![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রেম আমার রব, সে-ই আমার সব।ধর্ম আমার প্রেম, প্রেম আমার ধর্ম।
ফিলিস্তিনি ভু-খন্ডের চমৎকার একটি ইতহিাস
.........................ইসলাম আগমনের পর বায়তুল মুকাদ্দাস
হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহী ওয়াসাল্লামের নবুয়্যত লাভের পরের তের বছরও নবীজী মক্কায় বসবাস করেন। এ সময় মসজিদুল আকসা মুসলমানদের কেবলা ছিল। মদীনায় নবীজীর হিজরত করার দ্বিতীয় বছরে মদীনার নিকটবর্তী বনি সালমা মসজিদে নবীজী সাহাবীদের নিয়ে নামাজ পড়া অবস্থায় আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে মসজিদুল আকছার স'লে মসজিদুল হারামকে (মক্কায় কা’বা শরীফ) কেবলায় পরিণত করেন। হয়তো বা ইয়াহুদীদের নিরস্ত্র করার উদ্দেশ্যই আল্লাহ পাক এ নির্দেশ দেন। কেননা ইয়াহুদীদের কেবলার দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করার কারণে ইয়াহুদীরা মুসলমানদের হেয় করতো।
রাসূলে খোদার ইনে-কালের পর প্রথম খলিফার সময় সিরিয়া ও ফিলিস্তিনের উদ্দেশ্যে রোমকদের শত্রুতা দমনের জন্যে সৈন্য পাঠানো হয়। কিন্তু প্রথম খলিফার ইনে-কালের ফলে মুসলমানদের বিজয়াভিযান স'গিত হয়ে পড়ে । দ্বিতীয় খলিফার সময় সিরিয়া ও বায়তুল মুকাদ্দাস মুসলমানদের হস-গত হয়। রোমক সৈন্যরা মুসলমানদের হাতে পরাজয় বরণ করে। বায়তুল মুকাদ্দাসের বাশিন্দারা মুসলমানদের হাতে আত্মসমর্পণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে প্রতিরোধ অব্যাহত রাখে। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদী অবরোধ, খাদ্য সংকট ও রোগশোকের প্রাদুর্ভাব এদেরকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করে।
দ্বিতীয় খলিফা সাদাসিদে পোশাক গায়ে হাতে উটের রশি ধরে শহরে (জেরুজালেম) প্রবেশ করলে শহরবাসী বিস্ময় অভিভূত হয়ে পড়ে। তারা সানন্দে খলিফার সাথে শান্তি চুক্তি সম্পাদন করে। খলিাফা (হযরত ওমর) নাগরিকদের সাথে খুবই নরম ও সদয় ব্যবহার করেন। ওই বছর (১৫ হিজরী) থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস ও ফিলিস্তিন মুসলমানদের হাতেই ছিল। সন্ধি চুক্তি মুতাবিক খৃস্টানরা তাদের ধর্মীয় আচরণে স্বাধীনতা লাভ করে। পরবর্তীতে এ শহরের বাশিন্দারা বেশীর ভাগই ছিলেন আরব মুসলমান। কুদস মুসলমানদের পয়লা কেবলা হওয়ার ফলে তাদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র ও সম্মানীয় হয়ে ওঠে।
১০৯৫ খৃস্টাব্দ (৪৮৮ হিজরী) থেকে ইউরোপীয়রা মুসলমানদের উপর আগ্রাসন চালালে ক্রুসেড যুদ্ধ শুরু হয় এবং প্রায় দু’শ বছর যাবত তা অব্যাহত থাকে। ইউরোপীয়দের এসব আগ্রাসনের অন্যতম প্রধান কারণ ছিল পাশ্চত্যে মুসলমানদের অতীত বিজয়ভিযানের কারণে খৃস্টানদের প্রতিশোধ গ্রহণ, প্রাচ্যের (মুসলিম জাহানের) সম্পদ-ভান্ডারের প্রতি ইউরোপীয়দের লালসা এবং ঈসার পাক মাটি জিয়ারতের মাধ্যমে বেহেশত গমন ইত্যাদি। তবে ঐতিহাসিকরা ক্রুসেড যুদ্ধের মূল কারণ হিসাবে ফিলিস্তিন ও বায়তুল মুকাদ্দাস ইস্যু, মুসলমানদের কাছে শহরের খৃস্টানদের পণদান এবং সম্ভবত ওদের সাথে অসদাচরণ ইত্যাদির কথা লিখেছে। মধ্যযুগে অর্থাৎ ৩৯৫ খৃস্টাব্দে প্রাচীন রোম সাম্রাজ্য পশ্চিম রোম ও পূর্বরোমে