![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গত রমজানের কোন একদিন বিকেলে মহাখালীতে......
৯-১০ বছর বয়সী একটা ছেলে। হাতে একটা বস্তা, ছেঁড়া একটা প্যান্ট, সাদা শার্ট কিন্তু ময়লা লাগতে লাগতে কালো হয়ে গেছে।
কি নাম?
সোলেমান বাদশা।
বাদশা! বাহ বেশ নাম তো। কে রাখছে এই নাম?
আম্মার কাছে হুনছি আব্বা নাকি রাখছে।।
তোর আব্বার নাম কি? কি করে?
মফিজ মিয়া। মারা গেছে গলায় দড়ি দিয়া। রেল লাইনের গেটম্যান আছিল।
গলায় দড়ি দিছে কেন?
বড় বইনের অসুখ আছিল গত বছর। চিকিৎসা করনের টেকাটুকা ছিল না, হাওলাত বাওলাত কইরা বড় বইনের চিকিৎসার টেকা নিছিল। পরে পাবলিকের ওই টেকা দিতে না পাইরা গলায় দড়ি দিয়া চইলা গেছে।। মনে হয় এই কষ্টের জীবন থেইকা ছুটি চাইছিল। নিজেই নিজেরে ছুটি দিয়া দিছে।।
এত টুকুন পোলা, কী দার্শনিক মার্কা কথাবার্তা !
আচ্ছা, কই থাকস?
মহাখালী।
ভাইবোন কয় জন?
দুই বোন, আর আমি।।
স্কুলে যাস?
না।
কেন?
বুঝেন না কেন? গরীবের আবার পড়াশুনা? পড়াশুনা করলে কাজ করমু কখন? আর পড়াশুনা করতে তো টেকা লাগে।
এখানে কাগজ আর বোতল কুড়াই।
দিনে কয় টাকা পাস এগুলা করে?
৫০-৬০ টেকা। ১০ টেকা আমি খাই, বাকী গুলান আম্মারে দিই।
তোর আম্মায় কি করে?
সিটি কর্পোরেশনের ঝাড়ুদার। রাস্তা ঝাড়ু দেয়। আর বড় বইনরে আম্মায় একটা বাসায় কাজ করতে দিয়ে দিছে। ছোড বইন বাসায় থাকে।
আজকে রোজা আছস?
হ।
আজকে আমার সাথে ইফতার করবি? তোরে বিরিয়ানি খাওয়ামু।
না, বাসায় আম্মায় বইসা আছে, কাগজ আর বোতল কুড়াই যে টেকা পাইছি ওইগুলা দিয়া ইফতারি কিনমু। প্রত্যেকদিন এই রকম কইরা ইফতারি কিনে বাসায় নিয়া যাই। বাসায় ছোড বইন আর আম্মার লগে ইফতার করমু।
পাশেই একটা দোকান থেকে ইফতারির কিছু আইটেম কিনলাম।
আচ্ছা, এগুলা নে, বাসায় নিয়া যা। আজ তোর ইফতার কিনতে হবে না, আমি কিনে দিছি।
নিতে চাইছিল না, জোর করে হাতে ধরিয়ে দিলাম।
বুঝলাম এত কষ্টের মাঝেও ওরা আত্নসম্মান নিয়ে চলে।। করে খায়। কারো কাছে হাত পাতে না।
প্যাকেট টা নিয়ে একটা হাসি দিয়ে দৌড়ে চলে গেল। এত দুঃখের মাঝেও কি নির্লিপ্ত হাসি! ৯-১০ বছরের একটা ছেলে কি কষ্টই না করছে! মা’কে সাহায্য করছে দৈনিক ৫০-৬০ টাকা রোদে পুড়ে রোজগার করে দিয়ে। আমার সাথে ইফতার করবে না মা ওর পানে চেয়ে আছেন বলে। মায়ের সাথে ইফতার করার আনন্দ এই পিচ্চিটা বুঝে।
অবাক হই তাদের কথা ভেবে, যারা নিজেদের মা বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে এসেছে। রমজানের এই দিনে তারা ইফতার করে মা বাবাকে ছাড়াই। অথচ ছেলে মেয়েদের শত অবহেলা সত্ত্বেও ইফতারের এই মুহুর্তটায় বৃদ্ধাশ্রমের এক কোনে বসে তারা মহান রবের নিকট দু’হাত তোলেন তাদের সন্তানদের মঙ্গল কামনায়।
বাদশা’র মত ওরা মায়ের সাথে ইফতার করার জন্যে দৌড় দেয় না। বরং মা বাবাকে দৌড় দিয়ে ওরা আশ্রমে রেখে আসে। এদের জগতে মা বাবার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে।। মা বাবার সাথে ইফতার করবার মর্যাদা বুঝে না ওরা। ভাবে না যে এই সময়টায় তাদের মা বাবা’দের মনে পড়ে তাদের কথা। অথছ এক টেবিল জুড়ে ইফতারির আইটেম নিয়ে ইফতার করতে বসে ওরা।। ইফতারে একটি আইটেম বেশী রাখতে পারলে নিজেদের ধন্য মনে করে ওরা।
নচিকেতা’র গানের এই লাইনটি বার বার শুনতে লাগলাম—
একশ বছর বাঁচতে চাই এখন আমার সাধ
পঁচিশ বছর পরে হবে খোকার উনষাট
আশ্রমের এই ঘরটা ছোট জায়গা অনেনেনেক বেশী
খোকা-আমি দু’জনেতে থাকব পাশাপাশি।।
বাদশা’ই আসলে সত্যিকারের বাদশাহ।। সবার আম্মু আব্বু ভাল থাকুক।।
২| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:১২
অকপট পোলা বলেছেন: একশ বছর বাঁচতে চাই এখন আমার সাধ
পঁচিশ বছর পরে হবে খোকার উনষাট
আশ্রমের এই ঘরটা ছোট জায়গা অনেনেনেক বেশী
খোকা-আমি দু’জনেতে থাকব পাশাপাশি।।
৩| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:৫৭
অপ্রচলিত বলেছেন: চোখে পানি চলে আসল পড়ে। খুব সুন্দর মর্মস্পর্শী লেখা।
©somewhere in net ltd.
১|
১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:২৪
ডরোথী সুমী বলেছেন: খোকারাএভাবেই যেন বাবামায়ের আদরের সন্তান হয়ে থাকে, বাবা-মাকে ভালবাসে।