নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলহামদুলিল্লাহ! যা চেয়েছিলাম, তার চেয়েও বেশি দয়া করেছেন আমার পরম প্রিয় রব। যা পাইনি, তা নিয়ে বিন্দুমাত্র আক্ষেপ নেই—কারণ জানি, তিনি দেন শুধু কল্যাণই। সিজদাবনত শুকরিয়া।\n\nপ্রত্যাশার একটি ঘর এখনও কি ফাঁকা পড়ে আছে কি না, জানি না। তবে এটুকু জানি—

নতুন নকিব

যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।

নতুন নকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

সিন্ডিকেটের খপ্পরে দেশ: ঘোর অমানিশায় স্বাস্থ্যসেবা

১৯ শে আগস্ট, ২০২৫ সকাল ১০:৪৩

সিন্ডিকেটের খপ্পরে দেশ: ঘোর অমানিশায় স্বাস্থ্যসেবা

অন্তর্জাল থেকে সংগৃহিত।

কল্পনা করুন—একটি সাধারণ দিন। হঠাৎ খবর এলো, আপনার প্রিয়জন একটি ভবনের ছাদে কাজ করতে গিয়ে বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে পড়েছেন। মুহূর্তের মধ্যে তিন তলা থেকে ধপ করে নিচে আছড়ে পড়লেন তিনি। মেরুদণ্ড ভেঙে গেল, শরীরের নানা হাড় চূর্ণবিচূর্ণ, বিদ্যুতের আগুনে পুড়ে গেল দেহের একাধিক অংশ। এক ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন—যা দুর্ভাগ্যক্রমে গত সপ্তাহে আমার পরিচিত একজনের জীবনে বাস্তবে রূপ নিল। তাকে দ্রুত নেওয়া হলো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক)—দেশের সবচেয়ে বড় সরকারি হাসপাতাল, যেটি সাধারণ মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল বলে পরিচিত। কিন্তু সেখানে যা ঘটল, তা কেবল একটি ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি নয়, বরং আমাদের গোটা স্বাস্থ্য ব্যবস্থার নগ্ন, নৃশংস প্রতিচ্ছবি।

এক দিন অপেক্ষার পরও মেলেনি একটি বেড। মেলেনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের দেখা। হতাশ ও দিশেহারা স্বজনদের ঠিক তখনই ঘিরে ধরল একদল দালাল। তারা মধুর ভাষায় প্রলোভন দেখাল— “স্যার, এখানে চিকিৎসা পাবেন না। এখানে থাকলে রোগীকে বাঁচাতে পারবেন না। সময় নষ্ট না করে আমাদের ক্লিনিকে নিয়ে চলুন। আমাদের ওখানে ২৪ ঘন্টা ডাক্তার পাবেন। রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবে।” মমতার টানে প্রিয়জনের জন্য মরিয়া পরিবার দালালদের ফাঁদে পা দিল। হাসপাতাল থেকে নাম কেটে রোগীকে নেওয়া হলো এক কথিত প্রাইভেট ক্লিনিকে।

তারপরের গল্প? কেবলই অমানিশার ইতিহাস। একটি মাত্র অপারেশনের জন্য গুনতে হলো ৯০ হাজার টাকা! সাথে যোগ হলো সিট ভাড়া, চিকিৎসকের ভিজিট, ওষুধপত্র এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ। হতদরিদ্র ও নিঃস্ব এই পরিবারটিকে সাহায্যের জন্য হাত পাততে হচ্ছে নানানজনের কাছে। আত্মীয়-স্বজনের কাছে অনুনয় বিনয় করে, ধারদেনা করেও পরিশোধ করতে পারছে না বিপুল এই অর্থ। অন্যদিকে, এত সর্বস্ব উজাড় করে বিপুল অর্থের বিনিময়ে প্রাপ্ত সেই চিকিৎসার মানের কোনো নিশ্চয়তা নেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসব ক্লিনিকের নেই আধুনিক যন্ত্রপাতি, নেই যথাযথ দক্ষ চিকিৎসক। কিন্তু একবার দালাল সিন্ডিকেটের কবলে পড়লে আর রক্ষা নেই।

