নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি বড় বেশি আত্মকেন্দ্রিক, আত্মভোলা এবং সাধারণ। সম্ভবত এ নিয়ে আমার “সুখ ও দুঃখ” কোনোটিরই অন্ত নেই।

লোকনাথ ধর

আমার আমি!

লোকনাথ ধর › বিস্তারিত পোস্টঃ

চিঠি - ০২

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:০৪

মা,

জানো, ছোটবেলায় মাঝে মাঝে তুমি যখন আকাশের দিকে তাকাতে; তোমার হাত ধরে বাসায় ফিরতে ফিরতে ভাবতাম ছোট্ট ঘাড়টা উঁচু করে, তোমাকে আর আকাশের দিকে দেখতাম – কি আছে ওখানে? অনেক আগের রাতে যখন মাঠে শুয়ে শুয়ে তারা ভরা একটা আকাশ প্রথমবারের মত দেখলাম আমি, তখন থেকে তার প্রতি আমার ভালোবাসা শুরু হয়। কিন্তু দিনে তো তারা দেখা যায় না, কি দেখতে তুমি?

আজ জানালা দিয়ে তাকালাম বাইরে, তারা ঝুলে থাকতে দেখেছিলাম বিচ্ছিন্ন ভাবে। দূরে তাকিয়ে শহরকে জ্বলতে দেখি আলোয় আলোয় – মা, দূর থেকে ওদের দেখতে ক্যামন লাগে দেখেছো তুমি? না, সারাদিন পর শরীর যখন ক্লান্ত হয় তোমার – সেই আলোর শহর দেখার কোনো ইচ্ছে হয়তো তোমার জাগে না, খানিকটা বিশ্রাম ছাড়া। আমি জানি, যখন মা মা একটা গন্ধের জন্য আশেপাশে ঘুরাঘুরি করি – বেশ টের পাই। আলোর একটা শহর আমি নিশ্চয়ই তোমায় দেখাবো, আরেকটু বিশ্রাম নাও তুমি।

আমি আজকের আকাশকে জানালা দিয়ে দেখে রাস্তায় বের হলাম, ঠাণ্ডা এক ঝলক বাতাস যখন হুট করে আমার চারপাশ দিয়ে বয়ে গেলো – আমি উপরে তাকিয়ে ভাবলাম, আকাশের মত বিশাল একটা হৃদয় থাকার কথা ভেবেছিলাম অনেকদিন আগে, আমার হয় নি। বরং আগে ও পরে অনুভব করি ভেতরকার ক্ষুদ্রতা; সেখানে রাগ জমাট বাঁধে, সেখানে হিংসা জন্মে, সেখানে ধীরে ধীরে জন্ম নেয় আক্ষেপ; আমি সেখানে সবার জন্য স্থান তৈরি করতে ব্যর্থ হই ক্রমশ। আবার হঠাৎ কোনো সন্ধ্যেয় ফার্মগেট ওভারব্রিজ থেকে নামতে নামতে ক্ষুদ্র আমি এর ক্ষুদ্র বুকটাকে প্রশস্ত মনে হতে থাকে; যেন পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে... ভ্রম বলা যায় তাকে।

আমি হেঁটে হেঁটে বেড়ালাম অনেকখানি পথ – মা, সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল আমার মনে হলো যে, আকাশ ধারন করার চেয়ে শূন্যতা ধারন করা সহজ। আমাদের আশপাশে প্রতিটি মানুষ শূন্যতা ধারন করে আছে গভীর ভাবে; কিন্তু মনে হল – এসবের মাঝে তুমিই বোধহয় অনেকখানি আকাশ ধারন করতে পেরেছো। আমার জীবনে একমাত্র মানুষ।

আমি অনুভব করতে শুরু করলাম...

মা, এই শহরে আমার কোনো প্রেমিকা নেই – তবুও প্রেমিকার চশমা পড়া চোখ দেখে পাতার পর পাতা লেখা হয়ে গেছে; আমি কাউকে নিয়ে ঘুরে বেরাইনি পুরো শহরে – কিন্তু কাউকে প্রেমিকা ভুল করে ভেবে আমার ভ্রমনের একটা স্মৃতি বানানো হয়ে গেছে এমনি এমনি। অথচ দেখো মা, তোমার চোখে যে মাঝে মাঝে আমি ব্রম্নানডের ছায়া দেখি – তা কাউকে বলাই হয় নি! তোমাকে কোনো চিঠি লিখি নি আমি – ডাইরির বুকে আমার তোমার জন্য জমিয়ে রাখা কথাগুলোও বলা হয় নি একদম!

এই শহরে আমায় যেটা পোড়ায় মা – মন্ত্রমুগ্ধের মত হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ দাঁড়িয়ে খেয়াল করি; এই শহরে একটা তুমি নেই। সন্ধ্যের সুরসুরিয়ে ঘরে ঢুকে পড়া ছেলেটা এখানে রাতে রাতে গল্প খুঁজতে থাকে রিকশার চাকায়; গাছের আড়ালে থাকা মৃদু জ্বলতে থাকা লাইটে বা ক্লান্ত পায়ে – এখানে কান চেপে ধরে কোথায় ছিলি বলাটা খুব মিস করতে থাকি...

আমার চায়ের কাপটা নাকি ভেঙ্গে গেছে?

আমার টেবিলে ভালোই মানাতো রাতে ল্যাম্পের আলোয়; মা রাতে ঘুমোনোর আগে তোমার আসার পথে তোমার হাতে ধূমায়িত কাপটা দেখলে আমার চোখটা ভীষণ আনন্দে ভরে যেত – আজকাল সেটার অভাবও ভেতর ভেতর ভীষণ পাই।

মা, ক্যামন আছো তুমি?
মা, মা, ঘুমিয়ে গেছো নাকি?

ইতি,
আমি..

(১৬ জুলাই, ২০১৭)

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:১২

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: আঁখি ছল ছল করছে আমার।

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:১৮

লোকনাথ ধর বলেছেন: এটা যে রাতে লিখেছিলাম, সে রাতে প্রচণ্ড মিস করছিলাম মাকে। সে রাতটা সুন্দর ছিল বটে।

২| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:৫৯

রাজীব নুর বলেছেন: আহ বুকের মধ্যে যেন কেমন করে উঠলো।

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:৩৮

লোকনাথ ধর বলেছেন: মনে পড়ুক সকল স্মৃতি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.