নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নবীন আনন্দ

আবদুল্লাহ আল আমিন

আবদুল্লাহ আল আমিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

দ্বিজেন্দ্রলাল রায় : মহৎ হৃদয়ের অসামান্য শিল্পী

১০ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১২:০৫

দ্বিজেন্দ্রলাল রায় : মহৎ হৃদয়ের অসামান্য শিল্পী
আবদুল্লাহ আল আমিন

বাংলার বর্ণময় সারস্বত পরম্পরার অসামান্য মৌলিক প্রতিভা দ্বিজেন্দ্রলাল রায় (১৮৬৩-১৯১৩) এর সার্ধশত জন্মবর্ষ অনেকটা নীরবেই পার হয়েছে। হুজুগে বাঙালি ও তার বুদ্ধিজীবীরা রবীন্দ্রনাথের সার্ধশত জন্মবর্ষ উদযাপন নিয়ে যত মাতামাতি করেছে , তার এক-দশমাংশও করেনি দ্বিজেন্দ্রলালকে নিয়ে। অথচ রবীন্দ্র সমসাময়িক কালে সাহিত্যচর্চা করেও যারা রাবীন্দ্রিক প্রভাব বলয় থেকে নিজেদের মুক্ত রাখার চেষ্টা করে সফল হয়েছেন, তাদের মধ্যে নিঃসন্দেহে দ্বিজেন্দ্রলাল অন্যতম। প্রকৃতি অমোঘ বিধানে তার জীবনসীমা ৫০ বছর পার হতে পারেনি। তাঁর দু বছরের অগ্রজ রবীন্দ্রনাথের বিপুল সৃষ্টি আর বর্ণাঢ্য জীবন পরিক্রমার পাশে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের বেদনাবিধুর, অসহায় জীবন ছিল বড়ই করুণ ও অসম্পূর্ণ। আবেগপ্রবণতা ও বিরুপ পরিবেশ তাকে সুস্থির হতে দেয়নি কী জীবনচর্যা,কী শিল্পচর্চায়। তার ওপর মাত্র ৪০ বছর বয়সে স্ত্রীর আকস্মিক মৃত্যু ও শিশু পুত্র কন্যাদের লালন পালনের ভার তার জীবনের ভরকেন্দ্র ও সৃজনশীলতার শান্ত সমাহিত পরিসরকে বিধ্বস্ত ও এলোমেলো করে দেয়। তথাপি বাংলা সাহিত্য ও সঙ্গীত ভুবনকে তিনি যা দিয়েছেন তা অসামান্য। গীতরচয়িতা ও নাট্যকার হিসেবে খ্যাতিমান হলেও কবি হিসেবে তার অবদান অতুলনীয় । সার্ধশত জন্মবর্ষে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের গান ও নাটকের দিকে তাকালে রীতিমত বিস্মিত হতে হয় । নদীয়ারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের দেওয়ান কার্তিকেয় চন্দ্ররায়ের নীলরক্তের উত্তরাধিকার নিয়ে জন্মেছিলেন তিনি। পিতা কার্তিকেয়চন্দ্র রায় কৃষ্ণনগরের সমাজ সংস্কৃতিতে ছিলেন বিশেষ মর্যাদার অধিকারী । তিনি ছিলেন একাধারে সাহিত্যিক , সঙ্গীতবিশারদ , গীতরচয়িতা ও বহুভাষাবিদ । ঊনিশ শতকের বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি ভুবনের কীর্তিমান পুরুষ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর , ভূদেব মুখোপাধ্যায় ,বঙ্কিমচন্দ্র ,নাট্যকার দীনবন্ধু মিত্রের সাথে ছিল তার সখ্য সম্পর্ক। তার দু পুত্র হরলাল রায় ও দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ছিলেন সুগায়ক । নানাকারণেই সে সময় কৃষ্ণ নগরের রায় পরিবার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের মতোই খ্যাতিমান হয়ে উঠেছিল । দ্¦িজেন্দ্রলাল রায়ের মাতা প্রসন্নময়ী দেবী ছিলেন প-িত বংশের কন্যা । তাঁর ব্যক্তি জীবন ও সাহিত্যজীবন পিতামাতার আদর্শিক ভাবনা ,শিল্পানুরাগ ,পা-িত্য এবং মাতার সাহিত্যানুরাগ দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত । শৈশব, কৈশোরে দ্বিজেন্দ্রলাল ছিলেন রোগাক্রান্ত , শীর্ণ কিন্তু মেধা, মননে প্রখর ও দীপ্তিমান । গানের তালিম নেন বাবার কাছে এবং মাত্র পাচঁ বছর বয়সেই তিনি হারমোনিয়াম বাজিয়ে গাইতে পারতেন। সহজাত গীতপ্রতিভার গুণে তিনি গান বাঁধতে পারতেন মাত্র দশ বছর বয়স থেকেই। ছাত্র হিসেবেও কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন দ্বিজেন্দ্রলাল এন্ট্রাস থেকে এম এ পর্যন্ত। কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুল থেকে এন্ট্রান্স , ‘কৃষ্ণনগর কলেজ থেকে এফ.এ ,হুগলি মহসিন কলেজ থেকে বিএ এবং কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ্ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে এম এ পাস করেন তিনি। এমন তথ্য থেকে বোঝা যায় যে .তখনকার চারটি শিক্ষায়তনের অভিজাত ও উন্নত পরিবেশ এই জীবন পথের নবীন পান্থকে বৃহত্তর পটে প্রতিস্থাপিত করবার সূচিমুখ গড়ে দিয়েছিল।’ (সুধীর চক্রবর্তী ,অপরিগৃহীত প্রতিভা : দ্বিজেন্দ্রলাল রায়। ২ফেব্রূয়ারি ২০১৩ দেশ। পৃ : ৪২ )
এরপরও এক অনিবার্য কারণে বিলেতে কৃষিবিদ্যা পড়তে যেতে হয় তাঁকে । বোধ হয় জীবন, জীবিকার তাগিদে ্ইংরেজি সাহিত্যের এই মেধাবী ,মনস্বী ছাত্রটিকে ইচ্ছার বিরূদ্ধে ভিন্ন পথে পা বাড়াতে হয় ।সেখানেও তিনি সফল হন , সেই ফাঁকে পেশাদার সঙ্গীতজ্ঞদের কাছ থেকে শিখে নেন পাশ্চাত্য সঙ্গীতের সুরসার । দ্বিজন্দ্রলাল রায়ের শেখা এই বিশেষ সঙ্গীতবিদ্যা ভবিষ্যতে বাংলা গানে এনে দেয় তেজোদীপ্ত ,গৌরবদৃপ্ত, দূরন্ত , যৌবন জোয়ার ।

১ মানুষ হিসেবে দ্বিজেন্দ্রলাল ছিলেন আমুদে ,বন্ধুবৎসল , রঙ্গপ্রিয় ও মজলিসি স্বভাবের। যৌবনের প্রথম পর্বে তিনি গড়ে তোলেন ইন্ডিয়া ক্লাব ও ডাকাত ক্লাব । পরবর্তীতে‘ পূর্ণিমা মিলন’ নামে সান্ধ্য সমাবেশের আয়োজন করতেন যেখানে প্রতি সন্ধ্যায় গান-গল্প-আড্ডার জম-জমাট আসর হতো । এ আসরে রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত আসতেন । জীবনের অন্তিম পর্বে সমকালীন তরুণ-যুবাদের নিয়ে গড়ে তোলেন ‘ইভনিং ক্লাব’ । এ থেকে বোঝা যায় ,তার পক্ষপাত ছিল আমোদ প্রমোদ , আড্ডা ,মজলিসে ।তিনি যখন হাসির গান গ্ইাতেন তখন হাস্য -কলরোলে আসর মেতে উঠতো; কখনও কখনও হ্যাট-কোট-টাই সহ সাহেবি পোশাক পরে নেচে গেয়ে আসর জমিয়ে দিতেন । সাহেবি পোশাক পরে তিনি গেয়ে উঠতেন :‘ আমরা বিলেত ফেরতা ক’ভাই / আমরা সাহেব সেজেছি সবাই ।’ মজলিস ,সভা-সমিতি ,আসরে দ্বিজেন্দ্রলালকে দেখা গেলে সকলেই সমস্বরে চেঁচিয়ে বলতো,‘ হাসির গান , দ্বিজু বাবু একটা হাসির গান হোক।’ তৎকালে তাঁকে সবাই হাসির গানের গায়েন বা লঘুচিত্তবিহারী বলেই ভাবতো । ‘ রবীন্দ্রনাথ ,রজনীকান্ত সেন এবং নজরুল ইসলাম হাসির গান লিখেছেন । রবীন্দ্রনাথের কোনো কোনো হাসির গান রীতিমত উৎকৃষ্ট সঙ্গীত হয়ে উঠেছে । কিন্তু হাসির গানে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ই সবার ওপরে জায়গা পেতে পারেন । (গোলাম মুরশিদ ,হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি। ঢাকা ,জানুয়ারি ২০০৬। পৃষ্ঠা:৩৩৭ )
