![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাংলাদেশের লোকধর্ম: বাউল
আবদুল্লাহ আল আমিন
১৯৮৬ সালের মার্চ মাসে ফকির মন্টু শাহ নামে এক সাধক বাউল সম্প্রদায়ের মুখপাত্র হিসেবে কুষ্টিয়া জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে এক মুসলমান অধ্যাপকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগে তিনি বলেন:
‘আমরা বাউল,আমাদের ধর্ম আলাদা,আমরা না মুসলমান না হিন্দু, আমাদের নবী সাঁইজি লালন শাহ, তাঁর গান আমাদের ধর্মীয় শে¬াক। সাঁইজির মাজার আমাদের তীর্থভূমি। আমরা যারা তাঁর ভক্ত আমরা সকলেই এক বিশেষ নিয়মে ভেক গ্রহণ করি। আমাদের সৃষ্টি নেই মানে বিবাহ নেই-সন্তান জন্ম নেই, আমাদের গুরুই রসুল। ----- ডক্টর সাহেব (মুসলমান অধ্যাপক)
আমাদের এই র্তীর্থভূমিতে ঢুকে আমাদের ধর্মের কাজে বাধা দেন। কোরআন তেলাওয়াত করেন, মিলাদ মাহফিল করে থাকেন, এসবই আমাদের তীর্থভূমিতে আপত্তিকর। আমরা আলাদা একটা জাতি, আমাদের কালেমাও আলাদা-লাইলাহা ইল¬াল¬াহু লালন রসুলুল¬াহ।’
জীবদ্দশায় লালন সাঁই নিজেকে কখনও নবী বলে দাবী করেননি। এমনকি ভোলাই শাহ, শীতল শাহ, দুদ্দু শাহ, মনিরুদ্দীন শাহ প্রমুখ লালন-শিষ্যরাও লালনকে নবী বলে দাবী করেন নি। কিন্তু তাঁর প্রয়াণের শতবর্ষ পরে গড়ে ওঠা শিষ্যম-লীর অনেকেই তাঁকে নবী, রসুল এবং ধর্ম প্রবর্তকের পদে উন্নীত করেছেন। মেহেরপুরের কাজীপুর গ্রামের ফকির দবির উদ্দীন শাহ লালনকে নবী না মানলেও আল¬াহর ওলি হিসেবে মানতেন। তিনি মনে করতেন, লালন ছিলেন দিব্যজ্ঞান সম্পন্ন পরিশুদ্ধ আত্মার কামেল পুরুষ। সিংহাটির আফসার ফকির মনে করেন তিনি উচু স্তরের সাধক এবং আল¬ার ওলি। লালনকে নবী, রসুল কিংবা ধর্ম প্রবর্তকের পদে উন্নীত করার প্রশ্নে খোদ বাউলদের মধ্যেই মতদ্বৈধতা রয়েছে। ফকির মন্টু শাহের দাবীকে ক্ষমতা নির্দেশক বলেও অনেকে মনে করন। তিনি মূলতঃ বাউল সমাজে তাঁর অবস্থানকে সুসংহত করার জন্যই এ ধরনের কথা জাহির করেছেন।
বাউলরা লালনকে নবী না মানলেও তাঁর গান, বাণী দর্শন ও সাধন তত্ত্ব জীবন চর্যার অপরিহার্য সে বলে মনে করে। বাউলদের মধ্যে পাঁচটি ঘরানা থাকলেও লালনকেই বাউল দর্শন ও ধর্মের শিরোমনি হিসেবে মান্য করা হয়। লালনপন্থীসহ সব বাউলরা লালনের গানকে জীবনের একমাত্র প্রতিপাদ্য বলে বিশ্বাস করে। লালন নির্দেশিত পথে তারা জীবন পরিচালনা করে। মেহেরপুরের গোলাম ঝড়ু শাহ তো লালন মত ও পথকে ধ্র“বসখা মেনে জীবন ও জীবিকা নির্বাহ করেছেন। ঝড়ু শাহ হিন্দু ব্যাধ সম্প্রদায়ভূক্ত হলেও বিয়ে করেন মুসলমান মলিজানের সাথে ফকিরী মতে। বিয়ে করেও তঁাঁরা কোন সন্তান উৎপাদন করেননি। তিনি মনে করতেন, আত্মরতি খন্ড করেই পুত্র-কন্যার জন্ম দিতে হয়। আর পুত্র-কন্যার জন্ম দেওয়ার মধ্য দিয়ে নিজেকে পুনর্জন্মের ফাড়ে পড়তে হয়। লালনে নিমগ্ন এই সাধক বাউল দুদ্দুশাহ’র ভাষায় বলতেন:
