নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নবীন আনন্দ

আবদুল্লাহ আল আমিন

আবদুল্লাহ আল আমিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বপ্ন ও জাগরণের কবি কেতকী কুশারী ডাইসন

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:১১

আবদুল্লাহ আল আমিন

কবি, গবেষক ও অনুবাদক কেতকী কুশারী ডাইসনের জন্ম ১৯৪০ সালে মহানগর কলকাতায়, শৈশব কেটেছে তৎকালীন পূর্ববঙ্গের মেহেরপুরে। বড় হয়েছেন সাহিত্যিক পরিম-লে; বুদ্ধদেব বসু, অজিত দত্ত , সুধীন্দ্রনাথ, বিষ্ণু দে ছিলেন তার বাবার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। বাবা অবনী মোহন কুশারী ছিলেন অবিভক্ত নদীয়া জেলার মেহেরপুরের মহকুমা প্রশাসক । তিনি ১৯৪২-১৯৪৫ মেহেরপুরের মহকুমা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন,পরবর্তীতে স্বল্প সময়ের জন্য নীলফামারীতে। সম্প্রতি কলকাতার সিগনেট প্রেস বের করেছে তার কবিতাসমগ্র ১। ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫তারিখে বইটি প্রকাশের আগাম খবর চিঠি মারফত আমাকে জানিয়েছিলেন কবি স্বয়ং নিজে। তার কবিতা সম্পর্কে আমার অভিব্যক্তি আপনাদের সামনে তুলে ধরা হল:


‘কবিসত্তাই হলো আমার সব লেখার মূল চালিকাশক্তি’ এ কথা এক সাক্ষাৎকারে কেতকী দৃঢ়তা ও আন্তরিকতার সাথে বলেছিলেন। তিনি আরোও বলেছিলেন, আমি উপন্যাস বা নাটক যা-ই লিখি না কেন, কিংবা গবেষণায় নিয়োজিত থাকিনা কেন, সব সময়ই আমার ভেতরে কবিসত্তা কাজ করে। সাহিত্যের একাধিক শাখায় কাজ করার পরও তার কবি-পরিচয়টি যে নিস্প্রভ হয়ে যায়নি; তার প্রমাণ তিনি বারবার দিয়েছেন। তিন-চার বছর বয়স থেকেই তিনি কবিতা লেখেন। তিনি মনে করেন, লেখক হিসেবেই তার জন্ম, তাই তাকে লিখতে হবেই। লেখাই তার কাজ, লেখাই তার জীবন। তাই ক্রমাগতভাবে তিনি লিখে চলেছেন। নতুন অভিজ্ঞতাকে কীভাবে বাংলা ভাষায় মেলে ধরা যায়, সেটাকে তিনি নিজের ভেতর চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেছেন অনেক আগে থেকে এবং সেই চ্যালেঞ্জেই মগ্ন আছেন দীর্ঘ দিবস-রজনী। তার বল্কল, জলের করিডর ধরে, সবীজ পৃথিবী কবিতাগুলো পাঠ করলে বোঝা যাবে যে, এসব কবিতায় তিনি ভিন্ন ভূগোল ও ঋতুচক্র বয়ানের জন্য নতুন ভাষাশৈলী নির্মাণ করেছেন পরমনিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে। হয়তো সাহিত্যের সমালোচকরা এটা সেইভাবে খেয়াল করেনি। তার ‘শীতের শরৎ’ কবিতায় রয়েছে শীতের মধ্যে শরৎ খুঁজে পাওয়ার বিষয়টি। ‘ব্রাইটনে গ্রীস্মশেষ’ কবিতাটি পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। পূবেই উল্লেখ করেছি যে, কেতকী কুশারী ডাইসন ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্রী হিসেবে বিদ্যা ও বৈদগ্ধে ছিলেন অনন্য। কবি হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন প্রথম যৌবনেই। সাপ্তাহিক দেশ পত্রিকায় যখন তার কবিতা প্রকাশিত হতো,তরুণ পাঠকরা আগ্রহ ভরে তা পড়তো। দীর্ঘকাল ভারতবর্ষের বাইরে যুক্তরাজ্যে বসবাসের ফলে তার কবিতায় লেগেছে বিশ্বমুখিন ভাব-ভাবুকতার ছাপ। তিনি প্রাচ্য-প্রতীচ্য দুটোই নিয়েছেন, কোনটাই উপেক্ষা করেননি, তা সে যতই তুচ্ছ হোক। বাঙালির গ্রামীণ গানে-পালায়,সুফি-সহজিয়া-মরমি দর্শনে যে বিশ্বমুখিনতা রয়েছে, তার অনেক কিছুই তিনি নিয়েছেন অকাতরে। লালনের গানের সহজিয়া ভাবধারা তাকে মুগ্ধ করেছে নানাভাবে। তিনি মনে করেন, শাক্ত, বৈষ্ণব, সহজিয়া ভাবধারা- এসব তত্ত্ব যদি আমরা সঠিকভাবে আমাদের চিন্তন-মনন ও জীবনচর্যায় ব্যবহার করতে পারতাম , তাহলে হয়তো আমরা অনেক দূর যেতে পারতাম। কিন্তু ফান্ডামেন্টালিজম সব বিগড়ে দিয়েছে, আগে বাঙালির নিজস্ব মানবতন্ত্র ছিল, এখন আর সেটা নেই বললেই চলে।
কেতকীর শৈশব কেটেছে বর্তমান বাংলাদেশের মেহেরপুর শহরে। সেই কবে তিনি মেহেরপুর ছেড়েছেন কিন্তু তার স্মৃতির শহরটিকে আজও বুকের মধ্যে আগলে রেখেছেন। মহকুমা প্রশাসকের বাংলোয় খুব ভোরে তার ঘুম ভাঙতো। পাখির ডাক শুনতে শুনতে জেগে উঠে দেখতেন, - ‘ প্রতি সকালে উঠে আমার মনে হতো যে জগৎটা পুনর্জন্ম লাভ করেছে।’ সম্প্রতি প্রকাশিত প্রবন্ধ সংকলন ‘কাছে দূরের কক্ষপথে’র বিভিন্ন নিবন্ধেও তিনি মেহেরপুরের স্মৃতিচারণ করেছেন। সব কবিই নিজস্ব স্বপ্ন, কল্পনা, আবেগ, চৈতন্য, মনের মাধুরী মিশিয়ে কবিতার শরীর নির্মাণ করেন, কেতকীও তাই করেছেন। ১৯৭৭ সালে প্রকাশিত প্রথম কবিতা গ্রন্থ ‘বল্কল’ এ তিনি পরিশীলিত রুচি, বোধের সঙ্গে আবেগের মিলন ঘটিয়েছেন দক্ষতার সঙ্গে। বলা বাহুল্য হবে না যে, তিরিশি কবিদের আধুনিকতাকে মর্মমূলে ধারণ করে আধুনিক বাংলা কবিতার যাত্রা শুরু। পঞ্চকবিদের মধ্যে জীবনানন্দের পর সবচেয়ে প্রভাবশালী ও বহুমাত্রিকতার অধিকারী ছিলেন বুদ্ধদেব বসু। এরপর যার নাম আসে , তিনি হলেন সুধীন্দ্রনাথ দত্ত। বুদ্ধদেবের সচ্ছল, স্মার্ট কাব্যভাষা এবং সুধীনের ভারি শব্দের নিরাবেগ প্রকাশ,মিথকথন আধুনিক কবিদের টেনেছিল দারুণভাবে। কেতকীর কবিতা পাঠ করলে বুদ্ধদেব ও সুধীন্দ্রনাথের সঙ্গে বিস্ময়কর মিল খুঁজে পাওয়া যায়। তার কবিতায় হৃদয় নয়,উদ্দীপ্ত হয় বোধ। ‘অ্যাকসিলরেশন’ কবিতায় কেতকী লিখেছেন, ‘আজ চক্রবৃদ্ধিহারে পূর্ণতম হলো জাগরণ / শ্বেত ময়ূরের মতো জ্যোৎ¯œা নেমে এসেছে মাটিতে।’ এ কবিতায় তিনি আধুনিক মানুষের আবেগ ও দৃষ্টিভঙ্গি, দুটোই নিয়েছেন। অক্সফোর্ড কিংবা কিডলিংটনের কোনো এক বাংলোয় বসে দিবস-রজনী তিনি স্মৃতির যমুনায় হাবুডুবু খান। বকুলের গন্ধেভরা ঋতুতে তিনি দেখতে পান, তুষারকণা জানালার কাচে জ্যামিতিক চিত্র আঁকছে। ‘নববর্ষ’ কবিতায় তার হৃদয় উৎসারিত প্রেমের তুলিতে আঁকা প্রেমিকের মনোহরণ রূপটি বড় মধুর, বড় আকর্ষণীয়।