নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাফিউল ইসলাম দিপ্ত

মহাশূন্যের বিশালতায় জন্ম নেয়া এক তুচ্ছ মানব

সাফিউল ইসলাম দিপ্ত › বিস্তারিত পোস্টঃ

ওদের স্বপ্নেরা সব অশ্রু ভেজা

১৬ ই জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৭

ঘড়ির কাটায় সকাল নটা বেজে পয়ত্রিশ মিনিট।কর্মচঞ্চল ঢাকা নগরীর মানুষগুলোর দিনলিপিতে যুক্ত হয়েছে আরেকটা নতুন দিন।ব্যস্ত পথ-ঘাটগুলো শহরবাসীকে আমন্ত্রন জানাচ্ছে তাদের নির্মমতার জগতে।সকার-বেকার সবাই সাড়া দিচ্ছে তাতে,শামিল হচ্ছে জীবনযুদ্ধে।সকারেরা ছুটছে তাদের চেনা কর্মক্ষেত্রে,আর কর্মপ্রত্যাশী বেকারেরা ছুটছে নতুন কাজের প্রত্যাশায়।উদ্দেশ্য সবার একটাই।টাকা নামের কিছু কাগজের টুকরার অধিকারী হওয়া।

আকাশে মেঘের বালাই নেই।পুবদিক ছাপিয়ে ওঠা সূর্যটার কল্যানে ধীরে ধীরে তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠছে রোদের তেজ।এর মাঝে আবার যানজট এসে হঠাৎই স্থবির করে দিচ্ছে পথ-ঘাট।একরাশ বিরক্তির সাথে হঠাৎই থামিয়ে দিচ্ছে গতিময় শহরবাসীদের নিরন্তর ছুটে চলা।

আর দশটা জায়গার মতো রাজধানীর বিজয় সরনীতেও লেগেছে এই যানজটের তিক্ত ছোয়া।আকাশে চক্কর দিয়ে বেড়ায় কাকেদের দল।মাঝে মধ্যেই কা-কা কর্কশ ধ্বনিতে অস্থির করে তোলে চারপাশ। উচু থেকে তাদের দৃষ্টিতে ধরা পড়ে যায় সব।থমকে যাওয়া শহরের গা ছাড়া ভাব,আসি আসি করতে থাকা ঈদের হালকা আমেজ।আবার নিথর রাজপথের একপাশে পুষ্পগুচ্ছ হাতে দাড়িয়ে পথশিশু তিনটির ব্যস্ততম অঙ্গভঙ্গিটুকুও বাদ যায় না।

কাকেরা কাকেদের মতো থাকুক।আমরা বরং ঘুরে আসি ফুটপাতে দাড়িয়ে থাকা শিশু তিনটির কাছ থেকে।

ওদের মধ্যে সবচে যে বড় সেও বছর দশেকের ছোট্ট একটি মেয়ে।রিতা তার নাম।তারপর বয়সের ক্রমটা একটু পেছনের দিকে ঠেললেই পাওয়া যায় যে বালকটিকে তার নাম মনির।রিতার থেকে বছর তিনেকের ছোট।আর সবার ছোটটি নিতান্তই বাচ্চা মেয়ে।মোটে পাঁচ বছর বয়স।নাম মিতা।

ওদের তিনজনেরই খালি পা।মিতার পরনের ফ্রকটি তার ক্ষীনদেহের তুলনায় বেশ খানিকটা বড়।বিশাল সেই ফ্রকের একপ্রান্ত দাঁত দিয়ে কাঁমড়ে ধরে চোখে মুখে খানিকটা দার্শনিক দার্শনিক ভাব ফুটিয়ে দাড়িয়ে আছে সে।তার দাড়ানোর ভঙ্গিতে জগত সংসারের প্রতি নির্লিপ্ততা স্পষ্ট।মনিরের গায়ে অদ্ভুতভাবে পরিহিত একটা শার্ট আর হাফপ্যান্ট।বোতাম না লাগিয়ে সে শার্টের নিচের প্রান্ত দুটি একত্রে গিট দিয়ে রেখেছে।একটু খেয়াল করলেই বোঝা যায় ব্যাপারটা।শার্টের উপরের দুটি বোতাম ছাড়া কোনটিই যে আর অবশিষ্ট নেই!রিতার পরনে কলাপাতা রঙের বহু ব্যবহারে বিবর্ন একটি জামা আর অনুজ্জল সাদা পাজামা।জামার এখানে ওখানে অপটু হস্তের সেলাইয়ের আভাস।চোখে মুখে চোরা লাজুক দৃষ্টি।

