নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভালোবাসি বিজ্ঞানকে।। তাই বিজ্ঞান নিয়ে সকল পোষ্ট করার চেষ্টা করি।।

দীপংকর চক্রবর্ত্তী

যদি লক্ষ্য থাকে অটুট, বিশ্বাস হৃদয়ে, হবে হবেই দেখা, দেখা হবে বিজয়ে।।।

দীপংকর চক্রবর্ত্তী › বিস্তারিত পোস্টঃ

সামু তথা বাংলা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা "সৈয়দা গুলশান ফেরদৌস জানা" র মুখে সামুর ইতিহাস এবং বর্তমান অবস্থা

২১ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ১:১৮

আজ NTV এর ওয়েবসাইটে হঠাৎ সামুর প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দা গুলশান ফেরদৌস জানার একটি সাক্ষাৎকার দেখতে পাই। পড়ে অনেক ভালো লাগল। বাংলা ব্লগের এবং সামুর বিষয়ে অনেক নতুন কিছু জানলাম। Some Where In Blog- এর উৎপত্তি এবং বর্তমান পর্যন্ত বিস্তার সম্পর্কে জানতে পারলাম। সাক্ষাৎকারটি হুবহু তুলে ধরছি:--
.............সৈয়দা গুলশান ফেরদৌস জানা এবং তার স্বামী আরিল্ড ক্লোক্কেরহৌগ ...........

""
‘কেউ বলছে জামাতি, কেউ বলছে আওয়ামী লীগার, কেউ বা বিএনপি। কিন্তু আমরা কারোরই নই। আমরা নিরপেক্ষ। আমরা শুধু মত প্রকাশের একটা জায়গা তৈরি করতে চেয়েছিলাম। আর আমরা আসলে শুধু সেটাই চাই’—শুরুতেই সাফসাফ কথাগুলো বলে আমাদের অনেক প্রশ্নেরই জবাব দিয়ে দিলেন জানা। পুরো নাম সৈয়দা গুলশান ফেরদৌস জানা। বাংলা ব্লগিংয়ের শুরু হয়েছিল তাঁর হাত ধরেই, সঙ্গে ছিলেন স্বামী আরিল্ড ক্লোক্কেরহৌগ। তিনি নরওয়ের নাগরিক। নামটা তো সবারই জানার কথা, ‘সামহোয়্যার ইন ব্লগ’। সালটা ২০০৫, ডিসেম্বরের ১৫ তারিখ। বাংলা ব্লগিংয়ের ইতিহাসে প্রথম বাংলায় ব্লগপোস্ট।
.............সৈয়দা গুলশান ফেরদৌস জানা এবং তার স্বামী আরিল্ড ক্লোক্কেরহৌগ ............


অফিস দেখতে দেখতে কিছু প্রশ্ন মনের ভেতর থেকে বেরোবার পথ খুঁজছিল। এরই মধ্যে হালকা খাওয়াদাওয়া চলছে। তার পরে মগভর্তি কফিতে চুমুক দিতে দিতেই প্রশ্নটা করে বসি।

এনটিভি অনলাইন :-- ‘Some Where In Blog- প্রতিষ্ঠানটা চলে কীভাবে? মানে বলতে চাচ্ছি, আয়ের উৎস কী?’

জানা বললেন, ‘এখন কিছু বিজ্ঞাপন আসে। কিন্তু মূল আয়ের জায়গাটা অন্যখানে। আমাদের প্রতিষ্ঠানের নাম সামহোয়্যার ইন নেট লিমিটেড। মূলত আউটসোর্সিংয়ের কাজ হয়। সেটার আয় থেকেই অনেকখানি এটার ব্যয়ে কাজে লাগে।’ আমরাও এ উত্তরে বুঝলাম, ব্যাপারটা আসলেই বেশ কঠিন। যতটা ভেবেছিলাম, তার চেয়েও ঢেরগুণে বেশি।
‘আমি দেশে এবং দেশের বাইরে লেখাপড়া করেছি। বিভিন্ন ভাষার মানুষ দেখেছি। তাদের সঙ্গে মিশেছি। আমার স্বামী একজন নরওয়েজিয়ান। ভাষার প্রতি আমার নিজের একটা দুর্বলতা রয়েছে। বিভিন্ন ভাষা বলতে, শিখতে এবং লিখতে পছন্দ করি। যেমন—আমি নরওয়েজিয়ান ভাষা বলতে, পড়তে এবং লিখতে পারি। স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোর মধ্যে সুইডিশ, ড্যানিশ ভাষা বুঝি, বলতে পারি, পড়তে পারি। বাংলা তো আমার নিজের ভাষা। মাতৃভাষার প্রতি বিশেষ দুর্বলতা সেই ছোটবেলা থেকেই। এর বাইরে ইংরেজি বলি, পড়ি, লিখি এবং হিন্দি বুঝতে পারি। ফ্রেঞ্চ এবং জার্মান ভাষায়ও আগ্রহ রয়েছে।’

