![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ঘন্টাখানেক হলো আদ্রিতা এ বাড়িতে এসেছে। চারিদিকের উৎসবের রং। হৈ হুল্লোড়ে পুরো বাড়িটা যেন গমগম করছে। সিনেমার দৃশ্যপটের মতো যেন একটার পর একটা পর্ব শেষ হচ্ছে। আদ্রিতার চোখে এখনো কেমন একটা ঘোর লেগে আছে। সব কিছু যেন খুব দ্রুত বদলে যাচ্ছে তার জীবনে। পরিচিত সব কিছু ছেড়ে সে চলে এসেছে এই নতুন পরিচিত মানুষটির সাথে।বাস্তবতাটুকু ঠাহর করতে পারছে সে কিন্তু বিশ্বাস করতে পারছেনা কেন যেন!মনে হচ্ছে সে কোন স্বপ্নের মধ্যে আছে। এই কিছুক্ষনের মধ্যে আম্মু এসে ডাক দিয়ে ঘু ভাঙ্গাবেন। তারপর আবার সেই বাড়ি, বাসার সামনের চিলতে বাড়ান্দা, গ্রিলে ঝোলানো পাতা বাহারের গাছটা সব আবার সামনে চলে আসবে তার। আদৃতা জানে আসলে এসব কিছুই হবে না। সে একটা নতুন ভূবনের সদস্য হয় গেছে। যেখানে তার চাওয়া পাওয়ার কেন্দ্র বিন্দুতে একজন নতুন মানুষ যায়গা করে নেবে, যার সাথে একাকার হয়ে যাবে তার নিজের ভালো লাগা, চাওয়া পাওয়া। কিন্তু কিভাবে সম্ভব? এই মানুষটার সাথে সর্বসাকুল্যে কথা হয়েছে মাত্র কয়েক মিনিট। এই অপরিচিত মানুষটাকে কিভাবে আপন করে নেবে সে; কিভাবে?"
আদ্রিতা হিসেবী মানুষ। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই । আবেগের চেয়ে বাস্তবতাকে সে গুরুত্ব দেয় সব সময়। তাই স্রোতের প্রচলিত ধারায় সে গা ভাসায় নি কখনো। আধুনিক হতে গিয়ে যথেচ্ছ জীবনাচরণ তার অভ্যাস ছিলো না। সে তাই এই পুরো সময়টাই সে নিজেকে আগলে রাখার চেষ্টা করেছে বারবার। এতে যে তার কষ্ট হয়নি তা নয় তবু সে সব প্রতীক্ষিত একজনের জন্যেই অপেক্ষা করে কাটিয়ে দিয়েছে সময়টুকু। যখন আশেপাশের বান্ধবীরা প্রেম ভালোবাসার উদ্দাম স্রোতে সাতার কেটেছে নিয়মিত আদ্রিতা ছিলো নির্বিকার। তার শালীনতায় মুগ্ধ হয়ে মাঝে মধ্যেই কেউ কেউ অনুরক্ততা প্রকাশ করেছে, সম্পর্কে জড়াতে চেয়েছে। আদৃতা সাড়া দেয় নি। এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেছে তাদের।