মনিরের হাতে একটা ছোট নীল প্লাস্টিকের বালতি ।তার মাঝে থেকে উকি দিচ্ছে টকটকে কিছু লাল গোলাপ,কিছু সাদা আর কিছু হলুদ গোলাপ।একধারে কিছু বেলী ফুলের মালা।অন্তরালে হয়তো জানা অজানা আরও কিছু ফুল রয়েছে।রিতা কিছু মালা হাতের কাঠিতে তুলে নিয়ে মিতা আর মনিরের দিকে তাকায়।
-আমি যামু আর আমু।যেইহানে থুইয়া গেলাম ঠিক হেইহানে খাড়ায়া থাকবি।একটুও নড়বি না।শয়তানি করছস কি মাইর খাবি।ঐ মইন্যা মিতারে কান্দাবি না।আর এইযে বুড়ি,আইসা যাতে চিমটি কাটার বিচার না হুনতে অয়।
রিতার কথায় মিতা ফিঁক করে হেসে দ্যায়।হাত দিয়ে মিতার এলোমেলো চুলগুলো আরও এলোমেলো করে দিয়ে ফুলের মালাগুলো হাতে রিতা নেমে যায় স্থবির রাজপথে।অদৃশ্য হয়ে যায় গাড়ি থেকে গাড়ির আড়ালে।আর প্রায় সাথে সাথেই শুরু হয় ফুটপাতে দাড়িয়ে থাকা ভাই বোন দুটোর খুনসুঁটি।

হ্যা।রিতা,মনির আর মিতা।সম্পর্কে ওরা ভাইবোন।যদি রক্তের সম্পর্কের কথা বলি তবে রিতা ওদের কেউ নয়।কিন্তু জগৎ সংসার বড়োই অদ্ভুত।এখানে মাঝে মাঝে জন্মগত সম্পর্কের চেয়ে বেশী প্রভাব বিস্তার করে কুড়িয়ে পাওয়া সম্পর্কগুলো।সমাজে না গোনা শ্রেনীর মানুষগুলোর মাঝে সেসব সম্পর্কেরা প্রভাব বিস্তার করে আরও বেশী।তাদের ঘিরে ধীরে ধীরে রচিত হয় আনন্দ-দুঃখ,হাসি-কান্না,ভালবাসার কাব্যের বিরাট পান্ডুলিপি।কেউ সেগুলো পড়ে দ্যাখে না।ধীরে ধীরে ধূলোর আস্তরনে ঢাকা পড়ে যায় সব।

রিতার দশ বছরের ক্ষুদ্র জীবনটাও ঠিক তেমনি অনেক অজস্র অনুভূতির মিশেল।বুঝ হবার আগেই মা-বাবাকে হারানো রিতার জীবনের শুরুটা হয়েছিলো গ্রামের বাড়িতে তার বড় চাচার গরীব সংসারে।অনেকগুলো চাচাতো ভাইবোনের মাঝে সে ঘুরে বেড়াতো অপাংঙেয় হয়ে।কিছু না বুঝলেও তার প্রতি বড়চাচীর বিরূপ মনোভাবটা ঠিকই বুঝতে পারতো।তাদের কাছে রিতা ছিলো জোর করে চাপিয়ে দেয়া একটা বোঝার মতো।আর তাই সাত বছর বয়সে বড় চাচা খোঁজ খবর নিয়ে রিতাক নিয়ে আসে ঢাকা শহরে।সেখানে নাকি মস্ত এক ধনী পরিবারের সন্ধান পাওয়া গেছে।ধানমন্ডিতে তাদের বিরাট বাড়ি।রিতার থাকার বন্দোবস্ত হল সেখানে।তাদের কাজে টুকটাক সাহায্য করবে ।বিনিময়ে খাবার আর আশ্রয় জুটবে।সবকিছু ঠিকঠাক।কিন্তু সেখানে যেয়েই রিতা বুঝতে পারে যে তাকে উত্তপ্ত তেলের কড়াই থেকে একেবারে জলন্ত উনুনে ফেলে দেয়া হয়েছে।সাত বছরের একটি বাচ্চাকে কত উপায়ে এবং কত ভাবে কষ্ট দেয়া যায় সেটি চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবার নয়।কোনো কাজে সুতো পরিমান এদিক ওদিক হলেই তার উপর যে অত্যাচার নেমে আসতো,নিজের চোখে দেখে,নিজ দেহে সয়েও রিতার তা বিশ্বাস করতে কষ্ট হতো।কতটুকুই বা দেখছিলো সে জীবনের।তার উপর এত যন্ত্রনা সইবে কেমন করে?

