নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আপাতত বেকার। বই পড়তে ভালো লাগে। পড়ি। শখের মধ্যে বলতে গেলে আর দশজনের যেসব থাকে আমারো তাই। গান, মুভি,বই। হ্যা, ঘুরতে বেশ লাগে। অবশ্যই যাত্রা সঙ্গী পরিচিত বন্ধু তালিকার কেউ হতে হবে।নতুবা, ঘরের এক পাশে শুয়ে বই পড়াটা বেশি পছন্দের।

এস এম ইমন

অতি সাধারণ মানুষ..

এস এম ইমন › বিস্তারিত পোস্টঃ

"নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে,রয়েছো নয়নে নয়নে"

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:৪৪



কিছুদিন আগে ঘুরতে গিয়েছিলাম হুমায়ূন আহমেদের 'নুহাশ পল্লীতে'।যাত্রা শুরু উত্তরা থেকে। আমি সাথে তারেক।তারেক চাচাতো ভাই। দুজনেরই প্রথম দফায় নুহাশ পল্লী ভ্রমন।যাত্রা শুরু করলাম সকালে। উত্তরা থেকে গাজীপুরের হোতাপাড়া বাস-স্ট্যান্ড।সহজ পথ। ওইখানে গেলে অটো-রিক্সা বা রিক্সার ব্যবস্থা আছে।


রাস্তা অতি খারাপ। অতি খারাপ রাস্তা পাড়ি দিয়ে হুমায়ূন আহমেদের নিবাসে পৌছালাম। গেট থেকে ঢোকার মুখে একটা টেবিল নিয়ে বসে ছিল বয়স্ক একজন। ফিনফিনে গড়নের। সাদা গোফ। তার কথা সোজা সাপ্টা এবং রসকষহীন কিন্ত মনে মায়া আছে। আমাদের টিকিটের দাম কম নিয়েছিল। টিকেট কাউন্টারের দায়িত্বে সে। তার কাছ থেকে টিকেট নিয়েই ঢুকে পড়লাম প্রিয় লেখকের নিজের হাতে সাজানো স্বর্গে। উৎসাহ তখন তুঙ্গে। যা দেখি ভালো লাগে। ছুয়ে দেখতে ইচ্ছে হয়। ছবি তুলতে ইচ্ছে হয়। ঘাস দেখলেও মনে হয় এরকম ঘাস আর কোথাও নেই। ঘাসের ছবি তুলি ।


অবস্থা এমন দাড়ালো। যা দেখছি ছবি তুলে রাখছি। কিন্ত মন দিয়ে অনুভব করতে পারছি না। সে জিনিস টা মাথায় ও নেই। কত আদর করে এক একটা গাছ লাগানো। তার পরিচর্যা করা। তাদের সাথে হুমায়ূন আহমেদ এর একান্তে কথা বলা। সব ভুলে গিয়েছি। ছবি তোলা নেশা হয়ে গিয়েছে। ছবি তুলতে তুলতে এক পর্যায়ে গিয়ে পড়লাম একটা ছোট্ট মূর্তীর কাছে। মূর্তীর এক হাত ই ভাঙ্গা। মাটির মূর্তী। ছোট একটা ছেলে সামনে রাখা একটা পাখির বাসার দিকে চেয়ে আছে। ছেলেটার চেহারায় মায়ার অনেক। দেখলে বোঝা যায় কতটা অযত্নে রয়েছে মূর্তি টা।চোখের নিচে ক্ষয়ে গিয়েছে। হুমায়ূন আহমেদ থাকলে মূর্তী যত্নে থাকত। একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম। প্রথম হুমায়ূন আহমেদ এর অভাব তার নিবাসে অনুভব করলাম। মাথায় আসলো এখানে আসার পর থেকে কেমন যান্ত্রিক হয়ে আছি। দুঃখের বিষয়। ছবি তোলা কমিয়ে সব কিছু ভালো করে মনে গেঁথে নিতে লাগলা।

অনেক গুলো পুরোনো গাছ। এই গাছ গুলোর সাথে দাঁড়িয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা পার করত হুমায়ূন আহমেদ। মনে মনে কথা বলতে লাগলাম গাছ গুলোর সাথে।

কি রে কেমন আছিস তোরা?

