধু প্রমিথিউস্কে পাথরের সাথে শিকল দিয়ে বেধে দিলেন। কথিত আছে যে, জিউসের ঈগল প্রতিদিন ই প্রমিথিউসের শরীর থেকে মাংস খেয়ে যেত।
গত তিন পর্বে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি থেকে মিথোলজির প্রথম যুদ্ধ পর্যন্ত কাটাছেড়া করেছিলাম। আজকে মিথোলজির সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক অধ্যায়টি নিয়ে হালকা-পাতলা আলোচনা করলাম। যদিও প্রমিথিউসের কাহিনী সম্পুর্ণ করতে পারিনি। আজ প্রমিথিউসের বন্দী হওয়ার কাহিনী বললাম। পরের পর্বে প্রমিথিউসের বন্দীজীবন ও বন্দীদশা থেকে মুক্ত হওয়ার কাহিনী নিয়ে আলোচনা করব। আর এখন থেকে আগের পর্বগুলোর লিংক ও দেওয়া থাকবে প্রতিটি আপকামিং পোস্টে।
১ম পর্ব/মহাবিশ্ব থেকে অলিম্পাস
২য় পর্ব/অলিম্পিয়ানস
৩য় পর্ব/টাইটানস বনাম অলিম্পিয়ানস
গত তিন পর্বে আমি কোন তথ্যসুত্রের উল্লেখ করিনি। একদম শেষ পর্বে উল্লেখ করব আশা করেছিলাম। কিন্তু কখন শেষ করতে পারি ঠিক নেই বলে আজ ই তথ্যসুত্রের উল্লেখ দিয়ে দিচ্ছি।
১/গ্রিক পুরাণ(অ্যাপস)
২/গ্রিক পুরাণ কথা(বই)
৩/Greek Mythology A to Z(বই)
৪/ইলিয়ড ও থিওগনির মধ্যকার পার্থক্যসমূহ(বই)
৫/গ্রিক পুরাণের সামু কালেকশন

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৯:০৮

রাজীব নুর বলেছেন: আরব্য রজনীর কাহিনি থেকে এগুলো আলাদা কিছু নয়।

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১১:৩০

কিশোর মাইনু বলেছেন: ঠিক বলেছেন ভাইয়া। মিথোলজি আসলে প্রায় সব ই এক কাহিনী ভিন্ন ভিন্ন ভাবে উপস্থাপিত।
ধন্যবাদ।

২| ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১১:৪৬

উদাসী স্বপ্ন বলেছেন: একদিন ইসলামিক মিথোলজি নিয়েও মানুষের আগ্রহ জন্মাবে

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১১:৫৯

কিশোর মাইনু বলেছেন: :| :||
এ ব্যাপারে আমি আপাতত কোন মন্তব্য করব না। কারণ আমি জানিনা আমার কি বলা উচিত।
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।

৩| ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১২:২৬

ফারিহা হোসেন প্রভা বলেছেন: বাহ! আপনি কি কিশোর পর্যায়ে আছেন নাকি?

১৪ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ২:০৩

কিশোর মাইনু বলেছেন: #:-S :D
না আপু। অনার্স ২য়। বাট নামটা আর চেইঞ্জ করা হয়নাই। কিশোর নামে ও পরিচিত অবশ্য অনেক জায়গায়।

৪| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:৫৪

আব্দুল্লাহ্ আল মামুন বলেছেন: একটা ছবি আছে ২০০০ সম্ভবত। যুদ্ধের।। ওইটা ভালই লেগেছিল। আজ আপনার লেখা পড়লাম। সুন্দর

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:০৮

কিশোর মাইনু বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.