![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সন্ধ্যা হয়ে এল প্রায়, এখনো নয়ন আসছেনা । ফোনে বলল তুমি ১৫ নাম্বার কেয়ারি প্লাজার সামনে বসো,আমি ১০ মিনিটের মধ্যে চলে আসছি ।অথচ আধা ঘন্টা হযে গেলো এখনো কোন খোজ নেই । আমরা যেহেতু বাংলাদেশি এজন্য সাখে ১০ মিনিট, আর শহরটা যেহেতু ঢাকা, এজন্য আরো ১৫ মিনিট,,সবমিলিয়ে ২৫ মিনিট পার করে ৫ মিনিট বেশি হয়ে গ্যাছে ,অথচ এখনো কোন খোজ নাই । আমার অবশ্য অপেক্ষা করতে খুব বেশি খারাপ লাগছে না ।কারনে অকারনে প্রায়ই এই প্লাজার সিড়িতে আমার সন্ধ্যা কাটে । ১৫ মাস আগে এই জায়গা থেকেই জীবনের অন্যতম বড় ধাক্কা খেয়েছিলাম । সেদিন কথা ছিল বিকেলে আমরা ঘুরতে বের হবো । সারা বিকেল ফোন করে ওকে না পেয়ে এ্খানে এসে বসে ছিলাম । প্রায় ৩০ মিনিট বসার পর উঠে যাবার মুহূর্তে মিষ্টিকে সেই প্রথম কোন ছেলের সাথে রিক্সায় দেখি । নিজের চোখ কে সেদিন প্রথম বারের মত অবিস্বাস করেছিলাম । মেস এ ফিরতে হয়েছিলো রিক্সাওলার সাহায্য নিয়ে । এখান থেকেই শুরু । ৯ দিন পর ও রিক্সা খেকে বাসর আর আমার অবস্খান হয়, ঢাকা মেডিকেল এ ।
-হ্যালো, কই তুমি ?
-বাবা. মোহাম্মদপুর এ বিরাট এক জ্যামে পড়ছি ।
-এই তোমার ১০ মিনিট!!
-কি করবো বলো, আমি কি জানতাম এই অবস্খা হবে ।
-আমি কি করবো? রুম এ চলে যাবো নাকি এখানেই বসবো,..হ্যালো হ্যালো হ্যালো ,,
ফোনের চার্জও শেষ । চার্জারটা আবার নষ্ট হয়েছে । এটা দিয়ে ৪র্থ । অরিজিনাল চার্জার নষ্ট হবার পর, দুই মাস পর পর চার্জার কিনতে হয় । বাঙালিদের জন্য আইফোন না । আামদের জন্য নোকিয়া বেষ্ট । নষ্ট হবার সময়ও পাইলোনা,মাসের শেষের দিকেই নষ্ট হলো । পকেট এ আছে তিনটা ২টাকার নোট । কিভাবে যে চলবো মাসের বাকি দিনগুলো ।চাচার কাছেও টাকা চাইতে পারছিনা । মাস এখনো শেষ হলোনা, কিভাবে চাই । কিন্তু সে যদি জানতে পারে আমার টাকা শেষ হয়ে গ্যাছে অথচ তাকে বলিনি, রাগ করবে ।