এখান থেকেই শুরু। স্বপ্নকে সাফল্যের দিকে নিয়ে যেতে গেলে স্বপ্ন দেখার সঙ্গে সঙ্গে দূরদৃষ্টিটাও লাগে, সেটা তাঁদের ছিল। জানালেন, বিভিন্ন দেশে থাকলে, ঘুরলেও মনেপ্রাণে তো একজন বাঙালি। নিজের ভাষার জন্য, দেশের জন্য কিছু একটা করার ইচ্ছাটা সব সময়েই ছিল। নিজের পর্যবেক্ষণে দেখেছেন, বাঙালিরা সব সময়ই অনেক বেশি কমিউনিটিভিত্তিক জীবনে অভ্যস্ত। সবাইকে নিয়ে সবার সঙ্গে থাকা। নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে। এই কমিউনিটিটাকে কীভাবে কাজে লাগানো যায়, সেটাই ছিল চিন্তা। সেখান থেকেই ব্লগিংয়ের চিন্তা। কিন্তু তখন ব্লগিং মানেই ইংরেজিতে ব্লগিং; কোনো বাংলা ব্লগিং সাইট নেই। কারণ, ইন্টারনেটে বাংলা লেখা সম্ভব ছিল না, কিছু ব্যবহারকারী ডেস্কটপে বাংলা লিখতেন। সামহোয়্যার ইন ব্লগের মাধ্যমেই মূলত ইন্টারনেটে বাংলায় লেখা সম্ভব হয়েছে।
২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারা দেশে ঘটল সিরিজ বোমা হামলার ঘটনা। জানা বললেন, ‘এ সময়ে খুব আতঙ্কিত ছিল সবাই। টিভিতে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছে না। কোথায় কী হয়েছে, কেউ মারা গেছে কি না কেউ বলতে পারছে না। সারা দিন সবার মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক। তখনই অনুভব করলাম সিটিজেন জার্নালিজম বা নাগরিক সাংবাদিকতার শক্তি এবং গুরুত্ব। এ রকম একটা প্ল্যাটফর্ম দরকার, যেখানে সাধারণ মানুষ নিজেদের মনের কথা বলতে পারবে; নিজের মতামত অন্যের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে পারবে, জানতে, জানাতে এবং আলোচনা করতে পারবে। দেশের সর্ববৃহৎ সেলফোন কোম্পানি গ্রামীণফোনে দীর্ঘ সময় কাজ করার অভিজ্ঞতায় আমরা দুজনই বুঝতে পেরেছিলাম যে মোবাইল ফোন শুধু কথা বলার যন্ত্র হিসেবে সীমাবদ্ধ থাকবে না। প্রযুক্তিগত নানা দিক উন্মোচিত হবে, ইন্টারনেট খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে। সে রকম বুঝেই একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরির কাজ করছিলাম। সিরিজ বোমা হামলার ঘটনা ভেতরের তাড়নাকে বাড়িয়ে দিল। যত বাধাই আসুক, বাংলা ব্লগিং শুরু করব ওই বছরের মধ্যেই—এই সংকল্প নিয়ে কাজ শুরু করি। তখন আমাদের সঙ্গে কিছু মেধাবী প্রোগ্রামার যুক্ত করে নিলাম। সে সময় আসলে বাংলা ব্লগিং সাইট করার মতো লোকজন খুঁজে পাওয়া খুব মুশকিল ছিল। হাসিন হায়দার, ইমরান, মোর্শেদ—এদের কথা বলব। এদেরকে আমরা বলি সেই সময়কার ‘ববস’, মানে ‘বেস্ট অব বাংলাদেশ’। ব্লগিং সাইটটি নিয়ে এদের সঙ্গে আমাদের পরিকল্পনার বিষয়ে আলোচনা করে আমরা পুরোদমে কাজ শুরু করি। মাত্র পাঁচ মাসের মধ্যেই একটি সম্মিলিত প্রাণান্তকর প্রচেষ্টায় সামহোয়্যার ইন ব্লগ চালু হয়ে যায়।