তার নিজেরও কখনো কখনো একজন ভালো সংগীর অভাব বোধ হয়েছে। ইচ্ছে করেছে কারো সাথে তার সুখ দুঃখ গুলো ভাগাভাগি করার। তবু সে ধৈর্য ধরেছে একটি সুন্দর সময়ের জন্য। বারবার সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করেছে উত্তম সংগীর জন্য।অপেক্ষাকেই সে সঙ্গী বানিয়ে নিয়েছে একসময়। ভাবতে চেয়েছে এমন একজনের কথা যে কী না একই ভাবে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে তার জন্য। আজ সে দিন এসেছে। গালিবের সাথে তার বিয়ের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ। এখন তারা স্বাধীন। হৃদয়ের অনুভূতির ভাগাভাগিতে আর কোন বাধা নেই আজ। বরং পূণ্যেরা যেন জড়াজড়ি করে থাকে এই অকৃত্রিম ভালোবাসাতে।
গালিব পেশায় একজন ডাক্তার। এমবিবিএস পাশ করেছে বছর দুই হলো। প্রতিষ্ঠিত হতে এখনো ঢের বাকী। গালিব তার বাস্তবতাগুলো, সীমাবদ্ধতাগুলো সেদিন ভালো করেই বুঝিয়ে বলেছে। তার জীবন সংগ্রামের সহযোদ্ধা হলে খুব নিকট সময়ে যে স্বাচ্ছন্দ্যের মুখ দেখা যাবে না এটা খুব জোর দিয়ে বলেছে গালিব। তার পেশাগত ও পারিবারিক সীমাবদ্ধতাগুলোকে সুন্দর করে তুলে ধরার চেষ্টা করেছে সে। বলেছে খুব মনের জোর না থাকলে দয়া করে বিয়েতে যাতে মত না দেয় আদৃতা। তবে হ্যা, একজন সৎ সঙ্গীর দায়িত্ব পালনে তার দায়িত্ববোধের ও আন্তরিকতা যে তার থাকবে না সেটা ও সে জানিয়েছে ঠিক ঠিক।
এরপর আদৃতা চিন্তা ভাবনা করেছে বেশ কয়েকদিন। তারপরসে মত দিয়েছে বিয়ের ব্যাপারে। মানুষটার একেবারে সাধারন জীবন যাপন তাকে সত্যিই প্রভাবিত করেছে। আব্বু আম্মু খুব একটা আগ্রহী ছিলেন না। তারা একটু সংশয়ে ছিলেন এশ। একেতো গালিব একেবারেই চতুন ডাক্তার। তার প্রতিষথা পেতে নেহায়েৎ কম সময় লাগবে না তার ওপর আবার ওর কাঁধেই পুরো পরিবারের ভার। তাদের আদরের মেয়েকে এমন জায়গায় বিয়ে দেয়ার ইচ্ছে ছিলো না বললেই চলে। আসলে আদ্রিতার মামার জোড়াজুড়িতেই বলতে গেলে বিয়েটা হলো। উনি বললেন, খুবই ভালো ছেলে নাকী তার ওপর দারুণ মেধাবী। এই ছেলে এক সময় সত্যি খুব ভালো কিছু করবে। তারা না কইরেই দিচ্ছিলেন তখন আদ্রিতাই বরং বাধ সেধেছে। বাবা মাকে সাহস দিয়েছে। বলতে গেলেই তার উদ্যোগেই বিয়েটা হচ্ছে শেষতক। বিত্তের জন্য তার মোহ কখনোই ছিলো না তার। আর তার যুক্তি ছিলো যে মানুষতাকে ভালো মনে হয়েছে তার আর বিত্ত বৈভবের কথা যদি বলা হয় তাহলেই কর্ম জীবনের অনেক সীমা বদ্ধতা থাকবে এটাই স্বাভাবিক ।এই সংগ্রাম মুখর সময়ে স্ত্রী যদি স্বামীর পাশেই না দাড়ালো তবে আবার সে কেমন স্ত্রী!
