নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নবীন আনন্দ

আবদুল্লাহ আল আমিন

আবদুল্লাহ আল আমিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ও আগামী দিনের বাংলাদেশ

১০ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২৭



আবদুল্লাহ আল আমিন
মানবহিতৈষী, রাষ্ট্রদরদি, সংস্কৃতিমনস্ক এক মহানায়কের নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। ঝঞ্ঝা ক্ষুব্ধ, বৈরী প্রহরে উজান ¯্রােতে নৌকো চালানো এক দুঃসাহসী মাঝির নামও শেখ মুজিব। ‘আকাশে কাতর আঁখি’ তুলে বাংলার ‘ঝরা পালকের’ বেদনায় বিপন্ন বিষণœ হওয়া এক মানবদরদি কবির নাম বোধ হয়, শেখ মুজিবুর রহমান। রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দের মতো এই বাঙালি ভাবুকের অন্তরাত্মায়ও নিশিদিন ধ্বনিত হতো, ‘ আমি কবি,- সেই কবি,/ আকাশে কাতর আঁখি তুলি হেরি ঝরা পালকের ছবি !’ তিনি ছিলেন প্রজাপ্রেমী, লোকদরদি,ভাবুক ও মানবমুক্তির স্বপ্ন দেখা- দেখানো এক সংগ্রামী জননায়ক। তার নেতৃত্বে পরাধীন বাঙালি জাতি পেয়েছে মুক্তির স্বাদ । হাজার বছরের শোষণ- নিপীড়নের অবসান ঘটিয়ে বেদনাপীড়িত বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন তিনিই। ‘১৯৭১ এর মার্চে শেখ মুজিব সৃষ্টি করেছিলেন শুভ দাবানল, শুভ প্লাবন, শুভ অগ্নিগিরি, নতুন ভাবে সৃষ্টি করে ছিলেন বাঙালি মুসলমানকে যার ফলে আমরা স্বাধীন হয়েছিলাম।’(হুমায়ুন আজাদ, আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২০০৬। পৃষ্ঠা : ২৫।)
একটি ভূখ- ও তার ভাষা-সংস্কৃতি-ঐতিহ্যকে ঘিরে যে সংগ্রাম করা যায় ও স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা যায় এমন দৃষ্টান্ত বিশ্বে তেমন পাওয়া যাবে না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক্ষেত্রে এক বিরল জননায়ক। প-িত জওহরলাল নেহেরু পাশ্চাত্য মডেলের সেক্যুলার গণতান্ত্রিক ভারতের কথা বলতে গিয়ে মূলত সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু ভারতের স্বপ্ন-আকাক্সক্ষা প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। মহাত্মা গান্ধীর ‘রামরাজ্য’ আসলে হিন্দুর ভারতবর্ষ ছাড়া আর কিছুই নয়। মাস মবিলাইজেশনের মাধ্যমে রামরাজ্যের স্বপ্ন দেখাতে গিয়ে এক অর্থে তিনি সাম্প্রদায়িক রাজনীতি ও হিন্দু জাতীয়তাবাদের পাটাতনটা মজবুত করে গেছেন। তবে তিনি কংগ্রেসকে অভিজাততন্ত্রের চক্রব্যূহ থেকে মুক্ত করে আমজনতার কাছাকাছি নিয়ে এসেছিলেন। আর বাঙালি মুসলমান এলিটরাও কম সাম্প্রদায়িক ছিলেন না। তারাও ছিলেন একাধারে গণবিরোধী, ঘোরতর সাম্প্রদায়িক ও প্রতিক্রিয়াশীল। তাদের রক্তে ও মজ্জায় ছিল উগ্র সাম্প্রদায়িকতা তথা পরধর্ম বিদ্বেষ। স্যার সলিমুল্লাহ থেকে শেরেবাংলা, সোহরাওয়ার্দি, খাজা নাজিমউদ্দিন , মোহাম্মদ আলী, নুরুল আমিন পর্যন্ত মুসলমান অভিজাতরা প্রায় সবাই কেবল বাঙালি মুসলমানের স্বার্থ প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই-সংগ্রাম করে গেছেন। তাদের মনস্তত্ত্বে বাঙালি হিন্দু বা অন্য ধর্মাবলম্বীর জায়গা হয়নি। লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলে পূর্ববঙ্গের হিন্দুদের কী হবে, তা একবারের জন্য শেরে বাংলাও ভাবেননি, সোহরাওয়ার্দিও না। মওলানা ভাষানীর ভাবনাও আবর্তিত হয়েছে ওই চল্লিশ সালের লাহোর প্রস্তাবকে ঘিরে। কেবল বঙ্গবন্ধু এক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। একমাত্র