নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এমদাদুল হক তুহিন

অনন্ত শুন্যতা ও একাকীত্বের মাঝে বেঁচে থাকা পথিক।

এমদাদুল হক তুহিন(ধ্রুব)

অনন্ত শুন্যতা ও একাকীত্বের মাঝে বেঁচে থাকা পথিক।

এমদাদুল হক তুহিন(ধ্রুব) › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাতের আঁধারে অসীমের ভালোবাসা

১৩ ই জুন, ২০১৩ রাত ১২:১৬

আচমকা মনে হল রাতেই কিছু একটা করে ফেলতে হবে। কি করা যায় ভেবে অস্থির হয়ে উঠল অসীমের অসীম সম মন। ভাবতে ভাবতে ঠিক করল কয়েক প্যাক মেরেই অতীতের কষ্টগুলোকে স্মৃতিচারণ করা যাবে।



শুরু হল একে একে এক দুই তিন... এভাবে কয় প্যাক খেল, তার আর মনে নেই। হালকা দুলছে টলছে আর গাইছে...



""একলা মানুষ মাতৃগর্ভে একলা মানুষ চিতায়

একলা পুরুষ কর্তব্যে একলা পুরুষ পিতায়

আর মধ্যিখানের বাকিটা সময়

একলা না থাকার অভিনয়



যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে,

তবেই নাকি একলা চলতে হয়!""




না, অসীমের তো একলা থাকার কথা ছিল না। তাকে অসীম এই পৃথিবী অনেক কিছুই দিয়েছে। একে একে দু চারটা প্রেম তো করেছেই, আর ও কত কি!



সেই ছোট্ট বেলা থেকে একে একে বন্যা, লাবণ্য, আরও কতজনের সাথে সাথে তার প্রনয় হয়েছে তার কোন ইয়ত্তা নেই। সে ছোট্ট বেলায় কত ললনার মাথায় কদমের ফুল গুছে দিয়েছে হিসাব করতে গেলে আজিকার মত সহস্র রাত কেটে যাবে। তাহলে আজ কেন এই একাকী প্রহর গুনছে সে! না এখন তার একটাই নেশা, একটাই পেশা! যে করেই হোক তাকে আকাশের মতই অসীম হতে হবে। হতে হবে শহরের এক নম্বর বিজনেস ম্যান। তাকে দেখলেই মানুষ সাহায্য পেতে উদগ্রীব হয়ে তার কাছে এসে হাজির হবে আর বলবে-



স্যার, আপনার মত মহান মানুষ ক জনা আছে এই ধরায়!

মেয়ের বিয়ের জন্যে কয়েকটা টাকার অভাবে লুটিয়ে পরলেন অসীমের চরণে।

অসীম আনন্দে আত্মহারা হয়ে বললেন- কি করছে আপনি?

টাকা পয়সাতে আমার কোন সমস্যা নাই, কত লাগবে নিয়ে যাবেন।



এমন চিন্তা করে এখন অসীমের দিন রাত্রি কাটে। অসীম খুব বাজে মানুষ তাও বলা যাবে না। টাকাও হয়েছে এখন অনেক, তবে এখনও তেমন নাম ঢাক হয়ে উঠে নি। এলাকায় কিছু দান করেন নিয়মিত, তবে তার নাম ঢাক শহরে এখনও নাম না ছড়ালেও বন্ধু-মহলে প্রশংসা প্রকট।



আজকে কয়েক প্যাক মদে তাকে মোটেও ধরে নি! তবে ভাব করছে এমন যেন, সে পুরাই মাতাল। সেই ভঙ্গিমায় তার এক পুরাতন মানে এক্স গার্ল ফ্রেন্ডকে ফোন দিল। গার্ল ফ্রেন্ড বললেও তা ভুল বলা হবে। এক কালে এই মেয়ের সাথে এমন কিছু নেই যা সে করে নি। যদিও এর মধ্যে ভালোবাসারও ঘটতি ছিল না এক বিন্দুও , তবে যৌনতাটাই বেশি প্রাধান্য পেত। এক সাথে একই রুমে বসে কখনো মদ কখনো বা ইয়াবা সেবনে তারা কম যায় নি। একই সাথে চলেছে প্রেম-লীলা, আদি-খেলা আবার জীবনের কড়া সব হিসাব নিকাশ। ফোন কানে নিয়েই অসীম সেই আগের দিনের প্রেমময় সময়ে যেন হারিয়ে গেল।



- হ্যালো, মুনা।

- হ্যাঁ, এত রাতে তুমি! তাও আবার এত দিন পর।

- খুব অবাক হয়েছ নাকি?