‘আত্মরতি খন্ড করে শরিক হয়/ পুত্র কন্যা রূপে পুনর্জন্ম তারে কয়।।/পুত্র কন্যার মধ্যে সেথা/থাকে বেঁচে পিতামাতা/এই রূপে সৃষ্টির প্রথা বলিয়া যায়।।/‘জন্মিয়ে যাতনা প্রাপ্তি’ ছাড়া আর কিছুই নাই।’
গোলাম ঝড়ু শাহ, আরজান শাহ, আতাহার শাহ, আমীর চাঁদ, কলিমুদ্দীন শাহ, মাতু ফকির, আজাদ শাহ, দবিরউদ্দী শাহ, মোফাজ্জেল শাহ, জামাল শাহ, কাতব শাহ’র মতো অসংখ্য বাউল মেহেরপুরে ছিল এবং আছে। এরা সমাজ জীবনে পিতৃদত্ত মুসলমন কিংবা হিন্দুয়ানি নাম বহন করলেও মন-মননে, চর্চায় ছিলেন আলাদা মানুষ। এরা যে ধর্ম বিশ্বাস লালন করেছেন তা সম্পূর্ণরূপে শাস্ত্র বহির্ভূত অবৈদিক ধর্মই। এ ধর্মে ও গানে আল¬াহ, রসুল ও ইসলাম প্রীতির পরিচয় পাওয়া যায়, তেমনি রাধা-কৃষ্ণ, গৌর -নিতাই এর কথাও শোনা যায়। শাস্ত্র বিশ্বাস আর লোকাচারকে বড় করে না দেখে, মানুষকে বড় করে দেখে তারা। ফহেতপুরের দৌলত শাহের আখড়ায় শৈলেন হালদার নামে এক বাউল গায়ক এমন ধরনের সমন¦য়বাদী গান গেয়েছিলেন:
‘মক্কায় এলেন মোহাম্মদ/ মথুরাতে গেলে শ্যাম/ ইমাম খেলা খেলেন রসুল/লীলা খেলেন ঘনশ্যাম/ মা আয়েশা পাগল হলেন/ নবীর প্রেমে মদিনায়/ বাঁশির সুরে পাগল হয়ে/ রাধা চলে যমুনায়/ একই মায়ের দুটি সন্তান/হিন্দু আর মুসলমান।’
তাঁরা মানুষকে বড় করে দেখে বলে, শাস্ত্র-মূর্তি, মন্দির-মসজিদ, নামাজ-রোজা, আহ্নিক, তীর্থ-ব্রত বিষয়ে আস্থাশীল নয়। মৃত্যুর পর পুনরুত্থান, পরকাল বিষয়ে আস্থাশীল নয়। তবে গুরুর প্রতি প্রবলভাবে বিশ্বাসী। লালনের গানের মাধ্যমে তারা ঘোষণা দেয়:
‘ যেহি মুরশিদ সেহি রসুল,/ ইহাতে নয় কোন ভুল,/ খোদাও সে হয়/ এ কথা লালনে না কয়,/এ কথা দলিলে কয়।’
দীঘিরপাড়ার সালাউদ্দীন বলেন ফকিরগন জানান, গুরুর প্রতি ভক্তি নিষ্ঠা ছাড়া আল¬াহর নৈকট্য লাভ করা যায় না। গুরু ধ্যানের মাধ্যমে সাধনায় সিদ্ধি লাভ হয়। আবার গুরু রয়েছে কয়েক প্রকারের। যেমন: শিক্ষাগুরু ও দীক্ষাগুরু। শিক্ষাগুরু শিক্ষা দান করে আর দীক্ষাগুরু সাধনার পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য বীজমন্ত্র দান করেন। সাধন ভজনের প্রথম পর্ব হলো চাল পানি আর সিদ্ধির পর্যায়ের দীক্ষা হলো ভেক খেলাফত গ্রহণ। দৌলত শাহ খেলাফত নেন পিরোজপুরের আইনুদ্দীন শাহ’র