![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বঙ্গবন্ধু ও ইতিহাসের খেরো খাতা
আবদুল্লাহ আল আমিন
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জন্ম ঢাকা-কলকাতায় নয়, টুঙ্গিপাড়ার মতো একেবারে সাধারণ গ্রামে। গান্ধী-জিন্নাহ’র মত ব্যারিস্টারি পড়তে তিনি বিলেতে যাননি, সুভাষ বসুর মত আইসিএস পরীক্ষাও দেননি। আবার হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দির মতো কোনো সুপ্রতিষ্ঠিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি থেকেও আসেননি, এসেছিলেন গোপালগঞ্জের সচ্ছল কৃষক পরিবার থেকে; অবশ্য তার বাবা লুৎফর রহমান মহকুমা অফিসের সেরেস্তাদার ছিলেন। তারপরও সকলকে ছাপিয়ে মেধা-মনন, শৌর্য-সাহসে, চারিত্রিক দৃঢ়তা, সাংগঠনিক দক্ষতা- প্রজ্ঞায় অনন্যসাধারণ ছিলেন তিনি-- ছিলেন একাধারে বীর, নেতা ও স্বাপ্নিক। তাঁর বীরত্ব যেমন ছিল; তেমনি ছিল মানুষকে জাগিয়ে রাখার, নেতৃত্ব দেবার ও সম্মোহিত করার অলৌকিক ক্ষমতা। মানুষকে কাছে টানতে পারতেন, পারতেন তাদেরকে নিয়ে সংগঠন করতে। সাংগাঠনিক দক্ষতায় তিনি ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বি। সাংগঠনিক শক্তি, ব্যক্তিত্ব ও সাহসিকতা দিয়ে ইতিহাসের চাকাকে বাঙালি জাতির পক্ষে তিনি ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন; দেখিয়েছিলেন উন্নত, পরিণত ও স্ব-শাসিত স্বাধীন ভূখ-ের স্বপ্ন । আত্মত্যাগ ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জীবনকে মহিমান্বিত করার মন্ত্র তো বাঙালি তাঁর কাছেই জেনেছে। আমাদের কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক, ভাবুক, চিন্তক, সাধকরা যুগে যুগে যে স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই স্বপ্নকে তিনি সার্থক করে তুলেছিলেন। ১৯৭১ এ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এ ভূখ-ের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন এক বৈপ্লবিক চেতনায়; নতুন ভাবে নির্মাণ করে ছিলেন বাঙালি মুসলমানকে যার ফলে স্বাধীন বাঙালি সত্তার জন্ম হয়েছিল।
শেরে বাংলা, সোহরাওয়ার্দি, ভাসানী, আবুল হাশিমরা যা পারেননি; বঙ্গবন্ধু তা পেরেছিলেন। এসব কারণেই তিনি ইতিহাসের মহানায়ক-শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ বাঙালি। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল ও ত্রিশের কবিরা বাংলা কবিতায় যুগান্তর ঘটিয়েছিলেন আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাঙালির সমাজ ও রাজনীতিতে ঘটিয়েছিলেন যুগান্তর। হতমান-অপমান, সেপাইতন্ত্র, রাজরোষ কোনোকিছুই তাঁকে বীরের ধর্ম থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। তিনি আপস করতে পারতেন, অনায়াসে হতে পারতেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, কিন্তু বাঙালি ও বাংলাদেশের স্বার্থের প্রশ্নে কোনোদিন কোনো অন্ধকারের শক্তির কাছে আপস করেননি।
বঙ্গবন্ধুর মতো মহানায়ককে ধারণ করার সাংস্কৃতিক ও দার্শনিক প্রস্তুতিই বলি, আর বুদ্ধিবৃত্তিক সক্ষমতা বলি, কোনটাই আমাদের ছিল না, তাই একদল বিপথগামী দুর্বৃত্ত তাঁকে নৃশংসভাবে হত্যা করতে পেরেছে। পঁচাত্তরের পর সেপাইতন্ত্রের ‘অতিশয় কৃপালোভী, ক্লিন্ন ভিক্ষাজীবী’ বিদ্বানেরা বঙ্গবন্ধুকে ইতিহাসের খেরো খাতা থেকে মুছে ফেলতে চেয়েছে, কিন্তু পারেনি। তাকে মুছে ফেলবে, পরাস্ত করবে, এমন দুঃসাধ্য কার ? ইতিহাসের পাতা ফুঁড়ে, মনসামঙ্গলের পথ ধরে ‘চাঁদ সদাগর’ এর মত পলিমাটির সৌরভমাখা বাংলার জমিনে, জনচিত্তে আবার তিনি ফিরে এসেছেন।
আবদুল্লাহ আল আমিন: লোকগবেষক ও প্রাবন্ধিক। সহযোগী অধ্যাপক, মেহেরপুর সরকারি কলেজ, মেহেরপুর।
©somewhere in net ltd.