নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি বড় বেশি আত্মকেন্দ্রিক, আত্মভোলা এবং সাধারণ। সম্ভবত এ নিয়ে আমার “সুখ ও দুঃখ” কোনোটিরই অন্ত নেই।

লোকনাথ ধর

আমার আমি!

লোকনাথ ধর › বিস্তারিত পোস্টঃ

চিঠি - ০৩

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ভোর ৪:০০



অনাগতা,

কোথাও হয়তো গভীর ঘুমে অচেতন হয়ে আছো তুমি। অথবা আছো জেগে। আমি ধরে নিই তুমি ঘুমিয়ে গেছো কারণ আমার ঘুমন্ত মানুষের মুখ দেখতে ভালো লাগে। যে তিনটি ছেলে আমরা এখন একসাথে বাঁচি একে অন্যের উপর ভর করে, তারা দুজন জানে না - ঘুমিয়ে গেলে আমি তাদের দিকে তাকিয়ে থাকি মাঝে মাঝেই। আমার মনে হয় ভয়ংকর কোন মানুষের মুখও বুঝি তাদের ভেতরকার মানুষটাকে বের করে নিয়ে আসে তাদের ঘুমের সময়... আমি একদিন বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করবো আমার কথা।

যেহেতু তুমি আমাকে চেনো না - আমি গুছিয়ে বুঝিয়ে অনেক কথা বলতে পারি না মানুষকে। তাই চুপচাপ থাকা সত্ত্বেও যখন মুখ খুলি, আমাকে অনেক অনেক কথা বলতে হয় যেটা রাত হলে আমাকে ভাবায়। এমনিতে কাছের মানুষদের সাথে কথা বলার সময় আমি মোটেও চিন্তা করি না - কিন্তু অপরিচিত হলেই সমস্যা হয়, বুদ্ধিমান মানুষগুলো দু এক কথায় আমাকে বুঝে নিতে পারে যেটা আমাকে অস্বস্তিতে রেখে দেয় অনেক। এটা আমার একটা সমস্যা, মনে হয় ব্যাপারটা একদমই ব্যাপার না কিন্তু আমি খুব বড়সড় স্টুপিড। একজন স্টুপিড মানুষ এসব নিয়ে ভাববে স্বাভাবিক আর আমি তাই মাঝে মাঝেই ভাবি। কিন্তু যেহেতু তোমাকে আপন ভেবেই লিখতে বসা সেহেতু খুব বেশি ভাবনা চিন্তার দরকার নেই - কি বলো?

তোমাকে একটা অনুভূতির জন্য লিখতে বসা এই মাঝরাতে। এই অনুভূতিটা আমার মাঝে মাঝেই ফিরে আসে রাত হলে - আমি এর নাম দিয়েছি "আমিত্ব বোধ"। আমি, আমি এবং আমি। যদিও আমরা আমাদের দিন যাপন করি আমার এবং আমাদের ঘটনা ও সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার দ্বারা কিন্তু এর সাথে ছোট্ট একটা পার্থক্য হল, একটা বোধ যেটা আমি এবং এটাকে ব্যাখ্যা করা যায় না এমন অনুভূতি। আমি? ক্লাস এইটে যখন আমি পড়তে যেতাম বেশ দূরে, টেম্পোতে বসে সুন্দরী আপুদের আসতে দেখলে আমি একটু নড়ে চড়ে বসতাম, নিজের স্টুপিড চুলগুলোকে টেনে একপাশে নিয়ে একটু অন্যরকম সাজার চেষ্টা ছিল সবসময় - আমি যখন বাসায় ফিরে আয়নায় মুখ দেখতাম - চোখ, নাক, চুল, মুখ - তখন, তখন কি একটা অনুভূতি আমার শিরদাঁড়া বেয়ে বেয়ে নিচে নেমে যেতো। ও আচ্ছা, আমি? আমি? ও তাই তো! তুমি কি গুলিয়ে ফেলছো আমার কথা?

প্রিয় বুনোফুল, ব্যাপারটা আসলে আমি বোঝাতেও পারবো না কিন্তু আমার মনে হয় সব মানুষই বোধহয় এমন অনুভূতির ভেতর দিয়ে চলে গেছে কখনো না কখনো। আমি এটা প্রথম টের পাই ক্লাস থ্রিতে। মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যাওয়ার পর আমি টের পেলাম আমি একা অন্ধকারে শুয়ে আছি, বাইরের জ্যোৎস্নার আলোয় আমার ভেতর কি যেন হয়ে গেলো - আমার চোখ দিয়ে অশ্রু গড়াতে শুরু করলো। যে জিনিসটার খোঁজ মানুষ করছে সেই প্রাচীনকাল থেকে তার সাথে আমি পরিচয় হলাম সেদিন - আমি আসলে কি? এই যে আমার ভেতর আমি, নিজের হাত তুললাম - আমার হাত? এই যে ভেতর ভেতর যে একটা - ধুচ্ছাই আমি বুঝিয়ে বলতে পারবো নে এটা - জিনিসটা একটা গভীর অনুভূতির মত; আমি অনেক পরে টের পেয়েছি মানুষ এর প্রশ্ন খুঁজে বেড়াচ্ছে অনেক আগ থেকে। এর কথা আমি আরেকদিন তোমাকে লিখবো। শুধু জেনে রাখো - এই অনুভূতির সাথে একটা দুঃখবোধ জন্ম নিলো আমার সাথে; কি সেই দুঃখ আমি জানি না - মাঝে মাঝে মনে হয়, সেই পরিবেশ আমার ভেতর সেদিন রাতে গভীর একটা ছাপ ফেলে গেছে যা থেকে আমি মুক্তি পাই নি অথবা, এটা একটা প্রশ্ন যেটা আমাকে খুঁজতে হবে সারাজীবন। যদি পাই তো ভালো নয়তো মৃত্যুর পরে ছায়াপথে ঈশ্বরের সাথে চা পানের সময় এর উত্তর জেনে নেবো আমি।