উত্তর নেই। তবে,গাছ গুলোর ছায়া যেন একটু হীম হলো। আস্তে আস্তে এইভাবে ঘুরতে লাগলাম। গাছের সাথে মনে মনে কথা বলি। মাঝে মধ্যে ছবি তুলে নেই ওদের।


কিছুদূর হাটতে সামনে দেখলাম একটা দীঘি। মাঝারি আকৃতি থেকে কিছুটা বড়। দীঘির মাঝে ছোট একটা দীপ। দীপে যাওয়ার জন্য একটা পুল আছে। কাঠের পুল। পুলের শেষ অংশ ভাঙ্গা। দ্বীপ ছোট। আট নয়জন লোক বসে আড্ডা দেওয়ার জন্য। আমরা ও গিয়েছিলাম ওই দ্বীপে।


পুলের পাশেই একটা স্মৃতিফলক। "দীঘি লীলাবতী " লেখা। কি সুন্দর নাম! নিচে লেখা "নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে, রয়েছো নয়নে নয়নে।" রবি ঠাকুরের গানের লাইন। গান টা অতি প্রিয়।

"লীলাবতীর মৃত্যু " শিরনামে অনেক আগে একটা গল্প পড়েছিলাম হুমায়ূন আহমেদের এর ই। গল্পের কেন্দ্র ছিল তার এবং শাওনের প্রথম সন্তান লীলাবতীর মৃত্যু নিয়ে।খুব খারাপ লেগেছিল গল্প পড়ে। গল্পটা মনে দাগ কেটেছিল। গভির দাগ। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে মনে করতে লাগলাম লীলাবতীর কথা। পৃথিবীর সমস্ত রুপ নিয়ে যার জন্ম হয়েছিল। কিন্ত পৃথিবীর আলো তার দেখা হলো না। দিঘী লীলাবতী ভালো লাগল। তার পাড় গুলো ভালো লাগলো। শ্বেত পাথর দিয়ে বাধানো ঘাটলা ভালো লাগল।

তার পাশে ছিল "ভূত বিলাস " বাংলো। সুন্দর চেহারা বাংলোর।সাজানো গোছানো। আমাদের ভিতরে ঢোকার অনুমতি ছিল না।স্পেশাল ভিজিটর দের সংরক্ষিত। এইটার নাম ভূত বিলাস দেওয়ার কোন যুক্তি পেলাম না আপাদ দৃষ্টিতে।


আমি আর তারেক ঘুরে দেখলাম সমগ্র নুহাশ পল্লী। দেখতে দেখতে দুপুর গড়িয়ে গেল। ফেরার পালা। ফেরার জন্য তৈরি হলাম দুজনে। আসার পালা অর্থাৎ বাড়ির মালিকের থেকে বিদায় নিয়ে আসা দরকার। কিছুটা দূরে শায়িত ছিল মালিক। হুমায়ূন আহমেদ এর সমাধি দর্শন হলো প্রথম বারের মত।


চারপাশে সবুজ গাছ। কালো দেওয়াল এর সীমানা দেওয়া কবরের কিছুটা দূর থেকে। তার একদম বক্ষে শ্বেত পাথরের কবর। নুহাশ পল্লীর মাটির ঘরে শুয়ে আছেন নন্দিত লেখক "হুমায়ূন আহমেদ"। প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ। তার নাম খোদাই করে লেখা কাচের স্মৃতিফলক এ। সাথে লেখা দুটি লাইন, যা সবার নজর কাড়বে ই

"চরণ ধরিতে দিয়ো গো আমারে
নিয়ো না নিয়ো না সরায়ে ."


প্রতি পূর্নিমা রাত্তিরে জোৎস্নায় ভাসে নুহাশ পল্লীর এক পাশে স্থাপিত জাদুকরের কবর। উথালপাতাল জোৎস্নায় মন খারাপ হয় প্রত্যেকটি গাছের।বাতাস ভারী হয়। হয়ত ওপার থেকে গভির মমতায় চেয়ে দেখেন এই জোৎস্নার মায়াময়ীতা। মন খারাপ করেন। আনন্দে আত্মহারা হন। ওখানে হিমু -মিসির আলীদের সাথে বিলাস করেন প্রত্যেকটি বৃষ্টির দিন।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৩:০৯

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: খুব সুন্দর লিখেছেন।অনেক ভাল লাগল।
লেখার সাথে ছবি দিলে আরও ভাল লাগত।

২| ০২ রা মে, ২০১৮ দুপুর ২:১৯

এস এম ইমন বলেছেন: ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য এবং সাজেশান এর জন্য .. :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.