![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
খুতবার (জুমাও ঈদের ) ভাষা কি হবে ,কি হওয়া উচিত খুতবা দেয়ার নিয়ম-পদ্ধতি ,বর্তমান সমাজে ধর্মীয় অনেক বিষয়ের ন্যায় এ বিষয়টিতেও রয়েছে মতানৈক্য, মতপার্থক্য ।
√ উপমহাদেশের বিজ্ঞ আলেমদের একদল মনে করে জুমা ও ঈদের খুতবা আরবী ভাষাতেই হতে হবে ।কোন ক্রমেই
আরবী ছাড়া অন্য ভাষায় খুতবা দেয়া যাবেনা ।কারনঃ-
(১) খুতবার উদ্দেশ্য জিকির ,আর জিকির আরবীতেই হতে হবে ।
(২) রসুল (সঃ), সাহাবা (রাঃ),তাবেঈ ,তাবেতাবেঈ, সকল মুজতাহীদ ইমামদের (রঃ) জামানা থেকে( ঈদ ও জুমার) খুতবা আরবীতেই চলে আসছে তাই তাদের অনুকরনে খুতবা আারবীতেই হওয়া উচিত ।
√ অপরদিকে বর্তমান কালের অনেক ইসলামী চিন্তাবিদদের অভিমতহলো খুৎবা অবশ্যই শ্রোতাদের বোধগম্য ভাষায় হতে হবে ।বাংলাভাষীদের জন্যে বাংলায়, আরবী ভাষীদের জন্যে আরবীতে।কারনঃ-
(১) খুতবার উদ্দেশ্য ওয়াজ-নসীহত ,তাই খুতবা শ্রোতাদের বোধগোম্য (স্থানীয়) ভাষায় হতে হবে ,অন্যথায় খুতবার উদ্দেশ্য ব্যহত হবে ।পবিত্র কোরআনে যে সকল স্থানে খুতবাকে জিকির বলা হয়েছে ,তার সব যায়গাতেই জিকির অর্থ ওয়াজ (দেখুন – সুরা জারিয়াত-৫৫;সুরা তুর -২৯।
(২) আমাদের দেশে জাতীয় মসজিদ সহ প্রায় সকল মসজিদে ,জুমার খুতবাকে সর্বসাধারনের বোঝার সুবিধার্থে ১ম আজানের পর স্থানীয় ভাষায় ওয়াজ করা হয় ( খুতবার অনুবাদ শুনানো হয় ) । সুন্নত পড়ার বিরতি দিয়ে ছানি আজানের পর যথারীতি আরবী ভাষায় ২ টা খুতবা দেয়া হয় ।মাঝে মধ্যে প্রয়োজন সাপেক্ষ এইরুপ করা দোষের ছিলনা কিন্তু সব সময়ের জন্যে জুমার নামাজে এইরুপ তিন খুতবার প্রচলন করা নিন্দনীয়ই বটে । আর তাছাড়া এই প্রচলিত প্রথার কারনে প্রায় সব মুসুললী দুই রাকাত দুখুলুল মাসজিদের সুন্নত থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ,যা অবশ্যই দোষনীয় । এতে সময়ের অপচয় হয় ,আর অপচয় শয়তানের খাসলত ।তাই উত্তম হলো স্থানীয় ভাষায় খুতবা দেয়া ,যাতে করে তিন খুতবা দেয়ার প্রয়োজন না পরে,সব সময়ের জন্যে দুখুলুল মসজিদের সুন্নত ছেড়ে দিয়ে গুন্হগার না হতে হয়।
√ আমি মনে করি উপরে বর্নিত উভয় দলে যে সকল উলামায়ে কেরাম রয়েছেন আমি কেবলী তাদের ছাত্রহওয়ার উপযুক্ততা রাখি ,তাও যদি তারা দয়া করে আমাকে তাদের ছাত্রহওয়ার সুযোগ দেন ।তাই খুতবার ভাষা কি হবে,কি হওয়া উচিত খুতবা দেয়ার নিয়ম, তানিয়ে মত প্রকাশ করার সৎসাহস আমার নাই ।