আমি আরেকটু পরিষ্কার করার চেষ্টা করি। যদিও গুলিয়ে ফেলবো তবু চেষ্টা করা যাক।

আমি যখন ভাবি - আমি নিজের দিকে নিজে দেখার চেষ্টা করি। আমার চোখ, তোমার চোখ - আমরা ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক স্পেকট্রামের শুধুমাত্র একটা নির্দিষ্ট অংশ ব্যবহার করে দেখতে পাই। এর বাইরে তুমি আমি বা আমরা কিছু দেখতে পাই না। কানের কাছে ঘরের ফ্যানের শব্দ, হুটহাট ঠাণ্ডা বাতাসের ধেয়ে আসার শব্দ শুনছি যদিও এখন, তারপরেও আমি বধির। আংশিক বধির। আমার থেকে একটা কুকুর কিংবা বিড়ালের শ্রাব্যতার সীমা অনেক বেশি। আমার উপর একটা খোলস যেটা আমাকে আটকে রাখছে নির্দিষ্ট একটা শেপে, আমার মূল দেহের কাঠামোর চেয়ে যেটা অনেক বড়। মূল দেহটা শক্ত কিছু নয় বরং নরম এক পদার্থ দিয়ে তৈরি যার নাম লিপিড। তোমাকে আমাকে যেটা আলাদা করছে তা বাইরের একটা খোলস যেটা আলাদা হয় পরিবেশভেদে, আলাদা হয় জ্যামিতিকভাবে। খোলস বিহীন আকৃতির কথা চিন্তা করলে আমার প্রজাতির অন্য সবার সাথে আমার বিশেষত কোন পার্থক্য নেই কিন্তু আমাদের মূল বৈশিষ্ট্য কিন্তু একদম এক। তুমি এখানে খুব বেশি কিছু আলাদা করতে পারবে না। খোলসের কথা চিন্তা করলে তুমি নারী - তোমার খোলস আমার চেয়ে নরম। এই খোলসের পার্থক্য তাই ভৌগোলিক আর জ্যামিতিক। মানসিকতায় পার্থক্য যদি চিন্তা করো তা সমস্তটাই আসলে আমাদের বেড়ে ওঠার পরিবেশ, সাংস্কৃতিক কারণে। কেউ এভাবে ভাবে আর কেউ সেভাবে ভাবে - এইটুকুই কেবল পার্থক্য। এছাড়া আসলে ধরতে গেলে আমরা সবাই এক। আমরা সবাই সেইম। আমি আর তুমি বলতে আলাদা কিছুই নেই।

তাহলে এই যে আমার ভেতর যে বোধ হচ্ছে - সেটা কি এক?

আমার মনে হয় এটাও এক; কারণ অনেক আগ হতেই মানুষ এর সন্ধান করছে - হতে পারে এই বোধটাও এক। তাহলে আমি বলতেই পারি, আমি আসলে তুমি আর তুমি আসলে আমি। কথাটা অনেকটা সত্য বটে কিন্তু এখানেই আমার বোধটা কাজ করে, আমি তুমি হলাম না কেন? তোমার বোধ, তোমার অনুভূতি ধরে দেখার কোন সুযোগ নেই - তোমার তুমিত্ব বোধকে আমি স্পর্শ করতে পারি না - পার্থক্য এখানেই।

যেমন ধরো, তোমাকে আমি লিখছি। তুমি ঘুমিয়ে আছো, কাল সকালে জেগে উঠে দাঁত মাজবে, খাদ্য নেবে, তোমার আশেপাশের মানুষের সাথে তুমি কথা বলবে, বন্ধুদের সাথে তুমি হাসবে - যদি তুমি কারো সাথে এখন জীবন জড়িয়ে রাখো, একটা অনুভূতি তুমি নিজের ভেতর নিজে তৈরি করবে। এই যে আগামীকাল তুমি যে সকল কিছুর ভেতর দিয়ে যাবে তার সবকিছুর একান্তই তোমার। তাকে ধরতে বা নিজের ভেতর নিয়ে নিজে অনুভব করতে পারবো না একদমই। ধরো, আগামীকাল রাত দশটায় তুমি কাঁদছো আর আমি গান শুনছি - দুজন দুদিকে দুরকম ভাবে আছি। আমাদের সবকিছুতে এত মিল তবুও আমরা ধরতে পারছি না একে অপরকে - এই আমার ঘটনার ভেতর দিয়ে চলে যাওয়া চেতনা আমি, আর তোমার চেতনায় তুমি - আমাদের ভেতর মিল আমার দুজনেই চেতনাশীল যাকে বেঁচে থাকা বলে কিন্তু আমরা কেউই আসলে এখানে সেইম না। তুমি ভাবো, একদম সবকিছু আমাদের এক স্ত্রাকচার থেকে শুরু করে যা আমরা স্পর্শ করতে পারি না 'চেতনা' পর্যন্ত কিন্তু জাস্ট এখানেই আমরা আলাদা।