আমাদের উদ্দেশ্য ছিল বাংলা ব্লগিং সাইট করা, নিউজ পোর্টাল নয়। নিউজ থাকবে, কিন্তু সেটা সিটিজেন জার্নালিজম হিসেবে। অর্থাৎ কোথাও কোনো ঘটনা ঘটল, যাঁরা সেখানে আছেন, তাঁরা সেই ছবি এবং খবরটা নিজেরাই মোবাইলের মাধ্যমে ব্লগে তুলে দিলেন, যাতে একটি প্রাণবন্ত আলোচনা সম্ভব। কারণ, ঘটনা ঘটার পর সেটা জানতে এবং সংবাদটি গুছিয়ে নিতে সাংবাদিকদের সময় লাগে। তার পর একজন সাংবাদিক সেটা কাভার করে আসার পর আমরা খবরটা পাই। কিন্তু ব্লগিংয়ের মাধ্যমে খবরটা সঙ্গে সঙ্গেই পাওয়া সম্ভব।
সেই সঙ্গে বাংলা ভাষায় ব্লগিং চালু করতে চেয়েছিলাম, যাতে মানুষের মত প্রকাশের একটা জায়গা থাকে। গণমাধ্যমগুলোতে সে সুযোগ রয়েছে, কিন্তু সেখানে বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ব্লগিংটা অনেকটাই উন্মুক্ত। আর মডারেশনের ক্ষেত্রে আমরা পোস্ট মডারেশন করি। অর্থাৎ লেখা প্রকাশিত হবে প্রথমে। তার পর যদি তা নিয়ে কোনো প্রশ্ন ওঠে এবং দেখা যায় যে আমাদের ব্লগিং নীতিমালা লঙ্ঘিত হয়েছে, তবে আমরা সে পোস্টটি ব্লগারকে জানিয়ে সরিয়ে ফেলি। আমরা সেই ব্লগারের কাছে মেইল পাঠাই যে কী কারণে তার লেখাটি সরিয়ে ফেলা হচ্ছে এবং আমাদের নীতিমালাগুলো তাকে পাঠাই। কথা বলার বা মত প্রকাশের স্বাধীনতা প্রশ্নে স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে আমরা একটি ব্লগিং নীতিমালা করেছি, আমরা সেভাবেই ব্লগ পরিসরে আচরণ এবং পোস্টগুলোর দেখভাল করে থাকি।
শুনতে শুনতে হঠাৎ খেয়াল হলো, আমাদের প্রশ্নপত্রের থেকেও তো কিছু প্রশ্ন করতে হবে! নামকরণের বিষয়ে তো একটা প্রশ্ন না করলেই নয়। এবারে প্রশ্ন বনাম উত্তর পর্ব শুরু হয়ে যায়।


আমাদের কৌতূহলী জিজ্ঞাসা, ‘আচ্ছা, নামটা এমন কেন? নামটার মধ্যে একধরনের ঘোর কাজ করে? সামহোয়্যার ইন মানে কোনো এক জায়গায়! নামটা কীভাবে এলো?’

প্রশ্ন শুনে হাসলেন জানা আপা। জানালেন নামকরণের পেছনের ইতিহাস, “আমি আর আমার হাজবেন্ড মিলে একটি ছুটির দিন বাসায় বসে ‘আর্থ’ ব্যান্ডের গান শুনছিলাম। তাদের একটি গান ‘সামহোয়্যার ইন আফ্রিকা’ আমাদের খুব পছন্দের। সেখান থেকেই এই ‘সামহোয়্যার ইন’ শব্দটি নেওয়া। বলতে পারেন, মাথায় গেঁথে গেল আর কী! এভাবেই আমাদের প্রতিষ্ঠানের নাম দেওয়া। ব্লগের নামটাও সেভাবেই আসে। তবে সামহোয়্যার ইন ব্লগের একটা বাংলা নামও আছে, ‘বাঁধ ভাঙার আওয়াজ’।

