নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাকতাড়ুয়া

আর আমি, কিছু মানি নাই, জানি নাই ভালোমন্দ, আলো অন্ধকার পৃথিবী ঘুমিয়ে রয়, সুন্দরের পানে মোর মত্ত অভিসার।

বাকতাড়ুয়া

অক্ষরগুলোকে তাড়িয়ে ফিরি অনুভূতি ছুঁয়ে দিতে

বাকতাড়ুয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

দেহ

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৩ ভোর ৫:৪৮

রাতগুলো লাগামছাড়া হয়ে উঠছে দিন দিন। বুক দুরুদুরু করে, ভয়ে ঘুম আসে না। শুন্যতা-মুখরতার কত অজস্র রাত পেরিয়ে এখন বাড়ির উঠোনে এসে হাঁপিয়ে গেছে বলে মনে হয় আয়েশা মির্জার। বয়সে চামড়া ঝুলে যাচ্ছে দিন দিন, চোখের নিচে কালসিটে- আয়নার সামনে দাঁড়ালে চুরমার হয়ে যায় সব আত্মবিশ্বাস। এইতো গতকালকেই ভোররাতের দিকে, চোখে ঘুম এসেছে ঘণ্টাদুয়েক হয়েছে কি হয়নি, হঠাৎ তার ঘুম ভেঙ্গে গেল। ডানকাতে শুয়েছিলেন, মনে হতে লাগল ওনার শরীরের ডানপাশ কেউ ছিঁড়ে, খুবলে নিয়ে যাচ্ছে। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আছে, যন্ত্রণা যত প্রকট হয় চোখের সামনে তত বেশি অন্ধকার হয়ে আসে। উনার মনে হচ্ছিল যে উনি মারা যাচ্ছেন। তারপর ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে আসে, যম হয়ত শুধু ঘাম দিয়ে বিছানা ভিজিয়েই এই শেষবারের মতো ক্ষান্ত দিলেন। এই সময়ে রাহাতকে পাশে পাওয়ার খুব প্রয়োজন অনুভব হয়। রাহাত মির্জা, উনার স্বামী। দারুণ বিত্তশালী একজন, চারিদিকে কেবল ওনার ব্যবসা আর ব্যবসা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। ৫০ এর কোঠায় পৌঁছে দেখতে এখনো পুরোমাত্রায় সুপুরুষ। তরুণ বয়সে তো তার নাম শুনলেও মেয়েদের বুকে শিহরন জাগত। আয়েশা তখন থেকেই রাহাতের প্রেমে বুঁদ। ধনী পিতার আদরের একমাত্র মেয়ে হওয়ার কারণে রাহাতকে স্বামী হিসেবে পাওয়ার স্বপ্নটাও ঠেকে থাকেনি। বিয়ের দিনটার কথা ভাবতে ভালো লাগছে আয়েশার, দিনটা কত স্বপ্নময় ছিল! বিয়ের দিনের কথা ভাবতে ভাবতে শেষরাতে এসে আয়েশার ছোটখাটো একটা স্ট্রোক হয়ে যায়।



সপ্তাহ পেরিয়ে গেলে ছেলেমেয়েরা আয়েশা মির্জাকে হাসপাতাল থেকে বাসায় নিয়ে আসে। "বাবা, এই সময়ে তোমাকে মায়ের পাশে থাকা প্রয়োজন"- ছেলে-মেয়েদের এমন কথার জবাবে রাহাত মির্জা জানান, "চিকিৎসা যা করার ডাক্তার করছে, আমি তো বিজনেসের কাজ বাদ দিয়ে সময় দিতে পারি না।" রাতে বাড়ি ফেরেন না তিনি, পার্টিতে কমবয়সী মেয়েদের নিয়ে ফুর্তি করেন, যৌবনটা এখনো টানটান আছে। মদ খেয়ে ভরপুর মাতাল হয়ে মধ্যরাতে গাড়ি চালিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন, চোখে সামনের রাস্তা ঘোলা ঘোলা লাগছিল। হঠাৎ গাড়ি সামনে একটা দেয়ালের সাথে সাথে প্রচণ্ড ধাক্কা খায়। এক্সিডেন্টের আঘাতে কপাল ফেটে রক্ত গড়াচ্ছে, গালি দিতে দিতে গাড়ি থেকে নামেন। এলোমেলো পা ফেলে রাস্তার পাশের একটা বেঞ্চে বসে পড়ে হাঁপাতে থাকেন। হড়হড় করে বমি হয়ে যায় একবার। তারপর নিদারুন ক্লান্তিতে বেঞ্চে হেলান দিয়ে অচেতন হয়ে পড়ে থাকেন।



