![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাংলাদেশি মানুষজনের উপর সাধারণত গুণী মানুষের প্রভাব পড়ে না, প্রভাব পড়ে ধান্ধাবাজ মানুষের। বিভিন্ন রকমের পীর বা ডেস্টিনি টাইপ প্রতিষ্ঠান এর বড় উদাহরণ। কোন এক ফাঁকে আমাদের উপর একজন গুণী মানুষের প্রভাব পড়ে গিয়েছে। গুণী মানুষটির নাম হুমায়ূন আহমেদ।
এই গুণী মানুষটির প্রভাব আমাদের উপর এতই ভয়াবহ ভাবে পড়েছে যে তাঁর জন্যে বাংলাদেশে আর কেউ লেখালেখি করতে পারছে না। কেউ পাঠযোগ্য কিছু লিখলেই সবাই বলছে, 'একদম হুমায়ূন আহমেদের মতো লেখা।' লেখালেখি করার চেষ্টা করে এমন মানুষদের মাঝে বাকিরা সবাই হুমায়ূন আহমেদের ছায়া খুঁজে ফিরছে।
হুমায়ূন আহমেদের শুন্যতা যে পূরণ হচ্ছে না, সেটা এই ছায়া খুঁজে ফেরা থেকে বোঝা যায়।
হুমায়ূন আহমেদ যে গুণী মানুষ সেটা তাঁর সমালোচকেরা অনেকেই স্বীকার করতে চাইতেন না। তাঁর সাহিত্য চানাচুর সাহিত্য, তাঁর নাটক সময় নষ্টের নাটক, তাঁর চলচ্চিত্র বড় পর্দার নাটক, এই ধরণের নানা সমালোচনা তাঁকে ঘিরে ছিল সবসময়ই। তবে এটা নিয়ে তাঁর তেমন কেন মাথাব্যাথা ছিল বলে মনে হয় না।
তাঁর জীবদ্দশায় একদিন একজন তাঁকে ফোন করে বললেন, 'হুমায়ূন ভাই, আপনাকে তো শুইয়ে ফেলেছে।'
তিনি বললেন, 'কে শুইয়েছে?'
'অমুক পত্রিকার সম্পাদক।'
'কীভাবে শুইয়েছেন?'
'তিনি বলেছেন, আপনার লেখায় নাকি শিক্ষণীয় কিছু নেই।'
'এটা তো উনি ঠিকই বলেছেন। আমার লেখায় শিক্ষণীয় কিছু থাকবে কেন, আমি তো পাঠ্যপুস্তক লিখি না। জীবনে একটাই পাঠ্যবই লিখেছিলাম কোয়ান্টাম রসায়ন নামে, এটা সম্ভবত উনার চোখে পড়েনি।'
শিক্ষণীয় কিছু তাঁর সৃষ্টিতে না থাকার পরও দেশের কর্তাব্যক্তিগণ বারবারই তাঁর শরণাপন্ন হয়েছেন বিভিন্ন শিক্ষণীয় জিনিসের জন্য। প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে, হুমায়ূন আহমেদ আছেন নাটক ও গান লেখার জন্যে। এই দিন দিন নয় আরও দিন আছে। স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতা চাই, হুমায়ূন আহমেদের ধারাবাহিক নাটক লাগবে। সরকার গভীর নলকূপ সস্তায় বিক্রি করতে চাচ্ছে, হুমায়ূন আহমেদের নাটক দিয়ে সেটার প্রচারণা হোক। ট্যাক্স দিতে মানুষজনকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে, হুমায়ূন আহমেদকে দিয়ে একটা রূপার ঘণ্টা লিখিয়ে ফেলা যাক।
হুমায়ূন আহমেদের সেন্স অফ হিউমার অসাধারণ ছিল।
তাঁকে একবার জিজ্ঞেস করা হলো, 'লেখালেখি করেন কেন?' তিনি বললেন, 'লিখলে আঙুলের ব্যায়াম হয়, তাই লিখি।'
তাঁর এক সমালোচক বলে বেড়াতেন হুমায়ূন সস্তা রচনা লিখেন। সেই সমালোচকের সঙ্গে এক আলোচনা সভায় তাঁর দেখা। সমালোচক নিচু কন্ঠে বললেন, 'ইদানিং কী লিখছেন?' হুমায়ূন আহমেদ সঙ্গে সঙ্গে বললেন, 'সস্তা একটা প্রেমের উপন্যাস লেখার চেষ্টা করছি। উপন্যাসটা যথেষ্ট সস্তা হচ্ছে না বলে দুশ্চিন্তায় আছি।'
হুমায়ূন আহমেদের 'সস্তা' নাটকগুলো মাঝে মাঝে দেখি। বেশিক্ষণ দেখতে পারি না। বন্ধ করে দেই। তাঁর 'সস্তা' উপন্যাসগুলোর প্রচ্ছদের দিকে তাকিয়ে থাকি। পড়তে পারি না। একটা নিরেট শুন্যতা গ্রাস করে। একজন হুমায়ূন আহমেদের প্রভাব এত বেশি কেন আমাদের উপর?
©somewhere in net ltd.
১|
১৯ শে জুন, ২০১৫ রাত ১০:০৯
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: হুমায়ুন আহমেদের শেষদিকের লেখাগুলো অগোছালো । পড়লে মনে হয় তাড়াহুড়ো করে লিখেছেন । সম্পাদকদের তাড়া ছিল, তাই হয়ত এমন করেছেন । তবে তাঁর প্রথম দিককার লেখাগুলো অসাধারণ । টিভি নাটকের বিষয়ে কিছু বলার নেই, অসাধারণ । এমন নাটক আর পাইনা । সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর সম্পর্কে বলেছেন, "হুমায়ুন ঢাকাই সাহিত্যে কোন যুদ্ধ ছাড়াই বিপ্লব ঘটিয়েছে ।"