নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিংশ শতাব্দীর কাদা মাটি মেখে বড় হয়েছি। ভূলে একবিংশ তে এসে পড়েছি।

ইএম সেলিম আহমেদ

প্রতিধ্বনি না হয়ে কণ্ঠস্বর হও.....

ইএম সেলিম আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভারতে পৌঁছে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে ৪৩৭ জন নিরীহ মাড়োয়ারিকে হত্যা - কুখ্যাত অপারেশন খরচাখাতা

১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২


ছবিঃ ইন্টারনেট

ট্রেনে করে নিরাপদে ভারতে পৌঁছে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে ৪৩৭ জন নিরীহ মাড়োয়ারির সম্প্রদায়ের হিন্দুদের কে কচুকাটা করা হয়েছিলো। যেদিন ছবির এই কালভার্ট আর রেললাইন পরিণত হয়েছিলো লাশের মহাসমুদ্রে।

কুখ্যাত অপারেশন খরচাখাতা এক ভয়ংকর অধ্যায়।

নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর শহরে বাস করতেন বিপুল সংখ্যক মাড়োয়ারি। ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে আসা হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক। যাঁরা ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের বহু আগেই ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে বাণিজ্যিক শহর সৈয়দপুরে এসে এই শহরে থেকে যান। এরা স্থানীয় হয়ে যান সৈয়দপুরেই।

মুক্তিযুদ্ধ শুরুর তিনদিন আগে ২৩ মার্চ রাত থেকে সৈয়দপুরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের দোসর সৈয়দপুরের বিহারিরা বাঙালি নিধন শুরু করে। মহল্লায়-মহল্লায় ঢুকে নেতৃস্থানীয় বাঙালিদের নির্বিচারে হত্যা করা হয়। এ অবস্থায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছিল শহরের মাড়োয়ারিপট্টির বাসিন্দাদের। ২৪ মার্চ থেকে সৈয়দপুর শহরের বাঙালি পরিবারগুলো পুরোপুরি অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।

সৈয়দপুরের বিশিষ্টজনদের সঙ্গে স্থানীয় মাড়োয়ারি সম্প্রদায়ের শীর্ষব্যক্তিত্ব তুলসীরাম আগরওয়ালা, যমুনাপ্রসাদ কেডিয়া, রামেশ্বর লাল আগরওয়ালাকে ১২ এপ্রিল রংপুর সেনানিবাসের অদূরে নিসবেতগঞ্জ বধ্যভূমিতে নিয়ে হত্যা করে পাকিস্তানি বাহিনী। মাড়োয়ারিপট্টিতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় বিহারিরা মাড়োয়ারিদের বাসায় বাসায় চালায় লুটতরাজ।

এর মধ্যে চলে এলো জুন মাস। জুন মাসের ৫ তারিখে হঠাৎই পাকিস্তানি বাহিনী মাইকে ঘোষণা শুরু করে। ঘোষণায় বলা হয়, "যাঁরা হিন্দু মাড়োয়ারি, তাঁদের নিরাপদ স্থান ভারতে পৌঁছে দেওয়া হবে। তাই একটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ট্রেনটি ১৩ জুন মাড়োয়ারিদের বর্ডার অব্দি পৌঁছে দিবে।"

তখনো কেউই অনুমান করতে পারেনি কি হবে সামনে, কি ভয়ংকর অধ্যায় আসছে তাঁদের সামনে। কল্পনা করলেও গা শিহরে উঠে। :((

৫ দিন ঘোষণা চলে আর এদিকে নিরীহ মাড়োয়ারীরা বুক বেঁধেছে আশায়। আগের রাত থেকেই সাড়ে চারশো এর বেশি মাড়োয়ারি অপেক্ষমান সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনে। ট্রেনে যদি জায়গা না পাওয়া যায় সেই আশঙ্কায় আগেই হাজির হয়ে গিয়েছিলেন মাড়োয়ারিরা। ভোর পাঁচটার দিকে ট্রেন আসতেই ট্রেনের চারটি বগিতে গাদাগাদি, হুড়োহুড়ি করে উঠে পড়েন মাড়োয়ারিরা। বাক্স পেটারা আর মানুষে পূর্ণ তখন ট্রেন। অপেক্ষা কখন ট্রেন ছাড়বে। ট্রেন ছাড়ার আর কতো দেরি। অপেক্ষার তর সইছেনা তাদের। মনে একদিকে উত্তেজনা, অন্যদিকে ভয় কাটিয়ে প্রাণভরে নিঃশ্বাস নেয়ার অপেক্ষা।

