নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নবীন আনন্দ

আবদুল্লাহ আল আমিন

আবদুল্লাহ আল আমিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

যুক্তির আলোয় বাঙালির ধর্মচিন্তা

১৪ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৪:৩৬

যুক্তির আলোয় বাঙালির ধর্মচিন্তা

আবদুল্লাহ আল আমিন



বাঙালির মনন ও মূল্যবোধে যুক্তি ও তার্কিকতা গভীরভাবে মিশে আছে। ভাবপ্রবণ বাঙালি মাঝে মাঝে যুক্তি-তর্ক ভুলে আবেগের অতিসহ্যে বিভ্রান্তির জালে আটকা পড়েছে ঠিকই, তবে সেই বিভ্রান্তির পর্বটা দশকের পর দশক ধরে স্থায়ী হয়নি। ভ্রান্তি শুধরে যুক্তি¯œাত সত্যের কাছাকাছি ফিরে আসতে তার খুব বেশি সময় লাগেনি । বাঙালি সবকালে, সবযুগে, সবকিছু নিয়েই তর্ক করেছে; তর্ক করেছে বস্তুবাদ ও ভাববাদী মতাদর্শ নিয়ে, তর্ক করেছে কমিউনিস্টসহ অন্যান্য চরমপন্থি মতবাদের সঙ্গে। হিন্দু ও মুসলমান মৌলবাদের সঙ্গে যেমন তর্ক করেছে, আবার ধর্মনিরপেক্ষ ও বিজ্ঞানমনস্ক মানুষের সঙ্গে তর্ক করতে বাদ রাখেনি। বস্তুত তর্কের মাধ্যমেই বাঙালি ধর্ম-সাহিত্য, দর্শন-বিজ্ঞানের সত্য আবিস্কার করেছে। তর্ক দিয়ে বাঙালি জানার মাঝে অজানার সন্ধান করেছে; জগৎ, জীবন ও ধর্মের ভাবসত্য বিশ্লেষণ করেছে। তর্ক করার প্রবণতা আসলে খাঁটি বাঙালি দৃষ্টিভঙ্গি এবং এর মধ্যে দোষ-গুণ দুটোই দেখতে পাওয়া যেতে পারে। তবে তর্ক করার মধ্যে ভাল’র দিকটাই সম্ভবত বেশি, এর দ্বারা বাঙালি উপকৃত হয়েছে বেশি। আসলে তার্কিক প্রবণতা বাঙালিকে পরিণত করেছে যুক্তিবাদী, সহনশীল, পরমতসহিষ্ণু ও সংশ্লেষণবাদীতে। আর তাই বাঙালি পৃথিবীর সকল সুকৃতি ও মহৎ ভাবনাকে আপন বলে গ্রহণ করে নিতে পেরেছ পরম মমতা ও তার্কিকতা দিয়ে। খুব সম্ভবত এ সব কারণে বাংলার রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িক সমস্যাও কম। গর্ব করেই বলা যায়, ১৯৪৭ সালের পর পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় কিংবা বাংলাদেশের সংসদে কোনো সাম্প্রদায়িক দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া তো দূরের কথা উল্লেখ করার মতো আসন পায়নি। আমাদের বেশ মনে আছে, সত্তর দশকের মাঝামাঝিতে প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক শক্তির ব্যর্থতা ও কর্তৃত্ব পরায়ণ শাসনের পটভূমিতে বাংলাদেশ সহ উপমহাদেশ জুড়ে ধর্মীয় মৌলবাদ,সাম্প্রদায়িকতা ও ডানপন্থী শক্তির উত্থান ঘটেছিল। বঙ্গবন্ধুর শাসনের বিরূদ্ধে ঘটেছিল ডান ও বাম চরমপন্থী শক্তির আবির্ভাব এবং সাময়িকভাবে তারা জয়লাভও করে। তবে সেটা দিয়ে বাঙালির ভাবগত পরিচয় নির্ণয় করা যাবে না। কারণ একটি বা দুটি ভোটের ফলাফল বিবেচনা করে কোনো জাতির মনন-চিন্তন বা ভাবগত মেরুকরণের গভীরতা পরিমাপ করা যায় না। সামরিক স্বৈরশাসক ও তাদের আশীর্বাদপুষ্ট ধর্মব্যবসায়ী ফেরেব্বাজরা যত শক্তিধর হোন না কেন , বাঙালির অসাম্প্রদায়িক ভাবনার চেয়ে শক্তিশালী তারা ছিলেন না। সূফি, দরবেশ, কবি, শিল্পী, ভাবুকরা শত শত বছর ধরে বাঙালির চেতনার গভীরে মানবিকতা ও অসাম্প্রদায়িকতার যে গাঢ় ছাপ মেরে দিয়ে গেছেন,তা মিথ্যে ধর্মীয় উন্মাদনা ছড়িয়ে কিংবা বল প্রয়োগ করে মুছে দেয়া যাবে না। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ আত্মঅহমিকায় দীর্ণ বাম প্রগতিশীল শক্তিকে প্রত্যাখ্যান করেছে বটে, কিন্তু মৌলবাদী সংঘ পরিবারকে মেনে নেয়নি। আবার সামরিক শাসকদের ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ কিংবা ১৫ তম সংশোধনীর নামে জোড়াতালিও বাংলাদেশের মানুষ মেনে নেয়নি। সম্প্রতি পশ্চিমে ধর্মের পুনরুজ্জীবন ঘটেছে, এই উপমহাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। বাংলাদেশের মানুষ ধর্মের নামে বাড়াবাড়ি, সাম্প্রদায়িকতা যেমন পছন্দ করে না, তেমনি ধর্মনিরপেক্ষতা , প্রগতিশীলতার নামে ভাড়ামিও সহ্য করে না। সম্প্রতি ভারত হিন্দুত্ববাদী শক্তিগুলোর লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে। তারা এই রাষ্ট্রকে হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। ভারতের উদার গণতান্ত্রিক শক্তি ও সেক্যুলার সংবিধান আজ বিশাল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। তারপরও ‘ অভয় বাজে হৃদয় মাঝে’ পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রদায়িক শক্তি সেই ভাবে শেকড় গাড়তে পারেনি। বাংলাদেশের মানুষও অশুভ সাম্প্রদায়িক শক্তি ও তাদের অসুস্থ রাজনীতি প্রশ্রয় না দিয়ে তাদের অপ-রাজনীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে যাচ্ছে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পরাক্রান্ত অশুভের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে অসাম্প্রদায়িক সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে ত্রিশ লক্ষ বাঙালি যে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে তা মানতেই হবে। বিদ্যাসাগর বাঙালিকে ‘ক্ষুদ্র ,হৃদয়হীন ,কর্মহীন, দাম্ভিক ,তার্কিক জাতি ’ বলে সুগভীরভাবে যতই ধিককার জানান, বাঙালি যে অসাম্প্রদায়িক সেটা স্বীকার করতেই হবে। শত শত বছর ধরে বিভিন্ন ধর্মের মানুষের পাশাপাশি অবস্থান ও ভাবের আদান প্রদান ,নানাসব পালা-পার্বণ, উৎসব-কৃত্যাচার অসাম্প্রদায়িকতা বা ধর্মীয় সহাবস্থানের মানবিক ঐতিহ্যকে বাংলার মাটির গভীরে দৃঢ়ভাবে প্রোথিত করে দিয়েছে। ধর্মীয় সংঘাত, দলাদলি, পারস্পরিক ভুল বোঝাবুঝি, লাঠালাঠি, রক্তারক্তির ইতিহাস যে আমাদের একেবারেই নেই, তা বলা যাবে না। তবে ইতিহাসের সেই ধূসর বিবর্ণ, কালিমালিপ্ত অংশ ছাপিয়ে বারবার ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সমন্বয়বাদী চিন্তার জয় হয়েছে; জয় হয়েছে মানবিক আধ্যাত্মিকতা ও অখ- মানবতার।





মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.