‘ মদের মতো পাগল করা ছেলে, / পদাবলীর সখার মতো কালো’, সব উজাড় করে দিয়ে কেতকী কুশারী তাঁকে ভালবেসেছিলেন। ১৯৮০সালে প্রকাশিত ‘ সবীজ পৃথিবী’তে কবির ভাবোচ্ছ্বাস আর আবেগময়তার সঙ্গে বিদেশের গাছপালা, পত্র-পুষ্প-পল্লবের রূপ-রঙ-গন্ধ ও গঠন মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে। ‘হানিসাকল’ কবিতায় কবি ছেলেবেলার মতো মিষ্টি ছড়া কেটে বলেছেন,‘ বাপের বাড়ি লেবুপাতা, / শ্বশুরবাড়ির দই, / আমের বনে হাওয়ার আমেজ, / গন্ধ-আতপ কই ?’ চাঁদের আলোয় আকাশ, নদী, সমুদ্রসৈকত মোহনীয় হয়ে ওঠে সব কবির কাছে, একদিন সমুদ্রসৈকত অপরূপ রূপে ধরা দেয় কেতকীর কাছে, তিনি লেখেন, ‘ দেখেছি ভাস্বর / অনন্তশয়নে বিষ্ণু, ব্রহ্মা--আংটির একটি নীলা।’ ( শীতে শরৎ)।
কেম্পটাউনে হেরিং মাছ কিনতে গিয়ে কবির মনে পড়ে যায় বাঙালির চিরায়ত রন্ধন ঐতিহ্যের কথা, তার মায়ের রান্নাঘরের স্মৃতি। স্মৃতিকাতর কবি লেখেন : ‘ মা গো , তোমার শিলনোড়া বেয়ে এখনও হলুদজল পড়ে, / উনুনে উথলে-উঠা ডালের ছোপ, / খুরিতে পাঁফোড়ন, কালো জিরে’। কবিতায় আঁকা ছবিটি শিলনোড়া, খুরিতে পাঁচফোড়ন, ডালের ছোপের মতো একবারেই আটপৌরে, সাদামাটা কিংবা সদ্য গাছ থেকে তোলা কাঁচামরিচের মতোই সতেজ ও সজীব। ১৯৮১ সালে প্রকাশিত হয় কেতকী কুশারী ডাইসনের তৃতীয় কবিতা-গ্রন্থ ‘জলের করিডর ধরে’। ‘ যদি হাজার কিলোমিটার হাঁটতে হয়, কবিতায় কবি গভীর অরণ্যে দীর্ঘপথ হাঁটবার জন্য সহযাত্রী বন্ধুদের উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করেছেন। তিনি লিখেছেন : ‘ লাল ফুটবলের মতো যে-অস্তসূর্যটাকে / লাফাতে লাফাতে তালবনে নেমে যেতে দেখেছি, / উলটো দিকের মাঠে দৌড়তে দৌড়তে / আবার বর্তুল তাকেই খপ করে ধরে ফেলবো’। তার বিশ্বাস অরণ্যের শেষপ্রান্তে পৌছুতে পারলে আছে সব প্রতিকারহীন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। কবি মাঝে মাঝে চিরচেনা প্রতিবেশেও খুঁজে পেয়েছেন অচেনা-অজানা দেশের খনি, অজ্ঞাত ভাবনার সূত্র। তারপর অনেক পথ হেঁটে সম্ভবত পশ্চিমবঙ্গের কোন এক ছায়াঢাঁকা গ্রামের কাছে তিনি ও তার সঙ্গীরা পৌঁছলেন। হঠাৎ তার খেয়াল হলো জলের বোতল খালি। সে গ্রামে তিনি দেখলেন শৈবদের আড্ডার পাশাপাশি বৈষ্ণবদের আশ্রম। সেই আশ্রমে এক শীর্ণ, হাস্যোজ্জ্বল , তাম্বুলরাঙা এক বৈষ্ণবীর সাক্ষাৎ পেলেন তারা। নদীর জল পানযোগ্য নয় জেনে, তিনি বৈষ্ণবীকে জল ফুটিয়ে দিতে বললেন। বৈষ্ণবী শুকনো ডালপালা জ্বেলে জল ফুটিয়ে দিলেন এবং ব্যাখ্যা করে শোনালেন দেহাত্মবাদের নিগূঢ় তত্ত্ব যা রসিকচিত্তে ভাবরসের জন্ম দেয়। বোষ্টমির ভাষায় কেতকী বলছেন, ‘এতক্ষণে জীবগুলো নাশ হইলো, /চক্ষে যাদের যায় না দেখন, / জলের দেহে বিলীন ছিলেন আত্মাগুলি, / ভবে যেমন অরূপরতন।’ ( অরূপরতন) এ কবিতাটি কবি বৈরাগ্যের ধূপছায়ায় মগ্ন, প্রান্তিক ও সামাজিকভাবে দীর্ণ মানুষগুলির উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেন। ১৯৯২ সালে প্রকাশিত ‘ কথা বলতে দাও’ কবিতা-গ্রন্থে কেতকী কুশারীর যাপিতজীবনের প্রসন্নতা ও হার্দিক অনুভূতি মিশে আছে গভীরভাবে। ‘ গল্প নয়’ কবিতায় কবি বারাণসীর এক মাতৃহারা কিশোরীর জীবনচিত্র এঁকেছেন গভীর মমতায় ও ¯িœগ্ধ দরদে। উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, কেতকীর মা বেড়ে ওঠেন বারাণসীতে এবং সেখানে তিনি তাঁন কাজিনদের সঙ্গে হিন্দি মিডিয়াম শিক্ষায়তনে পড়াশুনা করেন। সেতার, ভজন ও গান্ধীবাদ ভালবাসতে শিখেছিলেন তারা বারাণসীতেই।
১৯৯৯ সালে প্রকাশিত হয় কেতকী কুশারীর ‘ জাদুকর প্রেম, জাদুকর মৃত্যু’, এ কবিতাগ্রন্থে এমন এক কবিকে আমরা পাই যিনি নিরন্তর সাধনা, অধ্যবসায়, নিষ্ঠার মধ্য দিয়ে আয়ত্ত করে নেন মহৎ কবির অভিধা। সবল, সতেজ ও স্বতন্ত্র কাব্যভাষায় নির্মাণ করেন গ্রন্থভুক্ত কবিতাসমূহের শরীর। এ কাব্যে তার যে-স্বাতন্ত্র্য তা কোনো আকস্মিক নয়, ১৯৭৭ সালে প্রকাশিত ‘বল্কলেই সেই বার্তা পৌছে দিয়েছেন প্রবলভাবে। কবিমাত্রই এক নিঃসঙ্গ পরিব্রাজক, যাকে একলব্যের মতোই দৃঢ় সংকল্প ও গভীর আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নিঃসঙ্গতার শরে রক্তাক্ত হয়ে পথ চলতে হয়। শুরু থেকেই কেতকী একলব্যের মতো কঠিন পথটিই বেছে নিয়েছেন। ‘ জাদুকর প্রেম, জাদুকর মৃত্যু’তে বহতা নদীর মতোই স্বচ্ছন্দ, স্বতঃস্ফূর্ত ও অকুণ্ঠ কবির চেতনা, ভাব-ভাষা, বিশ্বাস, আবেগের গতিবেগ। জ্যোৎ¯œায় ভেসে যাওয়া রাতে এক গায়কের গান শুনে কবি চাঁদকে বলছেন,‘ সুরের জাল পাতো, নামাও, নাচাও। / মানুষের জালে যারা মরতে বসেছে তোমার জালে তারা দুদ- বাচুক।’ তার মনে হয়েছে, গানের সুরে পাথর গলে,গান শুনে বর্বর ঘাসে ধরে বীজ। ‘সূর্য চলেছে দক্ষিণায়নে’ কবিতায় সূর্যদেব কবিকে পরামর্শ দিয়ে বলছেন, ‘ থতমত খাবিনা, ভয় পাবি না পৃথিবীতে কাউকে, / যে কটা দিন পারিস ¯্রফে জ্বলে যাবি।’ কবির প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, তিন-চার বছর বয়স থেকে তিনি কবিতা লিখছেন। সেই হিসেবে ধরে নেয়া যায় যে, কেতকী কুশারীর কাব্যযাত্রা শুরু গত শতকের চল্লিশের দশকের শেষার্ধ থেকে। তারপর থেকে সারাক্ষণ লিখছেন আর লিখছেন। সাত দশকের সাহিত্য-পরিক্রমায় বহুমাত্রিক সৃজন কুশলতা দিয়ে সাহিত্যের সব শাখা ঋদ্ধ করেছেন তিনি,তারপরও কবিতার সঙ্গে তার নিবিড় সম্পর্ক।
বিলেতে এস্টাবলিশমেন্টের জন্য লেখালেখি তিনি করেন না, পেশা ও ব্রত হিসেবে বেছে নিয়েছেন লেখকজীবন। কেবলমাত্র বই লেখার জন্য তিনি ১৯৮৫ সালে আর্জেন্টিনায় গিয়েছেন, গবেষণা করেছেন এবং ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর ওপর দুটো বই লিখেছেন। তার লেখা ‘ইন ইয়োর ব্লোসোমিং ফ্লাওয়ার- গার্ডেন: রবীন্দ্রনাথ টেগোর এন্ড ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো’ ল্যাটিন আমেরিকার প্রচুর পাঠক পড়েছে। এটি স্পেনিশ ভাষায় অনূদিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি সারাক্ষণ কেবল লিখছেন আর লিখছেন, লেখার শেষ নেই তার, কাজেরও শেষ নেই। ভেবে বিস্মিত হতে হয় যে, এত বড়মাপের লেখক হয়েও তিনি কী-না কোলকাতার লিটলম্যাগের জন্যও লেখা পাঠাচ্ছেন। বিভিন্ন ভাষার কবিতা অনুবাদের কাজও করছেন তিনি। রবীন্দ্রনাথ ও বুদ্ধদেব বসুর কবিতা ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন, আবার অ্যাংলো-স্যাক্সন কবিতা বাংলায় রূপান্তর করেছেন। অনুবাদ করেছেন বাংলা থেকে ইংরেজিতে, ইংরেজি থেকে বাংলায় এবং স্পেনিশ থেকেও কিছু করেছেন। ব্রিটিশ কবিদের মধ্যে ডি এম টোমাস, ডেভিড কন্সটান্টাইন, আর্জেন্টাইন কবি কিম ট্যাপলিন ,রাফায়েল ফেলিপে ওতেরিনিয়োসহ বেশ কজন কবির কবিতা।স্লোভেনিয়ায় এক পোয়েট্রি ওয়ার্কশপে ফিনল্যান্ডের কবিদের ইংরেজিতে অনুবাদ করা কবিতা তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে বুঝে নিয়ে কেতকী পুনরায় ইংরেজিতে অনুবাদ করেন।
১৯৬০ সালে মাত্র কুড়ি বছর বয়সে দেশ ছাড়ার সময় বাংলা ভাষা-সংস্কৃতির বুনিয়াদটা সঙ্গে করে নিয়ে যান তিনি, আর এ কারণে ব্যস্ততার মধ্যেও ভুলে যাননি বাঙালি, বাংলাদেশ ও বাংলা সাহিত্য । আমাকে লেখা এক চিঠিতে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে তিনি লন্ডনে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে যোগদান করেন ১৯৭১ এ। সে সময় তিনি অক্সফোর্ডে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট করছেন। তিনি পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি লেখকদের যেমন জেনেেেছন ও পড়েছেন, তেমনই বাংলাদেশের আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, শওকত আলীও পড়েছেন। গভীর সম্পর্ক ও যোগাযোগ ছিল শামসুর রাহমান, রফিক আজাদের সঙ্গে, আজও নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে বদরুদ্দীন উমর, হাসান আজিজুল হক, গোলাম মুরশিদ, নির্মলেন্দু গুণ, সেলিনা হোসেন, মহাদেব সাহা, বেলাল চৌধুরী, দিলারা হাসেম, তসলিমা নাসরিনের সঙ্গে। বাংলাদেশের আধুনিক কবিতা সম্পর্কেও তার বেশ জানাশুনা রয়েছে। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের কবিতায় দেশপ্রেম ও আবেগের প্রাবল্য বেশি, এ প্রবণতাকে তিনি কবিতার কিছুটা বিপজ্জনক মনে করেছেন। কেতকী কুশারী ডাইসনের শেকড় দুটো সংস্কৃতির গভীরে প্রোথিত, একারণে তিনি বাংলার মাটি ও জলহাওয়া যেমন বোঝেন, তেমনই উপলব্ধি করতে পারেন বিলেতের হিম-তুষার আবহাওয়া। তিনি মনে করেন সংস্কৃতির আদান-প্রদান ও মিশ্রণের মধ্য দিয়ে একজন লেখকের লেখা সমৃদ্ধ হয়, ভাষার মধ্যে শেকড় না থাকলে কবিতা লেখা হয়না, তিনি নিজেকে একজন শেকড়বদ্ধ লেখক বলে মনে করেন। শেকড়বদ্ধ লেখক বলে তিনি আমার মতো এক ব্রাত্য লেখকের সঙ্গেও যোগাযোগ রেখেছেন চিঠিপত্রের মাধ্যমে।




মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.