![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মাসখানেক আগের টানা মুষল ধারার বৃষ্টিতে রীতিমত পানিবন্দী হয়ে থাকতে হয়েছিল দিন তিনেক । পাড়ার গলি থেকে মূল রাস্তায় যেতে হয়েছিলো আক্ষরিক অর্থেই এক হাঁটু পানি ভেঙে । থৈথৈ পানিতে মাছ শিকারের মহোৎসব আমার পাঁচ বছরের ছেলেকে ও প্রবলভাবে টেনেছিল । আমার সম্মতি সত্ত্বেও বৌয়ের সুতীব্র আপত্তির কারণে তার মনোবাঞ্ছা পূরণ হয়নি ।শিশুমনের আক্ষেপ আমাকে ছুঁয়ে গেলে আমি নিজেই আসা যাওয়ার পথে শূণ্য হাতে মাছ ধরার চেষ্টা করে গেছি । পানিতে ভাটার টান লাগতেই আমার হাতে অবশেষে একটি এক ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের তেলাপিয়ার পোনা ধরা পড়ে । জারে রক্ষিত নানা রংয়ের রুপবান মাছের সঙ্গে ঠাঁই করে দেয়া হল কদাকার তেলাপিয়ার বাচ্চাটিকে । প্রাকৃতিক পরিবেশে বেড়ে ওঠা মাছের সঙ্গে ঘরের কৃত্রিম আঙ্গিনার রুপবান মাছের মিথস্ক্রিয়া কেমন হতে পারে - আমার চোখ সেদিকে আলাদা দৃষ্টি রেখেছিল । ইম্যুনিটির ভিন্নতা ও প্রাকৃতিক পরিবেশের অনুজীব অবশ্যই কিছু না কিছু ঘটনা ঘটাবে , কে বা কারা জয়ী হয় তাই ছিল আমার এক্সপেরিমেন্ট । দু এক পরই একটা একটা করে জারের আদিবাসীদের মৃত্যু হতে লাগলো । বাচ্চাদের তীব্র প্রতিবাদ ও আপত্তির মুখে ও হাল ছেড়ে না দিয়ে তেলাপিয়ার বাচ্চাটিকে রক্ষা করতে আমাকে যথেষ্ট বেগ পেতে হয় । একটার জায়গায় তিনটা চারটা বাহারী মাছ যোগান দিয়ে তার উচ্ছেদ ঠেকাতে হয়েছে । একটা সময় মাছের মৃত্যুর গতি কমে যায় , আর তেলাপিয়ার বাচ্চাটিও প্রায় তিনগুণ বেড়ে যাওয়ায় তার কদাকার রুপটিও ঢাকা পড়ে যায় । ইম্যুনিটির একটা ইকুইলিব্রিয়াম তৈরি হয়ে যায় ধীরে ধীরে । সত্যিটা হল তেলাপিয়ার বাচ্চাটার ইম্যুনিটি কমে গেছে ফলে অন্যান্য রুপবান মাছের জন্যে সে আর হুমকি হতে পারছেনা । প্রতিনিয়ত পানি বদলাবার কারণে প্রকৃতি থেকে নিয়ে আসা অনুজীবের সংখ্যা ও এমন পরিমানে কমেছে যে সেগুলো তাদের ধার হারিয়েছে । তেলাপিয়ার বাচ্চাটার প্রতি আমার কনসিডারেশন ছিল সেতো স্বেচ্ছায় আসেনি তাই তার অধিকার সংরক্ষণ করা আমার দায়িত্ব । আবার এই মুহুর্তে যদি তাকে যেকোন একটা পুকুরে ছেড়ে দেয়া হয় সেখানে তার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কমই । চার্লস ডারউইনের বিগলে চেপে বিশ্ব ভ্রমণের একটা ঘটনা এখানে প্রাসঙ্গিক । তিনি অস্ট্রেলীয়া থেকে ফেরার পথে কয়েকজন আদিবাসীকে বৃটেনে নিয়ে এসেছিলেন । সভ্য সমাজের সব নিয়ম কানুন শিখিয়েছিলেন । সেই মানুষ গুলো ও একটা পর্যায়ে সভ্য সমাজের আচার আচরণ ও পোষাক পরিচ্ছেদে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ার পর তাদেরকে আবার ও তাদের আদিবাসী সমাজে ফেরত পাঠানো হয় । কয়েক বছর পর ডারউইন আবারো অস্ট্রেলীয়া ভ্রমণ করেন , সভ্য সমাজের আদিবাসী প্রতিনিধিরা কেমন আছে তা দেখতে সেখানে হাজির হন । তিনি অত্যন্ত বিস্ময় ও পরিতাপ নিয়ে লক্ষ্য করলেন যে নিজের পরিবেশে তারা এমনভাবে বিলীন হয়ে গেছে যে তাদের দেখে বোঝার কোন ই উপায় নেই যে একদা তারা বৃটিশ এটিকেট ভালভাবেই মানিয়ে নিয়েছিল । ডারউইন তাদের কে নিয়ে আসতে চাইলে কেউ ই শেষতক রাজী হয়নি । মানুষের মত এত ফ্লেক্সিবল এডাপটেশন অন্য প্রাণীর নেই বলেই মানুষ ছাড়া অন্য কেউই পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তরে এমন উচ্চকিত হয়ে দাপিয়ে বেড়ায় না ।তাই অনিচ্ছায় আমার ঘরের অতিথি হয়ে আসা এই তেলাপিয়ার বাচ্চাটাকে স্বাভাবিক ভাবে বাঁচতে দেয়াই উচিৎ । এবং আমার বাচ্চারা এ ব্যাপারে আমার সাথে একমত ।
©somewhere in net ltd.
১|
০২ রা নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০১
বুনিয়াদি ভ্রমঘাতিকা বলেছেন: বিবর্তন নিয়ে মানুষের অনেক ভুল ধারনা আছে । আমি বিবর্তন নিয়ে একটা সিরিজ লিখছি। চাইলে দেখতে পারেন
বিবর্তন ১০১ (কিউ অ্যান্ড এ)