নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাঁধা চিরন্তণ, লক্ষ্যে অবিচল

সাম্য আর সাহসিকতার সাথে এগিয়ে যাবো আমরা

মোজাহেদুল ইসলাম ফয়সাল

সাম্য আর সাহসিকতার সাথে এগিয়ে যাবো আমরা

মোজাহেদুল ইসলাম ফয়সাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্মৃতির পাতায় ১৭দিন - পর্ব ৭

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:২০

দিন – ১১ (১৭-০৩-২০১৩)



সকাল ৭টায় ঘুম থেকে উঠে তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে গেলাম। আমরা ভেবেছিলাম যে যার মত করে ঘুরবে। কিন্তু পরে জানতে পারি সবাই একসাথে বের হবে। তাই আমাদের খানহা রেস্টুরেন্টে যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করে দিতে হল। সকাল ৯টায় বাসে উঠলাম। প্রথমেই গেলাম “আম্বার ফোর্ট” নামক স্থানে। বাস থেকে নেমে ট্যাক্সিতে করে যেতে হয়। আম্বার ফোর্টে যখন প্রবেশ করলাম তখন মনে মনে ভাবছিলাম মোগল সম্রাটরা কিভাবে এতো সুন্দরভাবে তাদের সাম্রাজ্যগুলো তৈরি করেছিল। দেখলে মনে হয় শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবি। মহলের ভিতরে ছিল গুপ্ত রাস্তা। তাছাড়া মার্বেল পাথরের কাজগুলো ছিল অসম্ভব সুন্দর। যত দেখছিলাম ততই মুগ্ধ হচ্ছিলাম। মহলের সামনেই একটা লেক। লেকের মাঝে বাগান এবং থিয়েটার। অনেক বিরাট জায়গা জুড়ে তাদের এই স্থাপনা। কিন্তু আমাদেরকে সময় দেয়া হয়েছিল মাত্র এক ঘন্টা। আসলে এই অল্প সময়ে এই ধরণের স্থাপনা দেখে শেষ করা যাবে না। অন্তত একদিন লাগবে পুরো জায়গাটা ঘুরে দেখতে। তারপরও আমরা দ্রুত অনেকখানি জায়গা ঘুরলাম। কিন্তু মনের মত করে দেখা হয়নি। আমার আবার অভ্যাস খারাপ। কোথাও গিয়ে যদি জায়গাটা ভালভাবে দেখতে না পারি অন্য জায়গাগুলো আর ঘুরতে ইচ্ছে করে না। এত তাড়াতাড়ি ঘুরার পরও আমরা ৩০মিনিট দেরি করে ফেলেছিলাম। প্রথমবারের মত নির্দিষ্ট সময়ের আগে আমরা ৭জন গাড়িতে উঠতে পারিনি। দেরি করার শাস্তি হিসেবে গাড়িতে উঠার সময় সোহেল স্যার পিঠে একটা করে থাপ্পড় উপহার দিয়েছিলেন আমাদেরকে। স্যারের হঠাৎ এই উপহারে মজাই পেয়েছিলাম।



আম্বার ফোর্ট থেকে চলে গেলাম জলমহলে। জলমহলের রাতের সৌন্দর্য্য আর দিনের সৌন্দর্য্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য। রাতের জলমহলকে দেখতে অসম্ভব সুন্দর লেগেছিল কিন্তু দিনের বেলা সেই সৌন্দর্য্যের ছিটেফোঁটাও ছিল না। কিন্তু অবাক করা বিষয় ছিল জলমহলটি লেকের মাঝখানে। চারিদিকে জল বলেই এই মহলটির নাম জলমহল। জলমহলে যাওয়ার কোন রাস্তা নেই। অনুমতিপ্রাপ্ত লোক ব্যতীত কেউ সেই মহলে যেতে পারে না। মহলের কিছুটা অংশ পানির নিচে ডুবে আছে। দূর থেকেই জলমহল দেখার স্বাদ গ্রহন করলাম। যেহেতু দূর থেকেই দেখতে হয় সেহেতু জলমহলে বেশিক্ষণ ছিলাম না। জলমহল থেকে চলে যায় একটি সরকারি শপিং মলে। এই শপিং মল থেকে অনেকেই অনেক কিছু কিনল। তবে দাম কম ছিল পাথরের জিনিসের। তাছাড়া অনেক সুন্দর সুন্দর শো-পিসও ছিল। শো-পিসের দামও তেমন বেশি ছিল না।