এনটিভি অনলাইন : ব্লগ তো হলো। কিন্তু ব্লগ কী, সেটা কীভাবে মানুষ জানল? বাংলাতেও ব্লগিং করা যায়, এটা মানুষ কীভাবে নিয়েছিল তখন?
উত্তর : আমরা যখন শুরু করি, তখন ব্লগিংয়ের ব্যাপারে হাতেগোনা কিছু ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ধারণা ছিল এবং তা ইংরেজিতে। আবার বাংলায় অনলাইনে লেখার ব্যাপারটা তখনো সম্ভব হয়নি। হাতেগোনা কয়েকজন ছিলেন, যাঁরা তখন বাংলাদেশে ব্লগিং করতেন, তবে ইংরেজিতে। এমনই একজন গায়ক ঢাকা ব্যান্ডের মাকসুদ ভাই। আমরা মাকসুদ ভাইকে জানাই এবং তাঁকে আমাদের ব্লগ সম্পর্কে বলি। তিনি খুবই আগ্রহী ছিলেন। এর বাইরে দেশে ও বিদেশে বাঙালি যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যে কারা ব্লগিং করেন, সেটা আমরা খুঁজতে থাকলাম। এর বাইরে আমাদের কোনো প্রচারণা ছিল না; কোনো বিজ্ঞাপনও ছিল না। শুধুই নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ আর মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়তে লাগল। এর মধ্যে একদিন মাকসুদ ভাই সে সময়কার কিছু প্রোগ্রামার, ডেভেলপার এবং ইন্টারনেটের সঙ্গে কোনোভাবে সংযুক্তদের তাঁর বাসায় একটি চায়ের আড্ডায় ডাকেন। আমরা সেখানে গেলাম। আরো ১০/১৫ জন এলেন, যাঁরা ব্লগিং করতেন। ওই মিটিংটা খুব কাজে দিয়েছিল। এর পর মানুষের মুখে মুখেই ছড়িয়েছে ব্লগের কথা। ব্লগিং নিয়ে আমরা কখনো কোনো বিজ্ঞাপন দিইনি, এখন পর্যন্ত বিজ্ঞাপন দেওয়া ছাড়াই আমাদের কাজ চলছে।



এনটিভি অনলাইন : এত বড় একটা ব্লগ সাইটকে যাঁরা চালিয়ে নিচ্ছেন, সেই টিম সম্পর্কে বলুন
উত্তর : আমাদের পুরো কাজটাই হয় টিমওয়ার্কের মাধ্যমে। আমাদের অফিসে কোনো স্যার-ম্যাডাম কালচার নেই। এখানে সবাই নিজের কাজটা নিজেই করে। যেমন ধরেন কেউ চা বা কফি খাবে, সেটা সে নিজেই বানিয়ে নেয়। আবার যাওয়ার আগে পাশের জনকে জিজ্ঞেস করে যাবে, তার কিছু লাগবে নাকি। আমরা সবাই কিন্তু একসঙ্গে বসেই কাজ করি। কারো জন্য আলাদা রুম নেই। এই কালচারটা আমি স্ক্যান্ডিনেভিয়ানদের মধ্যে দেখেছি। ওদের মধ্যে ভেদাভেদটা কম। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেঝে পরিষ্কার করে যে লোকটা, সেও কিন্তু নিজের গাড়িতে করে কাজে আসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তাকে দেখে হাত বাড়িয়ে দেয়, কুশল জিজ্ঞেস করে। আমরাও সেভাবে করতে চেয়েছি। এখন সামহোয়্যার ইন ব্লগের কনটেন্ট নিয়ে কাজ করছি আমরা চারজন। বাকিরা অন্যান্য আউটসোর্সিংয়ের কাজ করছে।
(আমাদের বিস্ময়, এই বিশাল সামহোয়্যার ইন ব্লগ, মাত্র চারজন মিলে! জানা হাসলেন। বিস্ময়টা আরো বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, ‘হ্যাঁ। চারজন, আমি সহ!’ বিস্ময় সামলে আবারো কাঠামোগত প্রশ্নে ফেরা হয়।)