- তা তো বটেই। তো কি মনে করে।

- এইতো তোমার কথা খুব মনে পড়ছিল।

- তুমি ড্রিঙ্ক করেছ নাকি? কথায় অনেক মাদকতার সুর ভেসে আসছে।

- তা তো মাঝেমধ্যেই হয়। তবে আজ ইচ্ছে করেই একটু বেশি করলাম। ভাবলাম, আজ কাউকে মনে করব, যে এখনও আমায়...

- কি!

- না থাক!

- থাকবে কেন? সে কি করে তোমায়?

- না মানে ইয়ে।

- এমন থ ত বত কড়ছ কেন?বলে ফেল। জানি আজ তোমার মনের গহীনে অন্য কোন বদ চিন্তা আছে।

- শুনো, আজ না তোমায় খুব মনে পড়ছে। ভাবছিলাম তোমার সাথে ড্রিঙ্ক করে মাদকতায় আজকের রাত পার করবো।

- সে হবে না। উনি বাসায় আছেন। পাশের রুমেই হিসাব নিকাশে ব্যস্ত।

- তো এক কাজ করো না। ওকে বলে আমার এখানে চলে আসো।

- কি বলার আছে, সরাসরি বল।

- তুমি কি আগের মতই আছো?



ঠিক পাঁচ মিনিট উভয়েই স্তব্ধ, নিস্তব্ধ নিশ্চুপ হয়ে রইল। মনে হল কি অবসাদে ঢেকে গেছে এই পৃথিবী! নেই কোন কোলাহল, নেই কোন সাড়া শব্দ! এমনি অন্ধকারেই কেটে যাবে হাজারো অব্দ!

মুনাই স্তব্ধতা ভেঙ্গে সাড়া দিল।



void(1);



- খুব একা লাগছে কি তোমার?

- জানি না। তবে চারপাশ শুধুই অন্ধকার!

- কেন এমনটা করেছিলে সেদিন? আমি কতবার বললাম, আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচব না আর তুমি কোন উত্তর না দিয়েই হেঁটে গেলে অচেনা রাস্তায়।

- জানি, ভুলটা একা আমার ছিল না। তোমার সাথে আমার কমিটমেন্ট ছিল, পাঁচ বছর পর দুজন একই পিড়িতে বসব। কিন্তু...

- দেখো ইচ্ছে থাকলে তখনই তা তোমার দ্বারা সম্ভব ছিল। সব কিছু টাকার বিনিময়ে হয় না বা টাকা দিয়ে হয় না।



বলে রাখা ভালো, মুনা বলতে কেউ নেই। এটা অসীমের দেওয়া নাম, এই পৃথিবীর তৃতীয় কেউ তা জানে না। মুনিমা থেকে শর্টকাট মুনা। অসীমের মতে মুনিমাকে দেখতে নাকি ঠিক চাঁদের মতই দেখায়, যেখানেই মুনিমা যায় সেখানেই সে চাঁদের মত আলো বিলিয়ে দেয়। তার আলোয় আলোকিত হয় তার চতুঃপার্শ্ব। এই যেমন এখন মুনিমার সাথে যার বিয়ে হয়েছে তার একসময় নুন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থা ছিল আর এখন সে তার এলাকার সব থেকে রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী। অবশ্য মুনিমার স্বামী ব্যবসায় টাকা পয়সা কামানোর পর সেই টাকা ভাঙ্গার রাস্তা হিসাবে রাজনীতিকে ব্যবহার করছে। এত পরিমাণ কামিয়েছে যে কোথায় ব্যয় করবে সেই টাকা তার যেন খাতই খুঁজে পাচ্ছিল না। অবশেষে এক মন্ত্রীর হাত ধরে মুনিমার জামাইয়ের সেই রাস্তা পাকা হয়। অন্য দিকে দীর্ঘ পাঁচ বছরের সংসারে এখনও মুনিমার ঘর আলোকিত করে কোন সন্তান আসে নি, ফুটে উঠে নি কোন লাল গোলাপ! তাইতো মুনিমাও এই বিয়ের জন্য নিজেকেই দোষারোপ করে যায়, নিজের ভাগ্যকে দোষ দেয়। কপাল থাপড়ায়। কিন্তু ঘূর্ণাক্ষরেও তাকে ব্যতীত তা কেউ জানে না। আর এই কারণেই মুনিমা এখনও যোগাযোগ রেখে চলছে অসীমের ছায়াতলে। ঠিক তেমনি অসীমের অবিবাহিত জীবনে কখনো বা সুখের পরশ পাথর হয়ে ধরা দেয় তার বুকে লালিত সেই মুনা, যার বয়স ছিল ২০ বা ২১; দুজনেরই ইচ্ছে ছিল বিয়ে করবে, কিন্তু কেন যে এমন হল...