তিনিই হিন্দু-মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, আদিবাসীসহ জাতিধর্ম নির্বিশেষে সকল বাঙালির সামগ্রিক মুক্তির কথা বলে গেছেন। তার ভাবনা ও ভাবুকতা জুড়ে ছিল কেবল বাঙালি এবং আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি- হাজার বছরের বেদনাপীড়িত সোনার বাংলা। মনুষ্যত্ব ও মানবিকতার উজ্জ্বল আলোয় উদ্ভাসিত এই মহানপুরুষ সারাজীবন সকল ধরণের ভেদবুদ্ধি ও সংকীর্ণতা রুখতে চেয়েছেন প্রবলভাবে । তিনি এমন এক মানবদরদি, হৃদয়বান বাঙালি ছিলেন, যিনি একটি বাঙালিকে অবিশ্বাস করেননি, শত্রু ভাবেননি। রবীন্দ্রনাথ বলে গেছেন,‘ মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ’, বঙ্গবন্ধু এই আপ্তবাক্য অমৃত্যু অক্ষরে অক্ষরে পালন করে গেছেন। অথচ কি আশ্চর্য, বাঙালি নামের একদল বিপথগামী নিকৃষ্ট কীট তাকে ও তার পরিবারবর্গকে হত্যা করেছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকা- কেবলই একটি হত্যাকা- নয়, মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে জেগে ওঠা সাড়ে সাত কোটি মানুষের স্বপ্নগুলো হত্যা করার চক্রান্তও বটে। যারা বাংলাদেশকে স্বাধীন, সচ্ছল ও মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চায়নি, তারাই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে। যারা বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক মানবিকতা, শোষণহীন রাষ্ট্র বিনির্মাণের স্বপ্ন, একাত্তরের ভাবকল্পের সাথে একমত হতে পারেনি, তারাই বঙ্গবন্ধু তার পরিবারবর্গকে হত্যা করেছে নিষ্ঠুরভাবে। যারা ১৯৭২-এর সংবিধানের চার মূলনীতি বিশেষত বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতা মেনে নিতে পারেনি, তারাই এই নৃশংস হত্যাকা- ঘটিয়েছে।
বঙ্গবন্ধু সারা জীবন সাধনা করেছেন গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, শোষণমুক্ত আর মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন বাংলাদেশ নির্মাণের। ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতি, পাকিস্তানি রাষ্ট্রযন্ত্রের নিষ্ঠুরতা ও লুটপাট আর লুম্পেন অর্থনীতির বিপরীতে তিনি লড়াই করেছেন সাম্য ও ন্যায়ানুগ সমাজ গড়ার জন্য । তার সমাজ ও রাষ্ট্রচিন্তার মৌলভিত্তি ছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদ, অসাম্প্রদায়িকতা, সামাজিক ন্যায়বিচার ও শোষণমুক্তি। চারিদিকে সাম্প্রদায়িক শক্তির আষ্ফালন, জঙ্গিবাদের উত্থান, মানবিক বিপর্যয়,অসহিষ্ণুতা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, হানাহানি, অবক্ষয়, বিচ্যুতি দেখে মাঝে মাঝে নিজের ভেতরে প্রশ্ন জাগে, বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা কি ব্যর্থ হয়েছে ? তবে কি তার সারা জীবনের আত্মত্যাগ বৃথা গেছে ? সেটা বোধ হয় বলা যাবে না । কারণ, শ্রীমদ্ভাগবতগীতায় বলা হয়েছে, ‘ অজো নিত্য শাশ্বতহয়ং পুরানো,ন হন্যতে হন্যমানে শরীর ’- আত্মা বা চেতনা অবিনশ্বর ও পুরানো, শরীরকে হনন করা হলেও আত্মা বা চেতনার মৃত্যু হয় না। বঙ্গবন্ধুর চেতনাও অবিনশ্বর; মনে রাখতে তিনি আমাদের চেতনার বাতিঘর, আসল ঠিকানা, বাংলাদেশকে এগোতে হলে তাকে নিয়েই এগোতে হবে। বঙ্কিম-মাইকেল- রবীন্দ্রনাথ-নজরুল, ত্রিশের দশকের পঞ্চকবি, শামসুর রাহমান, সৈয়দ শামসুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস চিন্তা করা যায় না, তেমনই বঙ্গবন্ধুকে বাদ দিয়ে আগামী দিনের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণ করা যাবে না।
