| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দানবিক রাক্ষস
অন্ধদের রাজ্যতে এক চোখা মানুষটি রাজা এবং আমি সেই রাজা। না ঈশ্বর, না পিশাচ—আমি তৃতীয় বিশ্বাস।
দশ বছরেরও বেশি সময় হয়ে গেছে।
কিন্তু আজও বিমানবন্দরের সেই শেষ দেখা আমার চোখে জমে আছে ছবির মতো—
কেয়া-এর সেই শেষ আলিঙ্গন…
যেন মৃত্যুর হাত থেকে আমাকে বাঁচিয়ে রাখা একটা শেষ উষ্ণতা।
তারপর জীবন চলেছে।
বা ঠিক বলা ভালো—আমি বয়ে গেছি। আমি ছিলাম, বেঁচে ছিলাম না।
Corporate অফিসে চাকরি, KPI, email, meeting—
আমি যেন একজন মানুষ নয়…
একটা নিখুঁতভাবে প্রোগ্রাম করা যন্ত্র।
কেয়া ছিল দূরে, খুব দূরে।
কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের দুই-একটা মেসেজে আমরা ভেসে যেতাম।
ফাঁকটা বুঝতাম, দূরত্বটা টের পেতাম—
তবুও ভালোবাসা ছিল, আছে…
অটুট, অনন্ত, অমর।
এই বছরের শুরুতে হঠাৎই আমার টিমে যোগ দিলো একজন নতুন একজন—
নাম তার নীলা।
রাঙামাটি-চাঁদপুর-বরিশালের মতো কোনো মফঃস্বল শহর থেকে আসা মেয়েদের যে রঙ, যে নরম আলো থাকে—
সেটা ওর চলে, ওর পোশাকে, ওর চোখে স্পষ্ট।
চোখের ভেতরে একধরনের নীরব স্বপ্ন,
মনের ভেতর শিশিরভেজা সরলতা,
আর শরীরে একটা কোমল সুবাস—যেন মাটির সাথে মিশে থাকা বৃষ্টি।
ওকে দেখলেই মাথায় বেজে উঠতো Children of Bodom-এর গান—
“She Is Beautiful.”
এক দশক পর প্রথমবার আমি অনুভব করলাম—
হৃদপিণ্ডটা যেন সত্যিই স্পন্দিত হচ্ছে।
একটা অচেনা উষ্ণতা।
একটা অদ্ভুত মায়া…
যেন ওকে আমি আগে কোথাও দেখেছি, কোথাও ছুঁয়েছি, কোথাও অনুভব করেছি।
আমি নিজেকেই প্রশ্ন করলাম—
“আমি কি ওর প্রেমে পড়ছি?”
কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই আরেকটা কণ্ঠ বললো—
“না, এটা ভুল… এটা হওয়া উচিত না।”
কিন্তু মানুষ তো মানুষই।
অনুভূতি তো যুক্তিগণিত চেনে না।
যতই দিন গেছে, নীলা আমাকে টেনে নিয়ে গেছে এক অজানা নরম জগতে।
অচেনা অথচ অদ্ভুতভাবে চেনা।
আমি ওর মন পড়তে শুরু করলাম—
কারণ আমি জানতে চেয়েছিলাম কেন আমি এমন অনুভব করি।
অবাক হয়ে দেখলাম—
নীলা-র ভিতর কেয়া-এর একটা বিশাল প্রতিচ্ছবি।
চোখ, হাসি, স্বপ্ন, ভয়, বেদনা—
সবকিছুতে যেন কেয়া-র একটা ছায়া।
আমার মনে হলো—
কেয়া অন্য কোনো মহাবিশ্ব থেকে নীলা হিসেবে আমার জীবনে ফিরে এসেছে।
নীলা-র সাথে কথা বলতে বলতে আমি ফিরে গেলাম আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে।
ফিরে গেলাম সেই বসন্তে,
যে বসন্তে কেয়া আমার জীবনে প্রথম আলো হয়ে ঢুকেছিল।
অফিসের করিডোর, সিঁড়ি, ক্যান্টিন—সব যেন কেয়া-র স্মৃতি দিয়ে ভরে উঠলো।
আর আমি প্রথমবার অনুভব করলাম—
আমি আবার বেঁচে উঠছি।
আমি আবার রঙ দেখতে পাচ্ছি।
আমি আবার মানুষ হয়ে উঠছি।
কিন্তু সময় কখনো উদার হয় না—
আর তার কাছে কেউ প্রিয়ও না।
কয়েক মাস পর বুঝলাম—
এই মহাবিশ্বেও নীলা আমার হবে না।
তার নিজের স্বপ্ন আছে, নিজের পথ আছে।
আর সেই পথে আমার জন্য কোনো জায়গা নেই—
যেমন কেয়া-র জীবনে আমি ফিট হতে পারিনি,
ঠিক তেমনই নীলা-র জীবনেও আমি জায়গা পাবো না।
বসন্তটা আবার শুকিয়ে গেল।
আমি আবার ফিরে গেলাম আমার পুরনো সঙ্গীর কাছে—
গাজার পটে।
আরেকবার নিস্তব্ধতার ধোঁয়ায় ডুবে গেলাম।
তবুও নীলা আমাকে একটা বিশাল অনুভব দিয়ে গেল—
আমার অনুভূতির প্রতিটি গিঁটের মধ্যে কেয়া লুকিয়ে আছে।
আমি যতই কেয়া-এর কথা ভাবি বা কেয়ার সাথে কথা বলি —
নীলা কোথা থেকে আর কিভাবে যেন আমার মজগে চলে আসে,
এখন আমার কাছে মনে হয় —
“আমি নিজের মধ্যেই একটা অচেনা মানুষ।”
আজ আমি জানি না আমি কে।
কোন মহাবিশ্বে আমি শ্বাস নিচ্ছি,
কোন জীবনে আমি বেঁচে আছি,
কোন জন্মের স্মৃতি আমাকে তাড়া করে ফিরছে।
কিন্তু একটা জিনিস জানি—
এই অনুভূতি কোনো সাধারণ অনুভূতি নয়।
এটা পুনর্জন্মের মতো, , cosmic connection-এর মতো কিছু।
কেয়া চলে গিয়েছে,
নীলা এসে চলে গেছে,
আমি আবার একা হয়ে আছি—
কিন্তু আমার ভিতরের সেই পরিচিত অচেনা মানুষটা…
সে আজও জেগে আছে।
এবং তার কাছে একটাই প্রশ্ন—
“কোন মহাবিশ্বে কেয়া আর আমি আবার এক হবো?”
©somewhere in net ltd.