![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
"বাকির নাম ফাঁকি "। প্রায়শই একথা টি শুনা যেত। অথচ এ কথাটির সাথে বাঙ্গালী জাতি স্বত্তার এক অনন্য সম্পর্ক। আর এই সম্পর্কের মাধ্যমটি হলো শুভ হালখাতা। বাকি না থাকলে যে আমাদের হাল খাতা থাকতো না। আর হাল খাতা না থাকলে বৈশাখের উৎসব কেমন যেন একঘেয়োমি হয়ে যেত। আর বৈশাখের উৎসব না থাকলে যে বাঙ্গালী তার প্রানের অস্তিত্ব হারাতো।
খুব ছোট বেলার কথা। দীপংকর দা (দাদা) আমাদের গ্রামের বাজারের মুদি দোকানদার। তেল ডাল কেরোসিন থেকে সব কিছুই উনার দোকান থেকে সদাই করতো আমাদের। আমরা দোকানে যেতাম সদাই নিয়ে বাড়ী ফিরতাম আর দাদা হিসাবের খাতায় হিসেব লিখে রাখতেন। এই কার্যটি উনি সারা বৎসর ধরে চালিয়ে যেতেন। ঠিক ১লা বৈশাখের আগে আগে দাদা আমাদের বাড়ীতে শুভ হাল খাতার কার্ড পাঠাতেন। সাদা খামের ভিতরে খুবই খাঁটি বাংলায় অনেক কিছুই লিখা থাকতো ঐ হালখাতার কার্ডে। সব শেষে লিখা থাকতো "নিমন্ত্রণ সবাইকে" আর কার্ডের অন্য পাশে পাওনা টাকার একটি হিসাব থাকতো।
১লা বৈশাখ; নতুন সাজে সেজে উঠতো দাদার দোকান। বাহারী রংয়ের রং পেপারে ; এ যেন কাগজের নকশায় কোন এক বিয়ে বাড়ীর গেইটের মতন। আগর বাতি থেকে ধুপ কাঠি পর্যন্ত সবই থাকতো হাল খাতার টেবিলে। লাল রংয়ের মোড়কে নতুন হিসাবের খাতায় লিখা হতো নতুন দিনের হিসাব। আমরা আব্বু কিংবা চাচার সাথে বায়না ধরতাম হালখাতায় যেন আমাদের নিয়ে যায়।এর একটাই কারন ছিলো যে হাল খাতা অনুষ্ঠান কে ঘিরে মিষ্টান্ন খাওয়ানো হতো। আমাদের দৃষ্টি ছিলো কখন যেন দাদা মিষ্টান্নের পেকেট টা চাচা কিংবা আব্বুর হাতে দিবেন আর সেটা নিয়ে আমাদের বাড়ী ফেরা। অনেক সময় একা একা আসতে হতো বাজার থেকে। সে সময়টা খুবই বিরক্তিকর ছিলো আমি কিংবা আমাদের জন্য। কারন গ্রামের ন্যড়ি কুকুরের অভাব ছিলো না। হাতে খাবার দেখলেই যেন কেমন করে আওয়াজ করতো আর পিছু পিছু হাটতে থাকতো। আমরা ও কিন্তু কম যেতাম না মিষ্টান্ন পেকেটি ঠিক যেন মাথার উপরে নিয়ে সে যে এক দৌড় দিতাম।
হাল খাতায় পুরানো দিনের হিসাব কষে নতুন বৎসরের হিসাব শুরু হতো। কি এক অসম্ভব ধরনের সরলতায় আর বিশ্বাসে ভরপুর ছিলো তখনকার দিনের মানুষের চলাফেরা। পুরো বছর জুড়ে বাকিতে ব্যবসা করে এ দিনটির জন্যই যেন অপেক্ষায় থাকতো দোকানদারা। ১লা বৈশাখে হালখাতা থাকতো সবচেয়ে গরম গরম। তারপর ও চলতো আরো দু চার দিন তবে একটু ঢিলেঢালাভাবে।
এখন আর হালখাতা চোখে পড়ে না। এখন যেন কথাটাই যেন সত্য। বাকির নাম আসলেই ফাঁকি। তবু ও বলবো শুভ হোক আমাদের সময়ের হাল খাতার দিন গুলো।
©somewhere in net ltd.