দীনেন্দ্রকুমার রায় ‘ সেকালের স্মৃতি’ তে লিখেছেন , মহিষাদলে কাকার বাসায় অনুষ্ঠিত এক মজলিসে তিনি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের স্বকণ্ঠে শুনেছিলেন , ‘পারো তো জন্মো না ভাই ,বিষ্যুৎ বারের বার বেলায় ,’ ‘তার রং যে বড্ড ফরসা , তারে পাবো হয় না ভরসা ।’
একটা গানে তিনি প্রশ্ন তোলেন , ‘হাস্য শুধু আমার সখা ? অশ্রু আমার কেহই নয় ? ’ দ্বিজেন্দ্রলালের হাসির গানের অনুরাগী ছিলেন রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং নিজেই । শিলাইদহে দু’জন মিলে একত্রিত হলে গানের জম-জমাট আসর বসতো এবং সে আসরে দি¦জেন্দ্রলাল নিজে গান গাইতেন । দ্বিজেন্দ্রলাল হাসির গান লেখেন মূলতঃ সমাজের ভ-ামি ,ন্যাকামি ,অসঙ্গতি ব্যাঙ্গ বিদ্রূপের সাহায্যে তুলে ধরতে গিয়ে। ব্যাঙ্গ-বিদ্রƒপের আবরণে তিনি তুলে ধরতেন সমাজের কঠিন বাস্তবতাকে । ‘নন্দলাল ’ শীর্ষক রচনায় তিনি বাঙালির ঠুনকো দেশপ্রেম ,ভীরুতা ,ন্যাকামি অনবদ্যভাবে তুলে ধরেন ।
“নন্দ ত একটা করিল ভীষণ পণ --/স্বদেশের তরে , ‘যা করেই হোক ,রাখিবে সে জীবন ।’/সকলে বলিল ,আহাহা কর কি ,কর কি নন্দলাল ?’ /নন্দ বলিল ,‘বসিয়া বসিয়া রহিব কি চিরকাল ? /আমি না করিলে ,কে করিবে আর উদ্ধার এই দেশ ?’....নন্দ বাড়ির হত না বাহির ’ কোথা কি ঘটে কি জানি ;/ চড়িত না গাড়ী ,কি জানি কখন উলটায় গাড়ীখানি ;/নৌকা ফি সব ডুবিছে ভীষণ , রেলে কলিশন হয় ;/ হাঁটিতে সর্প কুক্কুর আর গাড়ীচাপা-পড়া ভয় ;/ তাই শুয়ে শুয়ে , কষ্টে বাঁচিয়ে রহিল নন্দলাল ।”
দ্বিজেন্দ্রলালের এই গান কবিতা হিসেবে পড়ে স্কুল শিক্ষর্থীরা আজও আনন্দে হেসে লুটোপুটি খায় । রবীন্দ্রনাথ তাঁর স্মৃতিকথায় লিখেছেন ,দ্বিজেন্দ্রলাল যখন শিলাইদহের হাউস বোটে বসে হাসির হাসির গান গাইতেন , তখন নিজে থাকতেন গম্ভীর হয়ে কিন্তু শ্রোতারা হেসে গড়িয়ে পড়তো । বহুকাল পরে এক বঙ্গ সাহিত্য সমে¥লনে দ্বিজেন্দ্রলাল পুত্র সঙ্গীতজ্ঞ দিলীপকুমারকে দিয়ে জনপ্রিয় হাসির গান নন্দলাল গাইয়ে নিয়েছিলেন। দিলীপকুমার সেটা দক্ষতার সাথে গেয়ে রবীন্দ্রনাথকে শুনিয়েছিলেন এবং রবীন্দ্রনাথ শুনে মন্তব্য করেছিলেন , ‘মন্টু গাইলে বটে ,চমৎকার । কিন্তু তোমার বাবার মত হল না ।’ রবীন্দ্রনাথের মন্তব্য থেকে বোঝা যায় যে , দ্বিজেন্দ্রলাল যা করতেন তা আন্তরিকভাবেই করতেন। ‘বঙ্গ আমার জননী আমার, ধাত্রী আমার ’ গানটি গাওয়ার সময় দেশপ্রেমের তীব্র আবেগে তিনি চোখমুখ লাল করে ফেলতেন। আবার হাসির গান গাওয়ার সময় বেদনায় ম্লান হয়ে যেতেন । সমকালীন সমাজের নানা অসঙ্গতিতে তিনি বিব্রত হতেন ,কখনও কষ্ট পেতেন ; কিন্তু সেসব প্রকাশ করতেন অত্যন্ত সরস ও রসম-িত ভাষায় । যারা নিজ সংস্কৃতি ত্যাগ করে বিদেশী সংস্কৃতির ¯্রােতে গা ভাসিয়েছেন, তাদের প্রতি তিনি নিক্ষেপ করেছেন ব্যাঙ্গ বিদ্রূপের বাণ। তিনি এক গানে বলেছেন :
‘আমরা বিলিতি ধরনে হাসি /আমরা ফরাসি ধরনে কাশি /আমরা পা ফাঁক করিয়া /সিগারেট খেতে বড্ডই ভালবাসি ।’