এ কথা ভেবে আনন্দিত হই যে, ৭৫ পরবর্তী বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী রাজনীতির কালোমেঘ অনেকেটাই কেটে গেছে। ৭৫-উত্তর সামরিক একনায়করা বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলতে চেয়েছে; চেয়েছিল তাকে ইতিহাসের খলনায়ক বানাতে, কিন্তু তাদের সেই ষড়যন্ত্র সফল হয়নি; বঙ্গবন্ধু আজ সারা বিশ্বের বাঙালি তরুণদের আইকন ও চেতনার বাতিঘরে পরিণত হয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, রামমোহন, বিদ্যাসাগর, , শেরে বাংলা, সোহরাওয়ার্দি, ভাষানীকে ছাপিয়ে তিনি সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, তিনিই বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের মহানায়ক।
স্বাধীনতার পর সাড়ে চার দশকে বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক মুক্তির স্বপ্ন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে আমাদের সাফল্য কতটুকু তা বিশ্লেষণ এবং আগামী দিনের সচ্ছল, আলোকিত, ভবিষ্যৎমুখী, আধুনিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার গ্রহণের শ্রেষ্ঠ সময় বোধ হয়, এখনই। একজন মানবদরদি নেতা হিসেবে, প্রজাপ্রেমী রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে বঙ্গবন্ধু জীবনের প্রতিটি পর্বে বাঙালির সার্বিক মুক্তির কথা চিন্তা করেছেন। ১৯৭১ সালে ৫২-তম জন্মদিনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমি জন্মদিন পালন করি না, আমার জন্মদিনে মোমের বাতি জ্বালি না, কেকও কাটি না। এদেশে মানুষের নিরাপত্তা নেই। অন্যের খেয়ালে যে কোনো মুহূর্তে তাদের মৃত্যু হতে পারে। আমি জনগণেরই একজন। আমার জন্মদিনই কী, আর মৃত্যুদিনই কী ? আমার জনগণের জন্যই আমার জীবন ও মৃত্যু।’ এ কথার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়, বঙ্গবন্ধু কত বড় মাপের নেতা ও মহৎ হৃদয়ের মানুষ ছিলেন। বাংলার গরিব দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো ও বাঙালির স্বপ্নলালিত সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠাই ছিল তার জীবনের ব্রত। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা- এই মৌলিক অধিকারগুলো পূরণের মাধ্যমে জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন, বেকারত্ব দূরীকরণ, দারিদ্র্য বিমোচন ইত্যাদি ভাবনাই তার চিত্তলোককে আন্দোলিত করতো প্রতিনিয়ত। অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ সোনার বাংলার ভাবকল্পই তিনি সারা জীবন বক্তৃতা-বিবৃতির মাধ্যমে প্রচার করে গেছেন। তিনি বলতেন, ‘এ স্বাধীনতা আমার ব্যর্থ হয়ে যাবে যদি আমার বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত না পায়। এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি বাংলার মা- বোনেরা কাপড় না পায়। এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি এদেশের মানুষ যারা আমার যুবক শ্রেণি আছে তারা চাকরি না পায় বা কাজ না পায়’। ( আতিউর রহমান, শেখ মুজিব বাংলাদেশের আরেক নাম, ২০০৯, দীপ্তি প্রকাশনী, ঢাকা।)
