![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আলো নিভে আছে। ঘরময় অন্ধকার। চৌকির উপর বসে অন্ধকারে অন্ধত্বের স্বাধ গ্রহন করছেন এ বাড়ীর বড় কর্তার ছোট স্ত্রী। হেরিকেনের কেরোসিন শেষ হয়ে আছে গত সপ্তাহ থেকে।হাটে যাওয়ার লোকটি ও পরোলোক গমন করেছেন দিন দুয়েক হলো। ডান দিকে জানালায় মোটা কাপড়ের পর্দা ঝুলছে। পর্দা ভেদ করে বাহিরে আলো ভিতরে আসা যেন একে বারে অসম্ভব। অন্ধকারে হাতরাতেই ডান পার্শ্বের জানালার পর্দায় হাত পড়লো। এতো শক্ত মোটা পর্দা। পর্দা সরাতেই যেন দিনের আলো এসে আলিঙ্গন করতে লাগলো গৃহকতৃীর সমস্ত দেহে। জানালার কাঁচ বেয়ে তাকালে সদূরের কাশবন চোখে পড়বে। কাশবনের একটু আগেই চোখে পড়বে পুকুর পাড়। পুকুর পাড়ের দু ধারে সারি সারি বাতাবি লেবুর গাছ। আমাবশ্যার রাতে চাঁদ মামাটি যখন অস্তিত্বের সংকটে ভুগে ঠিক তখনি জোনাকি পোকারা ঘোরাঘুরি করে বাতাবি লেবু গাছে। তবে এখন বাতাবি লেবু গাছে স্বর্ণালী লতা এসেছে। হলুদ রংয়ের। শান্ত রাতে ঝিঝি পোকার ডাকে যখন জোনাকিরা নৃত্য করে। সারা রাতভর চলে জোনাকির নৃত্যের খেলা। নৃত্যের অবয়ব সৃষ্টিতে হলুদ রংয়ের স্বর্ণালী লতা যেন মৃত অলংকারের মতো সেজে থাকে
পুকুর পাড় থেকে হাত দশেক সামনে আসলেই বাম দিকে ছোট্ট একটা কুঁঠির। ছনের কুঁঠির। চারপাশ খোলামেলা। কিছু লো টেবিল পাতা আছে গোল করে। বসার জন্য। বড় কর্তার আসন ছিলো পুরোপুরি ভিন্ন। বেতের কেদারায় আসন পেতে বসতেন তিনি। কুঁঠির চারপাশে মৌ মৌ করতো বেলি ফুলের ফুঁটে যাওয়া গন্ধ।
আজ সবই আছে নেই শুধু বেতের আসনের সেই লোকটি। বেলি ফুঁটে আছে গন্ধ ছড়ানোর অপেক্ষায়। এ যেন অচেনা চারপাশ। জানালার গ্রীল ধরে সুনসান নিরাবতা নিয়ে দাড়িয়ে আছেন গৃহকতৃী। অজান্তেই টপটপ অশ্রু ঝরে পড়ছে কপোল বেয়ে। আজ আমাবশ্যা। আজও কি নৃত্য হবে নাকি জোনাকিরা শোক পালনে ব্যস্ত থাকবে।
এ পৃথিবীর ব্যস্ত সকল মানুষের চাকা কোন না কোন সময়ে থেমে যায়।ঠিক তখনই শূন্য হয়ে পড়বে রেখে যাওয়া বেতের আসন, নি:স্ব হয়ে আলমেরিয়ার কোন এক কোনে পড়ে থাকবে হাতের লাঠিটি।ধূলো জমতে জমতে চশমার মোটা কাঁচ আরো মোটা হতে থাকবে। ভুলতে শুরু করবে সবাই।শূনতা পূরণের প্রতীক্ষায় সময় ও ক্ষেপন করে। আবারও পূর্ণতা পাবে বেতের আসন কোন এক সময়।
©somewhere in net ltd.