কাছে, ঝড়ু শাহ নেন জোনাব আলী শার কাছে, জামাল শাহ নেন দীঘিরপাড়ার আরাফাত শাহর কাছে, সাহারবাটির মজিদ ফকির ও আলেয়া কবিয়ালী নেন সাহারবাটীর হারেজান ফকিরানীর কাছে। মালোপাড়ার শৈলেন হালদার চাল পানি নেন সাহেবপুরের নাসির শাহর কাছে আর আঁচলা নেন মেহেরপুরের জামাল শাহ’র কাছে। বাউলরা প্রাতিষ্ঠানিক রিচুয়ালস মানেন না। তথাপি কোন কোন ক্ষেত্রে তারাও রিচুয়াল তৈরী করেছেন। যেমন: দীঘির পাড়ার বরকত ফকির বললেন, চাল পানি নেয়ার সময় গুরু তার ভক্তের ডান হাতের তালুতে পঁাঁচটা চাল দেন এবং বাম হাতে এক গ¬াস পানি ধরিয়ে দেন। ভক্ত বিসমিল¬াহ বলে গুরুর নাম চাল ও পানি খেয়ে নেন। এরপর গুরু ভক্তকে পঁাঁচ কালেমা ও ওজিফা দেন। ওজিফা হলঃ
‘বিসমিল¬াহ /মুরশিদ আল¬াহ/ লাইলাহা ইল¬ালাহু।’
বাউলরা তাদের সাধন তত্ত্ব কিংবা গুরুমন্ত্র সম্পর্কে মুখ খুলতে চায় না। কারণ তারা বলেঃ
‘আপন ভজন কথা,/ না কহিবেক যথাতথা/ আপনি হইতে আপনি হইবেক সাবধান।’
মেহেরপুর ক্যাশ্ববপাড়ার জামাল শাহ জানালেন আর একটি চাল পানি নেওয়ার মন্ত্র:
‘চাল জল কাঁচা তুমি/ কাঁচা আমি/ কাঁচা আদিমূল/ কাঁচা সূর্য কাঁচা চন্দ্র/ কাঁচা মাথার চুল/ ভোগে ভাত/ পিপাসায় পানি/ আমার শরীর ঠান্ডা রাখবেন/ মা বরকতের জননী।’
গুরুমন্ত্র বা কালেমার মধ্যে স্থান ও গুরুভেদে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। পরবর্তীতে গুরু শিষ্যকে ধর্মের নিগূঢ় বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান দান করেন। বাউলদের ভাষায় একে চক্ষুদান করা বলা হয়। চালপানি গ্রহণের পর গুরুর নির্দেশিত রীতি পদ্ধতি অনুযায়ী শিষ্য গুরুকে সেজদা করে। গাংনীর সাহারবাটীর মজিদ ফকির ও তাঁর স্ত্রী আলেয়া ফকিরানী দুজনেই খিলকাধারী সাধু। তারা গত বছরের ৫-ভাদ্র খিলকা গ্রহণ করেছেন। আলেয়া গুরু ভক্তির মন্ত্রটা আমাকে শোনালেনঃ
‘মুরশিদ রতি,/ মুরশিদ পতি,/ মুরশিদ নয়ন গুরু,/ আমার মনবাঞ্ছা পূর্ণ কর,/ বাঞ্ছা কল্পতরু।/মুর্শিদ সত্য।’
তিনি বলেন ‘ সেজদা দেওয়ার সময় আমরা সবসময় গুরুর রূপ মনে মনে কল্পনা করি। কারণ বরজখ ছাড়া সেজদা হারাম। সাধু হওয়া এক জনমের কাজ নয়। গুরুরূপে নয়ন না থাকলে সাধক হওয়া যায় না।’ তাইতো তারা বলেঃ
গুরু রূপে নয়ন দেবে মন।/ গুরু বিনে কেউ নাই তোর আপন।।
গুরুবাদ মরমী সাধনার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ কেন তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সাহারবাটীর গোলাম মাস্টার তাঁর গুরু আজাদ সাঁই এর একটি পদ শোনালেন:
মুরশিদ বিনে আর কেই নাই জগতে।।
