![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
চলে গেলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক প্রসেনজিৎ বোস
আবদুল্লাহ আল আমিন
১৩ অক্টোবর ভোরের আলো তখনও শরতের শিশির ছোঁয়নি। শহরের প্রধান সরণি জনমানবহীন। দোকানপাটের ঝাঁপ খোলেনি দোকানিরা। গভীর ঘুমে মগ্ন শামসুজ্জোহা পার্ক, মেহেরপুর হল, মফিজুর রহমান মুক্তমঞ্চ এবং বসুভিলার বোটানিক্যাল গার্ডেনের ফুল-প্রজাপতিরা। শরতের সুনীল আকাশকে সাথে নিয়ে রাত্রি এগিয়ে চলেছে দিনের আলোর দিকে। আকাশ বলছে, যেতে নাহি দেব। বিদায়ের বাঁশিতে কোমল ধৈবতের সুর। ভাগ্যদেবীর সন্তান রাজা ইডিপাসের মতোই নিজের সৃষ্টিকে আলোতে মিশিয়ে দিয়ে অমৃতলোকবাসী হলেন আমাদের সবার প্রিয় প্রসোনজিৎ বোস। স্বজন-ভক্তবৃন্দের বুক চাপড়ানো নয়, একেবারে সাদামাটাভাবে কালোপেড়ে ধুতি পরে, কাঁচাবাঁশের চতুর্দোলায় চেপে মৃত্যুর আলোয় মুক্ত হলেন মেহেরপুরের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অন্যতম প্রধান পুরুষ নাট্যাভিনেতা, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক প্রসেনজিৎ বোস বাবুয়া।
প্রসেনজিৎ বোসের জন্ম ১৯৪০ সালে মেহেরপুর শহরের সম্ভ্রান্ত বোস পরিবারে। তাঁর পিতা হীরণ কুমার বোস ছিলেন প্রভাবশালী জমিদার এবং শিল্প- সাহিত্য-সঙ্গীত প্রবল অনুরাগী। প্রসেনজিৎ বোস প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে পড়াশুনা করেন কৃষ্ণনগর মিশনারিজ স্কুলে। মেহেরপুর কলেজ থেকে তিনি ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় পাস করে জগন্নাথ কলেজে ¯œাতক কোর্সে ভর্তি হন। পিতার মৃত্যু ও ব্যক্তিগত অনাগ্রহের কারণে ¯œাতক ডিগ্রী লাভের আগেই প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ার পাট চুকে যায় তার। প্রসেনজিৎ বোস ছাত্র জীবন থেকেই ছিলেন মুক্তচিন্তার অধিকারী, সংস্কৃতিমনস্ক ও নাট্যামোদী। নাটকের প্রতি ছিল তার প্রবল অনুরাগ। নাটকের প্রথম পাঠ গ্রহণ করেন স্কুল শিক্ষক প্রয়াত শিবনারায়াণ চক্রবর্তীর কাছে । চার দশক ধরে তিনি মঞ্চ, রেডিও ও টেলিভিশনে অসংখ্য নাটক ও যাত্রাপালায় সুনাম ও সাফল্যের সাথে অভিনয় করেছেন। পেশাদার অভিনেতা না হয়েও নাটকই হয়ে ওঠে তার জীবনের ধ্যান-জ্ঞান, স্বপ্ন-কল্পনা। নাক উঁচু উন্নাসিক উচ্চবিত্ত ও উচ্চবর্ণের মানুষ যখন যাত্রা-নাটককে সেইভাবে পছন্দ করতে পারেনি তখনও তিনি বেশ দাপটের সাথে যাত্রা-নাটকে অভিনয় করে মঞ্চ কাঁপিয়েছেন, আসর মাতিয়েছেন। আজও তার অনবদ্য অভিনয়ের স্মৃতি মানুষের মুখে মুখে ফেরে। ষাট থেকে আশির দশক পর্যন্ত মঞ্চ নাটক ও যাত্রার আসরে তিনি এমনই অপরিহার্য হয়ে ওঠেন যে তাকে বাদ দিয়ে সেসময় মেহেরপুরের নাটক থিয়েটারের কথা ভাবাই যেত না। ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত কল্যাণ মিত্রের ‘জল্লাদের দরবার’ নাটকে লারকানার নবাব চরিত্রে অভিনয় করে বিপুল খ্যাতি অর্জন করেন। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি পালন করেছেন অসামান্য ভূমিকা যা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এই কৃতী অভিনেতা সারা জীবন অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল রাজনীতির একনিষ্ঠ কর্মী ও সাধক। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত মানুষ হিসেবে তাই তিনি আজীবন হৃদয়ে লালন করেছেন অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের স্বপ্ন । সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধি আর হানাহানিতে বারবার রক্তাক্ত হয়েছে বাংলাদেশের মানচিত্র ও আমাদের গৌরবময় ইতিহাসের সোনালী পাতা, সম্প্রীতির আলো কখনও কখনও নিভে যেতে চেয়েছে। তারপরও প্রিয় মাতৃভূমি ছেড়ে তিনি কোথাও যেতে চাননি। তার স্পষ্ট উচ্চারণ: “যে মাটির কণায় লুকিয়ে আছে আমার শৈশব-কৈাশোরের স্বপ্ন-ভালবাসা, যে মাটির গন্ধে লেগে আছে আমার যৌবনের উদ্দামতা, যে মাটির জন্য আমি যুদ্ধ করেছি, সে মাটি ছেড়ে আমি কোথায় যাবো?”
উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সামন্ত সংস্কৃতি ও আভিজাত্যের ঘেরটোপের মধ্যে প্রসেনজিৎ বোস নিজেকে আটকিয়ে রাখেননি কখনও। তার রাজনৈতিক অভিজ্ঞান, সংস্কৃতিভাবনা, জীবনচর্যার ভরকেন্দ্রে ছিল মানুষ এবং মানুষ। তার আভিজাত্য- কৌলিন্য তাকে সমাজবিমুখ করতে পারেনি কোনোভাবেই। তিনি প্রায় তিন দশক ধরে জেলা ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ-মো.) এর সভাপতি, রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ জেলা শাখার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। মেহেরপুর পৌর কলেজের লাইব্রেরী ভবনের অর্থ সংগ্রহেরও কাজ করছেন তিনি ।
আমৃত্যু হাস্যোজ্জ্বল, প্রাণবন্ত, সদালাপী প্রসেনজিৎ বোসের নশ্বর দেহ হয়তো পঞ্চভুতে মিশে যাবে একদিন, কিন্তু সংগ্রামী প্রসোনজিৎ বোস বেঁচে থাকবেন অনেকদিন। জয়তু প্রসোনজিৎ বোস।
২| ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১:২৫
খাটাস বলেছেন: একজন শব্দ সৈনিকের জন্য বিনম্র শ্রদ্ধা। পোস্ট টি শেয়ারের জন্য ধন্যবাদ স্যার।
©somewhere in net ltd.
১|
১৯ শে অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ২:৪৫
ইমতিয়াজ ১৩ বলেছেন: একজন বিখ্যাত মানুষের না ফেরার দেশে চলে যাওয়াকে এরূপ কাব্যিক ভাবে উপস্থাপন না করলেও পারতেন।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক প্রসেনজিৎ বোস এর জন্য শ্রদ্ধা ও ভালবাস।