![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লোকায়ত ভাবনা ও বাঙালির ধর্মচিন্তা
আবদুল্লাহ আল আমিন
ইতিহাস ঘেঁটে,পুঁথি-পাঁচালি-শাস্ত্র-কেতাব পড়ে জানা যায় যে, বাঙালি চিরকাল ধর্ম মেনেছে, ধর্মের প্রাত্যহিক আচার-আচরণও নিষ্ঠার সাথে পালন করেছে, তারপরও জীবনকে তুচ্ছ ভাবেনি কখনও। তর্কপ্রিয়-যুক্তিবাদী বাঙালি জীবন ও অস্তিত্বের জন্য যা করা দরকার বলে মনে করেছে, তাই করতে উদ্যোগী হয়েছে। জীবন ও জীবিকার জন্য সে বিদেশের ধর্ম নিয়েছে, ভাষা নিয়েছে, কিন্তু অন্তরের ধর্মকে বাঙালি কোনোকালেই ত্যাগ করেনি। আর তাই ওহাবি- ফরায়েজি আন্দোলনের আগে শরিয়তি ইসলাম সেইভাবে স্বীকৃতি পায়নি বাংলার জল হাওয়ায়। এখানে ইসলামের প্রতিনিধিত্ব করেছে সত্যপীর, পাঁচপীর, পাঁচগাজী, মানিকপীররা। হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে মানত শিরনি দিয়েছে সত্যপীরের দরগায়; একেশ্বরবাদী মুসলমানের সত্যপীর হিন্দুর কাছে হয়ে ওঠে সত্য নারায়ণ। তাই নিরন্ন, নিরক্ষর, বিপর্যস্ত, শোষিত হিন্দু মুসলমান বাঁচার তাগিদে বলছে:
‘ হিন্দুর দেবতা তিনি মুসলমানের পীর।/ দুইকুলে সেবা লয় হইয়া জাহির।’
ধর্মের ভেদবুদ্ধি দূর করার জন্য সেই কল্পিত পীর বলছে:
‘ মক্কায় রহিম আমি অযোধ্যায় রামÑ/ কলিতে সম্প্রতি আমি সত্য নারায়ণ’।
তার চেহারাতে- অবয়বেও দু’ ধর্মের মিলিত রূপ ফুটে উঠেছে:
‘ অর্ধেক মাথায় কালা, একভাগে চূড়াটানা / বনমালা ছিলিমিলি তাতে,/ধবল অর্ধেক কায় অর্ধনীল মেঘপ্রায়,/ কোরান পুরাণ দুই হাতে।’( রায়মঙ্গল: কৃষ্ণরাম দাস )
সত্য পীর বা নারায়ণ পারত্রিক মুক্তি দানের বা পাপ-পুণ্যের দেবতা নন, তিনি জাগতিক মঙ্গল বিধানের লৌকিক দেবতা। লোকমানস প্রসূত এই পীরের সাধারণ ভোগ শিরনি। এর অনুসারী-অনুগামী-ভক্তরা সামাজিক- অর্থনৈতিকভাবে প্রান্তিক হলেও যুক্তিবাদী, জিজ্ঞাসু, দ্রোহী। মধ্যযুগের প্রেক্ষাপটে এর চেয়ে আর কত বেশি জীবনমুখী- প্রগতি চিন্তাই বা মোঘল প্রতাপে পিষ্ট বাঙালির কাছে প্রত্যাশা করা যায়?