তবুও চাইতে পারছিনা । ছোট বোনের কাছ থেকে কিছুদিন আগেই ৩০০ নিয়েছি । দুদিন পরেই শেষ । বারবার তো আর চাওয়া যায়না । ওর জামাইও আহামরি কিছু করেনা । ধার দেনা করতেও ভয় লাগছে । রাসেল এর ৪ হাজার টাকা এখনো দিতে পারিনি । অথচ নেয়ার সময় বলেছিলাম ১ মাস পরেই দিয়ে দিবো । রাসেল বলেই হইতো এতটা টেনসন নেই । কেনো যেনো ও আমাকে অনেক ভালোবাসে । কিন্তু প্রতিদানে আমি ওকে কিছুই হ্বইতো দিতে পারিনা । সজীব ভাই হইতো ফোন করে পাবেনা ।প্রতিদনি অফিস থেকে বের হয়েই ফোন দেয় । যতসময় ভালো লাগে ৪এ তে আড্ডা দিয়েই একসাথে রুম এ যায় । খুব ভালো মনের একজন রুমমেট পেয়েছি এবার । নর্দান থেকে ইলেকট্রিক ইনজিনিয়ারিং শেষ করে ছোট একটা কোম্পানিতে চাকরি করছে । প্রচন্ড আশাবাদী একজন মানুষ । তাকে যদি বলা হয়, ভাই চলেন চাঁদে যায় । বলবে ঠিক আছে ভাই, এ্ মাসের বেতনটা পেয়ে নিই,তারপর যাওয়া যাবে ।তার সাথে থাকতে থাকতে অমিও অনেক আশাবাদি হয়ে গ্যাছি । কিন্তু এই ফোন নিয়ে হতাশায় পড়ে গ্যাছি । মিষ্টির কাছে এই ফোন অফ থাকার জন্য যে কত বকা খেয়েছি । এখন অবশ্য ফোন এর কারনে কারও কাছে বকা খেতে হয়না । ফোনে অফ পাইলে কেউ অস্তিরও হয়ে যায়না ।
খুব ক্ষুধা লেগেছে । দুপুরে আমি আর রবিন কলা পাউরুটি খেয়েছি । ওর কাছেও টাকা নেই ।আমি আর রবিন একসাথে প্রায় ৪ বছর । মিষ্টি ঢাকা আাসার আগে আমরা দুজন এক রুম এ থাকতাম। দুজনের টাকা এক ব্যাগ এ থাকতো । মিষ্টি আসার পর আমি একা এক রুম নিই । কিছুদিন পর রবিন এর ছোট ভাইও চলে আসে ঢাকাতে । ওরা দুজন এক রুম এ আর আমি একা এক রুম এ । এক বছর আমাদের ৪ জনের এক সুন্দর সংসার ছিলো । সব কিছু এখন স্বপ্নের মত মনে হয় ।
মেস এ বাজার নেই কাল থেকে । শেষ ভাত খেয়েছি গতকাল রাতে । মেস লাইফ এমন নতুন কিছু না । সমস্য হলো রবিন এই ছোট ভাই রাতুল কে নিয়ে । আমি সজীব ভাই ওকে আপন ছোট ভাই এর মতো দেখি । বড় ভাইরা থাকতে ছোটা ভাই না খেয়ে থাকবে, এটা ভালো দেখায়না । রাতে সজীব ভাই এর বাজার করার কথা আছে । দেখা যাক কি হয় । এখন ঝালমুড়ি খাওযা যায় ।
-এই ঝালমুড়ি, ৫ টাকার দাও । ঘুঘনি দিওনা ।
নয়ন এখনো এলোনা !! ঝালমুড়ি খাইতে খাইতে না এলে চলে যাবো রুম এ । আজ রাস্তাই জ্যাম বেশি বলেই মনে হচ্ছে ।
-একটাকা নাই মামা । ৬ টাকা রেখে দিবো ?
