নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার সম্পর্কে: https://t.ly/atJCp এছাড়া, বইটই-এ: https://boitoi.com.bd/author/2548/&

দারাশিকো

লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি

দারাশিকো › বিস্তারিত পোস্টঃ

আলাস্কার নীলরঙা ম্যাজিক বাস

২১ শে জুলাই, ২০২০ রাত ৯:১৬



গাছের আড়াল থেকে বের হয়েই পরিত্যক্ত বাসটা চোখে পড়ল তার। শিকারি বন্দুকটা কাঁধে ঝুলিয়ে নিল। বাসের আশেপাশের জায়গাটা পরিষ্কার, জানে এরকম খোলা জায়গায় লুকাবে না মুজটা। তখনই গন্ধটা নাকে এলো – কিছু একটা পঁচেছে। বাসের মধ্যে কিছু পাওয়া যায় কিনা দেখতে গিয়ে লাশটা আবিষ্কার করলো শিকারি লোকটা – অল্প বয়সী একটি ছেলে, সম্ভবত খেতে না পেয়ে মারা গেছে। বাসটা ভালো করে দেখে নিল সে, ১৪২ নাম্বার। লোকেশনটা নোট করে নিল, লাশটা উদ্ধারে কাজে লাগবে। তারপর ফিরে চলল মুজ হান্টার। সময়টা সেপ্টেম্বর, ১৯৯২।

ঘটনাটাস্থান ডেনালি ন্যাশনাল পার্ক, আলাস্কা। বাসটা যেখানে রাখা আছে সেটা স্ট্যাম্পেড ট্রেইল বলে পরিচিত। ১৯৬০-৬১ সাল থেকে বাসটা এখানে আছে। ইউটান কনস্ট্রাকশন কোম্পানি নামের একটি প্রতিষ্ঠান এই এলাকার রাস্তার উন্নয়নের কাজে ব্যবহারের জন্য আরও অনেকগুলো বাসের সাথে এনেছিল। উদ্দেশ্য, শ্রমিকদের অস্থায়ী আবাস তৈরী। কাজ শেষে বাকি সকল বাস ফিরিয়ে নেয়া হলেও ১৪২ নাম্বার বাসটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ফেলে যাওয়া হয়। তারপর থেকে এটি শিকারি আর পথিকের বিশ্রাম বা সাময়িক আবাস হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। ১৪২ নাম্বার বাসের নাম ম্যাজিক বাস দিয়েছিল ক্রিস্টোফার ম্যাকেন্ডলেস।

ক্রিস্টোফার ম্যাকেন্ডলেস আর কেউ নয়। ১৯৯২ এর সেপ্টেম্বরে পাওয়া লাশটি তারই। মাত্র দুই বছর আগেই সে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করে। তারপর কাউকে কিছু না জানিয়ে সকল বন্ধন ছিন্ন করে অনির্দেশ পথে যাত্রা করে। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সকল পথ বন্ধ করার জন্য সে তার শিক্ষা সনদ আর অন্যান্য সম্পদ বিক্রি করে দেয়, জমানো সম্পদ দান করে দেয় চ্যারিটি প্রতিষ্ঠানে। এমনকি এক সময় নিজের ক্যাশ টাকাও পুড়িয়ে ফেলে। তারপর একদিন আশ্রয় নেয় ম্যাজিক বাসে। দিন কয়েক পরে খাবার ফুরিয়ে যাওয়ায় ফিরতে চায় জনপদে কিন্তু খরস্রোতা হয়ে যাওয়া নদীর কারণে ফেরা সম্ভব হয় না। তারপর একদিন নীল রঙের ম্যাজিক বাসেই তার মৃত্যু হয়।

ক্রিস্টোফার কোন বিখ্যাত ব্যক্তি না, তার দেয়া নাম ‘ম্যাজিক বাস’ও তার মৃত্যুর পূর্বে কেউ জানতো না। তার লাশ উদ্ধারের কয়েক মাস বাদে ১৯৯৩ সালে জন ক্রাকাউর নামের একজন সাংবাদিক লাশের সাথে পাওয়া নোটবুক থেকে নেয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে একটি প্রবন্ধ লিখেন, যার শিরোনাম ছিল ‘ডেথ অব অ্যান ইনোসেন্ট’। পরে ১৯৯৬ সালে তিনি একটি বই লিখেন যেখানে ক্রিস্টোফার সহ আরও কয়েক ব্যক্তির আখ্যান ছিল। ‘ইনটু দ্য ওয়াইল্ড’ শিরোনামের এই বইটি অত্যন্ত জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং সারা বিশ্বে ত্রিশের অধিক ভাষায় অনূদিত হয়। বইয়ের সাথে সাথে বিখ্যাত হয়ে উঠে ক্রিস্টোফার ম্যাকেন্ডলেস এবং ম্যাজিক বাস।

