![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কীসের হরতাল? এ সব হরতাল টরতাল মানি না। আমি আমার মতো রিকসা চালামু্। দেহি, কে আসে আমার গাড়ি ভাঙতে? আমি হরতালের গুল্লি মারি।’ কথাগুলো বলতে বলতে রিকসার প্যাডেলে পা চালালেন জাফর আলী। ফার্মগেট থেকে এলিফেন্ট রোডের পথ ধরে চললেন তিনি। চলতে চলতেই বললেন জীবনের জোয়ার-ভাটার নানান গল্প। আর সব ক্ষোভ ঝাড়লেন রাজনীতিকদের উপর।
জাফর আলী রিকসা চালান দুই দশক ধরে। তার বয়স ষাটেরও বেশি। বয়সের ভারে নুয়ে না পড়লেও খানিকটা যে ক্লান্ত সেটা স্পষ্টই প্রকাশ পাচ্ছে সাদা দাঁড়ি ভর্তি চেহারায়। তবে মনের জোর এখন সেই তরুণ বয়েসের মতোই। সাহসে ভরপুর একজন মানুষ তিনি।
‘পলিটিক্স কী বুঝি না। আমি বুঝি আমার পেটের ধান্দা। ভালো মতোন কয়ডা খাইয়া পইরা বাঁচার লাইগা এতো কষ্ট করি। আমাগো কষ্টের লগে কেউ খবরদারি করলে তার গায়ের উপর রিকসা তুইলা দিমু। কোনো কিছু মানমু না।’ অনেকটা ক্ষুব্ধ হয়েই বুধ বার হরতাল চলাকালে কথাগুলো বললেন জাফর।
শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবারও বলে উঠলেন, ‘হরতাল একটা সস্তা জিনিস হইয়া গেছে। যার ইচ্ছা হেই ডাক দিতে পারে। অনেক সহ্য করছি। এবার ফেরেশতা নাইমা আইসা হরতাল দিলেও আর মানমু না। আমার গাড়ি আমি চালামুই। কপালে যা লেখা আছে তা-ই হইবো।’
কথায় কথায় জানা গেলো জাফর আলী জীবনের গল্প। একসময় তিনি সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করতেন। মালিকের অপকর্মের বিরুদ্ধে কথা বলে চাকরি খুইয়েছেন। তারপর ধরলেন রিকসা। এখানেও বিপত্তি। পথে পথে নানা প্রতিবন্ধকতা। এমনিতেই যানজটে নাকাল। তার উপর নানা অজুহাতে রিকসা চালানো বন্ধ রাখতে হয় বিভিন্ন সময়ে। শুরু হয় সংসারে টানাপোড়েন।
একবার হরতালে রিকসা চালাতে গিয়ে পিকেটারদের ধাওয়া খেয়ে পা ভেঙে ফেলেন। পুরো একমাস পঙ্গু হাসপাতালে কাটাতে হয়েছে। পুরোপুরি সুস্থ হতে সময় লেগেছে আরও দু’মাস। তারপর আবারও রিকসা নিয়ে বের হতে হয়েছে পেটের তাগিদে।
কয়েক বছরের পরের কথা। অন্য এক হরতালে আক্রান্ত হলো জাফর আলীর রিকসা। পিকেটাররা পুড়িয়ে দিল তার রিকসাটাকে। চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে আয়ের একমাত্র অবলম্বন রিকসাটি পুড়ে গেল। তখন তার ইচ্ছে হয়েছিলো, এ আগুনে পুড়ে নিজেকেও শেষ করে দিতে। পুড়ে যাওয়া রিকসার দাম দিতে গিয়ে অনেকটা সর্বশান্ত হয়ে গেলেন জাফর আলী।
এরপরেও রিকসাই তার ভরসা। বলা চলে অনেকটা ভালোবেসে ফেলেছেন রিকসাকে। মনে মনে নিজেকে শক্ত করলেন। যতো বিপত্তি আসুক, রিকসা তিনি চালাবেনই। হরতাল, অবরোধ আর কারফিউ হলেও বাধা মানবেন না। প্রয়োজনে নিজের জীবন বিপন্ন করে হলেও রিকসা চালাবেন।
জাফর আলীর বাড়ি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে। পরিবারের সবাই সেখানেই থাকে। ঢাকার তেজকুনি পাড়ায় থাকেন তিনি। সঙ্গে আরও কয়েকজন রিকসা চালক। সবাইকে তিনি উৎসাহিত করেন হরতালে রিকসা চালাতে। বলেন, ‘আমরা হইলাম গরিব মানুষ। একদিন রিকসা বন্ধ রাখলে পরদিন বউ বাচ্চা না খাইয়া মরতে হবে। আর মরতে যদি হয়ই, তাইলে রিকসা চালাইয়া মরমু। ঘরে বইসা থাইক্যা মরার কোনো মানে হয় না।’
খানিকটা আক্ষেপ করে তিনি বললেন, ‘ঈদ করতে বাড়ি যাই নাই টাকা খরচের ডরে। আর ঈদে রিকসা চালাইলে মানুষ একটু বখশিশও দেয়। যারা হরতাল দেয়, তারা তো আমাগো সংসারের খরচ চালাইবো না। তাগো কথায় রিকসা বন্ধ রাইখা আমাগো আর লাভ কী?’
যদি আবারও পিকেটারদের হাতে আক্রান্ত হতে হয়- এমন প্রশ্নের উত্তরটা বেশ বলিষ্ঠ সুরের বের হলো জাফর আলীর কণ্ঠ থেকে। বললেন, ‘এবার আর কাউরে ছাড়ুম না। নিজেরে মরতে হইলে, লগে কয়েকটারে লইয়া মরমু। রিকসার উপর কেউ আঘাত করতে আইলেই তারে পিডাইয়া শোয়াইয়া ফালামু্’। কথা শেষ করেই রিকসা গদি তুলে বের করে দেখালেন লাঠিটা। বললেন, ‘এই লাডি রাখছি হেগোরো মারনের লাইগা। মাইরা তারপর মরতেও আপত্তি নাই।’
কথা শেষ করার আগে আবার পা চালালেন প্যাডেলে। জাফর আলী তখন ক্রোধে উন্মত্ত। যেনো এবার আর তাকে কেউ রুখতে পারবে না।
২| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:১২
ভুদাই আমি বলেছেন: এই ঘুনেধরা সমাজটাকে বাচাতে সবারই সচেতন হওয়া দরকার যেমনটা এই রিকশাওয়ালা।
৩| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ ভোর ৬:৪৬
আমি অপদার্থ বলেছেন:
সহজ উত্তর :- রিক্সা চালকদের।
©somewhere in net ltd.
১|
১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৩২
পরিবেশ বন্ধু বলেছেন: বেশ লিখা , অসাধারন
ধন্যবাদ +