যন্ত্রনার সেই দিনগুলোতেই রিতার প্রথম পরিচয় হয়েছিলো মিতা আর মনিরের মা ফরিদা বেগমের সাথে।সেও ছিলো সেই বাড়িরই তুচ্ছ এক গৃহচারিকা।প্রতিদিন দুপুরে এসে বিকেল পর্যন্ত কাজ করতো।বিরাট সেই বাড়িতে একমাত্র সেই মহিলাটার কাছ থেকেই একটুখানি স্নেহ খুঁজে পেতো সে।অন্তত কোলে মুখ লুকিয়ে কাঁদতে পারতো।মাতৃস্নেহ পেতো,কিন্তু মা ডাকতে পারতো না।কেমন জানি ভেতরে আটকে যেতো।এখনও পারে না।খালা বলেই সম্বোধন করে।কে জানে,হয়তো কাউকে মা বলে ডাকার ভাগ্যই রিতার কপালে নেই।
সেই ফরিদা খালা একদিন রান্নাঘরে রিতাকে একলা পেয়ে বললো,
-এত কষ্ট কইরা এইহানে পইড়া আছস ক্যান মা?চইলা যা।
রিতার জবাবটা ছিলো তার বয়সের তুলনায় অতিরিক্ত বুদ্ধিদীপ্ত।বললো,
-চইলা যামু কই?আর যাইতে চাইলেই ওরা যাইতে দিবো ক্যান?
-মড়ার বাড়ি আমারও বাল্লাগে না।তুই কইলে আমি তর পলানোর ব্যবস্থা কইরা দিমু।
-পলাইয়া যামু কই?
-ক্যান আমার লগে যাইবি।আমার আরও দুইডা পোলা মাইয়া আছে।সবেতে মিল্লা এক ছাদের তলায় থাহুম।
রিতার শিশুসুলভ হৃদয় সেদিন কৃতজ্ঞতায় আদ্র হয়ে উঠেছিলো।চোখের জলে দৃষ্টি হয়ে এসেছিলো ঝাপসা।

তারপর একদিন গৃহকর্তার জন্য সিগারেট কিনতে বের হয়ে আর সেখানে ফেরেনি রিতা।পালিয়ে গিয়েছিলো ফরিদা খালার সাথে।তারপর সবাই মিলে পুরোনো আবাস ছেড়ে উঠে এসেছিলো আগাঁরগাওয়ের বস্তিতে।ফরিদা খালার স্বামী থেকেও নেই।স্ত্রী সন্তানের সংসারে লাথি মেরে সে “মহাপুরুষ”সটকে পড়েছে বহু আগেই।তখনও ফরিদা বেগমের রিতার সাথে দেখা হয়নি।এখনও ফরিদা খালা মানুষের বাড়িতেই কাজ করে।আর রিতা সারাদিন তার ছোট ভাইবোন দুটোকে নিয়ে ফুল ফেরি করে বেড়ায় শহরের পথে পথে।সুবাসহীন হৃদয় নিয়ে ফুলের সুবাস ছড়িয়ে দেয় মানুষের হৃদয়ে।