সুখ-স্বস্তি, আরাম-আয়েশ, পারিবারিক জীবন, বিত্ত-বৈভবের মোহ ত্যাগ করে বঙ্গবন্ধু সারাজীবন বাঙালির অধিকার ও মুক্তির জন্য কাজ করে গেছেন। তিনি তার ত্যাগ, সংগ্রাম, দেশপ্রেম দিয়ে আমাদের চেতনার পাটাতনটা মজবুত করে গেছেন। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন,বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভুত্থান, সত্তরের সাধারণ নির্বাচন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ- এদেশের মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণের প্রতিটি সংগ্রামেই তার ছিল সরব ও উজ্জ্বল উপস্থিতি। এই পরাধীন জনপদের ভেতর থেকে কৃষক চেয়েছে তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য, শ্রমিক চেয়েছে তার শ্রমের যথার্থ মূল্য ও সামাজিক নিরাপত্তা, নাগরিক মধ্যবিত্ত চেয়েছে চাকরি, চিন্তা-মত প্রকাশের স্বাধীনতা, উদীয়মান বুর্জোয়া চেয়েছে তার পুঁজির বিস্তার ও বিকাশ। বঙ্গবন্ধু সবার কথা শুনেছেন ও ভেবেছেন এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদের পাটাতনে সব শ্রেণিকে শামিল ও ঐক্যবদ্ধ করে নির্মাণ করে গেছেন নতুন রাষ্ট্র- বাংলাদেশ। তাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুই সব; অনাগত কালের ইতিহাসেও তার নাম সোনার হরফে লেখা থাকবে। অন্নদাশঙ্কর রায় যথার্থই বলেছেন, ‘ যতকাল রবে পদ্মা মেঘনা গৌরী যমুনা বহমান / ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান। ’
সাতচল্লিশে পাকিস্তান সৃষ্টির পরেই নবসৃষ্ট রাষ্ট্রের মালিকানা চলে যায় জনগণের পরিবর্তে সামরিক- বেসামরিক আমলা, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি ও দালাল-পুঁজির মালিকদের দখলে। শুরু হয় পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানি এলিটদের বৈষম্যমূলক আচরণ। সর্বক্ষেত্রে বাঙালিরা উপেক্ষিত হতে থাকে। দিনে দিনে দু অঞ্চলের মধ্যে গড়ে ওঠে বৈষম্যের পাহাড়। চাল, আটা তেলের দাম পশ্চিম পাকিস্তানের তুলনায় পূর্ব পাকিস্তানে ছিল দ্বিগুণ। বৈদেশিক সাহায্যের আশি ভাগই ব্যয় হতো পশ্চিম পাকিস্তানের উন্নয়নে। কেন্দ্রীয় সরকার ও সামরিক বিভাগের চাকরির নব্বই ভাগই ছিল পশ্চিমাদের দখলে। সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের শীর্ষে ছিলেন তারাই। এমনকি বাঙালির অগ্রসর সাংস্কৃতিক চিন্তা ও ঐতিহ্যেরওপর নেমে আসে প্রচ- আঘাত। রবীন্দ্রসঙ্গীত চর্চা বন্ধ করে দেয়া হয়, নজরুলকে খ-িত ও বিকৃতভাবে উপস্থাপনের অপচেষ্টা চলতে থাকে। বাংলা ভাষাকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার জন্যে যুক্তিহীনভাবে চালানো হয় নির্মম আঘাত। বঙ্গবন্ধু বাঙালির স্বার্থবিরোধী সকল ষড়যন্ত্র জনগণকে নিয়ে রুখে দাঁড়ান। পাকিস্তানি এলিটদের বাঙালি-বিরোধী সব ষড়যন্ত্র, অত্যাচার ও শোষণ রুখে দাড়ানোর লক্ষে ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ৬-দফা দাবি পেশ করেন। এই ৬-দফা দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন করতে গেলে বঙ্গবন্ধুর জীবনে নেমে আসে নিষ্ঠুর নিপীড়ন। কিন্তু কোন নিপীড়ন তাকে সত্যচ্যুত, ভীত-সন্ত্রস্ত করতে পারেনি। মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েও তিনি অন্যায়ের সাথে, মিথ্যার সাথে আপস করেননি। পাকিস্তানি এলিটদের মধ্যযুগীয় বর্বরতা ও অমানবিকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন দৃঢ়ভাবে, স্পষ্ট ভাষায়। বাঙালির অধিকারের প্রশ্নে তিনি ছিলেন নিঃশঙ্ক, অবিচল ও ঋজু। তিনি সত্যিকারের বীর ছিলেন, তাই বীরোচিত ভাষায় তিনি বলতে পেরেছেন, ‘ ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার সময় আমি বলবো, আমি বাঙালি, বাংলা আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা।’ কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক, ভাবুক ও আমাদের স্বপ্নবান পূর্বপুরুষরা যে চিরায়ত বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন, তিনিও সেই বাংলার স্বপ্ন দেখেছেন অন্তরের আলো ঢেলে দিয়ে। বাংলার স্বপ্ন বুকের গহনে ধারণ করেই এই স্বপ্ন-কাতর মানুষটি যৌবনের সোনালি দিনগুলো কাটিয়েছেন কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। বাঙালির জন্য গভীর ভালবাসায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ফাঁসির মঞ্চেও গেয়েছেন বাঙালির জয়গান। বাংলার প্রতি তার ভালবাসা ও বিশ্বাস এতই তীব্র ও গভীর ছিল যে, উত্তাল মার্চের ৪ তারিখেই তিনি ঘোষণা করেন রবীন্দ্রনাথের ‘ আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটি হবে আমাদের জাতীয় সঙ্গীত। একাত্তরের উত্তাল ও অগ্নিঝরা মার্চে বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠেন বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের মহানায়ক আর সমগ্র বাঙালি হয়ে ওঠে তার দ্বিতীয় সত্তা।
মুক্তির মহান দিশারী বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ও রাজনৈতিক দর্শনের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায় বাঙালির সার্বিক মুক্তির পথ । তিনি বাংলা ও বাঙালিকে এত ভালবাসতেন যে, বাংলার মানুষের ভালবাসার ঋণ রক্ত দিয়ে শোধ করে গেছেন। ত্রিশ লক্ষ শহীদের পবিত্র রক্তের সঙ্গে তার রক্তও মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে। শোষণহীন সমাজ গড়ার স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে বাংলার নিপীড়িত-বঞ্চিত- মেহনতি মানুষের কথা ভেবে ১৯৭৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘ বিশ্ব দুই শিবিরে বিভক্ত, শোষক আর শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে।’ তিনি সব সময় তার ভাষণে-আলাপে সাধারণ মানুষের মুক্তির কথা, মানবিক মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকার কথা,সচ্ছল ও ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণের কথা বারবার বলেছেন। ১৯৭২ সালের ৯ মে রাজশাহীর এক জনসভায় বলেন, ‘ আমি কি চাই ? আমি চাই বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত খাক। আমি কি চাই ? আমার বাংলার বেকার কাজ পাক। আমি কি চাই ? আমার বাংলার মানুষ সুখী হোক। আমি কি চাই ? আমার বাংলার মানুষ হেসে খেলে বেড়াক।। আমি কি চাই ? আমার সোনার বাংলার মানুষ আবার প্রাণভরে হাসুক।’ ( আতিউর রহমান, শেখ মুজিব বাংলাদেশের আরেক নাম, ২০০৯, দীপ্তি প্রকাশনী, ঢাকা।) স্বপ্নবান ও লোকদরদি নেতা ও রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তিনি বাংলার মানুষকে যেমন ভালবাসতেন, তেমনই বাংলার মানুষের চিন্তা ও মস্তিষ্কের গভীরে বপন করতে পেরেছিলেন স্বচ্ছল, আলোকিত, সম্প্রীতি-উজ্জ্বল সমাজ-রাষ্ট্র বিনির্মাণের স্বপ্নবীজ। তার মর্মস্পর্শী ও অন্তর্ভেদী ভাষণ ও কথামালায় উদ্বেলিত ও স্বপ্নকাতর হয়ে ওঠেন এদেশের কবি-শিল্পী-চিন্তক ও ভাবুকরা। স্বাধীনতা-উত্তর কালে বাংলাদেশ ও বাঙালির জন্যে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের অনুবাদ শুনতে পাই কবি-সব্যসাচী সৈয়দ শামসুল হকের পঙক্তিমালায়--