- মুনা, আমি আসলে কি তা আমি নিজেই জানি না!

- দেখো, নিজেকে অসীমের মত বিশাল ভেবে আর কতকাল পার করবে? বিয়ে করে ফেল।

- কাকে করবো? যে দিন তোমায় হারিয়েছি সেদিন থেকে ও শব্দটা আর একদিনের জন্যেও আমি মুখে আনি নি। বাবা মা কত চেষ্টা করেছেন, কত আয়োজন। অবশেষে আজকের এই ছন্নছাড়া আমি!

- কিন্তু, আর কতকাল?

- যতদিন আছি, যতদিন রবে এই পৃথিবীতে ভালোবাসার আকাল।

- দেখো, অসীম। আমি একজনের বিবাহিতা স্ত্রী। তোমার মনের রানী। তুমিও আমার প্রাণের পুরুষ। কিন্তু এভাবে আর কত...!

- হয়ত যে দিন আমি হারিয়ে যাবো এই পৃথিবী হতে, সে দিনই তার শেষ। তবে বিয়ে আমি করছি না।

- কি সব জটিল কথা বলছো। সব গুলিয়ে যাচ্ছে।

- জটিল এই নিয়মের ঘোরে আমিতে আমি নেই, তুমিতেও নও তুমি...! অথচ কতটা ভালবেসেছি একে অপরকে, দুজন দুজনায়। নিয়মের ছল-চতুরে আবারও হারায়, চল আজ অজানায়। কি হবে, এই নিয়ম মেনে??

- কি বলছ, কি এই সব?

- সেই প্রথম দিনের মত, সেই প্রথম ক্ষণের মত; তোমার আলতো চুলের গন্ধ শুকে , চুলগুলোর ঐ বেণী খুলে জড়িরে নেব তোমায়। নিয়ে যাবো আরও গহীনে... যেখানেতে দেখতে পাবে আমারও নয়নে।

- বাজে মাদকতা রাখো। মনে নেই যে দিন তোমায় প্রথম আলিঙ্গন করতে আমি আমার সমস্ত উজাড় করে দিয়েছিলাম সেদিন কি বলেছিলে...? কিন্তু কই তার প্রতিফলন? আমি তো হতে পারলাম না তোমার ঘরের গহনা!

- দেখো সেটা ভুল ,সেটা দুজনারই ভুল। অতি মাত্রায় ভালোবাসার ফলশ্রুতিতে পাবার আখাঙ্কা তীব্র স্বত্বেও দুজনেই ছিলুম প্রচণ্ড ইগোস্টিক! তাইতো সেই ক্ষণে অপেক্ষা করো নি তুমিও, আমিও! জাস্ট একটি ভুলের জন্য, জাস্ট অয়ানলি ওয়ান রং।

- বাদ দাও, সে সব। তুমি কম যাও নি।

- আমি আমার কথা বলি নি। এমনটা বললে সে দিনকার মত আজও ভুল করে বসবে।

- বুঝতে পেরেছ কেন আমরা দু জনে এক হয় নি।

- হুম, বুঝতে পারলাম। আচ্ছা যাই হোক, মুনা আজ আমি সেই আগের মত শুধু আজকের রাত্রির জন্য সেই তোমাকে চাই। তুমি কি হবে আমার। দুজনে হাঁটব আবার। একই রাস্তায়, একই আস্তায়, একই ভালোবাসায়।