তারপরও ধর্মপ্রান মুসলমান ,সুবিজ্ঞ উলামায়ে কেরামদের খেদমতে আরজ করতে চাই ,আমাদের দেশে নিম্নের লিখিত নিয়মে(জুমা ও ঈদের) খুতবা দিলে উভয় দলের দাবীর প্রতিফলন ঘটবে ,অর্থাৎ এতে জিকির যা প্রথম দলের দাবী (ইমাম আবু হানিফার মতে যার নুন্যতম পরিমান একবার আলহামদু লিল্লাহ পাঠ করা ) ,স্থানীয় ভাষায় ওয়াজ যা দ্বিতীয় দলের দাবী পুরন হবে ।ছোট বলে অবহেলা না করে অধমের কথাটি বিবেচনায় আনলে ,মুসলমানরা বড় ধরনের দলাদলি থেকে মুক্তি পেত ।
নিয়মটি এভাবে হলে ভালো হয় ——— ,
জুমার দিন মুসুল্লীরা প্রথম আজানের আগে বা পরে যে ভাবে মসজিদে আসেন (আগে আসাই উত্তম) ,এসে সুন্নত পড়ে বসে দু‘আয় মশগুল হবেন । যথা সময় খতিব সাহেব মিম্বরে বসলে তার সামনে ছানি আজান হবে , তিনি দাড়ায়ে হামদ,ছানা ,কালিমায়ে শাহাদত ,তেলাওয়াতে কোরআন ও হাদিসের মাধ্যমে আরবিতে খুতবা শুরু করবেন , তারপর স্থানীয় ভাষায় পঠিত আয়াত ও হাদিসের ব্যখ্যা করবেন । মুসুল্লীদেরকে ঈমান ,আকিদা ,আমল,আখলাক সম্পর্কে নসিহত করবেন , প্রয়োজনিয় দিক নির্দেশনা দিয়ে প্রথম খুতবা শেষ করে বসবেন ।
এরপর উঠে দ্বিতীয় খুতবা আরবী ভাষায় দিবেন ,এর মুল বিষয় নসিহত নয় বরং দু‘আ ,আর দু‘আ আরবী ভাষায় হওয়া সর্বসম্মতিক্রমে উত্তম,তাই এ খুতবা আরবীতে হলে কেউ মতবিরোধও করবেনা । আর এ খুতবায় থাকবে ,হামদ,ছানা, রসুলের জন্যে দরুদ, নিজেদের জন্যে,বর্তমান ও বিগত মুসলীম উম্মার জন্যে ,ছাহাবায়ে কেরামদের জন্যে দু‘আ ও মাগফেরাত ।
এই নিয়মে খুতবা দিলে জিকির (যা প্রথম দলের দাবী) এবং স্থানীয় ভাষায় নসিহত (যা দ্বিতীয় দলের দাবী) উভয়ি আদাায় হবে । আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান বলছে এর পর আর মতবিরোধ থাকার কথা নয় ।কারন এতে খুতবার ২ টি ফরজ ,যথা (১) ওয়াক্ত হওয়া,(২) জিকরুল্লাহ । ১০ টি সুন্নত ,যথা (১) হামদ,(২) ছানা,(৩) দরুদ,(৪) কালিমা শাহাদত,(৫) তেলাওয়াত,(৬) নসিহত,(৭) দুই খুতবার মাঝে বসা,(৮) দ্বিতীয় খুতবার শুরুতে হামদ-ছানা পুনঃ পাঠ করা ,(৯)দু‘আ,(১০) উভয় খুতবা সংক্ষিপ্ত করা , যথাযথ আদায় হওয়ায় আর মতানৈক্যের-মতবিরোধের অবকাশ থাকেনা ।
আল্লাহ তায়ালা মুসলীম উম্মাকে মতপার্থক্য পরিহার করে একত্ববদ্ধ হওয়ার তৌফিক দিন (আমিন) ।
(লেখক - মুফতি আব্দল্লাহ খান ফয়েজী
সহঃ অধ্যাপক ,সানন্দবাড়ী সিঃ মাদ্রাসা
জামালপুর)
©somewhere in net ltd.