এটি শুধু একটি পরিবারের করুণ অভিজ্ঞতা নয়—এটি আমাদের স্বাস্থ্য খাতের গভীর সংকটের প্রতিচ্ছবি। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পাওয়া যেখানে প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার, সেখানে বেড সংকট, চিকিৎসকের অভাব এবং দালালদের অবাধ দৌরাত্ম্য মিলিয়ে সেই অধিকার পরিণত হয়েছে এক নির্মম প্রহসনে। ঢামেকের মতো হাসপাতালে রোগী ভর্তির প্রথম মুহূর্ত থেকেই সক্রিয় থাকে দালাল চক্র, যাদের পেছনে থাকে অসাধু হাসপাতাল কর্মচারীদের ছত্রছায়া।

শুধু দুর্ঘটনার রোগী নয়—প্রসব, ডায়ালাইসিস এমনকি সাধারণ জ্বরের রোগীকেও এরা টার্গেট করে। আরও ভয়াবহ হলো অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট। জরুরি মুহূর্তে অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যখন মানুষের শেষ ভরসা, তখন এই চক্র সেই দুর্বলতাকেই ব্যবসায় পরিণত করে। অতিরিক্ত ভাড়া, জোরপূর্বক তাদের গাড়ি ব্যবহার করানো, এমনকি লাশ বহনের ক্ষেত্রেও অতিরিক্ত অর্থ আদায়—সবই তাদের নিত্যকার ‘ট্রেড’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শোকাহত পরিবারকে বলা হয়, “অন্য গাড়ি লাশ নেবে না”—এমন হুমকি মানবিকতার সব সীমা অতিক্রম করে।

শরীয়তপুরে সম্প্রতি অক্সিজেনের অভাবে একটি নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় অ্যাম্বুলেন্স আটকে রাখার দায় স্পষ্টভাবে এই সিন্ডিকেটের কাঁধেই যায়। ঢাকা মেডিকেলের চারপাশে অ্যাম্বুলেন্স চালক, কর্মচারী, এমনকি স্থানীয় রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠা এই চক্র প্রতিদিন অসংখ্য মানুষকে জিম্মি করে রাখছে। সরকারি বাজেটে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ হলেও, বাস্তবে তার সুফল সাধারণ মানুষ পায় না। বিনামূল্যে চিকিৎসার নামে হাসপাতালের গেটে বড় বড় ব্যানার টানানো হয়, অথচ ভেতরে প্রবেশ করলেই শুরু হয় সিন্ডিকেটের খেলা। সরকার ঘোষণা দেয় “বেড নাই, ডাক্তার নাই”—এমন অজুহাতে রোগীদের ঠেলে দেওয়া হয় দালালদের হাতে।

আমাদের স্বাস্থ্য খাত আজ ভয়ংকর এক দুষ্টচক্রের কবলে পড়েছে। এখানে মানবিকতার জায়গা দখল করে নিয়েছে টাকা আর মুনাফার নেশা। দালাল চক্র, ভুয়া ক্লিনিক আর অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট এতটাই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে যে, তারা প্রতিদিন হাজারো সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে রাখছে। যদি এখনই এই দালাল ও সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য বন্ধ না করা যায়, তাহলে স্বাস্থ্যসেবা আর মৌলিক অধিকার থাকবে না—বরং ধনী মানুষের জন্য একটি বিলাসবস্তু হয়ে দাঁড়াবে। গরিব মানুষ তখন হাসপাতালের দরজা পর্যন্ত পৌঁছালেও চিকিৎসা পাবে না, শুধু প্রতারণা আর হয়রানির শিকার হবে।