- চলে এসো আমারই আঙিনায়, যে দিন দিয়েছিলাম সেই প্রথম চুম্বন, সেই প্রথমও আলিঙ্গন, আজও হোক তোমারই সাথে তোমারই হাত ধরে তোমারি ভালোবাসায়।

- একটু এ দিকে, একটু ঐ দিকে করে এসে গেছি তোমারি ধারে।

- ফিরে আসো আমারি ভালোবাসায় বারেবারে।



এই রাখি আসছি, একটু ওয়েট। ওকে, আমিও প্রতীক্ষায়।

এমন করে এক মিনিট দু মিনিট করে একশ মিনিট হবে, তারপরও অসীমের আসার কোন সময় হয়ে উঠে না এমন রাতে। ১ ঘণ্টা ২ ঘণ্টা করে পুরো রাত কেটে যাবে, আর ভোর বেলায় আবারও ফোন করে বলবে;

হ্যালো, মুনা এতো আমাদের সেই দিনে ফিরে চলা, সেই ক্ষণ। জাস্ট ফিল এর বেশি কিছু নয়। মুনাও ঠিক একই রকম উত্তর দিয়ে ঘুমাতে যাবে... এমনি করে চলছে বহুকাল, বহুবছর, বহু ক্ষণ!



আমার লেখা প্রথম ছোটগল্প ""বৃষ্টি ভেজা রাতে একটি চুমোর অপেক্ষায়!"" আশা করি ঘুরে আসবেন।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই জুন, ২০১৩ রাত ১:০২

রক্তাক্ত-আমি বলেছেন: সময়ের ব্যপ্তিগুলোকে সম্বোধন করাটা সুন্দর লেগেছে... :-)

১৩ ই জুন, ২০১৩ রাত ১:০৮

এমদাদুল হক তুহিন(ধ্রুব) বলেছেন: ধন্যবাদ, জেনে ভালো লাগলো।

প্রথম কমেন্ট করার জন্যে অসংখ্য ভালোবাসা রইল আপনার প্রতি।

২| ১৩ ই জুন, ২০১৩ রাত ১:১৭

মুশাসি বলেছেন: অসাধারন গল্প। অনেকদিন এমন সুন্দর গল্প পড়ি না
+++++

১৩ ই জুন, ২০১৩ রাত ১:৫০

এমদাদুল হক তুহিন(ধ্রুব) বলেছেন: জেনে ভালো লাগলো যে, আপনার হৃদয় ছুটে পেরেছে।
ধন্যবাদ, প্লাস দেওয়ায়।
ভালোবাসা ও শুভ কামনা জানবেন।

৩| ১৩ ই জুন, ২০১৩ রাত ১:৩৪

মুশাসি বলেছেন: ""বৃষ্টি ভেজা রাতে একটি চুমোর অপেক্ষায়! ও ভালো লাগলো

১৩ ই জুন, ২০১৩ রাত ১:৫১

এমদাদুল হক তুহিন(ধ্রুব) বলেছেন: জনাবের ভালো লেগেছে জেনে আমি মোহিত।
ধইন্যা পাতার শুভেচ্ছা।

৪| ১৩ ই জুন, ২০১৩ ভোর ৪:১৯

ভূতাত্মা বলেছেন: ভূতাত্মারা সারাজীবন একলা চলে... :(

তবে ধইন্যা গাছের মালিক কিন্তু আমি!! :-B

১৩ ই জুন, ২০১৩ ভোর ৪:২১

এমদাদুল হক তুহিন(ধ্রুব) বলেছেন: বুঝবার হারলাম।

তাইলে আমাদের ধইন্যা হাতা কোতায়?? :)

৫| ১৩ ই জুন, ২০১৩ বিকাল ৩:১৮

ভূতাত্মা বলেছেন: তবে, রাতের আঁধারে অসীমের ভালোবাসার চাইতে রাতের আঁধারে ভূতাত্মাদের চলাফেরা বেশী বাস্তবসম্মত!!! :-B

১৪ ই জুন, ২০১৩ ভোর ৪:০২

এমদাদুল হক তুহিন(ধ্রুব) বলেছেন: চিন্তা করছি ভূতাত্মা নিয়ে কিছু লিখতে পারি কিনা। দেখা যাক ইচ্ছে আছে।

চলাফেরা করুণ অবিরত, মাঝে মাঝে সেই অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করতে ভুলবেন না কিন্তু! :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.