রাস্তায় গাড়িগুলো সব চলতে শুরু করেছে।রিতাও হাতের মালা গুলো নিয়ে ফিরে আসছে মলিন মুখে।একটা মালাও হয়তো বিক্রি হয়নি।ছোটো ভাইবোন দুটি ঝগড়া করছিলো।রিতাকে আসতে দেখেই চুপ মেরে গেল।প্রথমে মুখ খুললো মনির,
-কী হইছেরে বুবু?মালা একটাও বিক্রি অয় নাই?না অইলে না অইছে।মন খারাপ করস ক্যান?
-দুর বলদ,মন খারাপ কই করলাম।
হঠাৎ রিতার বা হাত টেনে ধরে ঝাকুনি দিয়ে ওঠে মিতা,
-বুবু ভাইজান আমারে পঁচা বুড়ি কইছে।
-বালা অইছে কইছি।হাজার বার কমু।তুই আমারে চিমটি কাটলি ক্যা?
আরেকবার ঝগড়া শুরু করতেই হাত তুলে থামিয়ে দ্যায় রিতা।
-অইছে,বুচ্ছি।তরা দুইডাই কানে ধর।
কানে ধরতেই ফিক করে হেসে দ্যায় ওরা দুইজন।ওদের দেখাদেখি রিতাও।
দুইজনকেই কান থেকে হাত সরাতে বলে ওরা তিনজন মিলে ফুটপাত ধরে হাটা দেয়।হঠাৎই বলে ওঠে রিতা,
-একখান গীত ক দেহি মইন্যা।
মনির যেনো এমন একটি প্রস্তাবের আশাতেই ছিলো।সঙ্গে সঙ্গে দরাজ কন্ঠে গান ধরলো,
“একযে ছিলো সোনার কইন্যা,
মেঘ বরন কেশ।
ভাটি অঞ্চলে ছিলো
সেই কন্যার দেশ”
গান শুনতে শুনতে হঠাৎই রিতার মনটা গভীর আফসোসে পরিপূর্ন হয়ে গেল।ইশ!প্রতিদিন যদি ফুল বেচার সময় ঐদিনের ভাইয়া আর আপুটার মতো মানুষের দেখা মিলতো।তাহলে কত ভালই না হতো।তিন দিন আগে ঠিক এইখানেই একা একা ফুল বেচতে এসেছিলো সে।দুইজন যুবক যুবতিকে পাশাপাশি হাটতে দেখেই এগিয়ে গিয়েছিলো।
-ভাইজান ফুল নিবেন ফুল।নেন না একটা…
পেছন থেকে ডাকতেই ফিরে তাকালো দুজন।যুবকটির পরনে ছিলো ঘিয়া কালারের পান্জাবি আর নীল জিন্সের প্যান্ট।যুবতীটির পরনে ছিলো কচুপাতা রঙের শাড়ি।মাঝে মাঝে লালের ফুঁটকি।কপালে হলুদ টিপ।যুবকটি বললো,
-কি ফুল?গোলাপ নাকি!
-হ ভাইজান।লাল গোলাপ।নেন না।আপার খোঁপায় গুইজা দিবেন।
সেদিন দুটি টকটকে লাল গোলাপের বিনিময়ে একশ টাকার দুো নোট রিতার হাতে গুঁজে দিয়েছিলো ওরা।
-এত টেকা দিলেন ক্যান।ফুল নিছেন দশ টেকার।এত দিয়া আমি কি করমু?
-পুরোটাই তোমার।
-না।হুদাহুদি এত টেকা লমু না।
যুবকটি এরপর একটু চিন্তা করে হেসে বললো,
-তাহলে তোমার সবগুলো গোলাপ দিয়ে দাও।
রিতা খুশীমনে তাই করলো।যুবকটি ফুলগুলো হাতে নিয়েই অদ্ভুত একটা কান্ করলো।সবগুলো ফুল রিতার দিকে বাড়িয়ে বললো,
-এইবার আমি তোমাকে সবগুলো গোলাপ উপহার দিলাম।নাও ধরো।কেউ কিছু উপহার দিলে তা নিতে হয়।
রিতা খানিকটা ভ্যাবা্চ্যাকা খেয়ে বললো,
-কিন্তু আফনে আমারে উফহার দিবেন ক্যান।
এবার মুখ খুললো মেয়েটি,
-কারন তুমি দেখতে ঠিক প্রিন্সেসদের মতো।
রিতা যুবকটির দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি দিতেই বললো,
-মানে রাজকন্যাদের মতো।আর আজকে আমাদের প্রথম বিবাহ বার্ষিকীতো তাই।
রিতা হেসে বললো
-তাইলে এইলন আরো দুইডা ফুল আমি আমনেগরে উফহার দিলাম।
রিতার হাত থেকে ফুল দুটো নিয়ে তার এলোমেলো চুলগুলো আরও এলোমেলো করে দিয়ে মানুষদুটো সেদিন হাটতে হাটতে ধীরে ধীরে হারিয়ে গিয়েছিলো জনমানুষের প্রান্তরে।

