![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিজের অজ্ঞতা নিজের কাছে যতই ধরা পড়ছে প্রচলিত বিশ্বাসের প্রতি ততই অবিশ্বাস জন্মাছে!
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জটিল প্রেক্ষাপটে একটি দেশের অবস্থান প্রায়শই নির্ধারিত হয় সুদূরপ্রসারী কৌশল ও নিপুণ কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে পাল্টা শুল্ক হার সংশোধন করে বাংলাদেশের জন্য ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে আনার ঘটনাটি তেমনই এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এই শুল্ক হ্রাসকে "গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক বিজয়" হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে, যা মূলত অভ্যন্তরীণভাবে জনগণকে আশ্বস্ত করার এবং সরকারের কূটনৈতিক সফলতার দাবি জানানোর একটি কৌশলগত দিক।
তবে এই সাফল্য আসলে একটি বৃহত্তর বাণিজ্য নীতির অংশ, যা বিশ্বব্যাপী অনেক দেশের জন্যই প্রযোজ্য। ১৫ থেকে ২০ শতাংশের এই শুল্ক রেঞ্জের মধ্যে বাংলাদেশের মতো সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটের অন্তত ৪৬টি দেশ অন্তর্ভুক্ত, যার মধ্যে আফগানিস্তান, বলিভিয়া, ক্যামেরুন, ইথিওপিয়া, ঘানা, মালাউই, নাইজেরিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড এবং ফিলিপাইনের মতো দেশগুলোও রয়েছে।
এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই, কারণ যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব বাণিজ্য প্রতিযোগিতায় দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, আফ্রিকা কিংবা লাতিন আমেরিকার তুলনামূলক অনুরূপ দেশগুলোকে একটি নির্দিষ্ট মাত্রার মধ্যে নিয়ে এসেছে। আন্তর্জাতিক নীতিনির্ধারক রাষ্ট্রগুলো প্রায়শই এমন নীতি অনুসরণ করে, যাতে বিস্তৃত গোষ্ঠীভিত্তিক দেশসমূহ একই রকম বাণিজ্যিক বাধার মুখোমুখি হয়।
বাংলাদেশ এক্ষেত্রে এককভাবে কোনো বিশেষ সুবিধা পায়নি, বরং তার প্রধান প্রতিযোগীদের সমান অবস্থানে থাকার সুযোগ পেয়েছে। এক্ষেত্রে "বিজয়" আসলে প্রতিদ্বন্দ্বীদের থেকে পিছিয়ে না পড়া এবং বড় ধরনের বিপর্যয় এড়ানোকেই বোঝায়। বিজিএমইএ সভাপতির মন্তব্য, "পাল্টা শুল্ক প্রতিযোগীদের সমান এটাই স্বস্তির", এই বাস্তবতাকে সবচেয়ে ভালোভাবে তুলে ধরেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক নীতি মূলত একটি বৃহত্তর বাণিজ্য যুদ্ধের অংশ, যা ট্রাম্প প্রশাসনের সময় থেকে শুরু হয়েছে। এই নীতির মূল লক্ষ্য হলো আমেরিকার বাজারকে বিদেশি পণ্যের আগ্রাসন থেকে রক্ষা করা এবং দেশের অভ্যন্তরীণ শিল্পকে শক্তিশালী করা। এর ফলস্বরূপ বিশ্বের অনেক দেশই নতুন করে শুল্কের মুখোমুখি হয়।
বাংলাদেশ ছাড়াও শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম এবং ভারতের মতো দেশগুলোও একই ধরনের শুল্ক কাঠামোর আওতায় এসেছে। উদাহরণস্বরূপ, শ্রীলঙ্কার শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে কমে ২০ শতাংশে এবং পাকিস্তানের ২৯ শতাংশ থেকে কমে ১৯ শতাংশে নেমে এসেছে। এমনকি বাংলাদেশের প্রধান প্রতিযোগী ভিয়েতনামের শুল্কও ২০ শতাংশ এবং ভারতের ২৫ শতাংশে রয়েছে।
এই তথ্যগুলো থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, বাংলাদেশ কোনো একক বিশেষ সুবিধা পায়নি; বরং এটি একটি সামগ্রিক নীতির অংশ, যার ফলে প্রায় সব দেশই একটি নির্দিষ্ট শুল্ক হারের আওতায় এসেছে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জন্য স্বস্তির বিষয় হলো, তার প্রধান প্রতিযোগী ভিয়েতনামের সাথে শুল্ক হার সমান রয়েছে, যা প্রতিযোগিতামূলক সমতা বজায় রাখতে সহায়ক হবে।
এই শুল্ক হ্রাসের পেছনে বাংলাদেশ কী দিয়েছে, সে প্রশ্নটিও গভীরভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম, তুলা এবং বিমান আমদানির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো ২৫টি বোয়িং বিমান কেনার চুক্তি, যার আনুমানিক ব্যয় প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। এই চুক্তি কেবল বাণিজ্যিক লেনদেনেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি একটি কৌশলগত পদক্ষেপও বটে, যা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করতে সাহায্য করবে।