একথা বলা বাহুল্য যে ,বাংলা গানের বিপুল বৈভবম-িত ভুবনে দ্বিজেন্দ্রলাল এর আবির্ভাব হাস্যগীতি রচয়িতা হিসেবে । রঙ্গ ,ব্যঙ্গ ,হাস্য, কৌতুক গানের মাধ্যমে তিনি মূলত সমাজচেতনা , দেশপ্রেম, ধর্মের নামে ভ-ামি তুলে ধরেন । তাঁর হাসির গান শুনে আজও অনেকের বুকে পিঠে খিল ধরে যায় । গানগুলি পড়েও হাসি পায় ,আবৃত্তি শুনলে হাসির উদ্দীপনা বেড়ে যায়।তবে এসব গান খুব কম গায়ক আসল সুরে গ্ইাতে পারেন । কবি যখন নিজে গাইতেন তখন আসরে হাস্যরসের বান বইয়ে যেত।গান যে বাঁধভাঙ্গা হাস্যরস সৃষ্টি করতে পারে তা আমরা দ্বিজেন্দ্রলালের কাছ থেকেই জেনেছি । ব্যঙ্গ-বিদ্্রুপের শেল যে কত তীব্র ও মর্মভেদী হতে পারে, ধর্মের স্থ’ূল আচার সর্বস্বতা উন্মোচিত হতে পারে,তা দ্বিজেন্দ্রলালের নিচের গানটি থেকেই উপলব্ধি করা যায় :
‘ যদি চোরাই হও , কি ডাকাত হও , তা গঙ্গায় দেওগে ডুব ,/ আর গয়া ,কাশী , পুরী যাও সে পুণ্যি হবে খুব ,/ আর মদ্য মাংস খাও--বা যদি হয়ে পড় শৈব ,/আর না খাও যদি বৈষ্ণব হও;Ñ-এর গুণ কত কৈব । /( কোরাস) ছেড়নাকো এমন ধর্ম , ছেড়োনাক ভাই , এমন ধর্ম নাই আর দাদা , এমন ধর্ম নাই ।’
দ্বিজেন্দ্রলালের মধ্যে কোন অস্পষ্টতা ,দ্ব্যর্থবোধকতা ছিল না, যা ভাবতেন তাই স্পষ্ট করে প্রকাশ করতেন । মানুষ হিসেবে ছিলেন দৃঢ়চেতা , নমনীয়তা বা ন্যাকামি কোনটাই তিনি পছন্দ করতেন না।বিদেশী সংস্কৃতির অন্ধ অনুকরণ তিনি পছন্দ করতেন না ,তেমনি পছন্দ করতেন না দেশপ্রেমের নামে উগ্রতা । নরনারীর শরীরগত প্রেম ও পরনারীর আসক্তি ছিল তার কাছে অত্যন্ত ঘৃণার বিষয় । তিনি ছিলেন সর্ব অর্থেই রুচিমান ও সংস্কৃতিবান মানুষ , তাই তার কাছে প্রেম প্রণয় বলতে কেবল ‘সতীর পবিত্র প্রেম ’ যা সামগ্রিকভাবেই বিশুদ্ধ প্রেম । আসলে তাঁর কবিজীবনে রবীন্দ্রনাথের ‘নতুন বউঠান কিংবা সুন্দরী বিদূষী অনুরাগিনীরা নেই । এসব কারণে সম্ভবত তিনি পরকীয়া প্রেমের মধুরসে জীবনকে ভাসাতে পারেননি । আবার নীতিবাদী বলতে যা বোঝায় তাও তিনি ছিলেন না , তবে প্রচ- জেদ তাঁর মধ্যে ছিল । তাঁর চিন্তা-মননে দ্বিচারিতা ছিল না , তবে কখনও কখনও বৈপরিত্য ছিল । তাঁর হাসির গান ও প্রেমের গানে এ ধরনের বৈপরীত্য পাওয়া যায়।২৪ বছর বয়সে তিনি যখন পরমাসুন্দরী সুরবালার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন ,তখন নতুন প্রেমের আবেগে কৌতুকরসম-িত ভাষায় তিনি লেখেন :
‘প্রথম যখন বিয়ে হল/ ভাবলাম বাহা বাহা রে! / কি রকম যে হয়ে গেলাম /বলবো তাহা কাহারে!/এমনি হল আমার স্বভাব যেন খাঞ্জা খাঁ নবাব ; নেইক আমার অভাব Ñ/পেলাম, কোর্মা, কোপ্তা, কাবাব,/ রোচে নাক আহাওে /Ñভাবলাম বাহা বাহারে ।’
বাঙালির সংসার জীবনে স্ত্রীর চেয়ে শ্যালিকার সঙ্গে রঙ্গরস ভাল জমে ,আমাদের শিল্প ,সাহিত্য,গানে এমন বিষয় ছড়িয়ে আছে মধ্যযুগ থেকে । ঋজু স্বভাবের মানুষ হয়েও রঙ্গপ্রিয় দ্বিজেন্দ্রলাল রসম-িত ভাষায় শালী নিয়ে লেখেন :
‘ পতœীর চাইতে শালী বড় / যে স্ত্রীর নাইক ভগ্নী Ñ/ সে স্ত্রী পরিত্যজ্য ,ও তার / কপালেতে অগ্নি।’
