![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অন্ধদের রাজ্যতে এক চোখা মানুষটি রাজা এবং আমি সেই রাজা। না ঈশ্বর, না পিশাচ—আমি তৃতীয় বিশ্বাস।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিনে থেকেই আমি ছিলাম এক নিঃসঙ্গ স্মোকার । হাতে সিগারেট, ঠোঁটে ধোঁয়া, আর চোখে শূন্যতা। আমি ভেবেছিলাম—এই ধোঁয়াই আমার একমাত্র সঙ্গী।
কিন্তু সেদিন ক্লাসে প্রথম দেখি কেয়াকে।
তার চোখ যেন নদীর অতল জল, যেখানে তাকালেই ডুবে যেতে হয়। তার চুলে যেন বাতাসের গোপন সুর বাজত। আর তার কণ্ঠস্বর—কোনো অপরিচিত স্বর্গের ডাকের মতো।
আমি মুহূর্তেই হারিয়ে গেলাম।
ধীরে ধীরে কথা হলো, আলাপ হলো, আর অচেনা দূরত্ব ভেঙে গেল। বন্ধুত্ব দিনে দিনে পরিণত হলো এমন এক সম্পর্কে, যেখানে নীরব দৃষ্টিও ছিলো হাজার কথার সমান।
তবু আমি লক্ষ্য করতাম—যখনই আমি সিগারেট ধরাই, কেয়া চুপচাপ আমার দিকে তাকিয়ে থাকে।
একদিন আমি প্রশ্ন করলাম—
—“তুমি এমন তাকিয়ে থাকো কেন?”
কেয়া মৃদু হেসে বলল—
—“জানি না। ধোঁয়া আমাকে টানে, মনে হয় এর ভেতরে কোনো রহস্য আছে। কিন্তু আবার মনে হয়… মানুষ কী বলবে?”
আমি হেসে উঠেছিলাম, খুব জোরে। আর সেই হাসির আড়ালে চাপা পড়ে গিয়েছিল এক অদৃশ্য প্রতিশ্রুতি—কখনো কেয়াকে ধূমপানের প্রস্তাব দেবো না।
সময় পেরোল। আমরা দু’জন আরও কাছাকাছি এলাম, আর প্রেম আমাদের আচ্ছন্ন করল।
এক বিকেলে শহরের রুফটপ রেস্তোরাঁয় বসেছিলাম আমরা। সূর্যের শেষ আলো জানালার পাশে নিভে আসছিল। কফির কাপে ধোঁয়া উঠছিলো, আর আমি সিগারেট ধরিয়েছিলাম। সেদিন প্রথম কেয়া হাত বাড়িয়ে নিল আমার কাছ থেকে একটি সিগারেট। আমরা দু’জন মিলে ধোঁয়ার কুণ্ডলীতে হারিয়ে গেলাম।
আমার মনে হয়েছিল—এই মুহূর্তই হয়তো জীবনের সবচেয়ে সত্যিকারের আনন্দ। যেন আমাদের নিঃশ্বাস একে অপরের সাথে মিশে গিয়ে তৈরি করছে অদ্ভুত এক বন্ধন।
পোস্ট গ্র্যাজুয়েশনের সময়ে ডেটে বেরোলে আমরা প্রায়ই একসাথে স্মোক করতাম। কিন্তু একদিন আমি ভুল করেছিলাম। আমি বলেছিলাম—
—“কেয়া, তুমি গাঁজা ট্রাই করবে? এটা সিগারেটের থেকেও অনেক ভালো।”
কেয়ার চোখে হঠাৎ বজ্রপাত নেমে এলো।
সে কাঁপা কণ্ঠে বলল—
—“তুমি কি আমাকে ধ্বংস করতে চাও? ভালোবাসা কি মানে আমাকে অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া?”
আমি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। সেদিনের পর থেকে আর কখনো তাকে সে প্রস্তাব দিইনি।
কিন্তু ভাগ্যের খেলা নির্মম। পরিবার, অর্থসামাজিক অবস্থা , আর সমাজের বাধায় আমরা আলাদা হয়ে গেলাম। আমাদের ভালোবাসা ছিন্ন হলো, অথচ ভেতরে ভেতরে রয়ে গেল আগুন।
দশ বছর পর হঠাৎ এক কনফারেন্সে মেটিং এ আবার দেখি কেয়াকে। সময় তার মুখে নতুন ছাপ এঁকেছে, তবু চোখের গভীরতা একই রকম। হাসি মুখে কেয়ার সামনে গেলাম, কথা শুরু হল, কেয়া অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়া একটা হাসি দিল, মূহূতে আমরা ভুলে গেলাম আমাদের হারিয়া যাওয়া ১০ বছর আর হারানো বেদনা।
আমি হেসে জিজ্ঞেস করলাম—
—“তুমি কি এখনো ধূমপান করো, কেয়া?”
সে মৃদু কণ্ঠে বলল—
—“হ্যাঁ। প্রতিবার সিগারেট ধরালে তোমার কথা মনে পড়ে।”
আমার বুক কেঁপে উঠল। না জানি কেন, আমি আবার মজা করে বললাম—
—“আমার কাছে কিছু গাঁজা আছে, তুমি চাইলে আজ আমরা—”
কথা শেষ হওয়ার আগেই কেয়া চমকে উঠল।
তার চোখে জ্বলজ্বল করছিলো বিস্ময়এ
কেয়া প্রশ্ন করল , তুমি কিভাবে এমন মিটিং এ এসব আনতে পার।
আমি হেসে বললাম, আমি সব মিটিং এ নিয়ে যাই,
গত মাসে ইউরোপে গেছিলাম মিটিং এ , সেখানেও নিয়ে গেছিলাম,
কেয়া হতবাক হয়ে, আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে বলল, এয়ারপোট কিভাবে পার করলে ?