আরও প্রায় এক যুগ পরে ১৯৯৭ সালে শন পেন পরিচালিত ‘ইনটু দ্য ওয়াইল্ড‘ সিনেমা মুক্তি পাওয়ায় ক্রিস্টোফার এবং তার ‘ম্যাজিক বাস’ এর পরিচিতি আরও বহুগুণে ছড়িয়ে পড়ে। জন ক্রাকাউরের বইয়ের উপর ভিত্তি করে নির্মিত এই সিনেমায় ১৯৯০ সালে ক্রিস্টোফার ম্যাকেন্ডলেস এর গ্রাজুয়েশন থেকে শুরু করে ম্যাজিক বাসে মৃত্যুবরণ পর্যন্ত সময়কে ধারণ করা হয়েছে। শন পেনের দক্ষ নির্মাণ ক্রিস্টোফার ম্যাকেন্ডলেসকে দর্শকের মনে জায়গা করে নিতে সাহায্য করে। সিনেমাটি দুটি অস্কার এবং দুটি গোল্ডেন গ্লোবের জন্য মনোনীত হয়েছিল।

বই এবং সিনেমার জনপ্রিয়তা স্ট্যাম্পেড ট্রেইল এবং ম্যাজিক বাসকে হিচ-হাইকার এবং দুঃসাহসী ভ্রমণপিপাসুদের গন্তব্যস্থল করে তোলে। বহু বছর ধরেই ট্রেকাররা ম্যাজিক বাস দেখতে আসছেন এবং তাদের অনেকেই নানা রকম বিপদের সম্মুখীন হয়েছেন। ক্রিস্টোফার ম্যাকেন্ডলেস যে নদীর কারণে সভ্য জগতে ফিরে যেতে ব্যর্থ হয়েছিলেন, সেই নদীতে ডুবে প্রাণ হারিয়েছেন কেউ কেউ।

ক্রিস্টোফার ম্যাকেন্ডলেস খুব প্রভাবশালী কেউ ছিলেন না। গ্রাজুয়েশন থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সময়ে তার স্বাধীন, বিচিত্রমুখী এবং কষ্টকর অভিজ্ঞতা তাকে জীবন সম্পর্কে কিছু উপলব্ধি তৈরীতে সাহায্য করে যার কিছু কিছু সে তার নোটবুকে লিখে গিয়েছিল। ইনটু দ্য ওয়াইল্ড নামের বই ও সিনেমা তার কিছু তুলে ধরেছে বটে, কিন্তু মানুষকে মোহাবিষ্ট করেছে অনেক বেশী। একটি রোমান্টিক চরিত্র হয়ে উঠেছে ক্রিস্টোফার, রঙ্গীন স্বপ্ন আর ভাবালুতায় ডুবে থাকা সারা বিশ্বের তরুণরা তার অনুসারী। তবে, আমরা যে ক্রিস্টোফার ম্যাকেন্ডলেসকে চিনি, তার কতটুকু বাস্তব আর কতটুকু জন ক্রাকাউরের সৃষ্টি তা নিয়ে বহু বিতর্ক রয়েছে। যেমনটি রয়েছে তার মৃত্যুর কারণ নিয়ে। আলুর মত দেখতে ফলের বিষক্রিয়ায় মারা গেছেন ক্রিস, জন ক্রাকাউরের এমন দাবীর স্বপক্ষে শক্ত প্রমাণ নেই। অন্যদিকে খাদ্যের অভাবেই মারা গেছে ক্রিস – এমন দাবীর পেছনে যুক্তি অনেক থাকলেও রোমান্টিক যুবকেরা প্রথমটিকেই বেশি গ্রহণ করতে আগ্রহী।