প-িতরা বলেছেন, বাঙালি ধর্মপ্রবণ, শাস্ত্রানুগত, আধ্যাত্মিক ভাবসম্পন্ন;কিন্তু তারা যে চিরবিদ্রোহী, নতুন চিন্তার অভিসারী, তাও অস্বীকার করেননি।। নতুন ভাবাদর্শ সৃজনের মাধ্যমে বাঙালি নতুন চিন্তার দিগন্ত প্রসারিত করে চলেছে যুগ যুগ ধরে। মানবিকতা ও মনুষ্যত্বের উচ্চ মিনারে দাঁড়িয়ে আমাদের সূফি, সাধক, কবি, মরমিরা প্রেম প্রীতি, মানবিক মর্যাদা ও মানবিক সম্ভাবনার বাণী উচ্চ কণ্ঠে ঘোষণা করে গেছেন কালে কালে। এর পেছনেও রয়েছে যুক্তি আর সত্যানুরাগ। বাঙালি কবির কণ্ঠে আমরা মধ্যযুগেই শুনেছি সার্বজনীন সত্যের পরম কাম্য বাণী: ‘ শুনহ মানুষ ভাই, সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।’ আধুনিক হিউম্যানিজমের ব্যাখ্যা মধ্যযুগের চ-ীদাসের এই ঘোষণার মধ্যে কী নেই? অবশ্যই আছে, কিন্তু যিনি প্রচলিত ধর্ম এবং ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন তিনি হয়তো এই ঘোষণার সাথে একমত হতে পারবেন না। আর ‘ উপনিষদকাররা উলটো কথাই ঘোষণা করেছিলেন সকল মর্ত্যলোকবাসী ও দিব্যধামবাসীগণকে সম্বোধন করেÑসবার উপরে ব্রহ্ম সত্য, সা কাষ্ঠা,সা পরাগতি। ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিমাত্রর মন এতে সায় দেবে।’( আবু সয়ীদ আইয়ুব:‘ মনের মানুষের সন্ধানে’। পান্থজনের সখা। কলকাতা, এপ্রিল ২০০৬। পৃ:১৩৪) ইউরোপে রেনেসাঁসের যুগে হিউম্যানিস্টরা যে ভাবধারায় আন্দোলিত হন, ওই একই ভাবুকতার চর্চা করেছেন আমদের মধ্যযুগের কবি ও সাধকরা। ইউরোপের রেনেসাঁস যুগের হিউম্যানিস্ট পেত্রার্কা ও এরাসমুসদের কাছে ঈশ্বরও সত্য, মানুষও সত্য, কিন্তু কে বেশি সত্য তা চিন্তা করবার প্রয়োজন তারা কখনও বোধ করেননি। তারা আসলে মধ্যযুগের চার্চ নিয়ন্ত্রিত আচার অনুষ্ঠান ভিত্তিক প্রথাগত ধর্মের বিপরীতে মানব মহিমা ও মর্যাদা তুলে ধরতে চেয়েছিলেন সবার কাছে। ইউরোপের তখনকার হিউম্যানিস্টরা যে অর্থে ্িহউম্যানিস্ট সেই অর্থে রামমোহন- দেবেন্দ্রনাথ-বিদ্যাসাগর থেকে রবীন্দ্রনাথ এবং চৈতন্যদেব, চ-ীদাস থেকে লালন,হাছন, কুবির গোঁসাই ও অন্যান্য মরমিরাও হিউম্যানিস্ট। তবে রামমোহন- দেবেন্দ্রনাথ- ডিরোজিও- বিদ্যাসাগরদের মানবিক ভাবনা, উন্নত ধর্মচেতনা, ধর্মসমন্বয় চিন্তা কেবল বাংলার উচ্চগর্বী এলিট ও শিক্ষত মধ্যবিত্তশ্রেণির মধ্যেই সীমিত ছিল, গ্রামীণ লৌকিক জীবনে তাদের তেমন প্রভাব ছিলনা বললেই চলে। তৎকালে বাংলার গ্রামীণ জীবনভাবনা, ধর্মচেতনাকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়েছে লালন,কুবির, মদন, পাঞ্জু,দুদ্দু শাহদের মতো মরমি সাধক ও বাউলদের ভাবসমৃদ্ধ, তত্ত্বাশ্রয়ী গানে। বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, এই গানের ¯্রষ্টারা অধিকাংশই নিরক্ষর, অর্থনৈতিকভাবে