নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চরন বিল

চরন বিল › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্লাবনের স্বপ্ন

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৪২

প্লাবন আজ নেই। ভাবতেই অশ্রু সংবরণ করতে পারছি না। যার সাথে কাটিয়েছি জীবনের অনেকটা সময়, আজ সে নেই। জীবনের সব দিকে আজ যেন শূন্যতার ছড়াছড়ি। মনের ভেতর যেনো ব্যাথার পাহাড় গুমড়ে মরছে।

সেদিন প্লাবন আর আমি মার্কেটে যাচ্ছিলাম। উদ্দেশ্য ও একটা শার্ট কিনবে। পথে ফুটপাতের উপর তিন চারটি ছোট ছোট ঘর। একটা ঘরের সামনে ময়লা শার্ট আর ছেড়া প্যান্ট পড়ে বসে বসে কাঁদছে সাত আট বছরের একটা ছেলে। মাকে বলছে, “মাগো, ওমা কিছু খাইতে দেও না।, খুব ক্ষিদা লাগছে।” মহিলাটি দরজার পাশে বসে তার জীর্ন মলিন কাপড়ের আঁচল দিয়ে তার মুখ চেপে কাদছে। আমরা দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছিলাম ব্যাপারটা। তার মা অনুযোগের সুরে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, “হের বাপে দুইদিন ধইরা জ্বরের লাইগ্যা কামে যাইতে পারতাছেনা। ঘরে একটা দানাও নাই, খাওন দিমু কই থাইক্যা?” আমাদের মন খারাপ হয়ে গেলো। প্লাবন ধীরপদে এগিয়ে গেলো মহিলাটির সামনে। পকেট থেকে পাঁচশত টাকা বের করলো। বাচ্চাটার মাকে টাকাটা দিয়ে সে অনুচ্চ কন্ঠে বললো, “এই টাকাটা দিয়ে আপাতত আপনাদের খাবারের ব্যবস্থা করুন আর চাচার কিছুটা ওষধ ও হয়তো কিনতে পারবেন।” দরিদ্র মহিলাটি একটু ইতস্তত করে টাকাটা নিলো। টাকাটা হাতে নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো সে। তারপর বাস্পরুদ্ধ কন্ঠে কিছুক্ষণ পর বললো, “বাবা, বিপদের দিনে তুমি আমরারে সাহায্য করলা, আল্লাহ তোমারে অনেক বড়ো করুক।” তার চোখে কৃতজ্ঞতা ধোয়া জল। আমরা আর দাড়ালাম না। শপিং এ না গিয়ে রওয়ানা দিলাম ধর্ম সাগরের দিকে। আসলে সেদিন আমার চোখেও প্লাবন অন্য উচ্চতায় পৌছে গিয়েছিল। কেমন একটা সমীহ তৈরী হয়ে গিয়েছিলো ওর প্রতি অবচেতনেই।

ধর্ম সাগরের এক পাড়ে গিয়ে বসলাম আমরা। দুজন তখনো নীরব। কিছুক্ষণ পর নীরবতা ভেংগে প্লাবন বলে উঠলো, “মেহেদী বলতো, এই স্বাধীন দেশের মানুষ কবে একটু সুখের মুখ দেখবে? দু বেলা দু মুঠো ভাত খেতে পারবে?” আমি নীরব। তার প্রশ্নের কোন সদুত্তর দিতে পারলাম না। এর উত্তর আমার জানা নেই। সম্ভবত কারোরই জানা নেই। প্লাবন বললো, মন চায় এই দুঃখী নিপীড়িত মানুষগুলোর জন্য কিছু করি। সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে দিয়ে ওদের জন্য কাজ করি। দোয়া করিস যেন একদিন সত্যিই কিছু করতে পারি ওদের জন্য।”

তারপর কয়েকদিন কেটে গেছে। সামনে ফার্স্ট ইয়ার ফাইনাল। লেখাপড়া নিয়ে দুজনই ব্যস্ত। প্লাবন ও যথেষ্ট পড়ালেখা করছে। এস.এস.সি. তে ওর চমৎকার রেজাল্ট ছিলো। এইচ.এস.সিতেও ভালো করার প্রত্যয় নিয়ে এগুচ্ছে সে। তখন শীতকাল চলছে। সকাল বেলা বারান্দায় বসে পড়ছিলাম। বাইরে সমগ্র পৃথিবী যেন কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে তখনও শুয়ে আছে। হঠাৎ প্লাবণ নতুন প্রস্তাব নিয়ে হাজির। অবস্থাপন্ন মানুষদের থেকে শীত বস্ত্র সংগ্রহ করে তা শীতার্ত মানুষদেরকে বিলিয়ে দেবে। মানুষের ভালো করার, একটু পাশে দাড়ানোর এই আহবান কার না ভালো লাগে! আমরা সব বন্ধুরা সানন্দে রাজী হয়ে গেলাম প্রস্তাবে। বিপন্ন মানবতার সেবায় পেলাম প্রশংসনীয় সাড়া। শীতার্ত মানুষগুলোও অনেক খুশি হলো। এই প্রচন্ড শীতে শীতবস্ত্র যেন তাদের কাছে দুর্লভ কোন বস্তু।

কাজটা শেষ হওয়ার পর প্লাবনের মুখের তৃপ্ত হাসিটা আজও আমার দু চোখে ভাসে। আমার স্মৃতির এলবামে তার হাস্যোজ্জ্বল চেহারাটা আজও দীপ্তিমান। বিতরণের কোন এক ব্যস্তমূহূর্তে প্লাবণ আমাকে বলেছিলো, “বন্ধু, কবে যে এমন করে দেশের সকল দুখী মানুষের মুখে হাসি ফুটবে আল্লাহই জানেন।” আমি ওর চোখে যুগপৎ আশা নিরাশার আলো আধারী দেখতে পেলাম।

দিনকয়েক আগে কলেজ ছুটি হয়েছে। আমি আর প্লাবন হেটে হেটে হোস্টেলের দিকে আসছিলাম। হঠাৎ এক যন্ত্র দানব ট্রাক গতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে প্লাবনকে ধাক্কা দিল। প্রচন্ড ধাক্কায় প্লাবন ছিটকে পড়লো পিচ ঢালা রাস্তায়। আর পাশে দাড়িয়ে থেকেও কিছুই করতে না পারার তীব্র দুঃখবোধ নিয়ে আমি বেচে রইলাম। প্লাবনকে হাসপাতালে নেয়ার সুযোগও হয়নি। রক্ত মগজে মাখামাখি হয়ে ওর বিভৎস মুখটা কয়েকবার মাকে স্মরণ করে মূহুর্তেই নিথর হয়ে গেলো। আর আমরা হারিয়ে ফেললাম জাতির এক অসাধারণ সূর্যসন্তান, আমাদের একান্ত সুহৃদকে।

প্লাবণ বেচে নেই আজ। বেঁচে আছে তার শোকাহত মা। আছে তার জীবনের কত শত স্মৃতি। বেঁচে আছি আমরা। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো এক স্বপ্ন দ্রষ্টার সুহৃদ বন্ধুরা। আমরাই এগিয়ে আসবো প্লাবণের স্বপ্ন বাস্তবায়নে। দুঃস্থ মানুষের ভিটে মাটিতে শান্তির নীড় বিনির্মাণে। উপহার দিতে শান্তিময় সোনালী সমাজ….

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:০২

রানার ব্লগ বলেছেন: ::( :( :(

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.