![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গ্রুপ স্টাডি করতে গেছিলাম এক ফ্রেন্ডের বাসায়। কাল পরীক্ষা তাই।। পড়ার ফাকে কখন যে রাত ১২ টা বেজে গেল খেয়ালই করলাম না। হটাৎ ঘড়িতে চোখ পড়তেই দেখি রাত তখন ১২:১৫ তাড়াতাড়ি ব্যাগট্যাগ গুছিয়ে দৌড় দিলাম বাসার উদ্দেশ্যে। কারন ঢাকায় ব্যাচেলরদের জন্যে বাসায় ফেরার সময়সীমা রাত ১২টা। ৭ জন মিলে নিচতলায় একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকি। গতমাসেই উঠেছি এখানে।
তো ফ্রেন্ডের বাসা থেকে আসার সময় রাস্তায় কেউ নেই। ইদানিং রাতে বিশেষ করে রাত ১২ টার পর ঢাকার রাস্তায় মানুষজন খুব কম থাকে। কারনটা সহজেই অনুমান করা যায়। যাই হোক আমার সঙ্গী দুটি কুকুর।। কুকুর কে আমি প্রচন্ড ভয় পাই। ওরা আমার চারদিকে ঘুরতে লাগল। আমি আল্লাহ্কে ডাকতে থাকলাম। একটা দোয়া আছে যেটা পড়লে নাকি কুকুর দুরে চলে যায়। অনেক দোয়া মুখস্ত থাকলেও কেন জানি এই দোয়া টা মুখস্ত করা হয়নি। যার যেটা থাকে না বিপদের সময় সেটারই প্রয়োজন হয় বেশী। আল্লাহ্কে ডাকতে ডাকতে আস্তে আস্তে হাটতে থাকলাম। কোথায় যেন শুনেছি দ্রুত হাটলে বা দৌড়লে নাকি কুকুরের সন্দেহ হয় এবং কুকুরও দৌড়ানি দেয়।। তবে কেন জানি মনে হচ্ছে এরা দৌড়ানি দেবে না।
এক পর্যায়ে বাসার নিচে আসলাম। সাথে কুকুরগুলোও। কুকুরগুলো আমাকে পাহাড়া দিচ্ছে। এমপি, মন্ত্রীদের পাহাড়ায় থাকে বিশেষায়িত বাহিনী। আজ আমার পাহাড়াদার দুটি কুকুর। খারাপ কি? যা সন্দেহ করছিলাম তাই, এসে দেখি বাড়ীর মূল ফটকের গেইট আটকানো। রুমমেটকে কল করতে যাব, এমন সময় ওই ভদ্রমহিলা (ভদ্র না অভদ্র এই ব্যাপারে আমার সন্দেহ আছে) বলে উঠলেন কল করার জন্যে আপনার একাউন্টে যথেষ্ট পরিমাণ টাকা জমা নেই। এখন কি করব? নিচতলা হওয়াতে একটু সুবিধা হল। জোরে ডাকলাম বন্ধু সুমনকে। ও আমার সাথেই থাকে। একটি প্রাইভেট ভার্সিটিতে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ে। সে বলল এখন আইছস? গেইট তো লাগানো, এখন? আমি বললাম মামুন ভাইরে কল দে। মামুন ভাইয়েরা ৬ ভাই। ৬ ফ্লাটে ৬ ভাই থাকে। স্থানীয় লোক। মামুন ভাইরে কল দিল সুমন। উনি সুমনকে বললেন চাবি তো বড় ভাই এর কাছে। বড় ভাই না দিলে আমার কিছুই করার নেই। বড় ভাই