![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অসাধারণ সব নির্মাতার হাত ধরে চলচ্চিত্র ইতিহাসে এযাবত কালে প্রচুর কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মান হয়েছে। এখনও হচ্ছে। তবে এরকম অসংখ্য চলচ্চিত্র আছে যেগুলো বিভিন্ন কারণে আলো মুখ দেখেনি। কিছু কিছু স্ক্রিপ্ট আড়ালে রয়ে গেছে আর কিছু কিছু যথেষ্ট অর্থের অভাবে নির্মান হয় নি। বিখ্যাত নির্মাতাদের এই চলচ্চিত্র গুলো যদি নির্মান হত হয়তো চলচ্চিত্র প্রেমিরা পেত অসাধারণ কিছু চলচ্চিত্র সাথে সমৃদ্ধ হত চলচ্চিত্র জগত। ইন্টারনেট ঘেটে এরকমই কিছু অনির্মিত চলচ্চিত্রে তথ্য নিয়ে দুই পর্বের ধারাবাহিক এই পোস্ট
►১। Dune (Alejandro Jodorowsky):- তালিকার প্রথমেই আছে সকল অনির্মিত চলচ্চিত্রের জননী আলেহান্দ্রো হোডোরস্কির 'ডূন' চলচ্চিত্রটি। একদিন প্রযোজক মাইকেল সেডক্স পরিচালক হোডোরস্কি কে এসে বলে উনার যে কোন চলচ্চিত্র নির্মাণে উনি প্রযোজনা করতে প্রস্তুত। হোডোরস্কি সেডক্স কে ১২ ঘন্টা দৈর্ঘ্যের ডূন নামে এক চলচ্চিত্র নির্মানে কথা বলে। তিনি রাজি হলে শুরু হয় কাজ। আলেহান্দ্রো বিখ্যাত এবং ট্যালেন্টেড সব লোকদের নিয়ে তার কাজ শুরু করেন। প্রি- প্রডাকশন প্রায় সম্পন্ন, কাস্ট এবং ক্রুরা ক্যামেরার সামনে যেতে প্রস্তুত। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় অর্থের দিক দিয়ে। পুরো চলচ্চিত্রটি শুট করতে মোট দরকার ছিল মোট ৫ মিলিয়ন ডলার যা তাঁরা সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়। যার কারণে চলচ্চিত্রের কাজ আগায় নি এবং চলচ্চিত্রটিও রয়ে যায় অনির্মিত। পরবর্তিতে প্রডিউসার ফ্রাঙ্ক প্যাভিচ অনির্মিত এই মুভিটির তৈরীর পথে হোডোরস্কি এর যাত্রা নিয়ে হডোরস্কি'স ডূন নামে একটি ডকুমেন্টারি নির্মান করেন, যা দর্শক মহলে দারুন ভাবে সমাদৃত হয়।
►২। Megalopolis (Francis Ford Coppola):- বিশ্ববিখ্যাত গড ফাদার ট্রিলজি এর পরিচালক ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলা এই মুভিটি নির্মান শুরু করার প্রাক্বালে এক সাক্ষাৎকারে বলেন যে, এপিক সাই-ফাই জনরার মেগালোপলিস মুভিটি উনার ড্রিম প্রজেক্ট। শুধুমাত্র এই মুভিটি নির্মান করার লক্ষ্যে যথেষ্ট অর্থের জন্য তিনি ব্রাম স্টোকারের ড্রাকুলা জ্যাক এবং দ্যা রেইনমেকার মুভি তিনটি পরিচালনা করেছিলেন। মুভিটির প্লট ছিল, এক বড় দুর্যোগে ধ্বংসপ্রাপ্ত নিউ ইয়র্ককে পুনরায় নির্মান করা নিয়ে। এই মুভিতে অভিনয়ের জন্য ভাবা হয়েছিল কেভিন স্পেসি, ওয়ারেন বেটি, পল নিউম্যান, নিকোলাস কেইজ এবং রবার্ট ডি নিরো দের বিখ্যাত এবং আল্ট্রা টেলেন্টেড অভিনেতাদের কথা। স্ক্রিপ্ট এর ফাইনাল ড্রাফট, কনসেপ্ট আর্ট রেডি করা হয়েছিল এমনকি সেকেন্ড ইউনিটের ৩০ ঘন্টার শুটিংও সপন্ন হয়েছিল। কিন্তু তারপর আসলো ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর (কুখ্যাত ৯/১১ এট্যাক)। যা ঘটে ছিল উনার সেকেন্ড ইউনিট সুটিং এর মাঝখানে। উনার তৈরী স্ক্রিটের সাথে এই দূর্ঘটনার অনেকটা মিলে যাওয়ায় তিনি উনার এই ড্রিম পরজেক্ট এর কাজ স্থগিত ঘোষনা করেন। পরবর্তিতে উনাকে কখনো আর এই মুভিটি নিয়ে কথা বলতে শুনা যায়নি। তবে ইদানিং গুজব উঠেছে তিনি নিউ ইয়র্ক নিয়ে নাকি এপিক এক মুভি নির্মানের পরিকল্পনা করছেন।
►৩। Don Quixote (Orson Welles) :- অনির্মিত চলচ্চিত্রের তালিকায় প্রথমেই বিখ্যাত পরিচালিক অরসোন ওয়েলস এর টেলিভিশন প্রজেক্ট Don Quixote এর কথা বলবো। মিগুয়েল ডি সারভেন্টিস এর একই নামের বিখ্যাত উপন্যাস এর এডাপ্টেশন নিয়ে ৫০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে কাজ করা শুরু করেছিলেন। অনেকটা কাজ এগিয়েও নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু যথেষ্ট বাজেটের অভাবে কাজ বন্ধ করে দিতে হয়েছিল। তারপরেও অল্প অল্প করে সুটিং চালিয়ে গিয়েছিলেন। উনার মৃত্যু আগ পর্যন্ত এটি অনির্মিতই রয়ে গেছে।
►৪। Torso (David Fincher):- ৩০ দশকের কুখ্যাত সিরিয়াল কিলিং এর ঘটনা দ্যা ক্লিভল্যান্ড টরসো মার্ডারার এর উপর ভিত্তি করে মিশেল ব্যান্ডিস এর লেখা টরসো নামক এক গ্রাফিক নোবেল এর উপর ভিত্তি করে ডেভিড ফিঞ্চার একই নামের এক সিরিয়াল কিলিং মুভি নির্মানের পরিকল্পনা করেন যাতে অভিনয় করার জন্য নেয়া হয়েছিল ম্যাট ডেমন এবং গ্যারি ওল্ডম্যান দের মত তারকাদের। এটি ছিল বিখ্যাত এবং অসাধারণ দ্যা কিউরিয়াস কেইস অফ বেঞ্জামিন ব্যাটন এর পরেও প্রজেক্ট। এটি করতে গিয়ে স্ক্রিপ্ট এর রাইট ফুরিয়ে যায় এবং প্যারামাউন্ট স্টুডিও তা রিনিউ করতে অস্বীকৃতি জানায়। যার ফলে টরসো আর আলোর মুখ দেখে নি।
►৫। Ronnie Rocket (David Lynch):- মাইন্ড ফাকিং পরিচালক ডেভিড লিঞ্চ তার বিখ্যাত এবং প্রথম পরিচালিত মুভি ইরেজহ্যাড এর পরপরি রনি রকেট নামে এক নতুন প্রজেক্ট নিয়ে কাজ শুরু করেন। মুভির কাহিনী গড়ে উঠত রনি নামের তিন ফুট লম্বা এক পা ওয়ালা এক গোয়েন্দা কে কেন্দ্র করে যে কিনা বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রন করতে পারে। প্রথমে মুভিটি প্রডিউস করার জন্য ডিনো ডি লউরেন্টাস, ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলা এবং মেল ব্রুকসদের মত প্রডিউসাররাও প্রস্তুত ছিল। কিন্তু এক পর্যায়ে এসে ব্যাংকরাপ্সি এবং রনি রকেট এর কাজ শুরু হয়ার আগেই অন্য প্রজেক্টে চলে যাওয়ার ফলে ডেভিড লিঞ্চ রনি রকেটের কাজ স্থগিত ঘোষনা করেন।