একা ঘরে বসে এই সব নিয়েই ভাবছিলো আদ্রিতা। গত কয়েকটা বলতে গেলে একটা স্রোতের স্রোতের মতোই কেটে গেছে। নানামুখী ব্যস্ততায় একটু নিরিবিলি বসে ভাবার সুযোগটুকু সে পায় নি। তবে এক অজানা শংকা তাকে সব সময় তাড়া করে ফিরেছে। আজ বলতে গেলে একাকী জীবনের সর্বশেষ হিসাব নিকাশ টুকু গুছিয়ে নিচ্ছে। পাশাপাশি চেষ্টা করছে এই পরিস্থিতিতে কিছুটা ধাতস্থ হওয়ার। এক সময় গালিব ঘরে ঢুকলো। অনুচ্চ কণ্ঠে সালাম দিলো একটা। লজ্জায় আদ্রিতা মাথা নিচু করে ফেলেছে। সে পড়ে মেডিকেলের তৃতীয় বর্ষে । এঈ নতুন পরিচিত মানুষটা তাকে সালাম দেবে এটা সে ভাবতে পারেনি। এখন কী সে জবাব দেবে? এটা সেটা ভেবে জবাবই দেয়া হলো না। নীরব মূহুর্ত কেটে গেলো বেশ কিছুক্ষণ।
গালিব জিজ্ঞেস করলো, আচ্ছা তোমার আব্বু তোমাকে অনেক ভালোবাসে তাই না?
হুম।
কিভাবে বুঝলেন? এবার আদ্রিতাকে কিছুটা সহজ হতে দেখা গেলো।
না আসার সময় দেখলাম, আমাদের বিদায় দেয়া হবে অথচ ওনাকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। পরে কে যেনো ওনাকে খুজে নিয়ে এলো তখন দেখি উনি কেদে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছেন। এটা আমার অভিজ্ঞতায় প্রথম।
কেন আগেও বিয়ে করেছেন নাকী? একটু হাসলো আদৃতা। আস্তে আস্তে সহজ হচ্ছে সে।
না, তা করিনি কিন্তু বিয়ের অনুষ্ঠানেতো গিয়েছি। তাই বললাম।
আসলে আমি চলে আসাতে আব্বুর খুব কষ্ট পেয়েছেন। বলে বেশ কিছুক্ষণ ও আর কথা বললো না না। কান্না লুকোনোর চেষ্টা করছে সে। বেশ কিছু সময় কেটে গেছে। কোন কথা নেই।
এক সময় আদ্রিতাই কথা বললো, খুব কাতর স্বরে বলো,
মানুষটা একদমই নিজের খেয়াল রাখে না। আমিই তাকে দেখে রাখতাম। আব্বু অনেক সিগারেট খান। কোনভাবেই আমরা থামাতে পারিনি। কতো ভাবে যে বুঝিয়েছি। একসময় ফুসফুসের কর্মক্ষমতা কমে গেলো। এখন সিগারেট খুব একটা খান না তবে মাঝে মধে ঠিকই খান। বেশ কিছুদিন হলো কাশির জন্য সারা রাত ঘুমুতে পারেন না। তবু ঔষধও খেতে চান না। কি যে একটা অবস্থা। আমি মেজাজ খারাপ করে তার সাথে কথা বন্ধ করে দিলাম। এক সময় বাধ্য হয়ে ঔষধ খাওয়া শুরু করলেন। আবার একটু সুস্থ্য হলে আবার সব বাদ। আব্বু নিজের কোন খেয়ালই রাখেন না।
এখন কি অবস্থা?
এই কিছুদিন আগেও হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এই পর্যন্ত অনেকবার হলো। জানেন, আব্বুর হার্টের অবস্থাও নাকী খারাপ হয়ে গেছে। কিছু দিন আগে ডাক্তার বললো।
হ্যা, ফুসফুসে সমস্যা হলে একসময় হার্ট ফেইল করে। আরো পড়ে তোমরা পড়বে এগুলো।
ইদানিং কাজের চাপে আব্বুর শরীর টা বেশী খারাপ হয়ে গেছে। গত কয়েকটা দিন আব্বু রাতে কাশির জন্য ঘুমাতে পারেনি আর আমি তার ওপর রাগ করে কেদেছি শুধু।পৃথিবীতে এতো বাতাস কিন্তু তার জন্য বাতাসের এতো অভাব। বারবার শুধু আব্বুর ওপর অভিমান হয়েছে। আব্বুটা এমন কেন? নিজের প্রতি এতোটা উদাসীন কিভাবে হয় একজন মানুষ?