অবশেষে ১৩ই জুন নির্ধারিত সকাল ১০ টায় ট্রেনটি ছাড়ে। ট্রেন ছাড়ার পর সব জানালা-দরজা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছিলো। ট্রেনটি ধীরগতিতে দুই মাইলের মতো পথ অতিক্রম করার পর শহরের গোলাহাটের কাছে এসে থেমে যায়। সবাই আশ্চর্য হয়ে ভাবছে কী হলো, ট্রেন থেমে গেল কেন? কোনো সমস্যা হয়েছে নাকি! ভয় ও শঙ্কা দেখা দিলো তাদের চোখেমুখে।



ছবিঃ (ইন্টারনেট) গোলাহাটে মাড়োয়ারি শহীদদের স্বরণে তৈরী স্মৃতিস্তম্ভ

অন্যদিকে বিহারী ও রাজাকার ইজাহার আহমেদ, বিহারী নেতা কাইয়ুম খান ও বিপুলসংখ্যক বিহারী ও পাকিস্তান সেনাবাহিনী সৈন্য উপস্থিত তখন গোলাহাটে সেই ট্রেনটিরই অপেক্ষায়। ট্রেন থামতেই প্রতিটি বগির দরজা খুলে ভেতরে রামদা হাতে কয়েকজন বিহারি প্রবেশ করে, বাইরে তখন ভারী আগ্নেয়াস্ত্র হাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী গোটা এলাকা ঘিরে রেখেছে। যেন একজন মাড়োয়ারিও পালাতে না পারে। শুরু হয় রামদা দিয়ে কোপানো। মুহূর্তের মধ্যেই বীভৎস আর পৈশাচিক উৎসবে মেতে ওঠে বিহারীরা। কোনো কোনো লাশকে কয়েক টুকরো করে রেললাইনের চারপাশে ছুড়ে ফেলা হয়। নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় শিশুদের। :((

মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শহীদ হন ৪৩৭ জন নিরীহ মানুষ। ওই হত্যাযজ্ঞ থেকে কোনোরকমে আশ্চর্যজনকভাবে সেদিন প্রাণে বেঁচে যান মাত্র ১০ জন যুবক। তারা ট্রেন থেকে নেমে ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়ে দিনাজপুর হয়ে ভারতে পালিয়ে যান।


ছবিঃ (ইন্টারনেট) গোলাহাটে মাড়োয়ারি শহীদদের স্বরণে তৈরী স্মৃতিস্তম্ভ

১৩ই জুন নীলফামারীর কুখ্যাত গোলাহাট গণহত্যা দিবস। যাকে বলা হয় "অপারেশন খরচাখাতা"। বিনম্র শ্রদ্ধা রইলো শহীদদের প্রতি।
ট্রেনে করে নিরাপদে ভারতে পৌঁছে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে ৪৩৭ জন নিরীহ মানুষকে কচুকাটা করা হয়েছিলো। যেদিন ছবির এই কালভার্ট আর রেললাইন পরিণত হয়েছিলো লাশের মহাসমুদ্রে।

সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিম দিকে ৪৩৭ জন হিন্দু মাড়োয়ারি ‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌নৃশংস হত্যাযজ্ঞ এর কাহিনী ১৯৯০ সালে কুমিল্লা জেলা সরকারি গ্রন্থাগারে কোন একটি ম্যগাজিন পত্রিকায় বের হয়েছিল। এই নির্মম নির্যাতন ও খুনের কাহিনী শুনে রাতে খাবার খেতে পারিনি। মিথ্যা সাহায্য করার আশ্বাস দিয়ে, সুকৌশলে খুন, বিশ্বের বিরল ঘটনা। পাকিস্তানের শাসকদের এই পাপ কোন যুগেই ঘুচবে না। তাঁরা ভিখারি হবে, আফ্রিকান দরিদ্রদের চেয়ে বেশি দরিদ্র হবে, এমনটাই মনে হয়। ‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌জানিনা এমন নিকৃষ্ট কাজ করার সময় তাদের মনুষ্যত্ববোধ কোথায় ছিল?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.