এখন প্রশ্ন খুবই সোজা—এই দেশ কি সত্যিই সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলছে, নাকি সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি হয়ে আছে? সময় এসেছে এই অমানিশার অন্ধকার ভেঙে দেওয়ার। সময় এসেছে দালাল চক্র ও সিন্ডিকেটকে আইনের আওতায় আনার। স্বাস্থ্যসেবা কোনো ব্যবসা নয়—এটি প্রতিটি মানুষের অধিকার। এই অধিকার নিশ্চিত করতে হলে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে, না হলে সাধারণ মানুষ চিরকাল এই অমানবিক সিন্ডিকেটের খপ্পরেই বন্দি হয়ে থাকবে।

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে আগস্ট, ২০২৫ সকাল ১১:২৮

খাঁজা বাবা বলেছেন: সব সিরিয়াস রোগি গিয়ে জমা হয় ঢামেক এ, হাজার হাজার রোগি। ফলে সৃষ্টি হয় সমস্যা।
অন্যন্য সরকারী হাসপাতাল ও সিরিয়াস রোগীর চিকিৎসা না দিয়ে ঢামেক এ পাঠিয়ে দেয়। ভর্তি করে না।
বিভাগীয় শহরগুলির হাসপাতালেও এক্সিডেন্টের রোগির চিকিৎসা না দিয়ে ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়।
অন্তত বিভাগীয় শহর গুলিতে হাসপাতাল গুলিতে ভালো সার্ভিস দেয়া গেলে সমস্যা কিছু কমত।

১৯ শে আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ১:৪৭

নতুন নকিব বলেছেন:



অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি তুলে ধরার জন্য। সত্যিই ঢামেকে সব গুরুতর রোগী জমা হওয়ার কারণে চিকিৎসা ব্যবস্থায় প্রচণ্ড চাপ তৈরি হয়। অন্য সরকারি হাসপাতালগুলো যদি তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করত, তাহলে ঢাকার চাপ অনেকটাই কমানো যেত। বিশেষ করে জেলা এবং বিভাগীয় শহরের হাসপাতালগুলোতে আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম ও দক্ষ জনবল দিয়ে সার্ভিস উন্নত করা গেলে অনেক রোগীকেই ঢাকায় আসতে হতো না। আপনার কথার সাথে আমি একমত—বিভাগীয় এবং জেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা শক্তিশালী করা এখন সময়ের দাবি।

২| ১৯ শে আগস্ট, ২০২৫ সকাল ১১:৪৯

বিজন রয় বলেছেন: ফাও ইনকাম করার সুযোগ বাঙালি হাতছাড়া করবে কেন?

১৯ শে আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ১:৫০

নতুন নকিব বলেছেন:



আন্তরিক ধন্যবাদ দাদা, বাস্তবতা একদম ঠিকভাবেই তুলে ধরেছেন। সত্যিই ফাও ইনকাম বা সহজ সুযোগ পেলে অনেকেই তা হাতছাড়া করতে চায় না—এটাই আমাদের সমাজের মানসিকতার একটি বড় চিত্র। আপনার মন্তব্য বিষয়টিকে স্পষ্ট করেছে। তবে মানুষের অসুস্থতা আর অসহায়ত্বকে পুঁজি করে যারা ব্যবসার ধান্দা করে, তাদেরকে মানুষ না বলে অমানুষ বা পশু বললেও কম হবে। এদের প্রতি রইল একরাশ ঘৃণা।

৩| ১৯ শে আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ১২:৫০

মাজহার পিন্টু বলেছেন: এ দেশে কিছু বলেও কোনো লাভ হয় না। আশা এখানে দুরাশা।

১৯ শে আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ২:০১

নতুন নকিব বলেছেন:



অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার কথায় দেশের বাস্তবতার এক কঠিন দিক ফুটে উঠেছে। সত্যিই অনেক সময় মনে হয় এখানে কিছু বলা বা আশা করা শুধু দুরাশার মতো। রাজ্যের হতাশারা এসে ভীড় করে চোখের সামনে। বাধাগুলো পাহাড়ের মত উঁচু হয়ে সামনে দাঁড়াতে চায়। কিন্তু আমাদের হতোদ্যম হলে চলবে না। আমরা যদি আশা হারিয়ে ফেলি, নিরাশ হয়ে থমকে যাই, তাহলে এই সমাজের ঘুণে ধরা নষ্ট সিস্টেম পরিবর্তনের কণ্টকাকীর্ণ পথ আরও কঠিন হয়ে উঠবে। তাই ছোট ছোট সচেতনতা আর প্রতিবাদও মূল্য রাখে—এই বিশ্বাস থেকেই এগিয়ে যেতে হবে আমাদের। এই দেশ আমাদেরই গড়তে হবে।

৪| ১৯ শে আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ১:৪১

নতুন বলেছেন: সরকারী হাসপাতালের দূঅবস্থা ২০২২ এ দেখেছিলাম।

যেই চিকিতসার আমাদের সরকারী হাসপাতাল দিতে পারে সেই চিকিতসার জন্য বেসরকারী ক্লিনিকে প্রতিদিন ২ হাজার টাকা খরচ করতে হয়েছিলো।

আমি বিশ্বাস করি সরকারী হাসপাতালে ঠিক মতন চিতিকসা সেবা নিশ্চিত করতে পারলে দেশে সর্বজনিন বিনামূল্যে চিতিকসা সেটা চালু করা সম্বভব। সেই সক্ষমতা অর্জনকরা সম্ভব।

কিন্তু দেশের মানুষের নৈতিকতা এতো নিচে নেমেছে যে মানুষের অসুস্থতা এখন বড় ব্যবসায় পরিনত হয়েছে ক্লিনিক, ফার্মেসীর জন্য। এদের কারনেই দেশে বিনামুল্যে চিকিতসা সেটা কোনদিনই সম্ভব হবেনা। :|

১৯ শে আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ২:০৮

নতুন নকিব বলেছেন:



আন্তরিক ধন্যবাদ ভাই, আপনার মন্তব্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাস্তবতাকে সামনে এনেছে। সরকারি হাসপাতালের সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করা গেলে সত্যিই দেশে সর্বজনীন বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা চালু করা সম্ভব। কিন্তু দুঃখজনকভাবে মানুষের নৈতিকতা আজ এতটাই অধঃপতিত যে অসুস্থতা আর অসহায়ত্বকেই ব্যবসার হাতিয়ার বানানো হয়েছে। ক্লিনিক আর ফার্মেসির এই অনৈতিক ধান্দার কারণেই জনগণের অধিকার হিসেবে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠা আজও অধরাই রয়ে গেছে। অবশ্য, এটাও ঠিক, এসব বিষয়গুলোকে ভাবনা থেকে বাস্তবে রূপদান করার মত যোগ্য লোকেরও অভাব ছিল। আপনার কথার সঙ্গে সহমত পোষন করছি—নৈতিকতার পুনর্জাগরণ ছাড়া এ সমস্যার সমাধান কঠিন। তবে বাধার উত্তাল তরঙ্গ যতই ধেয়ে আসুক, সুন্দরের পথে, আলোর পথে এই দেশকে এগিয়ে নিতে আমাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবেই ইনশাআল্লাহ।

৫| ১৯ শে আগস্ট, ২০২৫ বিকাল ৪:৩৮

প্রামানিক বলেছেন: সরকারি হাসপাতালে গেলে অর্ধেক রুগি দৌড়াদৌড়ি করতে করতেই মরে

৬| ১৯ শে আগস্ট, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২৪

শেরজা তপন বলেছেন: এ সমস্যা বহুদিনের- দিনে দিনে ভয়াবহ এক অবস্থায় পৌছেছে
অবস্থা জটিল।

৭| ১৯ শে আগস্ট, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫১

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:



আপনার সময়োপযোগী মুল্যবান পোস্টে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাত বর্তমানে দালাল চক্র, ভুয়া ক্লিনিক এবং
অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে মারাত্মক সংকটে পড়ার দৃশ্যপট সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন । সরকারি
হাসপাতালে বেড সংকট ও চিকিৎসকের অভাবের সুযোগ নিয়ে এসব সিন্ডিকেট প্রতিদিন হাজারো মানুষকে
কিভাবে জিম্মি করছে তার নিখুত বর্ণনা দিয়েছেন। এর ফলে স্বাস্থ্যসেবা নাগরিকদের মৌলিক অধিকার
থেকে ক্রমশ একটি ব্যয়বহুল বাণিজ্যে পরিণত দিকটি গুরুত্বের সহিত তুলে ধরেছেন ।

আপনার পোস্টের লেখার ভিত্তিতে বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য রোধ ও স্বাস্থ্যসেবা
মানুষের মৌলিক অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য কিছু বাস্তবমুখী সুপারিশ নীচে উপস্থাপন করছি:

১. নীতি ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ
ক) দালাল চক্র দমনে বিশেষ আইন প্রয়োগ: হাসপাতাল ও তার আশেপাশে দালাল কার্যক্রমকে শাস্তিযোগ্য
অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে তাৎক্ষণিক গ্রেফতার ও দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা।
খ) কঠোর তদারকি ব্যবস্থা: স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে হাসপাতালভিত্তিক একটি অভ্যন্তরীণ ভিজিল্যান্স টিম
গঠন করা, যেখানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতিনিধিও থাকবে।
গ) লাইসেন্স নবায়নে কড়াকড়ি: বেসরকারি ক্লিনিক/ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর লাইসেন্স প্রতি ২ বছরে
নবায়নের সময় যন্ত্রপাতি, জনবল ও ন্যূনতম মান যাচাই বাধ্যতামূলক করা। মান না পেলে তাৎক্ষণিক সিলগালা।

২. সরকারি হাসপাতালের সক্ষমতা বৃদ্ধি
ক) বেড সংখ্যা ও আইসিইউ বাড়ানো: বিশেষ করে ঢাকা মেডিকেল ও বিভাগীয় হাসপাতালে জরুরি ভিত্তিতে
অতিরিক্ত বেড ও আইসিইউ সংযোজন করা।
খ) চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগ: দীর্ঘদিন ধরে ফাঁকা থাকা পদগুলোতে দ্রুত নিয়োগ দিয়ে মানবসম্পদের ঘাটতি পূরণ।
গ) ডিজিটাল বেড ম্যানেজমেন্ট: অনলাইনে কোন হাসপাতালে কয়টি বেড ফাঁকা আছে—তা রিয়েল-টাইমে জানার
ব্যবস্থা করা।

৩. দালাল ও সিন্ডিকেট প্রতিরোধে প্রযুক্তির ব্যবহার
ক)হাসপাতাল প্রবেশপথে ডিজিটাল টোকেন ব্যবস্থা: রোগী ভর্তির জন্য দালালকে এড়াতে টোকেন সিস্টেম চালু করা,
যা সরাসরি হাসপাতালের সার্ভারে সংযুক্ত থাকবে।
খ) অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া নির্ধারণে সরকারি অ্যাপ: নির্দিষ্ট দূরত্বভিত্তিক ভাড়ার তালিকা প্রকাশ ও নিয়ন্ত্রণে মোবাইল
অ্যাপ চালু করা।
গ) ২৪/৭ হেল্পলাইন ও অভিযোগ সেল: রোগীর স্বজনরা যেন সঙ্গে সঙ্গে দালাল-সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অভিযোগ
করতে পারে।