////////////////// কিছু এড করতে হবে।
বাবারা এমনই হয়।তারা নিজেদের কে ভালোবাসতে চান না। সবটুকু ভালোবাসা আমাদের জন্য বরাদ্দ করে দেন। শোন আমার জীবনের গল্প বলি একটা। আমি তখন ক্লাস টেনে পড়ি। আব্বু একটা প্রাইভেট ফার্মে চাকরী করেন।আমরা একটা মিরপুরে থাকি তখন। সুন্দর গোছালো একটা ফ্ল্যাটে তখন আমাদের গোছানো সংসার। আব্বু সকাল বেলা অফিসে যান। যাওয়ার সময় রিকসায় ছোট ভাইকে স্কুলে দিয়ে আসেন। আব্বু অফিস থেকে আসার সমইয় প্রায় প্রতি দিনই এটা সেটা কিছু নিয়ে আসেন। মাঝে মাঝেই আমাদের সব ভাই বোন দের নিয়ে আড্ডা দিতে বসেন, ঘুরতে নিয়ে যান, একেবারে ছবির মতো সাজানো সংসার
আব্বু খুব সুন্দর গল্প বলতে পারেন। আমরা আড্ডা দিতে বসলে আব্বু খুব মাতিয়ে রাখতেন আর অসাধারণ মজার মজার সব গল্প বলতেন। এগুলো শুনে আর আমরা হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেতাম।আবার অনেক গুরুত্ব পূর্ণ কথাও গল্পচ্ছ্বলে বলে ফেলেন আমরা শুনি আলোড়িত হই, কথাগুলো মনের মধ্যে গেথে রাখার চেষ্টা করি। আবার আমাদের আমাদের পড়ালেখার খোজ খবরও রাখেন ঠিক ঠিক। আমরা চার ভাই বোনের মডেল ছিলো আব্বু। আমরা সব সময় তাঁর মতো হতে চাইতাম। সব কিছু সহজ ভাবে বোঝার চেষ্টা করি এবং দায়িত্বে অবহেলা না করেও যে সবাইকে ভালোভাবে সময় দেয়া যায় আবার নিজের কাজেও এগিয়ে থাকা যায় এই অসাধারন একটা ব্যাপারটা তখন তার কাছেই আমরা শিখি।
আব্বুর খুব মজার একটা গুণ ছিলো আব্বুর সামনে কেউ গম্ভীর থাকতে পারতো না। আব্বু যখন আমাদের সাথে আড্ডা দিচ্ছেন আম্মু হয়তো এলো মনে করিয়ে দিতে সপ্তাহখানেক বাদেই আমার পরীক্ষা। মৃদু একটা ঝাড়িও দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন এরমধ্যে আব্বু আম্মুকে এমন কিছু একটা বললেন যে আম্মুই শেষ পর্যন্ত কপট রাগ ভুলে হেসে দিতেন। অবশ্য আমরা লেখা পড়াকে মজার বিষয় হিসেবেই নিতাম বলে ক্লাসের একেবারে প্রথম না হলেও প্রথম দিকের রোল নাম্বার গুলো আমাদের জন্যেই বরাদ্দ থাকতো নিয়মিত।
আব্বুর একটা অভ্যাস ছিলো আব্বু কোন ছোটখাটো একটা উপলক্ষ্য পেলেই মোটামুটি উৎসব বানিয়ে ফেলতেন একটা। সেবার আমি এস এস সি পরীক্ষায় খুব ভালো ফলাফল করলাম আব্বু তো প্রচন্ড খুশি। আব্বু আসার সময় একটা বড় গোল্ডেন ক্রেস্টের অর্ডার দিয়ে এলেন। যেহেতু ক্রেস্ট টা এর পরদিন দিবে তাই সেদিন পরিকল্পনা হলো বাসায় একটা ভুড়িভোজ হবে। বড় চাচাকে, ফুদুদেরকে দাওয়াত দেয়া হলো। আব্বুর অফিসের বড় কর্তাকেও বলা হলো। আব্বু সেদিন ছুটি নিলেন। সকালবেলা আব্বু আমাকে নিয়েই বের হলেন বাজার করতে। দুজন মিলে কয়েকঘন্টা লাগিয়ে অনেক কিছু কিনলাম। মোটামুটি বিয়ের বাজারের মতো অবস্থা। আমরা বাসায় আসলাম এগারোটার দিকে। আম্মু এবার বাজার গোছাতে বসলেন।