এনটিভি অনলাইন : সামহোয়্যার ইন ব্লগ দিয়ে যাত্রা শুরু। একদম শুরু থেকেই বাংলাদেশের ব্লগিং দেখেছেন আপনারা। এর উত্থান বা বিস্তৃতির ব্যাপারটি কীভাবে দেখেন?
উত্তর : আমার মনে হয়, মাতৃভাষায় হওয়ার কারণে বাংলা ব্লগিংয়ের বিকাশ এবং প্রকাশ খুব দ্রুতগতিতে হয়েছে। ব্লগ চালুর পর ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ব্র্যাক সেন্টারে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সামনে রেখে আমরা একটা কর্মশালা করেছিলাম। সেখানে আসলে কীভাবে ব্লগ ব্যবহার করতে হয়, সেটা দেখানো হয়েছিল। দিনব্যাপী কর্মশালা ছিল সেটি। ওই কর্মশালা অনেক কাজে দিয়েছিল সে সময়ে। মানুষ জানতে পেরেছিল; ব্লগিংয়ের সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে পেরেছিল। এর পর অনেক জায়গাতেই মানুষ নিজেদের মতো করে ব্লগের কথা বলেছে। একটা উদাহরণ দিতে পারি, আমার বোনের ছেলে একদিন আমাকে এসে বলছে, ক্লাসে তাদের টিচার রেফারেন্স হিসেবে সামহোয়্যার ইন ব্লগের কথা বলেছেন। ও তখন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ত। এভাবেই মানুষের স্বতঃস্ফূর্ততা বাংলা ব্লগকে সামনে এগিয়ে নিয়েছে।



এনটিভি অনলাইন : অনেকেই সমালোচনা করে বলে থাকেন যে ব্লগাররা শুধু ভার্চুয়াল জগতেই বিদ্যমান। সেখানেই তারা সচল, কিন্তু বাস্তবে মাঠে নেমে কাজ করার ক্ষেত্রে তাদের পাওয়া যায় না। ব্লগ এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখালেখি পর্যন্তই।
উত্তর : আমি সেটা মনে করি না; বরং ব্লগার কমিউনিটি ও সোশ্যাল মিডিয়া অনেক বেশি সচেতন এবং সচল অনেকের চেয়ে। বেশ কিছু ঘটনার কথা বলতে পারি। ব্লগাররা সেই শুরু থেকেই কল্যাণমূলক কাজে নিজেদের নিয়োজিত রেখেছেন। ২০০৭ সালে চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং ভয়াবহ ‘সিডর’ ও ‘আইলা’ মোকাবিলা থেকে শুরু করে আজ অবধি বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণ, প্রতিবছর শীতবস্ত্র বিতরণ এবং বিপন্ন মানুষের প্রাণরক্ষায় ব্লগাররা একত্র হয়ে নিঃস্বার্থ কাজ করে আসছেন। তাঁরা কিন্তু এক হয়েছেন ব্লগিং প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে। আমাদের যাত্রা শুরু ২০০৫ সালে আর ফেসবুকের সঙ্গে আমাদের দেশের মানুষ পরিচিত হয় ২০০৭ সালের দিকে। ২০০৯ থেকে ২০১১—এই সময়ের মধ্যে ফেসবুকের প্রসার ঘটে। আগে যাঁরা ব্লগিং করতেন, তাঁরাই কিন্তু ফেসবুকে নিজেদের কমিউনিটিটা তৈরি করে নেন। সিনেমাখোরদের আড্ডা যেমন সিনেমা নিয়ে কাজ করে। এঁদের শুরুটা ব্লগ থেকে, এখন কিন্তু ফেসবুকের গ্রুপেও তাঁরা অ্যাকটিভ। রানা প্লাজার কথা বলব। ওই দুর্ঘটনার পর ব্লগাররা একসঙ্গে কাজ করেছেন। নিজেরা উদ্ধারকাজে অংশ নিয়েছেন। সেখান থেকে আপডেট জানিয়েছেন। টাকা সংগ্রহ করেছেন; রক্ত, অক্সিজেন, ওষুধ সংগ্রহ করেছেন। ওই সময়ে ব্লগাররা যে যেভাবে পেরেছেন, মাঠে নেমে কাজ করেছেন।