►৬। To the White Sea (Coen Bros.):- 'O Brother, Where Art Thou?' বিরাট সফলতার পরে কোয়েন ব্রাদার্স তাদের পরবর্তি প্রজেক্ট হিসেবে জেমস ডিক্যে নামক একজন লেখকের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভায়োল্যান্ট এক ইভেন্ট নিয়ে লেখা ‘টু দ্যা হোয়াইট সি’ নামক এক উপন্যাস এডাপ্ট করে মুভি নির্মানে পরিকল্পনা করেন। মুভির প্রধান চরিত্রে থাকতো ব্র্যাড পিট । কোয়েন ব্রাদার্স মুভিটি টোকিওতে সুট করার পরিকল্পনা করেন। যাতে খরচ হত প্রায় ৮০ মিলিয়ন ডলার। এরকম একটি এক্সপেরিমেন্টাল এবং ভায়োল্যান্ট মুভির জন্য কোন স্টুডিওই এতবড় এমাউন্ট এর রিস্ক নিতে রাজি হয় নি। যার ফলে কোয়েন ব্রাদার্স প্রজেক্টটি ছেড়ে দেয়।
►৭। Nostromo (David Lean):- লরেন্স অফ এরাবিয়া এর পরিচালিক ডেভিড লিন এর শেষ চলচ্চিত্র ছিল অ্যা প্যাসেজ টু ইন্ডিয়া। এটি ১৯৮৩ সালে অস্কারে ১১ টি শাখায় নমিনেশন পেয়েছিল মুভিটি। লরেন্স অফ এরাবিয়া, এ ব্রিজ অন দ্যা রিভার কাওয়াই, ডা. জিবাগো ইত্যাদি চলচ্চিত্র নির্মানে মাধ্যমে নিজেকে তিনি অন্য এক পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল। নিজের পর্যায়কে আরেকটু উন্নত করার জন্য “জোসেফ কনরাড” এর “নস্টোমো” উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মানে সিদ্ধান্ত নেন। মারলন ব্রান্ডো, ইসাবেলা রুসোলিনিদের মত বিখ্যাত তারকাদের বিভিন্ন রোলের জন্য সাইনও করিয়েছিলেন। স্টিভেন স্পিলবার্গ ছিলেন মুভির প্রযোজক হিসেবে। স্পিলবার্গ স্ক্রিপ্ট পড়ে ডেভিড লিন কে স্ক্রিপ্টে কিছু পরিবর্তনের কথা বলেন কিন্তু লিন এতে কোন প্রকার কর্ণপাত করেন নি। স্পিলবার্গ এই প্রজেক্ট ছেড়ে চলে যান। যার ফলে ফান্ডিং ভেঙ্গে পড়ে এবং কাজ থেমে যায়। সিডিউল কনফ্লিক্ট এর কারণে স্ক্রিপ্ট ও তৈরী হচ্ছিল না। ডেভিড লিন নিজে একবার এর স্ক্রিপ্ট লেখার চেষ্টা করেছিল কিন্তু পারেননি।একসময় স্ক্রিপ্ট এবং সুটিং সিডিউল তৈরী হয় কিন্তু সুটিং শুরু হওয়ার ছয় সপ্তাহ আগেই মৃত্যু বরণ করেন ডেভিড লিন। আর চলচ্চিত্রটি রয়ে যায় অনির্মিত।
►৮। Napoleon (Stanley Kubrick):- বিখ্যাত এবং মাস্টার পরিচালক স্ট্যানলি কুব্রিক তখন ২০০১ এ স্পেস ওডিসি নির্মাণ করে তার ক্যারিয়ার এর উচ্চ শিখরে। তিনি এবং তার রিসার্চ টিম নেপোলিয়ান বোনাপার্ট এর জীবনীকে চলচ্চিত্রে রূপদান করার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী একটি স্কিপ্ট লেখা হল, লোকেশন নির্ধারণ করা হল এমনকি চলচ্চিত্রে প্রডাকশনে অংশগ্রহন করার জন্য রোমানিয়ান সৈন্যরা রাজিও হয়েছিল। তবে ওয়াটার লু এবং আরো একটি মুভি এর ব্যর্থতার কারণে স্টুডি আর রিস্ক নিতে চায় নি। তাই অর্থের অভাবে স্ট্যানলি কুব্রিক তার এই অসাধারণ কাজটি পর্দায় আনতে পারেন নি।