শেষ কথা হলো, ম্যাজিক বাসকে কেন্দ্র করে যে মিথ গড়ে উঠেছে সেখানে সম্প্রতি বাগড়া দিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। তারা ট্রেকার আর হিচ-হাইকারদের তীর্থস্থান ম্যাজিক বাসকে দীর্ঘ প্রায় ষাট বছর বাদে সরিয়ে নিয়েছে। ট্রেকার আর হিচ-হাইকারদেরকে অহেতুক বিপদ থেকে রক্ষার জন্যই এই উদ্যোগ। যেহেতু বাসটিতে কোন ইঞ্জিন ছিল না, তাই হেলিকপ্টারে করে উড়িয়ে নিয়ে গেছে আলাস্কা কর্তৃপক্ষ। কোথায় সেটা কেউ জানে না। ধারণা করা যায়, এবার হয়তো ক্রিস্টোফার ম্যাকেন্ডলেস মিথের গতি কিছুটা রুদ্ধ হবে। তবে উল্টোটা হওয়াও অসম্ভব কিছু নয়।

আমার ওয়েবসাইটে আমন্ত্রণ রইল

মন্তব্য ২২ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (২২) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে জুলাই, ২০২০ রাত ৯:৩৪

এইচ তালুকদার বলেছেন: পড়ে ভালো লাগলো।ইনটু দ্যা ওয়াইল্ড আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর মুভি গুলোর একটা

২২ শে জুলাই, ২০২০ বিকাল ৩:১৪

দারাশিকো বলেছেন: ধন্যবাদ এইচ তালুকদার। ইনটু দ্য ওয়াইল্ড বেশ চমৎকার সিনেমা। শন পেনের নির্মাণ আমার বেশ ভালো লাগে।

২| ২১ শে জুলাই, ২০২০ রাত ৯:৪৬

মা.হাসান বলেছেন: আপনার ওয়েব সাইট সাংঘাতিক! ভ্রমন পাতা গুলো খুব কাজে আসবে, এই মুহূর্তে ব্যস্ত ঢুকতে পারছি না- পরে আসবো।

কয়েক বছর আগে একটা ফিচার পড়েছিলাম। কিছু লোক একটা আন্দোলনই বলা যায়, করতে চাইছেন। সব টাকা দান করে দিয়েছেন। কোনো ফোন ব্যবহার করেন না। মুক্ত ভাবে বাঁচতে চান।

শন পেনের সিনেমাটা ভালো ছিলো, অসম্ভব সুন্দর প্রকৃতি (সাউন্ডট্র‌্যাক গুলোও অনেক ভালো)। কোনো দিন ম্যাজিক বাস দেখবো এমন আশা করিনি, কিন্তু ১৪২ নম্বর বাস সরিয়ে ফেলার খবরে মনটা একটু খারাপ লাগলো।

আপনাকে নিজের সাইটে লেখার সাথে সাথে এই ব্লগেও লেখার অনুরোধ করে গেলাম।

২২ শে জুলাই, ২০২০ বিকাল ৩:১৮

দারাশিকো বলেছেন: আন্তরিক ধন্যবাদ মা.হাসান। আলাস্কার ম্যাজিক বাস দেখতে পারলে ভালোই লাগতো, কিন্তু এ তো প্রায় অসম্ভব ঘটনা।

এই সাইটেই তো লিখা শুরু করেছি, মাঝে দীর্ঘদিন অনিয়মিত ছিলাম, তখন ফেসবুক আর নিজের সাইটে লিখেছি। আবারও নিয়মিত হওয়ার চেষ্টা করছি।

ভালো থাকবেন।

৩| ২১ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১০:০৮

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: আপনার ব্লগটা ভাল লাগলো।
সিম্পলের মধ্যে দারুন :)

নীল রঙের ম্যাজিক বাস- বিষয়টা জানা ছিল না।
জানানোয় ধন্যবাদ।

+++

২২ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১০:২৯

দারাশিকো বলেছেন: ধন্যবাদ প্রিয় বিদ্রোহী ভৃগু। আসবেন মাঝে মধ্যে। ভালো থাকবেন!