প্রান্তিক এবং সামাজিকভাবে দীর্ণ। এদের গানে যেমন তান্ত্রিক সহজিয়া ও বৈষ্ণব সহজিয়া তত্ত্বের ছাপ রয়েছে, তেমনই ইসলামি সূফিতত্ত্বের প্রভাবও কম নেই। এরা কেবল কবি নন; এরা তার্কিক, যুক্তিবাদী ও দার্শনিক। আর মরমি ভাবুকদের কাছে তো এরা কবি বেশে নবি। ধর্মের নানা দিক নিয়ে ব্রহ্মণ প-িরা তর্ক করতেন ও মুসলমান মৌলভীরা যেমন তর্কযুদ্ধে অবতীর্ণ হতেন, তেমনই এই ভাবুক, রাসকরাও তর্কযুদ্ধে মেতে উঠতেন আখড়া- আশ্রমে,গানের মাহফিলে কিংবা সাধুসঙ্গে। আর তর্ক করতে গিয়ে এক আসরে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বাউল স¤্রাট লালন বলেছেন:
‘সুন্নত দিলে হয় মুসলমান / নারীর তবে কী হয় বিধানÑ/ বামুন চিনি পৈতায় প্রমাণ/ বামনী চিনি কীসে রে।’
এই ক্ষুরধার যুক্তি, দর্শনসমৃদ্ধ ভাবনা লালনের মত এক নিরক্ষর, গেঁয়ো বাউল কোথায় পেলেন? সম্ভবত এসব কারণে লালনকে একজন উঁচুস্তরের ভাবুক, সাধক ও দার্শনিক বলে গণ্য করেছেন অনেকে। তিনি তার ভাবনাগুলিকে অত্যন্ত স্বচ্ছ ও সাবলীলভাবে নিজের গানের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। গানের মধ্য দিয়ে লালন কেবল বর্ণপ্রথার সম্পর্কে প্রশ্ন করেননি, তিনি প্রশ্ন করেছেন, হিন্দু মুসলমানের ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কেও। সেই সাথে শাস্ত্র, মূর্তি,পূজা, নামাজ, আহ্নিক,মন্দির- মসজিদ, তীর্থ-ব্রত-উপবাস, বৈরাগ্যসাধন বিষয়েও ছিল তার প্রচ- রকমের সন্দেহ ও অবিশ্বাস। লালনের জন্ম মধ্যযুগ ছুঁয়ে যাওয়া ১৭৭৪ সাল ধরা হলে তাকে রামমোহন- বিদ্যাসাগরদের সমসাময়িক বলা চলে। অথচ তার সাথে সে সময়ের কলকাতার শিক্ষিত মধ্যবিত্ত ও নবজাগৃতির পুরোধাদের কতই না ফারাক! কেননা লালন যে সময়ে হিন্দু মুসলমানের ঊর্ধ্বে উঠে মানবিকতা, সম্প্রীতি ও ধর্মসমন্বয়ের সাধনা করেছেন, সে সময়ে রামমোহন তার সংস্কার আন্দোলন স্ব ধর্ম তথা হিন্দু একেশ্বরবাদীদের স্বার্থে চালিত করেছেন। আর ওহাবি- ফরায়েজি ও সৈয়দ আহমেদের ‘তরিকা ই মহম্মদীয়’ আন্দোলনের প্রয়াস ছিল কেবল মুসলমান সমাজকে বিশুদ্ধ ইসলামের পথে ফিরিয়ে আনার মধ্যে সীমিত। অর্থাৎ কোনো পক্ষই সেইভাবে হিন্দু মুসলমানকে এক ময়দানে মিলিত করতে চাননি। আর লালন ও লালন উত্তর লোকায়তবাদী মরমি সাধক, ভাবুকরা নি¤œবর্গের কৃষিজীবী সমাজকে কেবল কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস, শাস্ত্রাচারের পথ থেকে নিবৃত্তই করেননি, তাদের মধ্যে মানবপ্রেম, অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিভাবনাও জাগিয়ে তুলেছেন। আসলে আঠারো-ঊনিশ শতকে বাংলার লোকায়ত সাধক, কবি ও পদকর্তাদের মধ্যে ধর্মসমন্বয়ের বিস্ময়কর উদ্যোগ লক্ষ করা গেছে। ধর্মান্তকরণের প্রবল ঝড়ো হাওয়া আর সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প মাখানো প্রতিবেশে দাঁড়িয়ে কুবির গোঁসাই গেয়েছেন:
