![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কেউ যদি আমার কাছে জানতে চায় বাংলা ও বাঙালীকে বোঝার , সেই সুপ্রাচীন অতীত থেকে বর্তমানের বাঙালী মনকে বোঝার সবচেয়ে সহজ উপায় কি?
আমি বলবো বাংলা কবিতা।একথা শুনে কেউ যেনো মনে না করে আমি নিজেকে বাংলা কবিতার সমঝদার প্রমানের চেষ্টা করছি।আসলে তা নয়।বাস্তবিক অর্থেই আমি কবিতা অনেক কম বুঝি,কাঁটাছেড়াও করতে পারিনা।পরীক্ষার হলে কোনো একটা চরনের অন্তনর্নিহিত ভাব প্রকাশ করতে বললে আমার কালোঘাম ছুটে যায়।
.
আসলে বাংলা কবিতাকে খুব সাধারনভাবে অনুভব করার জন্য অতো ব্যাখ্যা বিশ্লেষনের প্রয়োজন হয়না।খুব মন দিয়ে পড়লে এমনিতেই অদ্ভুত একটা মাদকতা ভর করে।কি সুন্দর পলিমাটির দেশ।মাটির মাঝে সোনা মেশানো।বিস্তৃত পথঘাট,তাতে হেটে চলে অদ্ভুত জীবনধারার কিছু মানুষ,পথের ধারে উচু বৃক্ষ,নিচে ঝড়া পাতা,সেখানে খেলা করে কোমরে ঘুঙুর জড়ানো নগ্নগাত্র শিশু।বিশাল সব আবাদী জমি।তাতে পরিশ্রমী মানুষগুলোর ঘাম শস্যে পরিনত হয়।মাঝে মাঝে আবার এখানে ঝড়ো হাওয়ার সাথে বৃষ্টির অবতারনা হয়।হাস্যজ্জল পল্লিবধুরা তখন ঠিক ঠিক অবাধ্য গবাদী পশুটাকেও গোয়ালে পোড়ে।
.
সবই অদ্ভুত সুন্দরের খেলা।আর আমাদের মত সাধারন মানুষের কাছেই যখন জিনিসগুলো এতো সুন্দর তখন কবিদের চোখে যে তা একটু বেশী সুন্দর হয়ে ধরা দেবে তাই তো স্বাভাবিক।তাই এখানে মরমী কবি লালনের জন্ম হয়,দ্রোহের,প্রেমের কবি নজরুলের জন্ম হয়,প্রকৃতিপ্রেমী জীবনানন্দের জন্ম হয়।আর এই পলীমাটিতে পা দিয়ে,পদ্মার তীরে শ্বাস নিয়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ খুজে ফেরেন তার জীবনের সার্থকতা।তাদের কবিতা পড়া মানে শুধু কবিতা পড়া নয়,তাদের কবিতা পড়া,লেখা গান শোনার অর্থ হচ্ছে নিজ মূলকে চিনতে পারা,আপন ঐতিহ্য নিয়ে গর্ব করতে পারা।
.
আমার মতো দীনহীন মানুষ আসলে শুধু কবিতার ফিলোসফি কপচাতে এই লিখা লিখতে বসেনি।তুচ্ছ এই মানুষটার আসলে বিশেষ কিছু কারনে মন খারাপ।মন খারাপ সাড়াতে তাই সে অক্ষরগুলো নাড়াচাড়া করছে।
.
মাঝে মাঝে খুব কষ্ট হয় এই দেখে যে আমাদের দেশের বৃহত্তর বাঙালী সমাজ কবিতাটাকে ঠিক আপন করে নিতে পারেনা।অর্ধশিক্ষিত,অপশিক্ষায় শিক্ষিত,কুসংস্কারে দীক্ষিত এই আমরা ধীরে ধীরে সবকিছুর সাথে কবিতার মাঝেও নোংরা রাজনীতি মেশাচ্ছি।কবিতায় ব্যবহৃত রূপক,ভাবের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য সম্বন্ধে আমরা খুব অল্পজনই প্রকৃত জ্ঞান রাখি।এবং এই অজ্ঞানতার সাম্প্রতিক ফলাফল গুলো হচ্ছে খুব ভয়াবহ।
উদাহরন স্বরূপ মাধ্যমিক পর্যায়ে কিছু নতুন বাংলা কবিতার সংযোজন এবং বৃহত্তর নাগরিক সমাজে তার প্রতিক্রিয়ার কথা বলা যেতে পারে।কবিতার মতো সুন্দর জিনিসকে যে এমন বিকৃত ভাবেও উপস্থাপন করা যায় তা দেখে আমি স্তম্ভিত হয়েছি।
সবগুলোর কথা বলা দরকার নেই।সবচেয়ে আলোচিত একটি কবিতার কথা বলি।সপ্তম শ্রেনীতে পাঠ্য এটি। কবিতার নাম “বাংলাদেশের হৃদয়”।কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।এটি নিয়ে মূল যে অভিযোগ তা হলো,এতে দেবী দূর্গার প্রশংসা করা হয়েছে।হায়রে শিক্ষিত সমাজ।আচ্ছা আপনারা কবি নজরুল এর “বিদ্রোহী” কবিতাটা শুনেছেন?কিংবা “সাম্যবাদী” কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলো?তিনি কিন্তু নিজেকে কোনো নির্দিষ্ট ধর্মজাত শব্দে আটকে রাখেননি।রূপকার্থে যখন যা ইচ্ছে হয়েছে ব্যবহার করেছেন।কই তার সেসব কবিতার আবেদন তো আপনাদের কাছে নষ্ট হয়নি??