এনটিভি অনলাইন : ‘ব্লগার’ শব্দটির পাশাপাশি আরেকটি শব্দ প্রচলিত আছে ‘পেইড ব্লগার’। এর অস্তিত্ব কি আছে?
উত্তর : আমরা কিন্তু প্রথম থেকেই নিজেদের অর্থায়নে ব্লগটাকে চালিয়ে এসেছি। এখন পর্যন্ত কোথাও বিজ্ঞাপন দিইনি সেভাবে। মানুষের মুখে মুখেই আমাদের ব্লগের কথা ছড়িয়েছে। ২০০৫ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত নিজেদের পয়সা খরচ করে ব্লগটা দাঁড় করিয়েছি। চার বছর পর, ২০০৯ থেকে আমরা সাইটে বিজ্ঞাপন নেওয়া শুরু করি। আমি বলব যে ‘পেইড ব্লগার’ একটি আক্রমণাত্মক শব্দ। এখানেও সেই ‘ট্যাগিং’ চলে আসছে। আমাদের দেশে পেইড ব্লগার বলে কাউকে হেয় করার চেষ্টা করা হয়, বোঝানো হয় যে নির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক বা ধর্মীয় গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করছে সে। এখন এমন হতে পারে যে, কোনো জনপ্রিয় ব্লগার রয়েছেন, তাঁর জনপ্রিয়তাকে কেউ কাজে লাগিয়ে নিজেদের বিজ্ঞাপন করতে চাচ্ছে। যেমন ধরুন সাবান বা শ্যাম্পুর বিজ্ঞাপন হতে পারে। সেই ব্লগার সেটা নিয়ে লিখতে পারেন, এটা তাঁর নিজস্ব ব্যাপার। এর সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই এবং বিজ্ঞাপননির্ভর পোস্ট আমরা অনুমোদন করি না। বিশ্বজুড়ে অনেক ব্লগারই লেখালেখি করে ব্লগিং করে আয় করছেন। সেটা একেবারেই ব্যক্তিগত বা প্রাতিষ্ঠানিক। সে বিবেচনায় বিশ্বজুড়ে পেইড ব্লগিং প্রচলিত। সেটা আলাদা বিষয়। কিন্তু আমাদের ব্লগে পেইড ব্লগারের কোনো অস্তিত্ব নেই। আমরা কাউকে ব্লগিংয়ের বিনিময়ে কোনো অর্থ দিই না। আমরা কেবল মত প্রকাশের স্বাধীনতা বা ব্লগিং সুবিধাদানকারী একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করি। তবে ‘ব্লগ’, ‘ব্লগিং’ এবং ‘ব্লগার’ শব্দগুলো ২০১৩ সালে চূড়ান্ত অপপ্রচারের মুখে পড়ে। এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরির জন্য দৈনিক ইত্তেফাকের সঙ্গে আমাদের সামহোয়্যার ইন ব্লগের একটি মিডিয়া-বন্ধন তৈরি হয়েছে। আমাদের এখানে যেসব পোস্ট ছাপা হয়, সেখান থেকে বাছাইকৃত কিছু লেখা আমরা পাঠিয়ে দিই এবং ইত্তেফাকে আমাদের ব্লগারদের বাছাই করা লেখা ছাপা হয় নিয়মিত। আমরা টপিক ব্লগের আয়োজন করে থাকি। গত রমজানে ইউনিলিভারের সঙ্গে এ রকম একটি আয়োজন করেছিলাম, যেখানে ব্লগাররা রমজানে কীভাবে মানুষ নিজেদের সংযমে নিয়োজিত করবে, সে বিষয় নিয়ে লিখেছিলেন। সেখান থেকে সেরা ব্লগারদের পুরস্কৃত করেছিল ইউনিলিভার।