রাস্তার একপাশে একটা কালো প্রাইভেট কার থেমেছে।সামনের দরজা খুলে একটা লোক বেড়িয়ে এলো।চোখেমুখে বিরক্তির ছাপ।পাশে বসা তার স্ত্রী।সম্ভবত গাড়ীটা নষ্ট হয়েছে।গাড়ির পেছনের দিকের কালো গ্লাস দুটো নামতেই দেখা গেল ভেতরে বসে আছে সাত-আট বছরের বাচ্চা বাচ্চা দুটো ছেলেময়ে।তাদের পেছনে অনেকগুলো শপিং ব্যাগ থরে থরে সাজানো।বিশাল এই শহরে অর্থ আয়ের জন্যে যেমন স্রোতের মত মানুষ বের হয় তেমনি ব্যয়ের জন্যেও বের হয়।
শপিং ব্যাগ গুলো দেখেই উত্তেজিত হয়ে উঠলো মিতা।
-দ্যাহো দ্যাহো বুবু গাড়ির ভিতরে কত্তো বড় বড় ঠুঙ্গা।
মিতার কথায় রিতা,মনির দুজনেই হেসে ওঠে।রিতা মিতার মাথায় চাটি মেরে বলে,
-দুর বোকা মাইয়া।ঠুঙ্গা হইতে যাইব ক্যান।ঐগুলা হইল ঈদের বাজার।
-ঐগুলায় কি?
-নয়া কাফড়।
-নয়া কাফড় কিনছে ক্যা?
-ঈদে পিনবো বইলা।
-ক্যান ওগো কি কাফড় নাই?
-কাফড় থাকবো না ক্যা।কিন্তু ঈদ আইলে ভদ্দরলোকগো নয়া কাফড় পিনতে অয়।তাই কিনছে।
-তাইলে আমরা নয়া কাফড় পিন্দি না ক্যা?আমারা কি ভদ্দরলোক না?
মিতা ভদ্রলোকের সংজ্ঞা জানে না।তাই উত্তরও দিতে পারে না।ফুল বিক্রি করতে গিয়ে যখন কালো কাঁচ ঘেরা কিছু গাড়ির ভেতর থেকে “ঐ ফকিন্নির বাচ্চা ফকিন্নি” গালি ভেসে আসে,তখন সে আসলেই বুঝতে পারে না তারা কোন শ্রেনীর।আর গাড়ীর ভেতর বসে থাকা মানুষটাই বা কোন শ্রেনীর ভদ্রলোক।

রাস্তার একধারে পেয়ারা ভর্তা বিক্রি হচ্ছে।দেখেই রিতা বলে,
-কিরে পেয়ারা ভর্তা খাবি?
মিতা সঙ্গে সঙ্গেই “খামু,খামু” বলে চেচিয়ে ওঠে।মনির বলে,
-কিন্তু ট্যাহা?
-আছে আমার কাছে।ঐদিন দুইডা আপা আর ভাইজান দুইশো টাহা দিছিলো।এহনও কাউরে কই নাই।
-কও কি!তাইলে তো খাওয়াই যায়।
মনিরের দুচোখ আনন্দে ঝিলমিল করে ওঠে।রাস্তার ধার হতে কাসুন্দি মাখানো পেয়ারা ভর্তা কেনে রিতা।ভাইবোনদুটো কি সুন্দর কাড়াকাড়ি করে পেয়ারা খাচ্ছে।দেখতেই ভালো লাগছে।রিতার দুচোখ আদ্র হয়ে ওঠে।

রাস্তা দিয়ে যখনই রিতার বয়সী স্কুল ইউনিফর্ম পরা ছেলেমেয়েরা মা-বাবার হাত ধরে স্কুলে যায়,রিতার তখন খুব ইচ্ছা করে তাদের মতো স্কুলে পড়তে।ভালোভাবে পড়ালেখা করে খুব ভালো একটা চাকরি নেবে নইলে ব্যবসা করবে।বস্তি ছেড়ে ছোট্ট একটাবাসায় উঠবে সবাইকে নিয়ে।ভাইবোনগুলোও ততদিনে পড়াশোনা করে বড় হবে।খেতে বসে খেতে না চাইলে ওদের জোর করে খাওয়াবে।ঈদের সময় নতুন কাপড় পড়ে সবাই মিলে ফুর্তি করতো।কি মজাটাই না হতো।রিতার চোখ নিজের অজান্তেই ভিজে ওঠে।চোখের জলে স্বপ্নেরা লুটোপুটি খায়।সারা মুখে খেলা করে অন্যরকম আভা।ব্যস্ত শহরবাসীরা তার আশপাশ দিয়ে হেটে যায়।কেউ ফিরেও তাকায় না তার স্বপ্নীল চোখদুটোর দিকে।তাদের এত সময় কোথায়?

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:৩৬

হাসান মাহবুব বলেছেন: চমৎকার লিখেছেম হৃদয় ছোঁয়া।

২২ শে জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৫:২৮

সাফিউল ইসলাম দিপ্ত বলেছেন: কষ্ট করে পড়ার জন্যে এবং মন্তব্যের জন্যে অনেক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.