‘দেখিবার অপেক্ষায় আছোঁ,/ নবান্নের পিঠার সুঘ্রাণে দ্যাশ ভরি উঠিতেছে।/ দেখিবার অপেক্ষায় আছোঁ,/ হামার গাভীন গাই অবিরাম দুধ ঢালিতেছে।/দেখিবার অপেক্ষায় আছোঁ,/ মানুষ নির্ভয় হাতে আঙিনায় ঘর তুলিতেছে।/ দেখিবার অপেক্ষায় আছোঁ,/নিশীথে কোমল স্বপ্ন মানুষের চোখে নামিতেছে।/.. সুখে দুঃখে অন্নপানে সকলেই একসাথে আছে/ সোনার বাংলার সোনা বাংলাদেশে আছে।’
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন, জনগণের অর্থনৈতিক আকাক্সক্ষা পূরণ এবং একটি উন্নত, আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে বর্তমান সরকার দৃঢ়তার সাথে কাজ করে চলেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার সংগ্রামে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরতœ শেখ হাসিনা নিজেকে পুরোপুরি উৎসর্গ করেছেন। আমরা আশা রাখি, তার নেতৃত্বেই গড়ে উঠবে আগামী দিনের স্বপ্নের উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে একুশ শতকের মধ্যপাদে বাংলাদেশ পরিণত হবে উন্নত রাষ্ট্রে। ইতোমধ্যেই পরিবর্তনের ছোঁয়ায় পুলক জেগেছে গ্রাম-নগর-জনপদে, সমাজ-সংস্কৃতি ও রাষ্ট্রে। গড়ে উঠছে আকাশছোঁয়া দালান, শপিং মল, আলোয় উজ্জ্বল রেস্তোঁরা- দোকান। নক্ষত্র ছুঁয়ে ছুটে যাচ্ছে উড়ালসেতু। দিগন্তজোড়া সবুজ ফসলের মাঠ ভেঙে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে ফ্ল্যাটের পর ফ্ল্যাট। পরিবর্তন আমাদের দুয়ারে কড়া নাড়ছে। আমাদের মনের চোখে দুলছে আগামী দিনের স্বপ্নের বাংলদেশ, যে বাংলাদেশ হবে সচ্ছল, আলোকিত, উন্নত, আধুনিক ও ভবিষ্যতমুখী। বাংলাদেশের সমাজে এক বিস্ময়কর রূপান্তর ঘটে চলেছে। বাংলাদেশের কৃষক, নাগরিক মধ্যবিত্ত,কারখানার শ্রমজীবী মানুষ, অবহেলিত নারীসমাজ, গ্রাম-শহরের গরিব- মেহনতি, সৃজনশীল- মেধাবী তরুণ, প্রাণৈশ্বর্যে ভরপুর ছাত্রসমাজ যেন খুঁজে পেয়েছে নতুন পথের দিশা। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর পঁচাত্তরের গহন অন্ধকারের ভয় ও ক্লীবতার অবসান ঘটিয়ে যিনি নতুন করে মুক্তির আলো জ্বেলেছিলেন, সেই সাহসিকা জননেত্রী শেখ হাসিনাই এখন জাতিকে আগামী দিনের উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বাঙালি স্বপ্ন দেখতে ভুলে গিয়েছিল। সামরিক একনায়করা বন্দুকের জোরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ও প্রশাসনযন্ত্র দখল করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অর্জনগুলো বিসর্জন দিয়েছিল। তারা স্বৈরশাসন, দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ন ও অবাধ লুণ্ঠনতন্ত্র নিয়মে পরিণত করেছিল। তাদের সরিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে তুলে দিয়েছেন। আবার বাংলাদেশের মানুষকে নতুন স্বপ্নে জাগিয়ে তুলেছেন তিনি। এখন এক স্বপ্নজয়ের পর নবতর স্বপ্নের বীজ বপন করেছেন তিনি। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত হবে। গত আট বছরে বদলে গেছে বাংলাদেশ। আর কেউ অনাহারে, মঙ্গায় বা দুর্ভিক্ষে মারা যায় না। বাংলাদেশ নি¤œ মধ্যম আয়ের স্বীকৃতি পেয়েছে নির্ধারিত সময়ের আগেই। সঙ্গত কারণেই বাংলাদেশকে এখন মাপ করা হচ্ছে ভিন্ন মাপকাঠিতে। আমাদের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ ও সাফল্যের হাতছানি। আন্তর্জাতিক অস্থিতিশীলতা, রাজনৈতিক টানাপড়েন, জঙ্গি উত্থান- কোন কিছুই আটকে রাখতে পারেনি আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চাকা। ইতোমধ্যে আমাদের প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশ অতিক্রম করেছে। যা বিস্ময় জাগিয়েছে বিশ্ববাসীকে। অমর্ত্য সেন ও কৌশিক বসুর মতো খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদরা বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রশংসা করেছেন। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছে তৈরি পোশাক শিল্প ও বৈদেশিক শ্রমবাজার থেকে আসা রেমিট্যান্স। বিগত বছরে বৈদেশিক রফতানি আয়ের ৮০ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক শিল্প থেকে। আমাদের পোশাক শিল্পের বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্রও নস্যাৎ হয়েছে সরকারের সতর্কতার কারণে।পোশাক শিল্পসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তারুণ্যের বিপুল সাফল্য বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে। কালের যাত্রায় ২০১৬ সাল আমাদের অগ্রগতির ইতিহাসকে উজ্জ্বল করে রাখবে। দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল। স্বাস্থ্যসেবা এখন মানুষের দোরগোড়ায়। গড় আয়ুষ্কাল বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭১ বছরে। নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের অর্জন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ও পুরস্কৃত। নিজস্ব অর্থায়য়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ, বিশাল অবকাঠামো নির্মাণ,নতুন নতুন শিল্পোদ্যোগের ভিত্তি রচনা, খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা- বাংলাদেশকে নতুন ভাবমূর্তি নিয়ে বিশ্ব পরিম-লে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও জঙ্গিবাদ দমনে বর্তমান সরকারের সাফল্য প্রশ্নাতীত। এখন আর কোন পরাশক্তি বা দাতা সংস্থা বাংলাদেশকে তুচ্ছ-তাছিল্য করার স্পর্ধা দেখায় না। শিরদাঁড়া টান টান করে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। গত ৮ বছরে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি সামাজিক রূপান্তরের প্রক্রিয়াকে জোরদার করেছে। এক দশক আগেও এই রূপান্তরের ধারা দৃশ্যমান ছিল না। মধ্যবিত্তের পাশাপাশি একটি শক্তিশালী উদ্যোক্তা ও এলিট শ্রেণিও গড়ে উঠেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার দল ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার অঙ্গিকার ব্যক্ত করেছিলেন। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। ২০১৬ সালে চালু হয়েছে এসডিজি বা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা। ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের সীমা অতিক্রম করবে। এভাবেই বাংলাদেশ উন্নত দেশের পর্যায়ে এগিয়ে যাবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়ন ও অগ্রগতির যে ধারা সূচিত হয়েছে, তা অব্যাহত থাকলে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশে কোন দারিদ্র্য থাকবে না। এদেশে কোন নিরক্ষর ও গৃহহীন মানুষ থাকবে না। সক্ষম সব মানুষের কর্মসংস্থান হবে। আধুনিক শিল্পোন্নত দেশে পরিণত হবে বাংলাদেশ। বিদ্যুৎ উৎপাদন কমপক্ষে এক লক্ষ মেগাওয়াটে উন্নীত হবে। প্রতিটি ইউনিয়নে পরিকল্পিত গ্রামীণ স্বয়ম্ভর জনপদ গড়ে উঠবে। প্রতিটি গ্রাম হয়ে উঠবে সচ্ছল ও স্বনির্ভর। দেশের সব