![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অন্ধদের রাজ্যতে এক চোখা মানুষটি রাজা এবং আমি সেই রাজা। না ঈশ্বর, না পিশাচ—আমি তৃতীয় বিশ্বাস।
শহরের ব্যস্ত রাস্তায়, আকাশচুম্বী ভবনের কোলাহলের ভিড়ে হেঁটে চলি যেন এক নিঃশব্দ রোবট হয়ে। সব কিছুই ঠিকঠাক আছে (চাকরি, বেতন, দুনিয়া) কিন্তু কি যেন নেই আছে শুধু নিরব শূন্যতা।
আমার ভেতরে এক কৃষ্ণগহ্বর যার মাঝে আছে অনন্ত একাকীত্ব।
সব কিছুই ধীরে ধীরে ভেঙে পড়েছে, স্বপ্ননেরা আত্মহুতি দিয়েছে—
দিন যায়, রাত যায়—সব কিছু যান্ত্রিক, অবশ অনুভূতি।
তারপর একদিন হঠাৎ কেয়ার সাথে দেখা।
প্রথম দেখা থেকেই যেন মনে হলো, অনেক কাল থেকে চেনা তাকে।
কেয়া যখন কথা বলে, তার চোখে আমি নিজেকে দেখতে পাই।
তার সৌন্দর্য, তার শক্ত মানসিকতা, তার স্বপ্ন দেখার সাহস—সবকিছু যেন এক অদ্ভুত আলো হয়ে আমার অন্ধকার জগতের ভেতরে ঢুকে গেল।
আমাদের আলাপ ক্রমশ গভীর হলো। আমি অবাক হলাম এই ভেবে —কেয়া-ই সেই মানুষ, যে আমাকে সত্যিই বোঝে।
কয়েক সপ্তাহ পর, এক সন্ধ্যায়, হলুদ সোডিয়াম বাতির আলোর নিচে আমি হাঁটু গেড়ে আমি কেয়া কে বললাম—
"কেয়া, তুমি কি আমায় ভালোবাসবে?"
চোখে এক ফোঁটা অশ্রু নিয়ে কেয়া হেসে বলল—"হ্যাঁ।"
সেই মুহূর্তেই শুরু হলো মহাবিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর প্রেম।
কেয়ার সাথে থাকা প্রতিটি মূহুত কল্পনার থেকেও সুন্দর। প্রতিটি দিন, প্রতিটি ক্ষণ নতুন রঙে ভরে উঠল।
একদিন কেয়া বলল—
“জানো, কেউ কোনোদিন আমাকে এভাবে বোঝেনি, এভাবে ভালোবাসেনি। তুমি আমাকে যেমন সম্মান দাও, ভালোবাসো, আমি বড়ই অবাক হই, এভাবেও কি ভালোবাসা যায !!”
সবকিছু এতটাই নিখুঁত লাগছিল, যেন পৃথিবীটা শুধু আমাদের জন্যই তৈরি মনে হচ্ছিল। আমরা একে অপরের জন্য টূ মাচ পারফেক্ট ।
কিন্তু সুখ বেশিদিন টিকল না।
কয়েক মাস পরে পৃথিবীতে শুরু হলো ভয়াবহ বিপর্যয়। হঠাৎ হঠাৎ আকাশ অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে, নক্ষত্রগুলো সংঘর্ষের পথে। বিজ্ঞানীরা বলল—অস্বাভাবিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ।
কিন্তু কেয়া কাঁদছিল অঝোড়ে।
আমি কেয়াকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
“কাদিও না আর ভয় পেয়ো না, এটা প্রাকৃতিক ব্যাপার। ঠিক হয়ে যাবে।”
কেয়া মাথা নাড়িয়ে ফিসফিস করে বলল—
“না… এটা প্রাকৃতিক নয়। এই মহাবিশ্ব ধ্বংস হবে… আমার জন্য।”
আমি স্তম্ভিত।
“কি বলছো তুমি, মজা করছ না তো?”