এছাড়াও, বাংলাদেশ এক সময় ইউরোপীয় এয়ারবাস কেনার চিন্তা করলেও, সেই পরিকল্পনা থেকে সরে এসে বোয়িংকে বেছে নেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত নিশ্চিত করে যে, বাংলাদেশ তার বাণিজ্য কূটনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ককে বিশেষভাবে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। একই সাথে, প্রেস সচিবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, এই শুল্ক হ্রাসের জন্য বাংলাদেশ দেশের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে কোনো চুক্তি করেনি।
এই অভিজ্ঞতা থেকে বাংলাদেশের জন্য তিনটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা পাওয়া যায়। প্রথমত, রপ্তানি খাতের বৈচিত্র্য আনা অত্যন্ত জরুরি। বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের একটি বড় অংশ এখনও তৈরি পোশাক খাতের ওপর নির্ভরশীল, যা দেশের অর্থনীতিকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়। দ্বিতীয়ত, বাণিজ্য, কর ও বিনিয়োগ নীতিতে কার্যকর সংস্কার আনতে হবে, যাতে দেশ বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারে এবং বৈশ্বিক প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা বাড়াতে পারে। তৃতীয়ত, এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার উদীয়মান অর্থনীতিগুলোর সাথে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করা উচিত, যা ভবিষ্যতের সংরক্ষণবাদী চাপ থেকে রক্ষা করবে এবং বিকল্প রপ্তানি প্রবাহ তৈরি করতে সহায়ক হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক কাঠামো পুনর্বিন্যাসে বাংলাদেশের জন্য কোনো চমক বা সর্বনাশ কোনটিই ঘটেনি। প্রতিযোগীদের সঙ্গে সমতা বজায় রাখা বৈশ্বিক বাণিজ্যে টিকে থাকার জন্য একটি স্বল্পমেয়াদী সফলতা এনেছে। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন পাল্টা শুল্ক কাঠামোয় বাংলাদেশের জন্য "বিজয়" শব্দটি যতটা না সুনির্দিষ্ট অর্জনের প্রতীক, তার চেয়েও বেশি এটি প্রতিযোগিতায় সমতা, আত্মবিশ্বাস এবং আগামী দিনের কৌশলগত প্রস্তুতির বার্তা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হলো—দেশের স্বার্থে আপস নয়, বরং কূটনৈতিক ভারসাম্য এবং বৈচিত্র্যই হতে হবে আমাদের কৌশলের মূলভিত্তি।
---
০১ লা আগস্ট, ২০২৫ বিকাল ৫:২০
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: সামনের পাতায় আপনাকে দেখা যায় না কেন ? কে আপনার বারোটা বাজিয়েছে ?
২| ০১ লা আগস্ট, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬
কলিমুদ্দি দফাদার বলেছেন: ইউনুস সাহেব ও দেখি রাজনীতিবিদের মত কথা কয়!
০১ লা আগস্ট, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:১০
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: সব শিখে ফেলেছেন ।
৩| ০১ লা আগস্ট, ২০২৫ রাত ১০:২১
জুল ভার্ন বলেছেন: ধীরে বন্ধু ধীরে, হিসাব এখনো অনেক বাকী......
০১ লা আগস্ট, ২০২৫ রাত ১০:৫৩
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: ওয়েট করছি ...
৪| ০১ লা আগস্ট, ২০২৫ রাত ১০:৫৯
কামাল১৮ বলেছেন: আপনাকে লেখা মন্তব্যটি ইপিআরে পোষ্ট করে ফেলেছি।
০১ লা আগস্ট, ২০২৫ রাত ১১:০৪
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: আমি সেখানে আপনাকে মেনশন করে লিখেছি ।
৫| ০১ লা আগস্ট, ২০২৫ রাত ১১:১২
শ্রাবণধারা বলেছেন: মন্দের ভাল খবর সন্দেহ নেই, তাই বলে এটাতে বাজিমাত হওয়ার মত কোন ঘটনা ঘটেনি।
আর ট্রাম্প ট্যারিফের প্রশ্নে বাংলাদেশের সাথে ভারত এমনকি পাকিস্তানও তুলনীয় নয়, কেননা ভারত বা পাকিস্তান আমাদের মত ইউএন এর "Least Developed Countries" তালিকাভুক্ত নয়। আমাদের সাথে তুলনীয় আফগানিস্তান, নেপাল, শ্রীলংকা, কম্বোডিয়া এবং আফ্রিকার দেশগুলি।
০১ লা আগস্ট, ২০২৫ রাত ১১:২৫
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: ভারত ১৫ বিলিয়ন আর পাকিস্তান ১২ বিলিয়নের মতো গারমেনটস থেকে আয় করে । বাংলাদেশে আগে থেকেই ৩৮-৪০ বিলিয়ন আয় করে । ভিয়েতনাম ৪৫ বিলিয়নের মতো আয় করে । মন্দের ভালো এই কারনে যে আমরা পিছিয়ে পড়বো না । কমপিটিশনে টিকে আছি ।
৬| ০২ রা আগস্ট, ২০২৫ রাত ৩:১২
স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: এই বানিজ্য চুক্তি করতে গিয়ে
আমরা আমাদের ক্রয়নীতি ,রাজনীতি তে নতজানু
অবস্হা প্রদর্শন করেছি ।
এমন কি সেনাবাহীনির কার্যক্রমকে ফ্রেম বন্দী করেছি ???
©somewhere in net ltd.
১|
০১ লা আগস্ট, ২০২৫ বিকাল ৫:১৪
মেঠোপথ২৩ বলেছেন: ইউনুস ম্যজিক বিশ্বাস করেন আর না করেন বাস্তবতা হচ্ছে পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আমেরিকা এখন এক জোটে