ঘণ্টাখানেক বাদে জ্ঞান ফেরে রাহাত মির্জার। কপালের ফেটে যাওয়া পাশটায় তীক্ষ্ণ ব্যথা হচ্ছে। মদের নেশা এখনো পুরোপুরি কাটেনি। চোখ খুলে আশেপাশে চেয়ে জায়গাটা অপরিচিত লাগে। ধীরে ধীরে গাড়িটার কাছে ফিরে গিয়ে দেখতে পান গাড়ির সামনের অংশ ইট দিয়ে বাঁধানো কোন কিছুর সাথে ধাক্কা খেয়ে দুমড়ে গেছে। ভালমতো দেখার জন্য খানিকটা সরে আসেন। অদ্ভুত ব্যপার, এটাকে কোন এপিটাফ বলে মনে হচ্ছে, এপিটাফে খোদাই করা নামটা ধুলোয় ঢেকে গেছে। হাত দিয়ে ঘষে তুলে নামটা দেখে চমকে ওঠেন। এতো তার নিজের নাম লেখা, রাহাত মির্জা। কিছুটা ভয় পেয়ে যান। কে যেন রাস্তা ধরে এগিয়ে আসছে, মুখটা চাদরে ঢাকা। একজন মানুষকে পেয়ে কিছুটা আশ্বস্ত হন রাহাত মির্জা। লোকটা কাছে এগিয়ে আসে। অবিকল রাহাত মির্জার কণ্ঠে লোকটা বলে ওঠে, "ও তুমি, এতদিন পর এখানে এলে?"

আচমকা ভয়ে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে রাহাত মির্জা বলে ওঠেন, "কে আপনি?"

রাতের বাতাস কাঁপিয়ে দিয়ে হা হা করে হেসে ওঠে আগন্তুক। ভয়ে বুকের খাঁচার মধ্য দিয়ে শীতল বাতাস বয়ে যায়। আগন্তুকের হাসি থামছে না।

আচমকা হাসি থামিয়ে খুব করুণ স্বরে বলে ওঠে, "আমাকে কি সত্যি ই চিনতে পারছ না?"

"আপনার চেহারা তো চাদরে ঢেকে রেখেছেন। চিনবো কি করে।"

"রাহাত মির্জা, আমি তোমার দেহ। তুমি আমাকে চিনতে পারছ না? এই শরীর, এই রূপ না তোমার কত গর্বের ছিল?"

"কি বলছেন আপনি? তা কিভাবে সম্ভব হয়? আমিতো এখানে দাঁড়িয়ে আছি, এইতো আমারি শরীর।" কথাটার সত্যতা বুঝাতে সারা শরীরে একবার হাত বুলিয়ে নেয় রাহাত মির্জা।

"সে তোমার ভ্রম রাহাত মির্জা। আমিই তোমার দেহ। তুমি মরে যাওয়ার পর আমার ভিতর থেকে বেরিয়ে গেছ।"

"আমি বিশ্বাস করি না।"

আবার দম ফাটানো হাসি দিয়ে আগন্তুক বলে, "তাহলে দেখ তাকিয়ে, তোমার কোন ছায়া নেই।"

রাহাত মির্জা এবার বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়, সত্যি ই তার ছায়া নেই।

"চল, আমরা বেঞ্চটায় বসে কথা বলি।" রাহাত মির্জা বিহবলভাবে আগন্তুককে অনুসরন করে বেঞ্চে এসে বসে।

"তুমি এই পথে এলে কি করে এতদিন বাদে?"

নরম স্বরে রাহাত মির্জা বলেন, "আমি বাড়ি ফিরছিলাম, আমার স্ত্রী অসুস্থ। আমার তাড়াতাড়ি আবার বাড়ি ফেরা দরকার।"

আগন্তুক বলে, "শুধু শুধু স্ত্রীর অসুস্থতার বাহানা দিয়ো না। মৃত মানুষেরা কখনো জীবিতদের পৃথিবীতে ফিরে যেতে পারে না। কাজেই মিথ্যে বলো না, আমি খুব ভালমতোই জানি, তুমি তোমার স্ত্রীর প্রতি মোটেই দায়িত্ববান ছিলে না।"

এই কথা শুনে খেপে ওঠেন রাহাত মির্জা, "বেশ করেছি! ওর প্রতি আবার দায়িত্ব, হেহ। যার প্রতি কোনদিন ভালবাসাই আসে নি তার প্রতি আবার কিসের দায়িত্ব। বদখত দেখতে, কি বিশ্রী মোটা, ওর চেয়ে হাজারো সুন্দরী কমবয়সী মেয়ে প্রতিদিন আমার পায়ের কাছে পড়ে থাকে। ওকে তো বিয়ে করেছিলাম কেবল ওর বাবার সম্পত্তির জন্য।"

"কেউ সুন্দর না হলে কি তাকে ভালবাসতে নেই?"