তখন কেয়া যা বলল তা আমি কল্পনাতেও ভাবি নাই —
“আমি এই ইউনিভার্সের কেউ নই। আমি এসেছি অন্য এক ইউনিভার্স থেকে। আমাদের সভ্যতা এতটাই উন্নত যে আমরা প্যারালাল ইউনিভার্স ভ্রমণ করতে পারি, এমনকি সময়ের ভেতরও (অতীত বা ভবিষ্যৎ)। আমি আমার ইউনিভার্সে খুব একা ছিলাম, কেউ আমাকে ভালোবাসত না, কেউ আমাকে বুঝত না, তাই আমি সিদ্ধান্ত নিছিলাম, আমি টাইম ট্রাভেল করব , আমি সব ইউনিভার্স দেখব আর খুজব… কোথাও কেউ কি আমাকে ভালোবাসেনি !? আমি কয়েক লক্ষ ইউনিভার্স খুজেছি । কিন্তু এই একমাত্র ইউনিভার্স যেখানে আমি খুঁজে পেলাম তোমাকে… আর তোমার ভালোবাসা। তাই আমি টাইম ট্রাভেল করে এলাম, যেন তোমাকে পেতে পারি।”
আমি হতবাক - নির্বাক।
কেয়া তখনোও কাঁদছিল, আর বলল—
“আমি এই ইউনিভার্সে আসার কারণে , এই ইউনিভার্সের ভারসাম্য ভেঙে গেছে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই নক্ষত্রদের মাঝে সংঘর্ষে এই ইউনিভার্স ধ্বংস হয়ে যাবে।”
আমি কেয়ার হাত ধরে ফিসফিস করে বললাম—
“তাহলে ফিরে যাও তোমার ইউনিভার্সে । আমি চাই না তুমি মারা যাও।”
কিন্তু কেয়া মাথা নাড়ল—
“না… আমি ফিরতে পারব না। আমার ইউনিভার্সে আমি আরও একা। আমি বরং কসমিক ভয়েডে চলে যাব। কিছু সপ্তাহ সেখানে একা কাঁদব। আর যখন নক্ষত্রদের সংঘর্ষের সময় ঘনিয়ে আসবে, আমি টাইম ট্রাভেল করে আবার অতীতে ফিরে আসব কারণ আমি তোমাকে মরতে দেখতে পারব না, তোমাকে হারাতে পারব না । আমাদের প্রথম থেকে আবার দেখা হবে , সব আবার শুরু হবে শুরু থেকে … যেন কিছুই হয়নি।”
আমি হতবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম, “তাহলে আমরা অন্য কোন ইউনিভার্সে পালিয়ে যাই !”
কেয়া নিরব উত্তর , “এটা সম্ভব না কারণ এতে ঐ ইউনিভার্সের ভারসম্য হরায় যাবে আর সেটাও ধংস হয়ে যাবে। এই মহাজাগতিক শক্তি * টু মাচ পারফেক্ট * কিছুই পছন্দ করে না কারণ, যখন ইমপারফেক্ট এর মিক্স হবে, কেয়োস থাকবে তখন মহাজাগতিক শক্তি শান্ত থাকে। আর তাই তুমি আমি কখনোই এক হতে পারব না আর এই জন্যই আমি একটা টাইম লুপে আটকে ফেলেছি আমাদের কে। আমি বারবার অতীতে টাইম ট্রাভেল করে যাব, তোমাকে ভালোবাসব, ভালোবাসতে দিব আবার হারিয়ে যাব তারপর আবার সব কিছু শুরু থেকে শুরু করব। আমি তোমাকে হারিয়ে যেতে দিতে পারব না, হারিয়ে যেতে দিব না। ”
তখন আমার চোখে জল চলে এল। আমি কেয়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললাম—
“তুমি যতবার ফিরে আসবে, আমি ততবার তোমাকে নতুন করে ভালোবাসব। কারণ আমি তোমাকে ভালোবাসি… প্রতিটি ইউনিভার্সে ।”
কেয়ার ঠোঁটে এক ব্যথাভরা হাসি ফুটল।
তারপর সে মিলিয়ে গেল নক্ষত্রের আলোয়।
আকাশ তখনও ভেঙে পড়ছে।
কিন্তু আমার বুকের ভেতরে কেয়া রয়ে গেল—এক অনন্ত সময়চক্রের প্রেম।
২| ১৮ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ৯:১৪
বিজন রয় বলেছেন: বাংলা নাটক হতে পারে এটি।
©somewhere in net ltd.
১|
১৮ ই আগস্ট, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৩৫
আরোগ্য বলেছেন: অনেক দিন পর ব্লগে কোন গল্প পড়লাম। ভালোই লাগলো। জীবনে একটা জিনিস উপলব্ধি করলাম। অপরিচিত মানুষদের মধ্যে একাকী অনুভব হতে পারে কিন্তু যখন পরিচিত মুখগুলোর মাঝে একাকী অনুভব হয় তখন একাকিত্ব ঘিরে ধরে। আর একাকিত্ব দুর করার জন্য প্রিয়জনের সান্নিধ্য খুব জরুরি।