বিভক্ত হয়ে পড়ার সময় থেকে ১৪৫৩ খৃস্টাব্দে সুলতান ফাতিহ মুহম্মদের হাতে কনস্টান্টিনোপল (ইস্তাম্বুল) বিজয়ের আগ পর্যন্ত ইউরোপ ছিল গীর্জার স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের কেন্দ্র। পোপ যুদ্ধ শুরু করার জন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন এবং পাদ্রীদের মাধ্যমে রটিয়ে দেন যে, ফিলিস্থিনে ঈসা (আঃ) -এর আর্বিভাবের নিদের্শনাদি প্রকাশ পেয়েছে। ফলে বহু সংখ্যক খৃস্টান হযরত ঈসার আবির্ভাব দেখার জন্য বায়তুল মুকাদ্দাসের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। আর পাদ্রীরা হযরত ঈসার আগমনকে বছরের পর বছর পিছিয়ে দিতে থাকে। এতে করে ফিলিস্তিনগামী জনতার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে চলে। ওদের ওসব ষড়যন্ত্রের প্রথম দিকেই একজন পাদ্রী সাতশ’ তীর্থযাত্রী নিয়ে বায়তুল মুকাদ্দাসের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। কিন্তু তিনি সাইপ্রাস হয়ে ইউরোপে ফিরে যান এবং গুজব ছড়িয়ে দেন যে মুসলমানরা তাদের শহরে প্রবেশ করতে দেয়নি। এসব পটভূমি ও ষড়যন্ত্রের ফলেই এমন এক যুদ্ধের আগুন জ্বলে ওঠে যার লেলিহান শিখা দুশ’ বছর পর্যন্ত দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে। পাদ্রীদের প্রচরণা ও প্ররোচনায় তখন প্রায় সাত লাখ দরিদ্র নিঃস্ব খৃস্টান জনতা সামরিক দলপতি তথা নাইটদের সাথে আল কুদসের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। পথে পথে এদর সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং কোন কোন সূত্রে এদের সংখ্যা কয়েক মিলিয়নে পৌঁছার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তিন বছরের এ পথচলা যুদ্ধ, লুটতরাজ ও ক্রমাগত অগ্রযাত্রার পর মাত্র চল্লিশ হাজার লোক বায়তুল মুকাদ্দাসে পৌঁছে। অন্যরা হয় মুসলমানদের সাথে যুদ্ধে নিহত হয়েছে কিংবা রোগে শোকে মারা গেছে।
বায়তুল মুকাদ্দাস দীর্ঘদিন অবরোধ থাকার পর তীব্র লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে ক্রুসেড বাহিনী শহরে প্রবেশ করে এবং গণহত্যা ও সর্বস্ব লুন্ঠনে হাত দেয়। ক্রুসেড বাহিনীর অধিনায়ক গোডাফর পরবর্তীতে শহরের রাজা হয়। বিজয়ের পর পোপের কাছে লিখিত পত্রে সে জানায় আপনি যদি জানতে চান বায়তুল মুকাদ্দাসে আমাদের হাতে বন্দীদের সাথে কি আচরণ করা হয়েছে তাহলো এতটুকু জেনে নিনঃ ‘আমাদের সৈন্যরা মুসলমানদের রক্তের গভীর স্রোত পাড় হয়ে সুলায়মান মন্দিরে পৌঁছে। রক্ত ঘোড়াগুলোর উরু পর্যন্ত পৌঁছেছে।’
খৃস্টানরা এভাবে (৯০) বছর ফিলিস্তিনের উপর শাসন চালায়। দ্বিতীয় ক্রুসেড যুদ্ধের শেষ দিকে (১১৪৭ খৃঃ-১১৪৯ খৃঃ তথা ৫৪২ হিঃ-৫৪৪ হিঃ) সুলতান সালাহুদ্দীন আইয়ুবী ক্রুসেড বাহিনীকে নাস্তানাবুদ করে বায়তুল মুকাদ্দাসকে উদ্ধার করেন এবং শক্রদেরকে সিরিয়া, মিশর ও অন্যান্য অঞ্চল থেকে বহিস্কৃত করেন। এরপর স্রোতের বেগে ইউরোপ থেকে সৈন্য সামন্ত ক্রুসেডারদের সাথে যোগ দিতে থাকে। আবার যুদ্ধের দামামা বেজে উঠলে তৃতীয় ক্রুসেড যুদ্ধ শুরু হয় (১১৮৯ খৃঃ-১১৯২ খৃঃ/৫৮৫ হিঃ)। বায়তুল মুকাদ্দাসের পতনকে খৃস্টানদের অবমাননা বলে গণ্য করে পোপ যুদ্ধের ফতোয়া জারি করে। মুসলমানদের হাতে পরাজয়ের পর ইউরোপের সম্রাটগণ ও পোপের দল পারস্পরিক অনৈক্য ভুলে যায় এবং ফ্রান্স ও বৃটেনের রাজা উভয়ই সরাসরি যুদ্ধে নামে। এরা নিজেদের বিজয়াভিযান অব্যাহত রেখে মুসলমানদের খুনে বন্যা সৃষ্টি করতে থাকে। এদের পৈশাচিক বর্বরতার বিস্তারিত বিবরণ ইউরোপীয় ঐতিহাসিকদের যেমন, আলবার মালাহ, গোস্তাভ লোভোন ও অন্যান্যের গ্রনে' রয়েছে।