তিনি আরও লেখেন Ñ
‘পতœীর চাইতে কুমীর ভাল /--বলে সর্বশাস্ত্রী।/ কুমীর ধর্ল্লে ছাড়ে তবু/ ধর্ল্লে ছাড়ে না স্ত্রী।’
বলা নিষ্প্রয়োজনীয় যে ,হাসির গান দ্বিজেন্দ্রলালের অনন্য কীর্তি । হাস্য ও কৌতুক গানের মাধ্যমে সমাজের অসঙ্গতি ন্যাকামি ,বোকামি,ভন্ডামি,কপটতা,ঠুনকো দেশপ্রেম,ভীরুতা তুলে ধরেন । পাঁচকড়ি বন্দোপাধ্যায়ের ভাষায় প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায়:
‘যখন দি¦জেন্দ্রলাল বিলাত হইতে এদেশে ফিরিয়া আসেন তখন বাঙ্গালায় ভাবস্থবিরতা ঘটিয়াছিল।ন্যাকামির প্রভাব চারিদিকে বেশ ফুটিয়া উঠিয়াছিল। সেই সময়ে দ্বিজেন্দ্রলাল বিলাতের হিউমার বা ব্যঙ্গের এদেশে আমদানি করিয়া , দেশীয় শ্লেষের মাদকতা উহাতে মিশাইয়া
বিলাত ঢঙের সুরে হাসির গান প্রচার করিলেন।’ দ্বিজেন্দ্রলালের হাসির গান প্রচার করিলেন। দ্বিজেন্দ্রলালের হাসির গান বাঙালি সমাজে একটা ভাববিপ্লব ঘটাইছিল ।’তার সুরের ধারায় ¯œাত হয়ে বাঙালি এক নতুন জীবনের সন্ধান পায় যা সম্পূর্ণরূপেই নতুন ।
হাস্য-রস সৃষ্টিতে তাঁর ঝোঁক থাকলেও তিনি নিজেকে এর মধ্যে সীমিত করে রাখেননি। তিনি ছিলেন মানবিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ এক মহৎ হৃদয়ের শিল্পী। তাই তার হাসির গানে বাঙালি যেমন রসসিক্ত হয়েছে .তেমনি সামূহিক শুভ-কল্যাণ চিন্তায় নিজেদের সম্পৃক্ত করতে চেয়েছে।

২ দ্বিজেন্দ্রলাল ছিলেন ডাকসাইটে সিভিলিয়ান , তথাপি স্বভাব-আচরণে এতটাই অকপট দেশপ্রেমিক ছিলেন যে রাজপথে নেমে দল বেঁধে স্বরচিত গান গেয়েছেন । স্বাদেশিকতার অহমিকা তিনি আমৃত্যু লালন করে গেছেন ,তবে স্বদেশি গান যে খুব বেশি রচনা করেছেন ,এমন নয় । তাঁর স্বদেশ পর্যায়ের গানের সংখ্যা পঞ্চাশের বেশি হবে না । তবু এই স¦ল্প সংখ্যক গানের মধ্য দিয়ে তিনি স্ব-সমাজ , স্বদেশ ও মানুষের প্রতি গভীর ভালবাসা প্রকাশ করে গেছেন । বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের সময় (১৯০৫-১৯১১) দেশগান লিখে তিনি জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। অবশ্য এ সময়কালে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিপুল সংখ্যক দেশগান রচিত হয় । ‘ বিখ্যাত থেকে অখ্যাত গীতিকাররা, এমনকি যারা এর আগে গান লেখেননি তারা পর্যন্ত স¦াদেশিক আবেগে গান রচনা করেন । কলকাতা থেকে দূরবর্তী পল্লী শহরগুলোয় পর্যন্ত শত শত স্বদেশী গীতসঙ্কলন প্রকাশিত হল ।’ ( করুণাময় গোস্বামী ,‘সঙ্গীত’ । বাংলাদেশের ইতিহাস , সিরাজুল ইসলাম সম্পাদিত । এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ ,ডিসেম্বর১৯৯৩। পৃ: ৫২০ )
এ সময় কালে দ্বিজেন্দ্র্রলাল রায় অন্যতম প্রধান গীতিকার হিসেবে আবিভর্’ত হন । ব্রিটিশ সরকার গৃহীত বঙ্গভঙ্গ নীতির বিরূদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে চিরায়ত বাংলার রূপ প্রতিমার বন্দনা করে তিনি রচনা করেন :