এখানেই আমার আটকে যাওয়া, তাহলে আমি আসলে কে? আমাদের সবকিছু সেইম, আমার ভেতর যে চেতনা কাজ করছে, ঠিক তেমন চেতনা কাজ করছে তোমার ভেতর - তাহলে তুমি আসলে কে? আমি আসলে কে? আমরা সবাই আসলে অপরিচিত - আমরা নাম নিয়ে পৃথিবীতে আসি না, আসার পর নাম দেওয়া হয়। তাহলে অনাগতা, তাহলে আমি আসলে কে বা কি এটা কেউ জানে না। জানা সম্ভব নয়। কিন্তু আমি আসলে এটাই জানতে চাই।

এটা এক গভীর অনুভূতির মত আমার কাছে যা আমার চোখে মাঝে মাঝেই অশ্রু এনে দিতে সক্ষম। আমি এখন এর ভেতর দিয়েই যাচ্ছি।

পুরো মহাবিশ্বের ছোট্ট একটা অংশের ভেতর ছোট্ট একটা জায়গায় ছোট্ট একজন আমি আজ রাতে চেতনা নিয়ে আমিত্ব বোধ নিয়ে বেঁচে আছি। পুরো মহাবিশ্বে আর এমন দ্বিতীয় কেউ নেই যে আমার এই জায়গাটা স্পর্শ করতে পারে, বুঝতে পারে আমি কি বলতে চাই আর এজন্যই মানুষ আসলে একা। তুমি একা। আমি একা। বন্দী আমার এর ভেতর - তোমাকে আর একটা অনুভূতির কথা বলি, আমার প্রায়শই মনে চায় বদ্ধ দেহের এই শরীরের ভেতর থেকে বের হয়ে যেতে, আমার এর ভেতর খুব ক্লান্ত লাগে। এর ভেতর আমি বন্দী হয়ে আছি, আমার ইচ্ছে করে আমার এই আমিত্বটা মস্তিষ্ক কেটে বের হয়ে পড়বো এবং একটা খুবই শীতল জায়গা দেখে আমি সেখানে ঘুমিয়ে পড়বো।

আমি জানি না অনাগতা, আমি তোমাকে কিছু বোঝাতে পারলাম কি না। কারণ আমি শব্দে শব্দে বিশাল রাস্তা তৈরি করতে পারি না, শব্দেরা প্রায়শই আমাকে ফাঁকি দিয়ে চলে যায়, ঘুরে বেড়ায়। অনাগতা, মানুষের মৃত্যুর ভয় আছে। আমার এই শরীর নিয়ে কোন প্রকার আকর্ষণ নেই, আমি চাই চেতনার ভেতর আমিত্ববোধ থাকুক জেগে। অন্য কোন শরীরে জাস্ট অপরিচিত আমার আমিত্ববোধ।

আমার শরীর, তোমার শরীর জৈবিক কারণে কাছে আসবে - মানুষ শরীর ভালোবাসে। এই চেতনা, আমিত্ব বোধকে কি করে ভালোবাসা যায়? আসলেই কি ভালোবাসা যায়? আমার কেমন লাগে - অন্ধকার একটা খালি ঘরের উপর আমি হাঁটু গেঁড়ে বসে আছি, চারপাশে অজস্র শুন্যতা আর আমি হচ্ছি আমার আমিত্ববোধ। এর উপর আলো পড়া দরকার, এই আলো কি আসলেই কখনো পোঁছায়? তারমানে তুমি পাশে বসে যদি আমাকে ভালোবাসি ভালোবাসি বলো বা আমি যদি বলি ভালোবাসি তোমাকে - আমরা কি আসলেই বাসি?

আমি কথা গুলিয়ে ফেলছি এখানে।
অনাগতা, অনেক রাত হল, আমার এখন চলে যাওয়া দরকার।
অনাগতা, তুমি কখনো আসলেই আমাকে স্পর্শ করতে পারবে তো?

ইতি,
তোমার জন্য, অনাগত।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ভোর ৬:৪৪

:):):)(:(:(:হাসু মামা বলেছেন: সুন্দর কথা । :)

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:০৪

লোকনাথ ধর বলেছেন: আচ্ছা।

২| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:১০

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর চিঠি।

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:০৪

লোকনাথ ধর বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.