জেলা রেল যোগাযোগের আওতায় আসবে। কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটবে পূর্ণমাত্রায়। রেল ও সড়কপথে বাংলাদেশের সংযোগ হবে চীন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে। দেশের সব মহানগরে মেট্রোরেল ও উড়ালসেতুর বিস্তৃত নেটওয়ার্ক গড়ে উঠবে। মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত অবৈতনিক বাধ্যতামূলক প্রসার ঘটবে। দেশের ভেতর ক্রমবর্ধমান কর্মসংস্থান সৃষ্টির কারণে এদেশের জনসম্পদ আর বাইরে পাঠানো দরকার হবে না। ২০৪১ সালের মধ্যে সব চিকিৎসা-সুবিধা বাংলাদেশেই পাওয়া যাবে। জনগণের আয়ুষ্কাল ৭৫ বছর ছাড়িয়ে যাবে। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলা ভাষা জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষার মর্যাদা লাভ করবে। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে আকাশপথে এশিয়ার প্রাণকেন্দ্র। নির্মিত হবে একাধিক বৃহৎ বিমানবন্দর ও বহিঃসমুদ্রবন্দর। চট্টগ্রাম হবে বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার ও চীনের পণ্য আমদানি ও রফতানির আন্তর্জাতিক নৌবন্দর। তেমনি মংলা ও পায়রা বন্দর হবে ভারত, ভুটান, নেপাল বাংলাদেশের প্রধান আঞ্চলিক নৌবন্দর। গ্রাম-শহরে গৃহস্থালির কাজে জ্বালানির প্রধান উৎস হবে বিদ্যুৎ। বাংলাদেশের সমাজ-সংস্কৃতি-রাজনীতিতে অসাম্প্রদায়িকতা ও মানবিকতার বিস্তার ঘটবে। নাটক,নৃত্য,উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতসহ শিল্প-সংস্কৃতি চর্চার প্রাণকেন্দ্রও হবে বাংলাদেশ। জীবনের সর্বক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাংলাদেশকে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখতেন। ২০৪১ সালের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন বাস্তব রূপ লাভ করবে। বাংলাদেশ হবে সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি, সুশাসন ও গণতন্ত্র চর্চার পুণ্য পাদপীঠ। বাঙালি জাতি হবে অসাম্প্রদায়িক, মানবিক, ভেদবুদ্ধিমুক্ত, ভবিষ্যৎমুখী, উন্নত সংস্কৃতিবোধসম্পন্ন, বিজ্ঞানমনস্ক এক সভ্য জাতি। হাজার বছরের বেদনাপীড়িত বাংলাদেশ আগামী দিনে হয়ে উঠবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা ।
আবদুল্লাহ আল আমিন: সহযোগী অধ্যাপক, মেহেরপুর সরকারি কলেজ, মেহেরপুর। সেল : ০১৮১৬-০৫৬৯৩৪।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৩৭

অনন্ত৪২ বলেছেন: অসাধারণ বিশ্লেষণ মূলক লেখা।

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু :-)

২| ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৩৮

চাঁদগাজী বলেছেন:


মেহেরপুর কি আফ্রিকায়?

৩| ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৫২

কলাবাগান১ বলেছেন: আমি মনে করেছিলাম শুধু ইরাক ওয়ার ভেটেরান দের PTSD হয়............

৪| ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:২৫

চাঁদগাজী বলেছেন:


"কলাবাগান১ বলেছেন: আমি মনে করেছিলাম শুধু ইরাক ওয়ার ভেটেরান দের PTSD হয়............ "

-সীমিত ভাবনার লোকদের জন্য দেশ একটা, "ইরাক"।

৫| ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:২৩

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: মহা ভারত আর রামায়ণ এর মত একটা কিছু পড়লাম।
পড়ে কোন ফিলিংস জাগল না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.