“বাংলাদেশের হৃদয়”।কবিতাটা খুব প্রিয় আমার।প্রথম দিকে গান হিসেবেই শুনতাম।রক্তে নেশা ধরানো সব কথা।
.
“ আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে কখন আপনি
তুমি এই অপরূপ রূপে বাহির হলে জননী!
ওগো মা, তোমায় দেখে দেখে আঁখি না ফিরে!
তোমার দুয়ার আজি খুলে গেছে সোনার মন্দিরে॥“
.
এই চারটা লাইন সবচেয়ে ভালো লাগতো।আসলে মূল বিষয় যেটা সেটা হচ্ছে কবিগুরু পূর্ববঙ্গে এসেছিলেন জমিদারী সূত্রে।এখানে এসে শহুরে কবি প্রকৃতিকে অবলোকন করেছিলেন এক ভিন্ন মাত্রায়।বাংলা দেশে লেখা তার কবিতা গল্প গুলো খেয়াল করলেই সেটা বোঝা যায়।এখানে আসার পূর্বে কবি পূর্ববঙ্গ সম্বন্ধে তেমন অবহিত ছিলেন না।যা ধারনা ছিলো তার মধ্যে নেতিবাচকতার মাত্রাই ছিলো বেশী।কিন্তু এখানে এসে তার সে ধারনায় ছেদ ঘটে।তিনি আবিষ্কার করেন অসীম বিক্রমে সাহসী এক বাংলাকে।তাই বলেন-
.
“ ডান হাতে তোর খড়্গ জ্বলে, বাঁ হাত করে শঙ্কাহরণ,
দুই নয়নে স্নেহের হাসি, ললাটনেত্র আগুনবরণ।
ওগো মা, তোমার কী মুরতি আজি দেখি রে!
তোমার দুয়ার আজি খুলে গেছে সোনার মন্দিরে ॥
তোমার মুক্তকেশের পুঞ্জ মেঘে লুকায় অশনি,
তোমার আঁচল ঝলে আকাশতলে রৌদ্রবসনী!
ওগো মা, তোমায় দেখে দেখে আঁখি না ফিরে!
তোমার দুয়ার আজি খুলে গেছে সোনার মন্দিরে।।"
.
কবি এখানে এসে খুঁজে পান পদ্মাকে তার আপন মহিমায়,দেখতে পান কৃতি প্রকৃতির অবারিত সম্পদে ঘেরা প্রানবৈচিত্রে ভরপুর এক সোনার বাংলা।তাই তিনি একে মন্দির সমতুল্য বলে মূল্যায়িত করেন।নিজের পূর্বধারনার ব্যতয় বোঝাতে বলেন-
.
যখন অনাদরে চাইনি মুখে, ভেবেছিলেম দুঃখিনী মা,
আছে ভাঙ্গা ঘরে একলা পরে, দুঃখের বুঝি নাইকো সীমা।
কোথা সে তোর দরিদ্র বেশ, কোথা সে তোর মলিন হাসি,
আকাশে আজ ছড়িয়ে গেল, ঐ চরণের দিপ্তীরাশি,
ওগো মা তোমার কী মুরতি আজি দেখি রে!
তোমার দুয়ার আজি খুলে গেছে সোনার মন্দিরে,
আজি দুঃখের রাতে, সুখের স্রোতে ভাসাও ধরণী,
তোমার অভয় বাজে হৃদয় মাঝে, হৃদয়হরণী।
ওগো, মা তোমায় দেখে দেখে আঁখি না ফেরে!
তোমার দুয়ার আজি খুলে গেছে সোনার মন্দিরে।
.
মোটকথা গোটা কবিতাটাই সুন্দর।বাংলাদেশের গুনকীর্তনই এখানে মুখ্য বিষয়।তাই শুধু শুধু এতে সাম্প্রদায়ীকতার বিষবাষ্প ছানো নিছকই মুর্খতা।কি দরকার এতে নোংরা রাজনীতি টেনে আনার?যেই বাচ্চা গুলো কবিতাগুলো পাঠ্য হিসেবে পড়ছে তারা তো সাম্প্রদায়িকা বোঝনা।তারা বঝে মানুষ,বোঝে প্রকৃতি,বোঝে বাংলাদেশ।
দিনশেষে এরাই আমাদের মূল।স্বীকার করুনআর না করুন।
ভালো থাকুক কবিতারা।ভালো থাকুক সবাই।
১৭ ই জুন, ২০১৬ রাত ৯:৫৩
সাফিউল ইসলাম দিপ্ত বলেছেন: ধন্যবাদ।
ভালো থাকবেন।
©somewhere in net ltd.
১|
১৬ ই জুন, ২০১৬ রাত ১১:১৬
Ahsan mir বলেছেন: ভাল লাগলো ধন্যবাদ