আধা ঘন্টার মতো হয়েছে এমন সময় আব্বুর হঠাৎ প্রচন্ড বুকে ব্যাথা শুরু হলো। ব্যাথাটা আরেকটু আগেই শুরু হয়েছিলো। আব্বু ভেবেছিলেন গ্যাস্ট্রিকের ব্যাথা হয়তো তাই একটা ট্যাবলেট খেয়ে অপেক্ষা করছিলেন। যাইহোক আমরা তো শুনে সাথে সাথে রিকসায় করে পাশের হাসপাতালে নিলাম। কিন্তু আব্বুর অবস্থা তখন খুব খারাপ। ব্যাথায় একদম দিশেহারা অবস্থা। আমাকে কাতর নয়নে একবার বললেন, গালিব, আমার খুব কষ্ট হচ্ছেরে। ব্যাথাটা কমানোর কোন ঔষধ দিতে বলনা বাবা। আমি সহ্য করতে পারছি না এবং সেবারই প্রথম আমি আমার বাবার চোখে পানি দেখলাম। ডাক্তাররা বোঝালেন এই থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এর চিকিৎসা সম্ভব না, জেলা সদরে কিংবা ঢাকায় নিতে হবে অবশ্যই। শুধু প্রাথমিক চিকিৎসাটুকু তারা দিয়ে দিলেন।
আমরা দ্রুত এম্বুলেন্স যোগাড় করে ঢাকা নিয়ে গেলাম। ডাক্তাররা সাথে সাথেই চিকিৎসা শুরু করলেন কিন্তু কোন আশার কথা শোনাতে পারলেন না। পরীক্ষা নিরীক্ষা করে তারা বললেন, বাচার সম্ভবনা খুবই কম। যদি বেঁচেও যান তাহলেও অনেক গুলো ঔষধের ওপর থাকতে হবে আজীবন। আর হার্টের যে পরিমান ক্ষতি হয়েছে আর কখনো তেমন হাটা চলাও করতে পারবেন না। বিশ্বাস করো, আমার তখন মনে হয়েছিলো, আব্বু যদি না থাকেন তাহলে আমাদের মাথার ওপর ছাদ হিসেবে থাকার মতো কেউ থাকবেন না। যদি কোনরকমেও বেচে থাকেন জীবন তো চলে যাবে কিন্তু এটাতো অতঃত দেখবো যে আব্বু আমাদের সাথে আছেন। তাই সর্বচ্চ চেষ্টাই করতে লাগলাম আমরা। পরিস্থিতি ভালো খারাপের মধ্যদিয়ে এগিয়ে চললো।
আমি সারাক্ষণ সিসিইউর সামনে উদ্বিঘ্ন মুখে দাড়িয়ে থাকি। আত্মীয় স্বজনেরা আমাকে বার বার বলেন একটু বিশ্রাম নিতে। আমি সাহস পাই না। আমার অবর্তমানে যদি আব্বুর কিছু হয়ে যায়, আব্বু যদি আমাকে দেখতে চান? আমি যদি না থাকী তাহলে তাহলে আমি নিজেকে কী বলে শান্তনা দেবো? বাসার বাজার গুলোতো সব ফ্রিজে রয়ে গেছে। আব্বু সুস্থ হোক একেবারে বাপ বেটা মিলে আড্ডা দিলেই আমার শান্তি মিলবে আর কিছুতে নয়। তিনদিন হয়ে গেছে। আমি পাগলের মতো হয়ে গেছি। কেউ কিছু বললে প্রচন্ড রেগে যাচ্ছি। সিসিইউর সামনে থেকে মূহুর্তের জন্যেও যাচ্ছি না। ডাক্তাররা তবু আমাকে আব্বুর ব্যাপারে কিছু বলছেন না। বড় চাচাকে ডেকে নিয়ে কী যেনো বললেন তারা, চাচা আমাকে কিছুই বললেন না।
