![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এক.
"তাল গাছ এক পায়ে দাড়িয়ে..........." ছোট বেলায় কে না পড়েছি। আমরা থাকতাম স্কুল হোস্টেলে। স্কুল হোস্টেল বলতে তেমন কোন আলাদা আবাসন কিংবা ভবন ছিলো না। স্কুলের একটি শ্রেনী কক্ষকে হোস্টেল কক্ষ বানিয়ে সব ছাত্ররাই থাকতো। জন বিশ ত্রিশেক থাকতাম আমরা। এটা অনেকটা হসপিটালের ওয়ার্ডের মতো। সারি সারি চৌকি আর কর্ণারে কর্ণারে সিনিয়র ভাইয়াদের পড়ার টেবিল। আমরা জুনিয়রা পড়তাম পুরো স্কুলে জুড়ে। অথ্যাৎ ক্লাস রুমে। বই খাতা রাখতাম হোস্টেলের ভিতরে রাখা সাইন্স ল্যাবের টেবিলে কিংবা নিজেস্ব ট্র্যাংকে। দূরে ছেলেরা সাইকেলে আসতো। সাইকেল গুলো ও রাখা হতো ক্লাস রুমে। পৃথিবীর সব দুষ্ট ছেলেরাই মনে হয় হোস্টেলে থাকতো। তবে কিছু কিছু ভিন্ন প্রকৃতি আজব লোকজনও থাকতো। আমরা খুব সম্ভবত নিউ টেন কিংবা ক্লাস নাইনের শেষ দিকে। আমাদের উপরে সিনিয়র ভাইয়ের তখন ওল্ড টেন কিংবা পরীক্ষার্থী। হোস্টেল জীবনে বিভিন্ন ধরনের ক্যারেক্টার থাকে। কিছু কিছু ক্যারেক্টার যেন জীবনের জন্য সঙ্গী হয়ে থাকে সারা জীবন।
দুই.
আমাদের স্কুলের পিছনে বিশাল এক শিমুল গাছ (তুলা গাছ) ছিলো তার সাথে ছিলো উঁচু লম্বা একটা তাল গাছ। আমাদের সময়ে জ্বীন ভূতের প্রসিদ্ধ জায়গা হিসেবে এগুলোকে ভাবা হতো। তাল গাছে কচি তাল ধরেছে। যেটা কে আমরা বলি তালের ডাব। হোস্টেলের দুষ্ট ছেলেদের দৃষ্টি পড়েছে কচি তালের ডাবে। কে ঠেকায় আর। কচি ডাবে নেশায় পেয়ে বসেছে আমাদের। কিন্তু সমস্যা আমরা কেহই ভালো গাছ বাইতে পারতাম না। তবে আমাদের মাঝে আজাদ ভাই নামে একজন সিনিয়র ভাই খুবই পারদর্শী ছিলেন। তাই সবাই উনাকে জোরালো ভাবো বলাতে রাজী হয়েছেন। কিন্তু কিছু শর্ত স্বাপেক্ষে। শর্ত হলো যে কোন মহুর্তেই যদি বিপদ আসে গাছের নিচ থেকে কোন ভাবেই সরা যাবে না উনি গাছ থেকে না নেমে আসা পর্যন্ত। ওকে আমরাও শর্ত মেনে নিলাম।
তিন.
আমাদের গ্রামের বাজার ছিলো স্কুলের উওর দিকে। স্কুল থেকে পাঁচ কি দশ মিনিটের দূরত্ব হবে। রাত তখন ১১ টা হবে সম্ভবত। যে কথা সে কাজ। আজাদ ভাই শিমুল গাছ বেয়ে তাল গাছে উঠবেন। এটাই তাল গাছে উঠার সহজ উপায়। কারন শিমুল গাছের একটি ডাল যেন একদম তাল গাছের সাথে লেগে আছে। কষ্ট করে শিমুল গাছে উঠতে পারলেই তুলা গাছে উঠা যেন ছেলের হাতের মোয়া। এতো মোটা শিমুল গাছ। অনেক কষ্টের পর শিমুল গাছে আজাদ ভাই। ঠিক সে মহুর্তেই উওর দিক থেকে কে যেন টস্ লাইট চালিয়ে বাড়ী ফিরছেন। যত টুক ধারনা করা হয়েছিলো বাজারের সওদাগর গন। রাতের শেষে বাড়ী ফিরছেন। টস্ লাইটের আলোয় যেন আমাদের জন্য নিচে দাড়িয়ে থাকাটা মহা বিপদের। কারন কাল সকালেই চোর সাবস্ত্য করে বিচারের কাঠ গড়ায় দাড়াতে হতে পারে। হঠাৎ গাছতলা থেকে শর্ত ভেঙ্গে দৌড়ে পালালাম। অন্যদিকে শিমুল গাছ আর তুলা গাছের ভূতের বৃত্তে আজাদ ভাই একা। সে দিন হোস্টেল সুপার ছিলেন সাহাব উদ্দিন স্যার। নতুন জয়েন করেছেন। বছর তিনেক হবে। ইয়াং মানুষ। আমাদের সাথেও বেশ মানিয়েছিলেন। স্যার কে ঘুম থেকে জাগিয়ে আজাদ ভাইয়ের কাহিনী বলা হলো। স্যারের তখন বিদেশী কালো রংয়ের চিকন টস্ লাইট ব্যবহার করতেন। এই লাইটের আলো এতো বেশি ছিলো যে মাইলেক পর্যন্ত দেখা যেত। সেই লাইটের আলোয় আমরা শিমুল গাছে আজাদ ভাইয়ের অবস্থান লক্ষ্য করলাম। অবশেষে স্যারের মধ্যস্থতায় মিনিট বিশেক পরে আজাদ ভাইকে আজাদী করা হলো। তিনি নেমে আসলেন ভূতের বৃত্ত থেকে আর সে কি চেহারা উনার। ঠিক এখনো মনে আছে। তারপর আমাদের উপর সে যে কি পরিমান রেগেছিলেন;সপ্তাহখানেক কোন কথাই বলেন নি।
এখনো মনে হয় তালগাছ আর শিমুল গাছটি ঠিকেই আগের অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে। শুধু আমরাই নেই। এ যে অতীত। নিকট অতীত। মিসিং দোস ডেইজ।
মহি
সময়: ৮:৪৫
১৯/০৮/২০১৬
©somewhere in net ltd.