‘ধন-ধান্য-পুষ্পভরা আমাদের এই বসুন্ধরা--/ তাহার মাঝে আছে দেশ এক --/ সকল দেশের সেরা;’ এছাড়াও ‘ বঙ্গ আমার জননী আমার ’ ,‘আছি গো তোমার চরণে জননী’ ,প্রভৃতি কালজয়ী স্বদেশীগান বঙ্গভঙ্গের সময় জনচিত্তকে আন্দোলিত করে গভীরভাবে ।দেশগান রচনার ক্ষেত্রে দ্বিজেন্দ্রলাল মূলত সত্যেন্দ্রনাথ এবং হেমচন্দ্র বন্দোপাধ্যায়কে অনুসরণ করেন । ‘ দেশবন্দনা, নিসর্গশোভা, মাতৃভাষাবন্দনা, দেশকে জননী হিসেবে কল্পনা ,জন্ম ধন্যতাবোধ--এসব বিষয়ে দ্বিজেন্দ্রলাল পূর্বসূরিকে মান্য করেছেন ।’ (বিশ্বজিৎ ঘোষ ,‘ সঙ্গীত সাধক দ্বিজেন্দ্রলাল : সার্ধশত জন্মবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি ’।কালি-কলম । ঢাকা,জুন২০১৩। পৃ:১২ )
তিনি কেবল কালজয়ী গান রচনা করেননি ,সুর সৃজনের ক্ষেত্রেও অসামান্য দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন । একথা বলা বাহুল্য যে, তিনি বাংলা গানে যুক্ত করেন বিদেশি গানের দীপ্তিভরা জৌলুস আর আবেগময় প্রাণশক্তি। ধনধান্য পুষ্প ভরা গানটিতে তিনি দেশি সুরের সাথে বিদেশি সুরের মিশ্রণ ঘটিয়েছেন ।

দ্বিজেন্দ্র-পতœী সুরবালা ১৯০৩ সালে মৃত্যু বরণ করেন। স্ত্রীর আকস্মিক মৃত্যু তাঁকে একেবারে বিপন্ন ও অসহায় করে তোলে । প্রিয়তমা স্ত্রীর বিয়োগব্যথায় তিনি হারিয়ে ফেলেন হাসির গান আর কাব্যসৃষ্টির প্রণোদনা ও স্বতঃস্ফূর্ত আবেগ । সেই অসহায় ও বিষণœ জীবনপটে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের ঢেউ ও পাবলিক স্টেজের ডাক তাঁকে নিয়ে আসে মুক্তির দ্বার প্রান্তে । তিনি শুরু করেন নাটকের পথে যাত্রা । একাদিক্রমে লিখতে থাকেন প্রতাপসিংহ(১৯০৫), দুর্গাদাস(১৯০৬), নুরজাহান(১৯০৮), মেবার পতন(১৯০৮) , সোহরাব রুস্তুম(১৯০৮), সাজাহান (১৯০৮), চন্দ্রগুপ্ত(১৯১১) ইত্যাদি। গ্রাম শহরে এসব নাটকের মঞ্চায়ন তাঁকে এনে দেয় বিপুল জনপ্রিয়তা। নাটকের জনপ্রিয়তা তাঁর শোক বিহ্বল হতাশ জীবনে বয়ে দেয় আনন্দ জোয়ার। খ্যাতি,যশ,দর্শকের ভালবাসা ও মঞ্চের টান তাঁকে টেনে আনে ক্লান্তি ,অবসাদ ও মদ পানের বাধ্যতা থেকে সৃষ্টিশীলতার পথে এবং গানের ঐশ্বর্যম-িত ভুবনে। কেবল কলকাতার রঙ্গমঞ্চে নয়, তাঁর নাটক মঞ্চায়ন হতে থাকে মফস্বল শহরে এমনকি গ্রামীণ পরিমন্ডলে। বলা প্রয়োজন যে,নাটক ছিল তার পরিণত ও পরিপক্ব চিন্তা ওআবেগের ফসল; এই নাটকেই তিনি তুলে ধরেন দেশাত্মপ্রেমের সাথে সার্বজনীন মানবপ্রেম। তবে দেশবন্দনা করতে গিয়ে কোনভাবেই তিনি সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদের বেদীমূলে নিজেকে বিসর্জন দেননি। দেশপ্রেমের নামে আঞ্চলিকতা,প্রাদেশিকতা,উগ্র জাতীয়তাবাদ যে সমর্থনযোগ্য নয়,তা তিনি বারবার বলেছেন বিভিন্নভাবে । দেশপ্রেম আর ধর্মের নামে বাড়াবাড়ি যে মনুষ্যত্বের অবমাননা তাও তিনি সবাইকে মনে করিয়ে দিয়েছেন ।সংকীর্ণতার মাঝে যেমন দেশপ্রেম থাকে না, তেমনি ধর্মান্ধতা ও ধর্মের নামে বাড়াবাড়িতে আধ্যাত্মিকতা থাকে না । তিনি মনে প্রাণে কামনা করতেন , ভারতবর্ষ হয়ে উঠুক বিশ্বমানবতা ও বিশ্বমৈত্রীর মিলনতীর্থ । যেখানে জাতিধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সবাই হবে পরস্পরের আপনজন ,পরমাত্মীয় । তাই তিনি বিশ্বের মাঝে নিজ দেশ যেমন আবিস্কার করেছেন ,তেমনি সারা বিশ্বকে নিজ দেশ বলে জেনেছেন চিন্তা-মনন ও আবেগ দিয়ে । একারণে তাঁর দেশাত্মবোধ এক পর্যায়ে সব সীমা ছাড়িয়ে ছাপিয়ে বিশ্ববোধে রূপ নেয় । তিনি কখনও গেয়ে ওঠেন ,‘ এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি ’ , আবার তিনিই গেয়ে ওঠেন , ‘গিয়াছে দেশ দুঃখ নাই, আবার তোরা মানুষ হ’ ।