৪. জনসচেতনতা ও নাগরিক সম্পৃক্ততা
ক)মিডিয়া ও সিভিল সোসাইটি মনিটরিং: সাংবাদিক, মানবাধিকার সংগঠন ও এনজিওগুলোকে হাসপাতাল
পর্যবেক্ষণ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা।
খ) রোগীর অধিকার সনদ প্রদর্শন: প্রতিটি হাসপাতালের প্রবেশদ্বারে স্পষ্টভাবে ঝোলানো থাকবে রোগী কী কী
সেবা বিনামূল্যে পাওয়ার অধিকার রাখেন।
গ) স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সামাজিক সংগঠনগুলোকে হাসপাতালে রোগী সহায়তায়
যুক্ত করে দালালের জায়গা সংকুচিত করা।

৫. স্থানীয় জনপ্রশাসন ও সামাজিক জবাবদিহি ( দেশে নির্বাচিত সংসদীয় সরকার না আসা পর্যন্ত)
ক) স্থানীয় প্রভাবমুক্ত হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা: হাসপাতালের ভেতরে ও বাইরে স্বার্থান্বেসী প্রভাবমুক্ত করতে
স্থানীয় প্রশাসনের নিয়মিত অভিযান।
খ) জনপ্রশাসনের রিপোর্টিং বাধ্যতামূলক: দেশে বর্তমানে ইনটারিম সরকার থাকায় স্থানীয় জনপ্রশাসন যথা
জেলা প্রশাসন ও উপজেলা নির্বাহী প্রশাসন কতৃপক্ষ তাদের এলাকার স্বাস্থ সেবা সংক্রান্ত প্রতিবেদন সরকারের
সংস্লিস্ট মন্ত্রনালয়ে নিয়মিতভাবে প্রেরণ করতে হবে।
(দেশে নির্বাচনের পরে নির্বাচিত সাংসদদের এলাকায় স্বাস্থ্য খাতের অবস্থা নিয়ে বছরে অন্তত একবার সংসদে
রিপোর্ট উপস্থাপন করতে হবে।)

গ) কর্পোরেট দায়বদ্ধতা সৃজন: বাংলাদেশে এখন করপোরেট পুজিবাদীদের দৌরাত্বই বেশি দেখা যায়।
এর হাত হতে নিস্তার পাওয়ার আশু কোন সম্ভাবনা দেখা যায়না । তাই বর্তমান পর্যায়ে বড় কোন সংস্কার না হওয়া
পর্পন্ত
দেশের বড় বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাস্থ্য খাতে সিএসআর (CSR) কার্যক্রমে বাধ্যতামূলক
অংশগ্রহণ করানোর ব্যবস্থা করা।

কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা তথা Corporate Social Responsibility(CSR)
কার্যক্রমের একটি সংক্ষিপ্ত দিক নির্দেশনাও প্রসঙ্গক্রমে এখানে তুলে দিলাম:
১. কর্পোরেট দায়াদ্ধতার প্রধান উদ্দেশ্য থাকবে :
ক)কর্পোরেট খাতের অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতকে সহায়তা করা।
খ) সাধারণ মানুষের জন্য প্রাপ্য, সাশ্রয়ী ও মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সরকারি প্রচেষ্টাকে সম্পূরক করা।

২. অগ্রাধিকারমূলক ক্ষেত্রসমূহ চিহ্নিত করে নিন্মোক্ত সহায়তাসমুহ করা যথা:
ক) প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা সহায়তার আওতায় গ্রামীণ ও দুর্গম এলাকায় ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প, মোবাইল ক্লিনিক সে সাথে মাতৃ ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম গ্রহণ করা ।
খ) হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রমে সহয়তা হিসাবে সরকারি হাসপাতালের বেড, আইসিইউ, ডায়ালাইসিস ইউনিট স্থাপন বা সম্প্রসারণে অর্থায়ন। জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জাম (অক্সিজেন সিলিন্ডার, ভেন্টিলেটর,
অ্যাম্বুলেন্স) প্রদান।
গ) ঔষধ ও চিকিৎসা সহায়তা হিসাবে দরিদ্র রোগীদের জন্য বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে ওষুধ সরবরাহ। ক্যান্সার,
কিডনি রোগ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি দীর্ঘমেয়াদি রোগে বিশেষ সহায়তা।
ঘ) স্বাস্থ্য শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে পুষ্টি, স্যানিটেশন, টিকাদান, ধূমপান ও ড্রাগবিরোধী প্রচারণা।
স্কুল ও কমিউনিটিতে স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদানে সহায়তা দান।
ঙ) স্বাস্থ্যকর্মীদের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে চিকিৎসক ও নার্সদের প্রশিক্ষণে সহায়তা।মগবেষণা ও উদ্ভাবনী
স্বাস্থ্যপ্রযুক্তিতে কর্পোরেট বিনিয়োগ।