এরপর আমরা চলে গেলাম “হাওয়া মহল”। প্রথমে নামটা শুনে বলেছিলাম মহলের নাম দেওয়ার জন্যে আর কিছু পায় নাই। এই মহলের নাম কেন হাওয়া মহল তখনো সেটি জানতাম না। আমরা বাস থেকে নামলাম “সিটি প্যালেস” বাস স্ট্যান্ডে। অনেকেই হয়তো “জন্থর-মন্থর”-এর নাম শুনে থাকবেন। এই জন্থর-মন্থর অবস্থিত সিটি প্যালেসের ভেতরেই। যদিও আমরা সেখানে যেতে পারিনি সময় স্বল্পতার কারণে। আমরা গিয়েছিলাম হাওয়া মহলে। তবে সিটি প্যালেস যে আমাকে আকর্ষণ করেনি তা নয়। কিন্তু সিটি প্যালেসের মত অত বড় জায়গা ১ঘন্টায় দেখা অসম্ভব। দেখতে গেলে হয়তো আম্বার ফোর্টের মত অবস্থায় হত। তাই আর গেলাম না। আমরা গেলাম হাওয়া মহলে। হাওয়া মহলে ইটের চাইতে জানালা বেশি মনে হল। আর এই মহলের নামকরণ হাওয়ামহল করা হয়েছে অত্যধিক জানালার কারণেই। হাওয়া প্রবেশের পথ অনেক। মহলের ভেতর অনেক গোপন রাস্তাও ছিল। হাওয়া মহলের মূল গেইটটি অনেক উঁচু। তাছাড়া মহলটাও অনেক বড়। তবে আমরা সেভাবে ঘুরে দেখতে পারিনি। কারণ ছিল অসহনীয় পর্যায়ের গরম। পানি পান করতে করতেই আমরা ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম। এত গরম! আমাদের দেশে জয়পুরের মত গরম পড়েনি কখনো। প্রচন্ড রোদ ছিল সেদিন। হাওয়া মহল থেকে যখন বের হচ্ছিলাম তখন দেশের পরিচিত কেউ দেখলে জিজ্ঞেস করত আমরা কি বেড়াতে গিয়েছি নাকি হাল চাষ করতে গিয়েছি। এত গরমে আগে কখনো চলাফেরা করিনি। হাওয়ামহল থেকে সোজা চলে গেলাম বাস স্ট্যান্ডে। দুপুরের খাবার খেয়ে আবারও সেই বাস। এবারের গন্তব্য আজমীর।



আজমীর পৌঁছালাম সন্ধ্যায়। জয়পুর থেকে দুই থেকে তিন ঘন্টার রাস্তা। আরেক ধান্দাবাজের জায়গা নাকি এই আজমীর। মাজারের বাহির হতে শুরু করে ভেতর পর্যন্ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে এইসব ধান্দাবাজ। তাই স্যারেরা আমাদের সতর্ক করে দিলেন। টাকা পয়সা যা আছে সব রেখে যেতে বললেন। সবাই সবকিছু রেখে গেলেও আমি রেখে যেতে পারছিলাম না। কারণ আমার ব্যাগে ছিল অনেক গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। তাই আমার সাথে ব্যাগ নিয়ে গেলাম। আজমীর শরীফ যাওয়ার জন্য বাস স্ট্যান্ড থেকে অটো ট্যাক্সির প্রয়োজন হয়। সুতরাং সবাই তাড়াতাড়ি করে ট্যাক্সিতে উঠে পড়ল। কিন্তু আমরা ধীরে সুস্থে চলার নীতি অনুসরণ করেছি সবসময়। তার পুরস্কার হিসেবে আমরা পেলাম মিনি মাইক্রোবাস। আমরা ৬জন খুব আরামেই গেলাম। আর সবার আগে গন্তব্যে পৌঁছায় আমরা। ট্যাক্সি স্ট্যান্ড থেকে ১০মিনিটের পথ হেঁটে যেতে হয়। তাই একসাথে যাওয়ার জন্যে অন্যদের জন্য অপেক্ষা করছিলাম আমরা। সবাই আসলে আমরা হাঁটা শুরু করি। মাজারের যত কাছে যেতে থাকি ততই মনে হচ্ছিল ভিড় বাড়ছে। মূল প্রবেশ পথে বিপত্তি বাঁধার আশঙ্কা। তবে মাজারের মূল প্রবেশ পথ দিয়ে প্রবেশ করার আগে আমি একেবারে ভিআইপির মত হাঁটলাম। কারণ আমার সামনে পেছনে আমাকে নিরাপত্তা দিচ্ছিল সবাই। এর পেছনে অবশ্য কারণ ছিল। আমার ব্যাগভর্তি জিনিস তার সাথে যুক্ত হল আনন্দের মানিব্যাগ। সেই কারণেই আমার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়।