তাঁর নাটক কেবল সারস্বত সমাজে নয় , সাধারণের মাঝেও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, আর এর কারণ হিসেবে বলা যায়, দ্বিজেন্দ্রগীতির এক মহৎ ও বৃহৎ অংশ নাটকের সাথে সম্পৃক্তি । এসব জননন্দিত ও মঞ্চসফল নাটকের গানে একদিকে আছে ব্যক্তিজীবনের সুখ হতাশা, বিষাদ; অন্যদিকে রয়েছে জগৎ-জীবন সম্পর্কিত উপলব্ধি ও অভিজ্ঞান । উদহারণ হিসেবে তাঁর কয়েকটি নাটকের কয়েকটি দৃশ্য ব্যাখ্যা করা যায় : দুর্গাদাস (১৯০৬) নাটকের পঞ্চম অঙ্ক তৃতীয় দৃশ্য। স্থান: কোয়েলার দুর্গশিখর । কাল Ñজ্যোৎ¯œ রাত্রি । প্রেমবিহ্বল রাজিয়া প্রেমকাতর অজিতকে গানে গানে জানান দিচ্ছে :
‘ এসো এসো বধুঁ বাধি বাহুডোরে/এসো বুকে করে রাখি ।/ বুকে ধরে মোর আধ ঘুমঘোরে / সুখে ভোর হয়ে থাকি ।/---আমি তোমার বঁধু , তুমি আমার বঁধু /এই শুধু নিয়ে থাকিÑ-/বিশ্ব হতে সব লুপ্ত হয়ে যাক/ আর যা রহিল বাকি /’
এ ব্যাকুলতা রাজিয়ার নয়, এ ব্যাকুলতা যেন প্রিয়তমা পতœীর বিরহে কাতর স্বয়ং দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের। নিজের অব্যক্ত বেদনার কথা তিনি রাজিয়ার মুখ দিয়ে বলিয়ে নিচ্ছেন ।
সাজাহান(১৯০৯) নাটকের দি¦তীয় অঙ্কের প্রথম দৃশ্যে মোরাদ যখন নর্তকীদেও উদ্দেশ্যে বলেন , ‘নাচো ,গাও ’, তখন নর্তকীরা গাইবে :
“আজি এসেছি Ñআজি এসেছি, এসেছি বঁধু হে /নিয়ে এই হাসি ,রূপ গান ।/আজি আমার যা কিছু আছে, এনেছি তোমার কাছে ,/ তোমায় করিতে সব দান।
দৃশ্যে দেখা যাবে, গানের মধ্যে সুরা পান করতে করতে এক পর্যায়ে মোরাদ ঘুমিয়ে পড়বে । নাট্যকার উদ্ধৃত গানটিতে নিজের রোমান্টিক ভাবাবেগ প্রকাশ করেছেন, যদিও এটি নর্তকী দের গাওয়া গান । একই নাটকের তৃতীয় দৃশ্যের ষষ্ঠ দৃশ্যে যোধপুরের প্রাসাদকক্ষে যশবন্ত সিং ও জয়সিংহ এর উপস্থিতিতে মহামায়া চারণ বালকদের বলবেন ,‘ গাও বালকগণ । সেই গান গাও ÑÑআমার জন্ম ভূমি ।’তখন তারা গাইবে :
‘ধনধান্যপুষ্প ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা ,/ তাহার মাঝে আছে দেশ এক Ñসকল দেশের সেরা , / ও সে স্বপ্ন দিয়ে তৈরী সে দেশ , স্মৃতি দিয়ে ঘেরা/ এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি,/ সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি।’