আমি –
সে এক বিশাল , কাহিনী।
কেয়া –
বল দেখি,
আমি –
আমি আমার লাগেজ প্যাক করছি মিটিং এর স্যাম্পল দিয়ে কিন্তু এই স্যাম্পলের এক চিপার আমি কিছু গাজার স্টিক রেখে দিছিলাম। এরপর এয়ারপোট গেলাম, এয়ারলাইন কম্পানির টিকিট নিলাম আর লাগেজ দিয়ে দিলাম লকারে। এরপর হেটে হেটে ইমিগ্রেশ্ন তারপর সিকিউরিটি পার হয়ে, স্মোকিং জোনে গিয়ে একটা সিগারেট ধরালাম তারপর বোডিং এ গেলাম, যেই বোডিং এ গেলাম তখন এয়ারলাইন কম্পানির লোক বলল , স্যার আপনি ভতরে যেতে পারবেন না, আপনার লাগেজ সিকিউরিটি আটকায় রখাছে, প্লিজ সিকিউরিটি রুমে যান।
বিশ্বাস করো কেয়া, তখন আমার চোখ কপালে উঠে গেছিল আর বুক দরফর করতে শুরু করছিল। একটা জিনিষ মাথায় আসছিল, যদি ধরা খাই তাহলে আমার ক্যারিয়ারের কি হবে।
যাইহোক, তুমি তো জানো, এসব টাইমে আমি মাথা ঠান্ডা করে কনফিডেন্ট নিয়ে ফেস করি। আমি এয়ার লাইন কম্পানিকে বলাল, কি পাইছে তারা লাগেজে ? সে বলল তারার জানে না উলটা বলল ২০মিন পর প্লেন ছাড়বে, যা করবেন তাড়াতাড়ি করেন তানা হলে, প্লেন আপনাকে ছাড়া ফ্লাই করবে। আমি বললাম, আচ্ছা, আমার সাথে চলেন, আমি সিকিউরিটে রুম চিনি না। ৫ মিন পর পোছাইলাম সিকিউরিটি রুমে, সিকিউরিটি আমাকে লাগেজ খুলতে বলল, আমি খুলে দিলাম।
লাগেজর ভিতরে এত স্যাম্পল দেখে সিকিউরিটি বলে এসব কি ?
আমি বললাম, এসব স্যাম্পল, আমি মিটিং এ যাচ্ছি।
সিকিউরিটি বলল, এত স্যাম্পল নিয়ে যাওয়া যাবে না, এটা আপনি জানেন না।
আমি,আমার ব্যাগ থেকে সরকারি কাগজ বের করে বললাম, আমার পারমিশ্ন আছে।
কাগজ দেখে সিকিউরিটির ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে সাথে এয়ারলাইনের লোক বলল, ছেড়ে দেন , ওনার তো পারমিট আছে, আর ১০মিন পর প্লেন ছাড়বে।
আমি কিছু বলার আগে, সিকিউরিটি আমাকে বলল, আচ্ছা আপনি যান। তারপর চলে গেলাম, ইউরোপে নেমে লাগেজ কালেক্ট করে হোটেলে চলে গেলাম তারপর গাজা স্মোক করে ঘুম দিয়ে পরের দিন সকালে মিটিং করে এসে আবার স্মোক, এভাবে তিন দিন গেল।
কেয়া আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকায় আছে, তার নিরবতার মাঝে এক অদ্ভুত বিস্ময় !
আমি বললাম,
কেয়া এটা আমাকে অনেক শান্ত রাখে, অনেক কিছু ভুলিয়ে আমাকে ফোকাস রাখে।
চল আজ একটা রুফ টপ রেস্টুরেন্টে গিয়ে, আধো আধো আলোর মাঝে একটা মোমবাতি জ্বালিয়ে , কফি খাই আর দুজনে মিলে গাজা স্মোক করি, সাথে একটা গান ছাড়ব, কি গান জানো কেয়া ?
- খাবো না আর গাঁজা আমি
যদি পাশে থাকো তুমি
খাবো না আর গাঁজা আমি
যদি পাশে থাকো তুমি
তোমায় পেলে, তোমায় পেলে
তোমায় পেলে নেশা ভুলে যাই, ও কেয়া
গাঁজার নৌকা পাহাড়তলী যায়
জানি আসবে না তুমি
আঁধারে এই কানাকানি
জানি আসবে না তুমি
বাতাসে এই কথা শুনি
তোমায় ভুলে, তোমায় ভুলে
তোমায় ভুলে গাঁজার নৌকাই বাই, ও কেয়া
গাঁজার নৌকা পাহাড়তলী যায় …।
কেয়া ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল। কিছু না বলেই হাঁটতে শুরু করল তার গাড়ির দিকে,
আমি শুধু চীৎকার করে বললাম—
—“আমি এখনো আগের নাম্বার ব্যবহার করি, কেয়া। তোমার মেসেজের অপেক্ষায় থাকব কেয়া। ”
তার অফিস গাড়ির ধোঁয়া মিলিয়ে গেল বাতাসে। আর আমি একটা সিগারেট ধরালাম,
আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ধোঁয়া উড়ে যাচ্ছে দূরে।
কিন্তু সেই ধোঁয়ার মতোই হারিয়ে গেল আমাদের ভালোবাসা।
থেকে গেল শুধু স্মৃতি, আর অনন্ত না-পাওয়ার বেদনা।
©somewhere in net ltd.
১|
২৬ শে আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ২:২৫
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: ধুমপান বিরহের টনিক হিসাবে ভালো কাজ করে ।,