থাকেন চতুর্থ তলায়। রাইফেলস কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। লাঠি ভর দিয়ে হাটেন। আমি সুমন সহ আরেক জনকে পাঠালাম বড় ভাইয়ের কাছে। আর এদিকে আমি দাঁড়িয়ে আছি আমার পাহাড়াদার দুই কুকুর এর সাথে। তারা আমার চারদিকে ঘুরে ঘুরে গভীরভাবে পর্যবেক্ষনে ব্যাস্ত। জিজ্ঞেস করলাম কিরে কি দেখস? কোন জবাব পাই নাই, পাইলেও তো বুঝব না। এতক্ষনে সুমন চতুর্থ তলা থেকে এসে যা বলল তার সারমর্ম এই "বড় ভাই কইছে চাবি দিবো না, এত রাতে উনি কাউরে বাসায় ঢুকতে দেন না। তোরে কইছে আশেপাশে কোন মসজিদে অথবা কোন আবাসিক হোটেল খুইজা নিতে" আমি তো হা করে দাঁড়িয়ে থাকলাম। মসজিদে না হয় থাকা যাবে, এক নতুন অভিজ্ঞতা হবে। অনেকবার তাবলীগে যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু যাওয়া হয়ে উঠে নি। তাবলীগের ভাইয়েরা মসজিদে ঘুমায়। কিন্তু বড়ভাই যে আবাসিক হোটেলের কথা বললেন আমার কাছে তা কিঞ্চিৎ অপমানজনক মনে হল। ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে আবাসিক হোটেলে থাকব? এ তো দেখি আজব লোক! পকেটে আছে ১২ টাকা। তাকিয়ে দেখি ততক্ষনে আমার পাহাড়াদার কুকুরগুলো চলে গেল। তারাও মনে হয় অপমান বোধ করেছে, আমার এই অবস্থা দেখে। ওরা মানুষের মত কথা বলতে পারলে জেনে নেওয়া যেত তাদের মতামত। যাই হোক গভীর চিন্তায় পড়ে গেলাম। কাল পরীক্ষা। রাগে কপাল দিয়ে ঘাম পড়ছে। মনে হচ্ছে বাড়ীর কোন লোকজন যদি রাতে অসুস্থ হয়ে পড়ে তাহলে উনাদের নিরাপত্তা বেষ্টনী বের করতে করতেই মারা যাবে। আর এদিকে পেটের পোকাগুলো ডাকতে শুরু করেছে। নিজেকে মনে হল কোন রাস্তার লোক যে প্রধানমন্ত্রীর মত গুরুত্বপূর্ন ব্যাক্তির সাথে দেখা করতে এসে ব্যার্থ হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
হটাৎ হিমুর কথা মনে পড়ে গেল। হুমায়ূন আহমেদের এক অনবদ্য সৃষ্টি এই হিমু। ভাবলাম হিমুর মত রাতে হাটতে যাই। রাতের ঢাকা তেমনভাবে দেখার সুযোগ হয় নি। এই আজব নগরী রাতে হয়ে উঠে আরো দেখার মত। রাস্তার ধারে যেসব ছোট ঘরগুলো দেখা যায় সেখানে অন্য এক জীবনের গল্পগাথা রচিত হয়। সারাদিনের পরিশ্রমের পর ক্লান্ত দেহগুলো ঘুমিয়ে পড়ে নিশ্চিন্তে। গেইটের সামনে পায়চারী করছি আর ভাবছি............