৪| ২১ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১১:১৭

শেরজা তপন বলেছেন: এটা কি রিপোস্ট? মনে হচ্ছে এর আগে একবার পড়েছিলাম।
যদি হয় তবে নাহলেও,ফের ভাল লাগা রইল

২২ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১০:৩৭

দারাশিকো বলেছেন: না তো। এই সাইটে তো একবারই পোস্ট করলাম। তবে কয়েকদিন আগে আমার ফেসবুকে পোস্ট করেছিলাম। আর আমার নিজের ওয়েবসাইটে। দৈনিক দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত হয়েছিল গত ১০ তারিখে সম্ভবত। এগুলোর কোথাও পড়েছিলেন?

ভালোলাগা জানানোর জন্য ভালোবাসা। ভালো থাকবেন :)

৫| ২১ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১১:৫২

রাজীব নুর বলেছেন: অসম্ভব সুন্দর একটা মুভি। দেখেছি।
আপনার কাছ থেকে এরকম মুভি নিয়ে পোষ্ট এর রিভিউ নিয়মিত চাই।

২৩ শে জুলাই, ২০২০ সকাল ৭:৩৯

দারাশিকো বলেছেন: মুভিটা সত্যিই খুব সুন্দর। আমি কিন্তু মুভি নিয়ে পোস্ট দেই নাই। ম্যাজিক বাস নিয়ে পোস্ট দিয়েছি।

৬| ২২ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১২:৫১

নেওয়াজ আলি বলেছেন: মুড়ির টিন আমিও দেখেছি

২৩ শে জুলাই, ২০২০ সকাল ৭:৪০

দারাশিকো বলেছেন: কোনটা? ছবিরটা?

৭| ২২ শে জুলাই, ২০২০ দুপুর ১২:১৭

ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে তার উপর রচিত গল্পটা পাঠ্যতে অর্ন্তভুক্ত ছিলো। বেদনাদায়ক ছিলো বৈ কি!

২৩ শে জুলাই, ২০২০ বিকাল ৪:৫৪

দারাশিকো বলেছেন: বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যে ছিল জেনে বেশ অবাক লাগল। কোন বিষয়ে? কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে?

৮| ২২ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১০:৫৫

শেরজা তপন বলেছেন: ওহ হো তাহলে সিনেমাটা দেখেছিলাম!

২৩ শে জুলাই, ২০২০ বিকাল ৪:৫৫

দারাশিকো বলেছেন: তাই হবে!

৯| ২৩ শে জুলাই, ২০২০ দুপুর ১২:১০

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: মরার পর বিখ্যাত হওয়া, পুরস্কার পাওয়া/দেওয়া এগুলো কাজে আসেনা.....
অথচ জীবিত থাকতে অনাদর, অবহেলা।
+++

২৩ শে জুলাই, ২০২০ বিকাল ৫:০০

দারাশিকো বলেছেন: পুরস্কার, সম্মাননার ক্ষেত্রে এটা খাটে। কিন্তু ক্রিস ম্যাকেন্ডলেস-এর বিখ্যাত হওয়ার জন্য সাধারণ মানুষের ভূমিকা বেশি। তাছাড়া, নিজের জীবন সে নিজেই বেছে নিয়েছিল, অনাদর অবহেলার কিছু ছিল না।

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

১০| ২৩ শে জুলাই, ২০২০ বিকাল ৫:১৫

ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: ক্রিস্টোফার ম্যাকক্যানডেলস্ এর জীবনের ঐ ঘটনার উপর জন ক্র্যাকাওয়ার রচিত নভেল "ইন্টু দ্যা ওয়াইল্ড" আমাদের ইংরেজী সাহিত্যের একটা সাবজেক্ট-এর পাঠ্য ছিলো। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম "দ্যা সিটি ইউনিভার্সিটি ওফ নিউ ইয়র্ক"।

২৩ শে জুলাই, ২০২০ রাত ৮:০৭

দারাশিকো বলেছেন: শুকরিয়া। জেনে বেশ ভালো লাগলো।

১১| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৯:৩৮

আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: ব্যস্ততার বেড়াজাল ভেদ করে হঠাৎ বৃষ্টির মতোই কিছু সময় ঝরে পড়লো। তারই ফলে আপনার এই লেখাটি পড়ার সুযোগ পেলাম। নতুন বিষয়। আগে জানতাম না। অসংখ্য ধন্যবাদ রইলো :)

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৯:৫৬

দারাশিকো বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ আর্কিওপটেরিক্স। ভালো থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.