![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিখছি, ভাবছি আর অপরাহ্নের আলোয় হাঁটছি ।
"এই গাধা! অ্যাই! তুই একটা বেকুব!"
খুবই পরিচিত শব্দ।
আমি শব্দের উৎসের দিকে ফিরে তাকালাম।
আমি ফিরে তাকানোর কারণ হচ্ছে আমি যে বেকুব সেটা সম্পর্কে আমি মোটামুটি নিশ্চিত।
নিশ্চিত হওয়ার কারণ হচ্ছে এই স্বীকৃতিটি আমি জীবনে বহুবার পেয়েছি।
বারবার শুনলে সেটির উপর একসময় বিশ্বাস জন্মে যায়। আমারও মোটামুটি বিশ্বাস জন্মে গেছে আমি একটা বেকুব।
তাও ভাল খবর হচ্ছে আমি শুধুই 'একটা' বেকুব। ভাগ্যিস একজনের 'অনেক গুলো' বেকুব হওয়ার সুযোগ নেই।
এর জন্য আমি মোটামুটি খুশী।
আমি যে বেকুব সেটা সবচেয়ে বেশীবার বলেছে আমার আম্মু।
আমার ধারণা আম্মু কখনো মিথ্যা বলেন না। তারপরও আম্মুর সব কথা বিশ্বাস করলেও এ কথাটি বিশ্বাস করতে আমি একটু কাইঁকুই করি। প্রতিবাদ করার চেষ্টা করি।
তখন আম্মু হাসতে হাসতে বলেন-' তুমি যে বেকুব, তা আবার প্রমাণ করছো।'
আমার প্রতিবাদ থামিয়ে তখন আমি আম্মুর সাথে প্রশ্নোত্তর পর্বে অবতীর্ণ হই।
পৃথিবীর সব চেয়ে ছোট, সহজ এবং একই সংগে কঠিনতম প্রশ্নটি আমি করি- কেন??
আম্মু আবার হাসেন।
হাসতে হাসতে বলেন, কীভাবে প্রতিবাদ করতে হয় সেটাও জান না তুমি।
বেকুবের মত প্রতিবাদ কর।
তখন আমি বুঝতে পারি, প্রতিবাদেরও রকমফের আছে।
বেকুব টাইপের প্রতিবাদ, চালাক টাইপের প্রতিবাদ আছে।
শুধু প্রতিবাদ করলেই হয় না।
অন্যসব কিছুর মত প্রতিবাদও করতে জানতে হয়।
আমি প্রচন্ড বোকা টাইপের মানুষ। পৃথিবীর খুব কম জিনিসই আছে যা আমি পারি।
বেশীরভাগ সহজ জিনিস আমি পারিনা।
মানুষের সাথে মিশতে পারিনা, কীভাবে কথা বলতে হয় সেটা জানিনা।
মাঝে মধ্যে চেষ্টা করি অবশ্য।
তবে সেটা আরেকটু বেশীই বোকামী হয়ে যায়। কি বোকামী করলাম সেটাও আমি বুঝতে পারিনা।
তবে মাঝে মধ্যে সফল হয়ে যাই অবশ্য।
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ সেঞ্চুরী করে ফেলার মত ব্যাপার।
খুব সহজ বিষয় গুলোতে আমি কী ধরণের বোকামী করি তার সবচেয়ে সহজ দৃষ্টান্ত হচ্ছে; খুব ছোট বেলায় একবার ভাইয়াদের সাথে বসে সিগারেট ফুঁকার চেষ্টা করেছিলাম।
ঠিক সিগারেট না, কাগজকে গোল করে পাইপের মত করে নকল সিগারেট বানানোর চেষ্টা।
বলা যায়, নিকোটিন মুক্ত স্বাস্থ্যসম্মত সিগারেট। :p
সেই স্বাস্থ্য সম্মত সিগারেটের এক মাথা মুখে দিয়ে অন্য মাথায় আগুন ধরিয়ে দিই। অন্যরা ঠিকই সিগারেট ফুঁকে মুখ দিয়ে গলগল করে ধোঁয়া ছাড়ছে।
কিন্তু আমার সিগারেট বারবার নিভে যাচ্ছে।
ঘটনা কী!
আমার বাকী দুই ভাই দুই সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে ঘটনার তাৎক্ষণিক তদন্তে নামল।
আমাদের দেশের মানুষের দৃঢ় ধারণা হচ্ছে, তদন্ত কমিটির রিপোর্ট কখনো বের হয়না।
সবার ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে মাত্র এক মিনিটের মাথায় তদন্ত রিপোর্ট পেশ করলেন আমার রেজা ভাইয়া।
তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী, আমি এতই বেকুব যে, সিগারেটে টান দেওয়ার বদলে বারবার ফুঁ দিচ্ছিলাম।
যার কারণে মুখ দিয়ে ধোঁয়া বের হওয়া তো দূরের কথা, উল্টো সিগারেটের আগুনই নিভে যাচ্ছিল।
এত দ্রুত সঠিক রিপোর্ট পেশ করা তদন্ত কমিটির মূল্যায়ণ ভুল হওয়ার কথা না।
তারা আমাকে বেকুব হিসেবেই মুল্যায়িত করলো।
তারা যে ভুল ছিলনা তার প্রমাণ পরবর্তীতে আমি পেয়েছি।
আমি পরবর্তীতে বেকুব হিসেবে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছি।
আমার মায়ের মত সবাই যে আদর করে বেকুব ডাকেন সেটা অবশ্যই না।
অনেকেই গালি দিয়ে ডাকেন। তবে সেটা আর 'ডাক' হয়ে উঠেনা। কারণ তারা মনে মনেই বলেন।
এদেশের আমজনতা বরাবরই ভীতু।
একজন 'বেকুব'কে বড় করে বেকুব ডাকার সাহস তাদের নেই।
তারা সরকারকে, মন্ত্রী-এমপিদেরকে যেমন মনে মনে গালি দেন, বোকা লোকদেরও মনে মনে গালি দেন।
সে হিসেবে কত মানুষ আমাকে বেকুব বলেন সেটা আমার জানা হয়না কখনো।
অনুমান করতে পারি।
আমার অনুমান যে ঠিক হবে, তা কিন্তু না। বেকুবের অনুমান তো।
আমার মা যে আমাকে সবসময় বেকুব বলেন তা কিন্তু না, তিনি আমাকে মাঝেমধ্যে ধমকের সুরে পরম মমতায় গাধা ডাকেন।
আমার মা যখন আমাকে গাধা ডাকেন, তখন আমি হাসি।
গাধা ডাক যে কত মধুর আমি তখন সেটা বুঝতে পারি।
গাধা বলে যে শুধু আমার মা আমাকে ডাকেন তাও কিন্তু না।
অনেকেই ডাকেন।
বেকুব ডাকার চেয়ে গাধা ডাকা মনেহয় অনেক সহজ।
যে'বার গণিতে ৯৯ পেয়েছিলাম, সে'বার স্যার আমাকে বলেছিলেন, গাধা! জ্যামিতিটা আরেকটু ভাল করলে পুরো নাম্বারটা পেতি। গাধা!
মাঝে মধ্যে গাধা ডাকটি পৃথিবীর সবচেয়ে
মধুর শব্দ হয়ে উঠে।
মনেহয় এর থেকে মধুর শব্দ আর হয়না।
গাধা ডাকটি কিন্তু সবসময় মধুর না, কখনো কখনো মৌচাকও হয়ে উঠতে পারে।
গাধা ডাকার কারণে নাক মুখ ফাটানোর ইতিহাসও কিন্তু কম নয়, বরং যথেষ্ট সমৃদ্ধ।
পৃথিবী বড়ই বিচিত্র জায়গা।
এখানে জায়গা এবং পরিবেশ ভেদে শব্দের অর্থ আমুল পাল্টে যায়। রিএকশন আর একশনে মিলে একাকার হয়ে যায়।
খুশি হয়ে বৃদ্ধাংগুল দেখানোর কারণে, যাকে দেখিয়েছে সে অপমানিত হয়ে বৃদ্ধাগুংল ভেঙ্গে দেওয়ার মত ঘটনা আমার চোখে দেখা।
যদিও সেটা ঘটনা না, অঘটন।
আমি বোকা সোকা মানুষ। ঘটনাতেও নেই, দূর্ঘটনাতেও নেই।
তাই দুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে ঘটনা বুঝার চেষ্টা করি।
আমার বিফল হওয়ার রেকর্ড যেহেতু যথেষ্ট ভাল, তাই আমার রেকর্ড আরো সমৃদ্ধ করি।
শব্দের উৎসের দিকে তাকিয়ে দেখি, আম্মু আধো ছায়া হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
বললাম- কী?
আম্মু বলল খাটের নিচে শুয়ে আছিস কেন?
হঠাৎ খেয়াল করলাম আমি ফ্লোরে শুয়ে আছি, আর শরীরের বেশীরভাগ অংশ খাটের নীচে।
আমি বোকা হলেও আমার উপস্থিত বুদ্ধি মাঝেমধ্যে উসাইনবোল্টের চেয়েও দ্রুত গতি লাভ করে।
বললাম- শীত করছিল তাই খাটের নীচে ঢুকে গেছি। উপরে ফ্যান চলছিল, তাই ফ্যানের বাতাস থেকে বাঁচতে খাটের নীচে ঢুকে গেছি।
আম্মু সম্ভবত আমার কথা বিশ্বাস করেছে।
বিশ্বাস করার কারণ হচ্ছে- আম্মুর বিশ্বাস আমি পৃথিবীর সব চেয়ে অলস ব্যাক্তি।
আমার মা পৃথিবীর সবচেয়ে অলস ছেলের জননী।
আম্মু জানে আমি এতই অলস যে, উঠে গিয়ে ফ্যানের সুইচ অন করার মত কর্ম আমি করব না।
আম্মু হাসতে বলল, গাধা!
তখন বরাবরের মত পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট, সহজ এবং একই সংগে কঠিনতম প্রশ্নটি আমি আবার করি- কেন??
আম্মু হা হা হা করে হাসেন।
আমি বললাম হাসছো কেন?
আম্মু বলে তুই বেকুব তাই।
আমি বললাম বেকুব কেন?
আম্মু উত্তর না দিয়েয়ে আবার হাসে।
আমি হাসির অর্থ বুঝতে পারিনা।
বেকুব তো।
২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৩৮
ইমোশনাল কিলার বলেছেন: জেনে ভাল লাগলো।
জানানোর জন্য ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:০০
হাতুড়ে লেখক বলেছেন: ভাল্লাগসে।