হটাৎ মনে হল আরেকবার ট্রাই করা যাক। রাত তখন বেজে ১:৩০ রুমের ভিতরে উদ্বিগ্ন হয়ে বসে আছে সুমনরা। আমি সুমনকে বললাম ওর মোবাইলটা জানালা দিয়ে ক্যাচ দিতে। ক্যাচ ধরলাম। মোবাইলটা হাতে নিয়ে কল দিলাম মামুন ভাইকে। বললাম, ভাই দেখেন পড়তে পড়তে ভুলেই গেছিলাম বাসায় ফেরার কথা। একটু ভাই বড় ভাইরে বলেন আমার কাল পরীক্ষা। গেইটটা খোলার ব্যাবস্থা করুন।। মামুন ভাই আমাকে উনার ছোট ভাইয়ের নাম্বার দিলেন। বললেন ওকে কল করে বল, ও ব্যাবস্থা করে দিবে। ছোট ভাইরে কল দিলাম একই ভাবে অনুরোধ করলাম।
উনি আশ্বাস শুনাইলেন এই বলে -আমি দেখতেছি। আমি আশান্বিত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম বাসায় গেইটের দিকে তাকিয়ে। কুকুরগুলো এখন মিস করছি। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলাম, দৃষ্টিসীমার মধ্যে কোন কুকুরের অস্তিত্ব চোখে পড়ল না। মিনিট দশেক পরে গেইটের ফাক দিয়ে দেখলাম কে যেন আসছে। আমি নিশ্চিন্ত হইলাম। বাড়ীর কেয়ারটেকার এসে গেইট খুলে দিল। কেয়ারটেকার বলল রাত ১২টার পর তালা মেরে আমার কাছ থেকে চাবি নিয়ে যায় বড় ভাই। কষ্টের মাঝেও মুখে একটা শুকনো হাসি আসল। অবশেষে আমি প্রবেশ করিলাম, বাসায় প্রবেশ করিলাম।
বাসায় প্রবেশ করার পর এক মাধ্যমে জানতে পারলাম গেইটের চাবি আসলে কেয়ারটেকারের কাছেই ছিল। আর কোনদিন যেন বাসায় ফিরতে দেরী না করি সেই জন্যেই বড় ভাইয়ের কান পর্যন্ত পৌছিয়ে গেইট খুলতে দেরী করেছে।
ঢাকায় আছি অনেক বছর ধরে। আজকের মত এমন পরিস্থিতিতে কোনদিনই পড়ি নাই। মনের কোনে কিছু অভিমান জমা হল, সাথে অনেক প্রশ্ন।। মানুষের প্রতি মানুষের ভালবাসা দিন দিন কমে যাচ্ছে। আবশেষে আগামী মাসে আমরা এই বাড়ী ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।
২| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:৩৪
হেডস্যার বলেছেন:
ঢাকা শহরে রাত ১১/১২ টার পরে কেউকে ঢুকতে দেয়া হবে না টাইপের বাড়ি আছে প্রচুর। নিরাপত্তার অজুহাতে গেটের চাবি থাকে বাড়ির মালিকের কাছে। আপনি রাত ২ টায় অসুস্থ হয়ে যান, হসপিটালে নেয়ার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের করার আয়োজন করতে করতে আপনি শেষ।
অথবা এটা ও চিন্তা করতে পারেন অত রাতে যদি কোন ভয়াবহ ভুমিকম্প বা অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে তাহলে ..... আপনি ভেতরেই কাবাব হবেন বা চ্যাপ্টা হয়ে মরবেন।
৩| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:০৬
নানাভাই বলেছেন: অমানবিক এই বাড়ীওয়ালারা।
নিজেদের কি যে মনে করেন?
ভাবটা এমন যে, সুইস ব্যন্কের চাবি লইয়া আছেন।
ফালতু অহমিকা আর কমপ্লেক্সে ভোগেন!
৪| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪৮
মোঃ মাহমুদুর রহমান বলেছেন: ভাই আমি ৬ মাস ছিলাম এক বাসায় যেখানে বাড়িওয়ালী ছিলেন আর্মির অবসরপ্রাপ্ত অফিসার। উনি রাত ১১টায় মেইন গেট বন্ধ করে দিতেন আর ভোর ৬টা্য় খুলে দিতেন। কি কস্টই না করেছি সেই ৬ মাস
৫| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:০২
আল ইফরান বলেছেন: এই বাড়িওয়ালাদের অত্যাচারে ঢাকা শহরে থাকাটা একটা বিশাল পেইন হয়ে গেছে আমাদের মত ব্যাচেলরদের জন্য,
কবে যে ঢাকা শহর ছাড়তে পারবো
©somewhere in net ltd.
১|
২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:১৬
আদম_ বলেছেন: উচিত কাজ করেছেন। আমাদের সাথে এক হারামজাদা যে দুর্ব্যবহার করেছিল, তার প্রতিশোধ স্বরুপ বাসা ছেড়ে আসার সময়, সিমেন্ট দিয়ে ট্যাপের মুখ সবগুলা আটকিয়ে দিয়ে আসছিলাম। এজন্য আমার মনে বিন্দু মাত্র অনুশোচনা নাই।