নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আপাতত বেকার। বই পড়তে ভালো লাগে। পড়ি। শখের মধ্যে বলতে গেলে আর দশজনের যেসব থাকে আমারো তাই। গান, মুভি,বই। হ্যা, ঘুরতে বেশ লাগে। অবশ্যই যাত্রা সঙ্গী পরিচিত বন্ধু তালিকার কেউ হতে হবে।নতুবা, ঘরের এক পাশে শুয়ে বই পড়াটা বেশি পছন্দের।

এস এম ইমন

অতি সাধারণ মানুষ..

এস এম ইমন › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্মৃতিচারণ.. (স্কুলের প্রথমদিন)

০২ রা মে, ২০১৮ দুপুর ২:৩৭


দাদার সাথে স্কুলে যাচ্ছি। উদ্দেশ্য ভর্তি হব।ক্লাস টু' তে।দাদা গ্রামের মোটামুটি সম্মানীয় লোক।কোথাও গেলে সাথে চার-পাঁচজন জুটে যায়। সেদিন ছিল তিনজন।একজন কে চিনি। বাকি দু'জন অপরিচিত। তাদের দাড়ি ধবধবে সাদা।পরিচিত জন ক্লিন শেভড। চেহারায় যদিও বয়সের ছাপ অন্যদের থেকে বেশি। আমি তাদের সামনে সামনে হাটছি। আমি এই স্কুল চিনি। আগে স্কুলের মাঠে ষাঁড়ের লড়াই দেখতে এসেছি। মাঠের ওপারের একতলা ভবনে আমি ভর্তি হব। সে জ্ঞান আছে। ভ্যান থেকে তাই প্রথমে বুড়ো লোকগুলোর সান্নিধ্য এড়িয়ে চলছি। সারামুখে লজ্জা।

দাদার সাথে হেড মাস্টারের সম্পর্ক পুরোনো। এবং তা মধুর। সেই সুবাদে কৃত্রিম স্নেহ আমার প্রতি সে নিয়মিত দেখাচ্ছে। বেটে-খাটো লোক।ফর্সা চেহেরা। শরীরের গড়ণ মজবুত। বয়স পঞ্চাশের লাছেই। হেডমাস্টারের চড়ের গল্প শুনেছিলাম। সে নাকি এক চড়ে হ্যাংলা পাতলা ছেলেদের দম আটকিয়ে দিতে পারেন। মারাত্মক ঘটনা। লোকটাকে আপন ভাবতে পারছি না। অবশ্য, পরবর্তি সময়ে তার থেকে আমি অত কড়া শাষন পাইনি। ভয়ঙ্কর অপরাধ করে সামান্য এক বেতের বাড়ি খেয়েছি। দু'একদিন বেতের দাগ লেগেছিল শরীরে।

দাদা আমাকে ভর্তি করিয়ে দিলেন এবং কোন সমস্যা হলে আমাকে হেড মাস্টারের দ্বারস্থ হতে বলা হলো। হেডমাস্টার সাহেব ও হাসি বিনিময় করে আমাকে নিশ্চিত করলো সে বিষয়ে। কিছুটা সাহস পেলাম ওনাকে নিয়ে।

আমাদের গ্রাম তখন অজ-পাড়াগাঁ। বিদ্যুৎ নেই।মাটির রাস্তা।বর্ষায় রাস্তায় হাটু সমান কাঁদা হয়। বড় সমস্যা চলাচলে।আমাদের বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব অনেক। পায়ে হেটে ত্রিশ মিনিটের পথা। ভ্যানের ব্যবস্থা আছে। তবে দু'টাকা লাগে। তখন কার সময়ে ভ্যানে এসে দু'টাকা খরচ করা বিলাসিতা। বর্ষাকালে অবস্থা আরো গম্ভীর। আরো অনেক বেশি সময় লাগে স্কুলে পৌছাতে। তারপরেও মনে আনন্দ ছিল। ভালো স্কুলে ভর্তি হতে পারার।আমাদের পাড়ায় ই আরেকটা স্কুল ছিল। সেটা ভালো নয়। সেখানে ছাত্র কম।হাতে গোনা সংখ্যক ছাত্রের উপস্থিতি থাকে। তাদের মধ্যেও দু' তিনজন দায় সারতে আসে। এই স্কুলে ফাইভ পর্যন্ত পড়ায়। ক্লাস সিক্সে ওঠার সাথে সাথে ট্রান্সফার বাজারে । আমাদের শাখা স্কুলে। আমি এডভান্স হয়ে গেলাম। ক্লাস টু'তে ই বাজারের স্কুলে ভর্তি হলাম। পাড়ার বন্ধুদের সাথে একটু দূরত্ব বাড়ল।