"কাউকে চোখে দেখে যদি মন না সাড়া দেয় তো ভালবাসা কিভাবে হয়! আয়েশা নিজেও তো আমাকে বিয়ে করেছিল আমার পৌরুষে মুগ্ধ হয়ে। শুধু কি ও, কত শত মেয়ে আমার এই রূপে পাগল হয়ে থাকতো। এই শরীর দিয়ে কত নারীদেহ নিংড়ে মধু ভোগ করেছি। কত সুন্দর ছিলাম আমি, কত প্রিয় আমার এই শরীর!" বলতে বলতে প্রচণ্ড মায়া জেগে ওঠে তার সেই সুঠাম, সুন্দর দেহটার জন্য। সেই হাত, সেই পা, সেই চেহারা! "এই সেই সুন্দর শরীরটা আমার" আপ্লুত হয়ে জড়িয়ে ধরতে যায় আগন্তুককে, আগন্তুক সরে পড়ে।

"না না, আমাকে ছুঁয়ো না প্লিজ। বহুদিন ওই কবরে আটকে থেকে থেকে আমি ভঙ্গুর হয়ে গেছি। তুমি ছুঁলেই ঝুরঝুর করে খসে পড়তে শুরু করবে।"

রাহাত মির্জার বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। সে তার শরীরটাকে আর ছুঁয়ে দেখতে পারবে না। প্রচণ্ড মমতা বোধ করতে থাকে তার সামনে দাঁড়ানো সেই শরীরটার দিকে। আর একবার যদি নিজের এই শরীরটাকে ছুঁয়ে দেখা যেত। কষ্টে কাঁদতে থাকেন রাহাত মির্জা।

"আমার চলে যাওয়ার সময় হয়েছে, আমাকে এখন কবরে ঢুকতে হবে। আবার হয়ত কোনদিন দেখা হতে পারে, কিংবা নাও হতে পারে।"

"ছুঁতে না পারি, আমি শুধু আমার দেহটাকে শেষবারের মতো একবার দেখে যেতে চাই। তুমি চাদর সরাও। আমার দেহ, তুমি তো জানোই আমি তোমাকে কতটা ভালবাসি।" গলায় ভীষণ আকুতি ফুটে ওঠে রাহাত মির্জার।

"দেখতে চাও? ঠিক আছে, দেখে নাও তাহলে।" এই সময় দমকা বাতাস ছাড়ে, চাদর খুলে বাতাসে উড়িয়ে দেয় সেই আগন্তুক, রাহাত মির্জার সেই প্রিয়তম শরীর।



কিন্তু একি! ভয়ানক বিকৃত, পচা, গলিত একটা অবয়ব বেরিয়ে এসেছে চাদরের নিচ থেকে। এখানে, সেখানে নিদাঘ ক্ষত হা হা করছে। আর তার অপার্থিব বীভৎস মুখটা যেন নরকের কোন অতল থেকে উঠে এসেছে। জিহ্বাটা ফুলে কালো হয়ে বেরিয়ে আছে, সেখানে লাইন ধরে ঢুকছে লাল পিঁপড়ার সারি। চোখ, কপাল, কিছুই আলাদা করে চেনা যায় না! ঘৃণায় আর আতঙ্কে নীল হয়ে আসে রাহাত মির্জা!

"তুমি তাড়াতাড়ি ঢেকে ফেল তোমার ওই দেহ, আমি আর দেখতে চাই না। সরাও তাড়াতাড়ি।"

"কেন রাহাত মির্জা? এই শরীরটা না তোমার সবচেয়ে প্রিয়। এখন ভয় পাচ্ছ কেন?"

"আমি ভুল করেছিলাম, আমি ভুল করেছিলাম।" বলে চিৎকার করতে থাকে রাহাত মির্জা।

বীভৎস অবয়বটার ঠোঁটের জায়গাটা মুচকি হাসির মতো প্রসারিত হয়, "রাহাত মির্জা, এই শরীরটা বড় ঠুনকো বুঝলে, এই রূপ ই মানুষের জন্য বড় রঙ্গিন মরীচিকা।"

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:৪১

হাসান মাহবুব বলেছেন: গল্পটা ভালো লাগলো। তবে পাঞ্চলাইনে থিমটার সারাংশ দেয়াটা পছন্দ হয়নি। যেন পাঠককে ধরে বোঝানো।

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:২৪

বাকতাড়ুয়া বলেছেন: আপনার মূল্যায়নের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। ভবিষ্যতের লেখাগুলোতে বিষয়টা মাথায় রাখবো।

২| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:৫৩

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: গল্পটা মোটামুটি লেগেছে বাকতাড়ুয়া। আর প্রথম লাইনে

রাতগুলো ক্রমাগত লাগামছাড়া হয়ে উঠছে দিন দিন

-- প্রায় সমার্থক শব্দ । ঠিক করে নেবে।
ভালো থেকো। শুভকামনা রইলো

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৬

বাকতাড়ুয়া বলেছেন: ধন্যবাদ। ভালো লেগেছে আপনার মন্তব্যটি। ভুলটা ঠিক করে নিচ্ছি।

৩| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:১৪

মামুন রশিদ বলেছেন: সব মিলিয়ে ভালো লেগেছে, শুধু ঐ পান্চ লাইন ছাড়া ।

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৩ ভোর ৫:৫৪

বাকতাড়ুয়া বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে

৪| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৩৬

জীবনানন্দদাশের ছায়া বলেছেন: গল্প ভালো হয়েছে। তবে ... ... উপরে হামা বলে দিয়েছে!

:)

৩০ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১:১৭

বাকতাড়ুয়া বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.