‘ অগণনায় বর্ণ লেখা / রাধাকৃষ্ণ, যিশুখ্রিস্ট খোদাআল্লা এক।’
আর কুবির শিষ্য যাদুবিন্দু বলেছেন:
‘ এ কুলআলম তোমারি ওহে কুদরত বিহারি/তুমি কৃষ্ণ তুমি কালী তুমি দিলওয়ারি/ তুমি এই মুসলমান তুমি এই হিন্দু।’( সুধীর চক্রবর্তী সম্পাদিত বাংলা দেহতত্ত্বের গান।)
গীতিকার জালালুদ্দিন বলেছেন:
‘ করিম কিষণ হরি হযরত লীলার ছলে ঘোরে/ ভাবে ডুবে খুঁজে দেখ/ ভেদাভদ কিছু নাই রে।’
লালনও ধর্মসমন্বয় চেতনায় শাণিত হয়ে উচ্চকণ্ঠে বলেছেন:
‘ সে তো ও নিষ্ঠুর কালা/ নাইকো তার বিচ্ছেদজ্বালা।/ আমার চক্ষু বুঁজে জপমালা/ লা-শারিকাল্লা সে কালা।’
এদের গানের ভাবৈশ্বর্য, ধ্বনিমাধুর্য ও যুক্তির বুনোট অনবদ্য। উত্তর ভারতের সন্ত কবি কবিরের মুক্ত উচ্চারণ: ‘ জাতি পাতি কুল কাপড়া/ যেহু শোভা দিন চারি’।Ñ এর সাথে বাংলার চিরায়ত লোকগানের বিস্ময়কর মিল খুঁজে পাওয়া যায়। কবিরের মতো লালন, কুবির,যাদুবিন্দু,জালালুদ্দিনের গানে উদার,অসাম্প্রদায়িক সমন্বয়ীভাবনা ফুটে উঠেছে। কিন্তু বাংলার লোকায়ত সাধকদের এই উদার ভেদবুদ্ধিহীন, মানবিক ভাবনা উচ্চবর্গীয় হিন্দু মুসলমান সমাজ মেনে নেয়নি বরং যেখানে হিন্দু মুসলমান সম্প্রীতি ও সমন্বয়ের কথা বলা হয়েছে, সেখানেই তারা রুষ্ট, ক্ষুব্ধ বাক্যবাণ নিক্ষেপ করেছে। তারপরও ধর্ম ও সংস্কৃতি সমন্বয়ের ¯্রােতটি প্রবল বেগেই বাংলার গ্রাম জনপদে বয়ে চলেছে। গ্রামের সহজ সরল সাধারণ মানুষ আজও ধর্মমানার ক্ষেত্রে শাস্ত্রীয় আচার-আচরণ বড় করে না দেখে, ভাব-ভাবুকতা ও আবেগকে বড় করে দেখে। হয়তো সে আবেগের মধ্যে যুক্তি কিংবা ঐতিহাসিকতা খুঁজে পাওয়া যাবেনা। তারপরও তাদের গান-ধ্যান, ভাব-কল্পনা আমাদের অমূল্য জাতিসম্পদ। এদের কাছে কেতাবের ধর্মের চেয়ে স্ব নির্মিত ধর্মই বড় ধর্ম। বাংলার লোকসমাজের কাছে নাস্তিকতা বা ধর্মবিরোধিতা প্রাধান্য পায়নি, প্রাধান্য পেয়েছে মানবিক অধ্যাত্মবাদ। মওলানা-মৌলভী-পুরহিতদের চেয়ে এরা মান্য করেছে পির-মুরশিদ, গুরু-গোঁসাইদেরÑ যাঁরা শাস্ত্রের ধর্মের চেয়ে আত্মা ও অন্তরের ধর্মকে বড় করে দেখেছেন; তাদের কণ্ঠ থেকে উৎসারিত হয়েছে মানুষ ও মানবতার গান। এরাই একদিন সত্যনারায়ণের সাথে সত্যপীরকে একাসনে বসিয়ে অর্ঘ্য দিয়েছে, শিরনি মানত করেছে, যেখানে হিন্দু মুসলমান ভক্তের ভেদাভেদ মধ্যে ছিল না। রাজনৈতিক ভাঙাগড়া, ধর্মের নামে বাড়াবাড়ির মধ্যেও আজও নিরক্ষর, গ্রাম্য গায়কের হৃদয় ছোঁয়া গানে অখ- মানবিকতা, অসাম্প্রদায়িকতা, সমন্বয়বাদী দর্শনের মর্মকথা শুনতে পাওয়া যায়:
‘ মরুতে এলেন মোহাম্মদ/ মথুরাতে গেলে শ্যামÑ/ ইমাম খেলেন রসুল/ লীলা খেলেন ঘনশ্যাম,/ মা আয়েশা পাগল হলেন/ নবির প্রেমে মদিনায়/ বাঁশির সুরে পাগল হয়ে/ রাধা চলে যমুনায়/ একই মায়ের দুটি সন্তান/ হিন্দু আর মুসলমান/ একই কুলে জন্ম মোদের/ একই বুকে দুগ্ধপান।/ দেখে আয় ভাই হিন্দু মুসলিম/ মদিনা আর মথুরায়/ দুই রাখালে যুক্তি ক’রে/ গরু আর বকরি চরায়।’ (সুধীর চক্রবর্তী: ‘ব্রাত্য লোকায়ত লালন’। রচনা সমগ্র। কলকাতা বইমেলা ২০১০, পৃ: ৩৩০।)
এমন স্বচ্ছ, সহজ গান আমাদের আত্মাকে তৃপ্ত তো করেই, সেই সাথে এই গানে আমরা খুঁজে বাঙালিত্বকে মহিমান্বিত করার বরাভয় মন্ত্র। মনের গহীনে প্রশ্ন জাগে: এই কনসেপ্ট তারা কোথা থেকে পেলেন? বাংলার প্রকৃতির বিপুল ঐশ্বর্যই কী তাদের এই উদার মানবিক ভাবনার রস ও রসদ জুগিয়েছে? না কী তাদের জিজ্ঞাসু মন? হয়তো তাই। আর এ কারণে বোধ হয় পহেলা বৈশাখ, বর্ষাবরণ, নবান্ন উৎসব, পৌষ পার্বণ, বসন্ত উৎসব ইত্যাদি ঋতুভিত্তিক উৎসবগুলি বাংলাদেশের বাঙালি মুসলমান জোরেসোরেই উদযাপন করছে। মৌলভী-মওলানারা এগুলিকে হিন্দুয়ানি কৃত্য বলে যতই ফতোয়া দিক না কেন, তাতে জনজীবনে তেমন প্রভাব পড়ছে না। আসলে মানুষকে প্রকৃতিলগ্ন হয়ে বেঁচে থাকতে হয়, এবং প্রকৃতিময়তার মধ্যে তাকে পালন করতে ধর্মের নানাসব কৃত্যাচার। বাঙালিকেও প্রকৃতির রূপ-অরূপের লীলার মধ্যে বাঁচতে হয়েছে, ধর্ম পালন করতে হয়েছে। নবান্ন বাঙালি মুসলমানের কাছে কেবলই একটি লোকজ উৎসব, কোনো ধর্মীয় কৃত্য নয়। ঘট-লক্ষ্মী মুসলমানকে ছোঁয় না, কিন্তু ধান লক্ষ্মী তাকে ছোঁয়। হেমন্তের একগুচ্ছ পাকা ধানের শীষ তার কাছে অর্ঘ্য দাবী করে, কারণ ভাত খেয়ে সে বেঁচে থাকে। জীবন ও অস্তিত্বের জন্যই বাঙালিকে হতে হয়েছে ধর্ম সহিষ্ণু ও সমন্বয়বাদী। জীবন যেখানে মেলাতে চায় কিংবা মিলিয়ে রেখেছে, সেখানে ধর্মকে তো সহিষ্ণু হতেই হবে। যুক্তিবাবাদী-ধর্মনিষ্ঠ বাঙালি মৃত্যু নয়, জীবনকেই সত্য বলে জানে এবং মানে। জীবনকে তাৎপর্যম-িত করতেই তার সকল সাধনা, সকল প্রয়াস। জীবনকে পত্র-পুষ্পে পুষ্পিত করতে তার উদার, অসাম্প্রদায়িক, সমন্বয়বাদী ও তার্কিক হয়ে ওঠা।
২| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৮:৪৩
লেখোয়াড় বলেছেন:
কঠিন লেখা, সুন্দর লেখা।
৩| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৪ রাত ১০:৫৫
প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: প্রথম প্লাস।
৪| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:২২
আবদুল্লাহ আল আমিন বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ। আপনার মন্তব্য আমাকে অনুপ্রাণিত করবে।@লেখোয়ার
©somewhere in net ltd.
১|
০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৪ রাত ১:৪৯
সােয়ম উল আলম বলেছেন: সুন্দর পোষ্ট.....