সাধলে চরণ করবে চেতন, নিয়ে যাবে অচিনপথে
যার আছে মনের বাসনা, মুরশিদ ধরে নিবা পথের বীণা
সে ছাড়া আর কেউ পারবেনা আঁধার নাশিতে।।
বিভিন্ন স্তর পেরিয়ে একজন বাউল সাধনায় সিদ্ধি লাভ করতে পারে। খেলাফত বা ভেক গ্রহণের পর বাউলের উচ্চতর স্তরে উপনীত হওয়ার দীক্ষানুষ্ঠান। খিলকা বা ভেক গ্রহণের আগে দীক্ষার্থী শিষ্যকে বিভিন্ন ধরনের নির্দেশনা দেন। এজন্য গুরু, দীক্ষার্থী এবং দীক্ষার্থীর সেবাদাসী একত্রে মিলিত হন। এ সময় অন্য কারো থাকার নিয়ম নেই। এ পর্যায়ে গুরু দীক্ষার্থীকে বীজমন্ত্র দেন এবং গূহ্য সাধন তত্ত্ব সম্পর্কে জ্ঞান দান করেন। দীক্ষাগুরু কিংবা তার অবর্তমানে গুরু-মা শিষ্যকে বীজমন্ত্র ও খিলকা দিতে পারেন। গুরু শিষ্যকে কানে কানে শোনায়ঃ
‘অর্ধ উর্দ্ধ ষোলতলা/ রতির ঘরে বসে কালা/ রতি যেন যায় না মারা/ দোহাই কালা, দোহাই কালা।’
মন্ত্র গ্রহণের পর শিষ্য গুরু প্রদত্ত মন্ত্রকে সার করে পথ চলে সারাজীবন। পরদিন দীক্ষর্থীকে নদীতে অথবা বাড়িতে ভাল করে স্নান করানো হয় এবং সামিয়ানার নীচে আনা হয়। অতঃপর দীক্ষার্থীর শরীর থেকে খুলে নেয়া হয় শরিয়তি পোশাক, তাকে পরানো হয় খিলকা নামের সেলাই বিহীন একখন্ড সাদা কাপড় ও তহবন। পরানো হয় ডোর কোপানি, লেঙ্গটি, খিলকা, পাগড়ি। ডোর কোপানি পরানোর অর্থ হলো কামের ঘরে কপাট মারা। গুরুমা পরান জপমালা বা তসবিহ। এসবই প্রতীকী অর্থে পরানো হয়। সবশেষে হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় ছবি ও পানির পাত্র। দীক্ষার্থীর সেবাদাসী বা সাধন সঙ্গীকেও পাড়বিহীন খিলকা পরিয়ে দেওয়া হয়। খিলকা নেওয়ার অর্থ হল ‘জেন্দা দেহে মরার বসন’ খিলকা পরিহিত সাধক যুগলকে দীক্ষাগুরু নিম্নস¦রে গুরুমন্ত্র ও কালেমা শোনান। খিলকা গ্রহণের পর জগত সংসারের কাছে তাদের চাওয়ার কিছু থাকে না। এরপর সাধনার্থী যুগলে চোখ সাদা রুমাল দিয়ে বেঁধে লালন সাঁইজি অথবা অন্য কোন সাধুর মাজার সাতবার প্রদক্ষিণ করতে হয়। এধরনের দৃশ্য দেখেছিলাম সাধক আজাদ শাহের আখড়াবাড়িতে যখন তাঁর পুত্র আব্দুল মজিদ এবং পুত্রবধূ আলেয়া খিলকা গ্রহণ করছিলেন। তাঁদের ভেক নেয়ার পর পর বড়শীবাড়িয়ার ছুরাত ফকির গান ধরলেনঃ
‘ কে তোমারে এ বেশ ভূষণে সাজাইল বলো শুনি/ জিন্দা দেহে মরার বসন খিলকাতাজ আর ডোর- কোপিনী।/ জিন্দা-মরার পোশাক পরা/ আপন ছুরত আপনি সারা/ ভবলোককে ধ্বংস করা/দেখি অসম্ভব করনি।।’
এ এক বেদনা বিধূর দৃশ্য। দুজন অসহায় নর-নারী-ভব সংসারের দাহ থেকে মুক্তির আশায় অন্তিম যাত্রায় সেজেছে। এ দৃশ্য দেখে বাউল-বৈদিক নির্বিশেষে, উপস্থিত সকলেই অশ্র“ ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। আবেগ ম-িত কন্ঠে ছুরাত ফকির আবার গাইল:
‘ সেজেছ সাজ ভালই-তরো/ মরে যদি বাঁচতে পারো/ লালন বলে যদি ফের/দুকূল হবে অপমানি।।’
গানের রেশ শেষ হতে না হতে শুরু হয় গ্রাম পরিক্রমা এবং ভিক্ষা সংগ্রহ। পেছনে থেকে সাধু, ভক্ত, অনুরাগীর দল। ভেক-ভিক্ষার সময়ও লালনের একটি গান গাওয়া হয়ঃ
‘আজ আমায় কৌপীন দে গো ভারতী গোসাঁই।/ কাঙাল হবো মেঙে খাব রাজরাজ্যের আর কার্য নাই।।/এমনি যদি নাহি পারি/ ভিক্ষার ছলে বলব হরি/এই বাসনা মনে করি/ বলিব না ঠাঁই অঠাঁই।’
ভিক্ষার শেষে আখ্ড়া বাড়ি ফিরে আসতে হয়। ভিক্ষালব্ধ চাল-ডাল রেঁধে সাধু গুরুদের খাওয়াতে হয়। লালনপন্থী সাধক ও গায়ক শৈলেন হালদারকে ভেক-খিলাফত প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানালেন,
‘ ভেক খিলাফতের দুটি ধারা আছে। একটি লালন শাহী ধারা আর অপরটি সতীমার ধারা। লালন শাহী ধারার খিলাফতে আঁচলা আর সতীমার ধারায় ভেকে আঁচলা ঝোলা।
প্রথাগত ও প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের আনুষ্ঠানিকতা ও আচার-আচরণের বিরুদ্ধে শাস্ত্র বহির্ভূত সম্প্রদায় হিসেবে বাউল সম্প্রদায়ের আবির্ভাব বলে পন্ডিতরা মনে করেন। বাউলরা মসজিদ-মন্দিরে যায় না আবার নামাজ-রোজা পূজা-আহ্নিকও করে না। এরা প্রতিষ্ঠান ও লোকাচার বিরোধী হলেও কিছু কিছু লোকাচার নিজেরাই তৈরী করে নিয়েছে। মেহেরপুর জেলাকে বাউল অধ্যুষিত অঞ্চল হিসেবে শনাক্ত করা হয়। কারণ এ জেলার প্রায় সব গ্রামেই বাউল ফকির ও আখড়া রয়েছে। মেহেরপুরের ফতেহপুর, যাবদপুর, ইছাখালি, রাজাপুর, গোভীপুর, বাড়িবাঁকা, পিরোজপুর, সিংহাটি, টেঙ্গারমাঠ, যাদুখালী এবং শ্যামপুর গাংনীর আকবপুর, সাহারবাটী, কসবা, ভাটপাড়া গ্রাম বাউলের সংখ্যা উলে¬খ করার মতো। ফতেহপুরের দৌলত শাহ’র আখড়া, টেঙ্গারমাঠের আতাহার শাহ’র আখড়া, যাদুখালীর লাফা সাধুর আখড়া, সাহারবাটীর গোলাম মাস্টারের আখড়া, আকুবপুরে মাতু ফকিরের আখড়া, গৌরীনগরের কাতব শাহ’র আখড়া, ভাটপাড়ার সাজদার ফকিরের আখড়া, কসবার শামসুল ফকিরের আখড়া, দীঘিরপাড়ার সালাউদ্দীন ফকিরের আখড়ায় প্রতিবছরে কয়েকটি সাধুসেবা অনুষ্ঠিত হয়। যাদবপুরের কলিমুদ্দীন শাহ’র আখড়ার নাম সারাদেশের মরমী সাধকরাই জানেন।
©somewhere in net ltd.
১|
১৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:১০
shiponblog বলেছেন: খুব ভালো লিখেছেন। আপনি মেহেরপুরের আর আমি চুয়াডাঙ্গা। লেখা পড়েই আপনার সাথে দেখা করার ইচছা করছে। ধন্যবাদ।