কর্পোরেট দায়াদ্ধতার বাস্তবায়ন কৌশল নিন্মরূপ হতে পারে :
ক) পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (PPP): সরকারি স্বাস্থ্য প্রকল্পের সঙ্গে অংশীদারিত্বে কর্পোরেট সহায়তা।
খ) স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ: CSR কার্যক্রমের বরাদ্দ ও ফলাফল বার্ষিক রিপোর্টে প্রকাশ করা।
গ) স্থানীয় চাহিদা নির্ভর পরিকল্পনা: স্বাস্থ্যসেবার ঘাটতি অনুযায়ী প্রতিটি এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন CSR উদ্যোগ গ্রহণ।
ঘ) অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতি: এনজিও, সিভিল সোসাইটি এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের যুক্ত করা।

এসব পদ্ধতিগত কৌশল বাস্তবায়নের ফলে নিন্মোক্ত সুফলগুলি পাওয়া যেতে পারে:
১)সরকারি হাসপাতালের ওপর চাপ কমবে।
২) দরিদ্র জনগোষ্ঠী জরুরি স্বাস্থ্যসেবায় সহজে প্রবেশাধিকার পাবে।
৩) কর্পোরেট খাতের ভাবমূর্তি ও সামাজিক আস্থা বৃদ্ধি পাবে।
৪) টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য তথা SDG-3: Good Health & Well-being অর্জনে সহায়ক হবে।

মোদ্দা কথা CSR কার্যক্রমকে কেবল দান নয়, বরং একটি টেকসই বিনিয়োগ হিসেবে দেখা উচিত, যা জনগণের
স্বাস্থ্যসেবায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং একইসঙ্গে কর্পোরেট খাতের সামাজিক দায়বদ্ধতাকে দৃঢ় করবে।

উপসংহারে বলা যায় বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতকে সিন্ডিকেটমুক্ত করতে হলে একযোগে আইন প্রয়োগ,
সরকারি হাসপাতালের সক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রযুক্তি নির্ভর ব্যবস্থাপনা, জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং সরকারী সদিচ্ছা
এই পাঁচটি দিককে সমন্বিতভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।তা না হলে স্বাস্থ্যসেবা থেকে গরিব মানুষ আরও
বঞ্চিত হবে এবং এটি কেবল ধনীদের বিলাসবস্তুতে পরিণত হবে।

সকলকে মনে রাখতে হবে স্বাস্থ্যসেবা কোনো ব্যবসা নয়, এটি প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার।আপনার
পোস্টে থাকা আলোচনার প্রেক্ষাপটে লেখা আমার এই সুপারিশ মালার সাথে আপনার সুবিবেচনায় ও এই
পোস্টের মন্তব্যের ঘরে আসা সকল গুণী ব্লগারের অন্যান্য সুপারিশ বা পরামর্শ গুলিকে যুক্ত করে সেগুলি
বাস্তবায়নের জন্য প্রধান উপদেষ্টা সহ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা
করে দেখতে পারেন । আমি বিশ্বাস করি বর্তমান পরিবর্তিত সময়ে আপনি তা পারবেন ।

অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.