নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কেয়ার জন্য উৎসর্গীকৃত ব্লগ।

দানবিক রাক্ষস

অন্ধদের রাজ্যতে এক চোখা মানুষটি রাজা এবং আমি সেই রাজা। না ঈশ্বর, না পিশাচ—আমি তৃতীয় বিশ্বাস।

দানবিক রাক্ষস › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রজাপতির গল্প – আমি ও কেয়া

১৮ ই অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ২:১৬



বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলো ছিল যেন এক অদ্ভুত স্বপ্নের সময়।
ক্লাস, ক্যাফেটেরিয়া, আড্ডা—সব জায়গাতেই যেন কেয়ার উপস্থিতি ছিল এক ধরনের প্রশান্তিময় আলো।
তার চোখে ছিল গভীর অন্ধকারের সৌন্দর্য,
যেখানে আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম—, তার কণ্ঠে ছিল ঝড় থামানোর শক্তি,
তার চুলের গন্ধে ছিল নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার ইচ্ছা।
আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম তার ভেতর।
কেয়া শুধু প্রেম ছিল না, সে ছিল অনুপ্রেরণা—
তার স্বপ্নের প্রতি একনিষ্ঠতা, তার সংগ্রামের আগুন আমাকে বদলে দিয়েছিল।
আমি তখনো নিজের পথ খুঁজছিলাম, কিন্তু ওর চোখে দেখতাম দৃঢ়তা।

কিন্তু বাস্তবতা ছিল নিষ্ঠুর।
সমাজ, পরিবার, ধর্ম—সব একসাথে দাঁড়াল আমাদের বিপক্ষে,
যেন দুইজন মানুষকে আলাদা করে দেবে শুধু নিয়মের নামে।
আমরা হার মানিনি, কিন্তু ভেঙে গিয়েছিলাম।
ভালোবাসা মরে যায়নি, শুধু একে অপরের জীবনে থাকা অসম্ভব হয়ে উঠেছিল।
সে চলে গেল, আমি থেকে গেলাম নিজের ধ্বংসের ভেতরে।

বছর কেটে গেল। গ্র্যাজুয়েশনের পর কেয়া চাকরি পেল— কর্পোরেটের শীতল কাচের অন্ধকার ভবনে।
আমি তখনও বেকার, নিজের একটা ব্যবসা গড়ার চেষ্টা করছি,
হাজার বার পড়ে আবার উঠে দাঁড়াচ্ছি—
তার শেখানো সেই বিশ্বাস নিয়েই।

তারপর একদিন হঠাৎ—হোয়াটসঅ্যাপে কেয়ার মেসেজ।
“তুমি কেমন আছো?”
চারটা শব্দ, কিন্তু বুকের ভেতর ভূমিকম্প।
আমরা কথা বলতে শুরু করলাম,
সময় থেমে গেল, কণ্ঠ বদলে গেল, কিন্তু অনুভূতি ঠিক আগের মতোই।
আমরা কথা বলতে লাগলাম।
কেয়া বলল, তার জীবন এখন এক অনন্ত যুদ্ধ।
“আমি খুব ক্লান্ত… খুব।
অফিস, পরিবার, সমাজ—সব কিছু যেন একসাথে চেপে ধরেছে।
চেষ্টা করেও কিছু ঠিক করতে পারছি না।
সবকিছু হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে…
জীবন কেন এত কঠিন সব সময় আমার জন্য ? কেন?”

আমি চুপ করে ছিলাম কিছুক্ষণ।
তারপর বললাম,
“কেয়া, একটা গল্প বলি?”
কেয়া – হুম , বলো, শুনছি।
আমি – কেয়া তোমার কি মনে আছে, আমি সব সময় তোমাকে প্রজাপতি বলতাম।
তোমাকে আজ সেই প্রজাপতির গল্প বলি,

“একবার এক মানুষ বাগানে হাঁটছিল। তার বাগানে অনেক শুঁয়োপোকা, সে শুঁয়োপোকা দেখে বিরক্ত না হয়ে একটু খুশী হলো কারণ সে জানে কিছু দিন পর এই শুঁয়োপোকাগুলো কোকুন বাধবে আর সেই কোকুন থেকে বের হয়ে আসবে অপূর্ব সুন্দর প্রজাপতি।

কিছুদিন পর সে দেখল—একটা ছোট্ট কোকুন দুলছে বাতাসে।
ভেতরে এক প্রজাপতি কষ্ট করে বের হওয়ার চেষ্টা করছে।
ছিদ্রটা খুব ছোট, আর প্রজাপতি বারবার ঠেলছে, গা টানছে, চেষ্টা করছে…
ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার হয়ে গেল—
প্রজাপতি হাল ছেড়ে দিল, আর নড়ছে না।
মানুষটার করুণা জাগল।
সে ভাবল—‘বেচারা প্রজাপতি! একটু সাহায্য করলে ক্ষতি কী?’
তাই সে কাঁচি এনে কেটে দিল কোকুনের মুখ।
প্রজাপতিটি সহজেই বেরিয়ে এলো—
কিন্তু তার দেহ ফোলা, ডানাগুলো কুঁচকানো, দুর্বল।
মানুষটি ভাবল, কিছুক্ষণ পর ডানাগুলো শক্ত হবে, সে উড়বে।
কিন্তু না— সেই প্রজাপতি আর কোনোদিন উড়তে পারল না।
সারাজীবন হামাগুড়ি দিয়ে চলল মাটিতে।
মানুষটি জানত না—
ঐ সংকীর্ণ পথটা, ঐ যন্ত্রণাময় চাপটাই ছিল প্রজাপতির পরীক্ষার আগুন।
ঐ কষ্টেই তার শরীরের তরল ডানায় চলে যেত,
যেটা তাকে শক্তি দিত আকাশে উঠতে।
সে ভেবেছিল, সাহায্য করছে—
কিন্তু আসলে প্রজাপতির জীবন থেকে উড়ানটাই কেটে নিয়েছিল।”

আমি থামলাম, তারপর কেয়ার উদ্দেশে বললাম—
“জীবনও তেমন, কেয়া।
তুমি এখন কোকুনে বন্দি।
তোমার চারপাশে কষ্ট, চাপ, একাকিত্ব—
সবই আছে কারণ তুমি এখন জন্ম নিচ্ছো নতুনভাবে।
ঈশ্বর তোমাকে শাস্তি দিচ্ছে না, তিনি তোমাকে তৈরি করছে।
তুমি ভেঙে যাচ্ছো না, তোমাকে গড়া হচ্ছো।
আজ তুমি সংগ্রাম করছো, কারণ আগামীতে তুমি উড়বে।
জীবন তোমাকে ডানা দিচ্ছে,
শুধু কোকুনটা ভেদ করতে হবে।”

ওপাশে নীরবতা।
তারপর কেয়ার ভাঙা কণ্ঠ—
“তুমি আগেও এমন বলেছিলে… মনে আছে?”
আমি বললাম,
“মনে আছে, কেয়া।
তুমি তখনও লড়ছিলে, আজও লড়ছো।
এটাই তোমার সৌন্দর্য।”

রাতটা দীর্ঘ ছিল।
চাঁদ মেঘের আড়ালে হারিয়ে যাচ্ছিল,
আমি জানতাম—
আমরা একসাথে নই, কিন্তু একে অপরের গল্পে আছি।
যেমন প্রজাপতির গল্পটা থাকে বাতাসে—
চিরকালীন সত্যের মতো।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.