মূল প্রবেশ পথে প্রথমেই আটকা পড়লেন রবিন স্যার আর স্যারের স্ত্রী। এরপর আটকা পড়লেন হাসিব স্যার আর স্যারের স্ত্রী। আটকা পড়ার কারণ ছিল তাঁদের সাথে ক্যামেরা ছিল। স্যারদের অবস্থা দেখে তো আমি ভয় পেয়ে গেলাম। কিন্তু আল্লাহ আমাকে রক্ষা করলেন। প্রবেশ পথে হাসিব স্যারের সাথে চেকপোস্টের পুলিশটি আলোচনা করছিল আর আমি সেই ফাঁকে ভিতরে ঢুকে পড়লাম। অথচ আমার ব্যাগেই ছিল সবচেয়ে বেশি জিনিস। অবশ্য পরে লকার রুমে ব্যাগ জমা দিয়ে স্যারেরাও প্রবেশ করতে পেরেছিলেন। ঢুকেই প্রথমে এশার নামাজ পড়লাম। নামাজ পড়ার পরে খাজা মইনউদ্দিন চিশতী (রাঃ) এর মাজার জিয়ারত করতে যায়। এখানেই আমি সবচেয়ে অবাক হলাম। অবাক না বলে হতবাক বলা যায়। খাদেমদের অবস্থা দেখে আমি বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ি। ধান্দাবাজি করছেন একেকজন। সবচাইতে বেশি মন ক্ষুণ্ন হল তখনই যখন দেখলাম জিয়ারত করার সময় একজন খাদেম জিয়ারতকারীদেরকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দিচ্ছিল এবং গালি দিচ্ছিল। ক্ষুদ্ধ মন নিয়ে বের হয়ে এলাম। এরপর দেখলাম বিশাল বিশাল দুইটা পাতিল। একটি পাতিলে গরীব-মিসকিন এবং যারা সেখানে থাকেন তাদের জন্য খিচুড়ি রান্না করা হয়। অন্য আরেকটি পাতিলে মানতের টাকা, অন্যান্য জিনিসাদি ফেলা হয়। সবচাইতে বিস্মিত হলাম যখন দেখলাম মোবাইল মানত করে তা পাতিলের ভেতর ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।



মানুষের এসব কর্মকান্ড দেখে হাসতে হাসতে বাইরে বের হয়ে গেলাম। সবাই একসাথে ফিরে যাওয়ার জন্য কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম। পরে সোহেল স্যার বললেন চলে যেতে। হাঁটা শুরু করলাম। তিন রাস্তার একটা মোড়ে এসে রাস্তা ভুল করে অন্য রাস্তা দিয়ে চলে গেলাম। ভুলটা ছিল নাহিদের। আমি বার বার বলছিলাম রাস্তা ভুল হচ্ছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা! কিছুক্ষণ হাঁটার পর ঠিকই বুঝতে পারল রাস্তা ভুল হয়েছে। অপরিচিত দেশ, অপরিচিত মানুষ। তাই মনে একটু ভয় কাজ করছিল। আর রাস্তাগুলো ছিল একেবারেই নির্জন। যাইহোক পরে সঠিক রাস্তাটা খুঁজে পেলাম। অটো ট্যাক্সিতে করে বাস স্ট্যান্ডে চলে আসলাম। বাস স্ট্যান্ডে আসার পর বুঝলাম আমার পেট যেন কিছু চাইছে। জার্নি করতে করতে শরীর তখনই দুর্বল হয়ে পড়েছে। কিন্তু এদিকে বাকী ভাইয়ের সাথে যে গ্রুপটা ছিল তারা এখনো আসেনি। স্যাররা কিছুটা দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়েছিলেন। নির্দিষ্ট সময়ের প্রায় আধা ঘন্টা পর তারা ফিরে আসল। বাকী ভাই বললেন, ঐ গ্রুপের দু’তিনজন নাকি রাস্তা হারিয়ে ফেলেছিল। কথাটা তেমন বিশ্বাসযোগ্য মনে হল না। তাছাড়া সময় যত গড়াচ্ছিল বাকী ভাইয়ের উপর থেকে বিশ্বাস শব্দটাই উঠে যাছিল। বাকী ভাই আসার পরই রাতের খাবার দেওয়া হল। রাতের খাবার খেয়ে কি যে শান্তি লাগছিল। “পেট শান্তি তো দুনিয়া শান্তি” – প্রবাদটা চিরন্তণ সত্য। খাওয়া শেষ করে বাসে উঠে পড়লাম। জয়পুরে হোটেল ছাড়ার সময়ই বলে দেয়া হয়েছিল আগামী ৪দিন কোন হোটেলে উঠা হবে না। এই গরমে ৪দিন গোসল করতে পারব না ভেবে শরীরটা যেন ঝিমিয়ে পড়ছিল। কিন্তু আমাদের তো কিছুই করার নেই। তাই এটা সম্পর্কে পরে তেমন আর চিন্তা করলাম না। রাত ১১টায় বাস যাত্রা শুরু করল। এবারের গন্তব্য আগ্রা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.