সে দিন বিকেলে আব্বুর অবস্থার একটু উন্নতি হলো। আব্বু আমাদের দেখতে চাইলেন। সবাই একে একে গিয়ে দেখা করে এলো। গেলাম না শুধু আমি। আমি ভয় পাচ্ছিলাম আব্বুর সামনে গেলে আমি কান্না সামলে রাখতে পারবো না। যেই আব্বুর কাছে যায় আব্বু জিজ্ঞেস করেন, গালিব আসেনি? ওকে একটু দেখতে ইচ্ছে করছে। অবশেষে সবার জোড়াজুড়িতে আমি যেতে রাজী হলাম। আব্বুকে দেখলাম তিনদিন পর। একী অবস্থা তাঁর। মাত্র তিন দিনে আব্বুর বয়স বোধহয় ত্রিশ বছর বেড়ে গেছে। আমি দাত মুখ শক্ত করে তার সামনে গিয়ে দাড়ালাম।
আব্বু বললো, কিরে কেমন আছিস?
কোনরকমে কান্না চেপে বললাম, ভালো।
তুই না কী সারাক্ষণ এখানে দাড়িয়ে থাকিস।
আমি চুপ। কথা বলতে গেলে সামলাতে পারবো না নিজেকে। ব্যাপারটা আব্বু ঠিকই বুঝলেন। বললো, আরে, দাড়িয়েতো থাকবিই! তোর আব্বু অসুস্থ না, তোর কী বিশ্রামের সুযোগ আছে। অবশ্যই দাড়িয়ে থাকবি। আব্বু একটু থেমে থেমে কথা গুলো বলছেন। কিন্তু বাবা এখানে তো আমাকে অনেকদিন থাকতে হবে। তুই তো একটু বিশ্রাম না নিলে তোকেও হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। তখন ঝামেলা হবে না? তখন আমার খোজ কে নেবে বল বাবা? তার চেয়ে তুই আজ একটু তোর চাচার বাসায় গিয়ে বিশ্রাম নিয়ে আয়। আমার অবস্থাতো ভালোর দিকে। দেখিস আমরা আবার একসাথে আড্ডা দিবো। তুই এতো চিন্তা করিস না বাবা। আমি আব্বুর কথা শুনে অবশেষে চাচার বাসায় বিশ্রাম নিতে গেলাম দুপুরে। যাওয়ার দু তিন ঘন্টা পর শুনলাম বাবার অবস্থা হঠাৎ আবারো খারাপ হয়ে গেছে এবং কিছুক্ষণ আগে বাবা মারা গেছেন। আব্বু তার কথাটা রাখলেন না।
গালিব আর কথা বলতে পারলো না। একজন বিয়ের শাড়ি পড়া রুপবতী তরুণী তার স্বামীর চোখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। গালিবের চোখের অস্শ্রুর উষ্ণ প্রসবণ যেনো তার চোখকেও প্লাবিত করে দিচ্ছে। তার হৃদয়ে এই মানুষটার জন্য কেমন একটা গাঢ় মায়া অনুভব করতে থাকে।
২| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:১১
চরন বিল বলেছেন: Thanks
©somewhere in net ltd.
১|
১৯ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৫:৪৬
কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: আপনাকে গল্প লেখার চেষ্টা করতে দেখে ভালো লাগল। প্রথাগত রাজনৈতিক লেখার পাশাপাশি আপনি যে সৃজনশীল কিছু চেষ্টা করছেন, সেটা বেশ আনন্দের।
শুভেচ্ছা রইল।