এনটিভি অনলাইন : ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা’ ব্লগের ক্ষেত্রে বহুল উচ্চারিত একটি শব্দ। এটাকে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
উত্তর : ব্লগিং প্ল্যাটফর্মটাই কিন্তু স্বাধীন মত প্রকাশের জায়গা। স্বাধীনভাবে কথা বলা বা মত প্রকাশ মানুষের অধিকার। আমার যদি কারো মত পছন্দ না হয়, তাহলে আমি আমার যুক্তি দিয়ে তার সঙ্গে বিতর্ক করব। এখানে নৈতিকতার বিষয়টি চলে আসে। আমি মনে করি, আরেকজনের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করার ক্ষেত্রে আমার ততটুকু বলার স্বাধীনতা আছে, যতটুকু তাঁর স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন না করে। যখন মানুষ যুক্তিতর্কে হেরে যায়, তখনই একজন আরেকজনকে ‘পাগল’ বলে বা আঘাত করে। আপনি আপনার যুক্তিগুলো তুলে ধরে দ্বিমত পোষণ করতেই পারেন।



এনটিভি অনলাইন : "২০০৫ সালে শুরু, এখন ২০১৫। ১০ বছরের যাত্রাটা কেমন ছিল?"

উত্তর : অপপ্রচার যেমন ছিল, তেমনি ব্লগারদের মধ্যে ঐক্য ছিল। সে কারণেই ব্লগিং প্ল্যাটফর্ম এখনো টিকে আছে। আমিনবাজারে একবার একটি বাস দুর্ঘটনা ঘটেছিল। সেখান থেকে একজন ব্লগার একটি পোস্ট দিয়ে সবাইকে জানিয়েছিলেন এবং সাহায্য চেয়েছিলেন। ওই এলাকার আশপাশের ব্লগাররা সবাই সঙ্গে সঙ্গে পৌঁছে গিয়েছিলেন ওখানে। ১০/১৫ জন ব্লগার মিলে সেখানে উদ্ধারকাজে অংশ নেন। এ রকম আরো উদাহরণ আছে। রক্তদান নিয়ে ব্লগারদের আলাদা কমিউনিটি আছে। জরুরি প্রয়োজনে রক্ত লাগলে মানুষ ব্লগে পোস্ট দেন। আমরা সেগুলো স্টিকি করি, যাতে আরো মানুষ জানতে পারেন। ২০০৬ সালে ব্লগারদের প্রচেষ্টায় প্রাপ্তি নামের একটি মেয়ের জীবন বাঁচানো হয়েছিল। প্রাপ্তির ফুপু একজন ব্লগার। তিনিই প্রথম বিষয়টি নিয়ে ব্লগে পোস্ট করেছিলেন। তার পর আমরা সবাই মিলে প্রাপ্তির জন্য কাজ করেছি। প্রাপ্তির ব্লাড ক্যানসার হয়েছিল, সবাই মিলে আমরা প্রাপ্তিকে বাঁচাতে পেরেছিলাম। চার বছর বয়সে মেয়েটার ক্যানসার ধরা পড়েছিল। এখন সেই প্রাপ্তির বয়স ১৪ বছর। সে পুরোপুরি সুস্থ। ক্লাস নাইন বা টেনে পড়ে।
রাজশাহীতে শাশ্বত সত্য নামে একজন ব্লগার ছিলেন। তাঁর হাড়ের সমস্যা ছিল। তখনো ব্লগাররা সবাই এক হয়ে কাজ করে তাঁকে সাহায্য করেছিলেন। সত্য কিছুদিন আগে আমেরিকা থেকে বড় একটা কোর্স করে এসেছেন। ১২ বছর বয়সী উপমা নামের একটা মেয়ের হার্ট অপারেশনের জন্য অনেক টাকার দরকার ছিল। সেখানেও ব্লগাররা নিজেদের মতো করে এগিয়ে এসেছিলেন। এই যে সবাই একসঙ্গে ভালো কিছুর জন্য কাজ করা, এটাই ব্লগের শক্তি। আমার মনে হয়, মিডিয়াকেও এসব ব্যাপারে সচেতন হবে। ব্লগিং নিয়ে যেসব অপপ্রচার হয়, তার বিরুদ্ধে। ব্লগার মানেই নাস্তিক নয়, এটা মানুষকে বোঝাতে হবে।



#দীপংকর চক্রবর্ত্তী ........................................................................................................[ইষৎ সংক্ষেপিত]

মন্তব্য ২২ টি রেটিং +৭/-০

মন্তব্য (২২) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ১:৩১

কাবিল বলেছেন: তথ্য বহুল পোস্ট।
শেয়ার করায় আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।