স্কুলের প্রথমদিনে আমাকে ঘুম থেকে ডাকা হলো সাতটার দিকে। ঘুম থেকেই উঠতে ই একধরনের নার্ভাসনেস কাজ করতে লাগল।প্রথম নতুন কোন স্কুলে যাচ্ছিনা তবু এই দিন আলাদা। অন্য কোনবারের সাথে মেলেনা। আম্মু উঠেছে আরো ভোরে। রান্নায় ব্যস্ত। আমি মুখ ধুলাম এবং ঠান্ডা পানিতে গোসল করলাম। শীত যায়নি। জানুয়ারি মাসের শীত। ক্লান্ত হয়ে পড়েছে ঋতু। কিন্ত পানি যথেষ্ট ঠান্ডা। হাড় পর্যন্ত ঠান্ডা করে দিচ্ছে।গোসল করে গরম ভাত,আলু ভর্তা, ট্যাংরা মাছের ঝোল দিয়ে আমাকে খেতে দেওয়া হল। চিন্তায় মনোযোগ দিয়ে সেই ভোজন উপভোগ করতে পারলাম না। নতুন স্কুলের প্রথম দিন।

প্রথম দিন হওয়া সত্ত্বেও আমাকে যেতে হয়েছিল একা। সামনে দিন গুলোর জন্য আগ্রীম প্রস্তুতি। আমাকে দেওয়া হলো দশ টাকার পুরোনো একটি নোট। দশ টাকা হাতে পেয়ে আমি মহাখুশী। চিন্তা অনেক কমে গেল। তখন ই ঠিক করে ফেললাম সাদা গোলাপী একটা লাটিম কিনব। ওই রঙের একটা লাটিম কিছুদিন আগে আমার লাটিম টার একদম মধ্যে থেকে ভেঙ্গে ফেলেছে। তখন দশ টাকা আমার কাছে অনেক টাকা। ঈদে সর্বোচ্চ কালেকশান হয় শ'খানেক। সেখানে কোন উৎসব বিহীন এত টাকা! অবশ্যই খুশির সংবাদ।

প্রথমদিন তাই দু'টাকা ভ্যান ভাড়া দিয়ে স্কুলে গেলাম। এরকম ভুল নিয়মিত করা যাবেনা।সিদ্ধান্ত হয়ে গেল তৎক্ষণাৎ। স্কুলের মাঠের পাশে নামিয়ে দিল ভ্যান। মাঠ বিশাল। স্টেডিয়াম আকৃতির।মাঠের অন্যপাশে স্কুল। "বড়বাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়"। একতলা ভবন। রুম চারটে। তিনটে রুমে ক্লাস হত। একটা রুম স্যারদের জন্য। আমাদের স্কুলের থেকে অনেকটা পাশে আরো কতগুলো ভবন। সেগুলো হাই স্কুলের ভবন। ওদিকে চোখ যাচ্ছে না। চোখ আটকে আছে একতলা ভবনে। কিছু ছেলে ড্রেস পরে ছোটাছুটি করছে। আমি পরা সাদা জামা,কালো প্যান্ট।ঘাড়ে সী গোল্ডের লাল একটা ব্যাগ। স্কুলের ড্রেস আলাদা। স্কুলের ড্রেস আকাশি কালারের শার্ট, গাঢ় নীল প্যান্ট।

নিজের স্কুলে পা রাখবার এক অদ্ভুত উত্তেজনা নিয়ে মাঠ দিয়ে হেটে যাচ্ছি। কতকিছু অপেক্ষা করে আছে আমার জন্য সেখানে। মাঠ শেষ হচ্ছে না। কতবড় মাঠ! স্কুলের থেকে ভেসে আসছে আমার বয়সী অনেক গুলো ছেলের কৌতুক মাখানো কন্ঠস্বর। মনের মধ্যে দিড়িম দিড়িম করছে। হার্ট বিট বেড়ে যাচ্ছে। আলাদা এক ধরনে সুখ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি আগামী তে।

ভুল! তৈরী করছি একধরনের পিছুটান। যার জন্যে আরো পনের -বিশ বছর পর মন খারাপ হবে। কানে বাজবে ওই দিনের স্মৃতি। একদম চোখের সামনে দেখব আমার ছেলেবেলা। চোখ ঝাপসা হবে। স্বাভাবিক একটা দিন হলেও পারত। ভুলে যেতাম। মন খারাপের প্রশ্নই আসত না।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.