গানটি ষাটের দশকে বাঙালি জাতীয়তাবাদের উন্মেষকালে বাংলার আপামর জনসাধারণকে ব্যাপকভাবে আন্দোলিত করেছিল । যোধপুরের নিসর্গ বন্দনা করতে গিয়ে গানটি লেখা হলেও এতে অখ- বাংলার রূপ মাধুরী প্রতিবিম্বিত হয়েছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধেও গানটি মুক্তিকামী বাঙালির চিত্তে শিহরণ জাগিয়েছে । রবীন্দ্রনাথের মতো বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী দ্বিজেনদ্রলাল ছিলেন না, কিন্তু সঙ্গীত ¯্রষ্টা ও নাট্যকার হিসেবে তিনি ছিলেন অতুলনীয় । তবে তার গানের সুনির্দিষ্ট গায়নরীতি ও শিক্ষনে ধারাবাহিকতা ধরে রাখা যায়নি এবং কোন স্বরলিপিও প্রণয়ন করা হয়নি । একারণে দ্বিজেন্দ্রগীতি ভালভাবে গাওয়ার মত উঁচুদরের শিল্পীর তেমন হদিস মেলে না।
তাঁর জন্মের সার্ধশতবর্ষ পূর্তি কালে একথাই বারবার বলতে ইচ্ছে করছে যে , ভাগ্যদেবতা চিরকাল তার প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করেছে । সমকালে স্বসমাজ তাঁকে সেইভাবে গ্রহণ করেনি ,আবার উত্তরকালেও তিনি সেইভাবে আদৃত হননি । সমকালীন নাট্যকার ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদের নাটক যেখানে স্টার- মিনার্ভা-কোহিনুর থিয়েটারে অভিনীত হয়েছে , সেখানে তাঁর নাটক সেই স্থান অধিকার করতে পারেনি । স্বতঃই প্রশ্ন জাগে কেন এমন হলো? এজন্যই তিনি সম্ভবত জীবনসায়াহ্ণে এসে একটি চিঠিতে লিখেছেন : ‘একটি বারের জন্যও ভেবে দেখেছেন কিÑ-আমার কি ভীষণ অবস্থা ? আজ আমার মতো ভাগ্য-বিড়ম্বিত, নিঃসহায় দুঃখী এ দুনিয়ায কে ? সকলেরই এ সংসারে একটা কোনও আশ্রয় সান্তৃনা থাকে ? আর আমার ? আমার কেউ নেই ,কিছু নেই । চারিদিকে শ্মশান ,আর তারপর ধূ ধূ মরুভূমি ।’
এমন চিঠির বয়ান পড়লে মনে হয় ,কত বেদনা নিয়ে না তিনি মহাসিন্ধুর ওপারে চলে গেছেন । মাত্র পঞ্চাশ বছরের জীবনসীমাকে রবীন্দ্রনাথের একাশি বছরের জীবনসীমার কাছে খুব নগন্যই বলতে হয় । দ্বিজেন্দ্রলালের মৃত্যু এক অর্থে অকালমৃত্যুই বটে । তবে এই অকালমৃত্যু তাঁর নিজের জন্য আশীর্বাদ হয়েছিল বলে অনেকে মনে করেন । জীবনের শেষ পর্বে অন্যের প্ররোচনায় তিনি রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে মতবিরোধে জড়িয়ে পড়েন । এই মতবিরোধ এক পর্যায়ে ব্যক্তিগত বিরোধে পরিণত হয় । অবশ্য শেষ পর্যন্ত উভয়ের সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়ে ওঠে । রবীন্দ্রনাথের সাথে তুলনা না করেও বলা যায় যে, দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ছিলেন বহুমাত্রিক প্রতিভার এক মহৎ সাহিত্যিক । কিন্তু সারাজীবন কোন ভক্ত -অনুরাগীর ভালবাসা পাননি । তাঁর নাটকগুলি মঞ্চস্থ হতেও তেমন দেখা যায় না আর যতটা একাডেমিক ক্ষেত্রে চর্চা করা হয় । কয়েকটি ব্যতিক্রম বাদ দিলে,দ্বিজেন্দ্রলালের গানও সেইভাবে আসরে,মঞ্চে গীত হয় না । আসলে আমরা তাঁকে আমরা গ্রহণও করিনি , অস্বীকারও করিনি । কেবল ঐতিহ্য করে রাখতে চেয়েছি । অথচ দ্বিজেন্দ্রলাল রায় বাংলা সাহিত্য, সঙ্গীত ও সংস্কৃতি জগতের এক অসামান্য মৌলিক প্রতিভা ।
আবদুল্লাহ আল আমিন: লেখক ও প্রাবন্ধিক। সহযোগী অধ্যাপক, মেহেরপুর সরকারি কলেজ, মেহেরপুর।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৮:২০

কি করি আজ ভেবে না পাই বলেছেন: অসাধারণ একটি পোষ্ট
অনেক অনেক ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.