পোস্ট প্রিয়তে।

২১ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ২:০২

দীপংকর চক্রবর্ত্তী বলেছেন: আমি কৃতার্থ :-)

২| ২১ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ১:৪০

হোসেন মালিক বলেছেন: সুন্দর পোস্ট

২১ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ২:০৪

দীপংকর চক্রবর্ত্তী বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ২১ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ১:৪৩

নুর ইসলাম রফিক বলেছেন: শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

২১ শে জুন, ২০১৫ রাত ১০:২০

দীপংকর চক্রবর্ত্তী বলেছেন: আমি কৃতার্থ :-)

৪| ২১ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ২:১০

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: আগেও পড়েছিলাম। আবারও মনে করিয়ে দিলেন শৈয়ার দিয়ে!!!

+++++++

২১ শে জুন, ২০১৫ বিকাল ৩:১৫

দীপংকর চক্রবর্ত্তী বলেছেন: :-) ধন্যবাদ

৫| ২১ শে জুন, ২০১৫ বিকাল ৩:৪৯

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: রেস্পেক্ট তাঁকে

২১ শে জুন, ২০১৫ বিকাল ৫:২৪

দীপংকর চক্রবর্ত্তী বলেছেন: অবশ্যই। এত বড় জিনিয়াস কাজের জন্য রেস্পেক্ট তাঁকে

৬| ২১ শে জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪৭

দীপংকর চক্রবর্ত্তী বলেছেন: সামুর সদস্য হয়ে হয়তো আমাদের সকলের তাঁর সম্পর্কে জানা প্রয়োজন

৭| ২২ শে জুন, ২০১৫ রাত ১:৪৫

সজিব্90 বলেছেন: আমার মন্তব্য কেন প্রকাশ হয় না।

২২ শে জুন, ২০১৫ সকাল ৮:৪৮

দীপংকর চক্রবর্ত্তী বলেছেন: হল তো!!

৮| ২২ শে জুন, ২০১৫ রাত ১:৪৭

সজিব্90 বলেছেন: ধন্যবাদ

২২ শে জুন, ২০১৫ সকাল ৮:৪৮

দীপংকর চক্রবর্ত্তী বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ

৯| ২২ শে জুন, ২০১৫ রাত ১:৫৭

আমি মিন্টু বলেছেন: ভালো শেয়ার ধন্যবাদ ।

২২ শে জুন, ২০১৫ সকাল ৮:৫১

দীপংকর চক্রবর্ত্তী বলেছেন: আমি কৃতার্থ :-)

১০| ২২ শে জুন, ২০১৫ রাত ৯:১০

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: অনেক কিছু জানতে পারলাম । ভাল লাগল । অনেক ধন্যবাদ ।

২৪ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ১:২৫

দীপংকর চক্রবর্ত্তী বলেছেন: আমি কৃতার্থ :-)

১১| ২২ শে জুন, ২০১৫ রাত ১০:১৭

সাহসী সন্তান বলেছেন: লেখাটি পড়ে ভীষন ভীষন ভাল লাগলো। সব থেকে বেশি আনন্দ হচ্ছে এটা ভেবে যে, বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাংলা ব্লগ কমিউনিটির আমিও একজন সদস্য!! অশংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে!!!!

২৩ শে জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩০

দীপংকর চক্রবর্ত্তী বলেছেন: অবশ্যই, বাংলাদেশের সবথেকে বড় এবং সফল ব্লগের সদস্য হতে পেরে আমরা গর্বিত!!!

১২| ২৪ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ১:২৮

জুন বলেছেন: শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ

২৪ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ১:৩২

দীপংকর চক্রবর্ত্তী বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ

১৩| ১২ ই জুলাই, ২০১৯ সকাল ৮:১৪

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: জানা ম্যাডাম একজন মহিয়সী মহিলা। আমাদের সকলের কাছে শ্রদ্ধার পাত্র। সামহোয়্যার ইন ব্লগের মাধ্যমে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও বাংলা ভাষার প্রতি তাঁর ভালোবাসা অতুলনীয়। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও তিনি যেভাবে ব্লগটিকে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, তা' এক কথায় অসাধারণ। আমি তাঁর এবং ব্লগের দীর্ঘায়ু কামনা করি। ভালো থাকবেন ম্যাডাম।

ধন্যবাদ ভাই দীপংকর চক্রবর্তী।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.