-দাও, একটা টাকা দিয়ে একট চকলেট ছাড়া আর কিছু হবেনা । তুমিই রেখে দাও ।
একটা সময় ছিলো,প্রতিদিন সন্ধ্যায় আমি আর মিষ্টি ৮নাম্বারের ঝালমুড়ি খাইতাম । ঝালমুড়ির ঠোঙায় সস্তা প্রেম আর কতদিন । এখন হইতো কে এফ সি তে ।
পৃথিবীতে যতদিন ঝালমুড়ি থাকবে, ততদিন মিষ্টিকে ভুলে যাওয়া সম্ভব না ।
ঝালমুড়িও শেষ হয়ে গেলো । এখনো এলোনা । বাসার দিকে যাবো নাকি আরো কিছুক্ষন বসবো । বাসায় গেলে অবশ্য গিটার নিয়ে টুংটাং করলেও ভালো লাগবে । কিছুদিন হলো গিটার শিখছি আমি আর রবিন । প্রতি সোমবার বিকেলে কাঠালবাগান এক বড় ভাই এর কাছে যায় দুজন। প্রতিবার যাওয়া আসাতে ১০০ চলে যায় । ভাই এস সন্মানি দুজনের ১৫০০ টাকা । পকেটের যা অবস্খা,কাল হেটে যেতে হবে নিষ্চিত । গিটারের স্ট্রিং কিনতে গিয়ে দোকানদারের মাধ্যম দিয়ে মুরাদ ভাই এর খোজ পায় । বাড়ি গাজিপুরে । তোরে মন দিয়া আগুন জ্বালাইছে গানটার প্রথম কম্পোজিসন মুরাদ ভাই এর । তার বন্ধু গানটা গেয়ে বেশ খ্যাতি পেয়ে গ্যাছে , অথচ তিনি এখনো খ্যাপ নির্ভরশীল ,আার আমাদের মত কয়েকজন কে গীটার শেখায় । গীটার কিনেছি প্রায় দেড় বছর । মিষ্টির খুব ইচ্ছা ছিলো আমি গিটার বাজিয়ে ওরে গান শোনাবো । এজন্যই কিনেছিলাম । মুনতাসির এর কাছে এই বৃষ্টি ভেজা রাতে গানটা শিখেছিলাম কনোমত ।ওটাই মিষ্টিকে মাঝে মাঝে শোনাইতাম । বলতো ভালো হইনি, আরো প্রাকটিস করো । মুনতাসি মালাইশিয়া চলে যাবার পর আর কারো কাছে শেখা হইনি । নেট থেকে দেখে দেখে কয়েকটা গান শিখেছি কনোমত । এখন গুরুর কাছে গিয়ে দেখি যা শিখেছি সব ভুল । জানিনা কতদুর শিখতে পারবো । তবে গুরু বলেছে একবছর তার কাছে শিখলে, আর নিয়মিত প্রাকটিস করলে স্টেজ পারফর্ম করতে পারবো ইনশাল্লাহ । ইচ্ছা আছে একদিন খোকসাতে স্টেজ পারফর্ম করার । জানিনা কোনদিন পূরন হবে কিনা । গীটার যতদিন থাকবে মিষ্টিকে ভুলে থাকা ততদিন সম্ভব না ।
এক ঘন্টা হলো বসে আছি । আর না । রুম এ ফিরে যায় ।
বাসায় তালা দেয়া । চাবি নিয়ে বের হইনি । মানিব্যগ টা হারিয়ে যাওয়ার পর চাবি নিয়ে বের হতে মনে থাকেনা । চাবি সাধারনত মানিব্যাগ এর মধ্যোই রাখতাম । আমাকে দেয়া মিষ্টির শেষ গিফট মানিব্যাগ । ভাগ্যক্রমে মানিব্যাগ টা মিষ্টির কাছেই রয়ে গ্যাছে । হইতো ফেলে দিয়েছে ।
যায় আবার ১৫ নাম্বরে গিয়ে বসি । এই ফোন অফ এর জন্য কতগুলো সমস্যা সৃষ্টি হলো । অথচ যখন ফোন ছিলোনা,তখন এ ব্যাপারগুলোকে আমার সমস্যা মনে করতাম না । স্বাভাবিক ব্যাপার মনে করতাম । ২০০৪ এ আব্বু নোকিয় ১১০০ কিনে দিয়েছিলো, সিম ছিলো ডিজুস । মিষ্টি স্কুল গিয়ে দোকান থেকে ফোন করতো । বৃত্তির টাকাগুলো আামাকে ফোন করেই শেষ করতো ।
-কই ছিলে তুমি ? ফোন এর কি হইছে ?
-চার্জ নেই । রুমে চলে গেছিলাম । আর কতক্ষন অপেক্ষা করবো !!? তুমি কখন আসছো?
-এইতো ২ মিনিট হলো,, তোমারে খুজতেছি,,,,
-বাসায় গিয়ে দেখি তালা দেয়া,আমার কাছে চাবি নাই ।
-এখন কি করবো দুজন ?
- ফোনে টাকা আছে ?
-হুম আছে, কেনো?
সজীব ভাইরে ফোন দাও,,
-ওকে
,,,,,,,,,,
কি বললো ভাই ?
৪এ যেতে বললো ।
ওকে চলো..
©somewhere in net ltd.