►৯ । Leningrad: The 900 Days (Sergio Leone):- ইতিহাস বিখ্যাত পরিচালক সার্জিও লিওন তার চার ঘন্টার এপিক গ্যাংস্টার মুভি ‘ওয়ান্স আপন এ টাইম ইন আমেরিকা’ এর কাজ শেষ করার পরিকল্পনা করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সত্য ঘটনা অবলম্বনে হ্যারিসন স্যালিসব্যারি এর লেখা নন-ফিকশন বই ‘দ্যা ৯০০ ডেইসঃ দ্যা সিজ অফ ল্যালিনগ্রাদ’ এর উপর ভিত্তি করে পরিকল্পিত এই মুভিটিতে অভিনেতা হিসেবে রবার্ট ডি নিরো এর থাকার কথা ছিল। মুভিটি তৈরীতে খরচ হত প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার যা তিনি সাত বছর সময় লাগিয়ে (১৯৮৯ সালে) জমিয়েছিলেন। সব কিছু তৈরী। আগামী বছরই শুরু হবে মুভির সুটিং কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত মুভির কন্ট্রাক্ট সাইন করার মাত্র দুই দিন আগেই পৃথিবী ছেড়ে চলে যান বিখ্যাত এই পরিচালক।
►১০। Kaleidoscope (Alfred Hitchcock):- ১৯৬০ সালে আলফ্রেড হিচকক তার বিখ্যাত ‘সাইকো’ মুভিটির মাধ্যমে পুরো বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। ঐ মুভিতে ব্যবহারিত ভায়োল্যান্স, স্টরি টেলিং পদ্ধতি তৎকালীন সময়ের জন্য অনেকটা এডভান্স ছিল। এই ধারাবাহিকতায় আলফ্রেড হিচকক ‘সাইকো’ এর চেয়ে অত্যাধিক বেশি ভায়োল্যান্স, মার্ডার সাথে রেপ, নেক্রোফিলিয়া এবং আরো অনেক কিছু রেখে একটি মুভি নির্মানে পরিকল্পনা করেন। মুভির গল্পটা এগুত একজন সাইকো গে বডি বিল্ডার কে ধরে যে পানি দেখলেই তার মধ্যে প্রবৃত্তি জেগে ঊঠত। হিচকক এই মুভির সব কিছু তৈরী করে অল্প কিছু সাইলেন্ট ফুটেজ শুট করলেও অতিরিক্ত ভায়োল্যান্স এর কারণে স্টুডিও এবং তার প্রিয় বন্ধু বিখ্যাত লেখক এবং পরিচালক Francois Truffaut এর বাঁধার কারণে তিনি আর এই মুভিটি নিয়ে আগাননি।
এই ছিল বিখ্যাত কিছু পরিচালকদের অনির্মিত চলচ্চিত্র নিয়ে আমার কিছু কথা। আশা করি সবার ভাল লেগেছে। ধন্যবাদ সবাইকে।
০৪ ঠা মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৯
ঈশান কবির বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ।
২| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০৫
বিজন রয় বলেছেন: অসাম পোস্ট।
++++++
সংগ্রহে রাখার মতো।
০৪ ঠা মার্চ, ২০১৬ রাত ৮:৪০
ঈশান কবির বলেছেন: ধন্যবাদ.।।
৩| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১১
হাসান মাহবুব বলেছেন: দারুণ পোস্ট। হিচকক আর কুবরিকের ছবি দুইটার জন্যে আফসোস হচ্ছে।
০৪ ঠা মার্চ, ২০১৬ রাত ৮:৪২
ঈশান কবির বলেছেন: আমার তো সব গুলোর জন্যই আফসোস হয়। এই মুভি গুলো হইলে হয়ত অসাধারণ কিছু মুভি পাইতাম।
৪| ০৭ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১০:১৬
বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন:
মুভিগুলোর জন্য আফসোস লাগছে।
৫| ০৮ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ৮:১৫
ডট কম ০০৯ বলেছেন: অনেক কিছু জানলাম। টাকা ছাড়া সব থাইমা যায় এটাও বুঝলাম।
©somewhere in net ltd.
১|
০৪ ঠা মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৬
আমিই মিসির আলী বলেছেন: অনেক ভালো লেখা।
পড়ে সত্যিই ভালো লাগছে।
+