সালাহুদ্দীন আইয়ুবীর ইনে-কালের পর আইয়ুবী বংশ শাসন কার্য চালাতে থাকে। ইউরোপ ও পোপদের সাথে রাজা-বাদশাহের প্রচুর দ্বন্দ্ব সংঘাত চলার পর অবশেষে তৃতীয় পোপ এ্যানিউসান রাজাদের কাজের অংশ হিসাবে ঘোষণা দিয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নির্দেশ জারী করে। এভাবে তিন বছর সন্ধি চলার পর পুনরায় যুদ্ধের (চতুর্থ ক্রুসেড) আগুন জ্বলে উঠে। ক্রসেড বাহিনী কনস্টান্টিনোপল জয় করে নেয়, সেখানে নয়া রাজা বসায় এবং চতুর্থ ক্রুসেড যুদ্ধেরও অবসান ঘটে।
পোপ এ্যানিউসান ও তাঁর উত্তরাধিকারীর উস্কানিতে পঞ্চম ক্রুসেড যুদ্ধের (১২১৭-১২২১ খৃঃ/৬১৪-৬১৮ হিঃ) আগুন প্রজ্বলিত হয়। পোপগণ ইউরোপীয় রাজাদের প্রতি বায়তুল মুকাদ্দাস উদ্ধারের আহবান জানান। কিন্তু ওরা তা প্রত্যাখান করে। ফলে পোপ নিজেই মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দান করে। পঞ্চম ক্রুসেড যুদ্ধে খৃস্টান বাহিনী পরাজিত হয়ে ইউরোপ ফিরে যায়।
পোপ তৃতীয় এ্যানারিউসের উস্কানিতে ষষ্ঠ ক্রুসেড যুদ্ধ বাঁধে। জার্মানীর রাজা ফ্রেডারিক প্রথমতঃ পোপের আহবানে সাড়া দেন। কিন্তু পরে অনুতপ্ত হয়ে প্রত্যাখান করে। এতে পোপ তাকে কাফের বলে ঘোষণা দেন। এতে ফ্রেডারিক পোপকে বন্দী করে নিজেই বায়তুল মুকাদ্দাসের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। সে সময় আইয়ুবী বংশীয় শাসকদের ভেতর তীব্র অনৈক্য ও মতভেদকারী মুসলমানগণ ক্রুসেডারদের সাথে সন্ধি করে বায়তুল মুকাদ্দাস ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। তবে শর্ত থাকে যে, মসজিদুল আকসা মুসলমানদের হাতে থাকবে।
সপ্তম ক্রুসেড যুদ্ধ সেন্ট লুইয়ের মিশর আক্রমনের মধ্য দিয়ে শুরু (১২৪৮-১২৫৪ খৃঃ/৬৪৬-৬৫২ হিঃ) হয়। গাজা উপত্যকায় খৃস্টান বাহিনী পরাজিত হলে নবম লুই এর প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য যুদ্ধে নামে। কিন্তু তিনি পরাজিত, বন্দী ও কারারুদ্ধ হন। পরে বিপুল পরিমাণে পণ দিয়ে মুসলমানদের হাত থেকে রেহাই পান। সপ্তম ক্রুসেড যুদ্ধের পর এবং আইয়ুবী বংশীয় শেষ সুলতানের ইনে-কাল ঘটলে দাস বংশীয় শাসকরা প্রায় তিন’শ বছর যাবৎ বায়তুল মুকাদ্দাসসহ সমগ্র অঞ্চলের শাসন কার্য চালান। এদিকে ইসলামী জাহানে আক্রমণকারী একের পর এক দেশ দখলকারী মঙ্গোল বাহিনী বায়তুল মুকাদ্দাস দখলের জন্য সেখানে পৌঁছলে দাস সুলতানদের সাথে লড়াই বাঁধে। লড়াইয়ে দাস বংশের পতন ঘটে এবং আকসায় ফিলিস্তিন বসবাসকারী অবশিষ্ট খৃস্টান ক্রুসেডপন্থীদেরও মূলোৎপাটন হয়ে যায়।
অন্যদিকে মঙ্গোল বাহিনী ও গ্রীকদের সাথে উসমান গাজীর দীর্ঘ লড়াই ও একের পর এক বিজয়াভিযানের পর উসমানী বংশীয় খেলাফত প্রতিষ্ঠিত হয়। ৭২৭ হিঃ মুতাবিক ১৩২৬ খৃস্টাব্দে উসমান গাজীর মৃত্যু ঘটে। তার বংশধররা একের পর এক শাসন কার্য চালাতে থাকে এবং এরপর সুলতান মুহাম্মদ ফাতেহের পালা আসে। সুলতান মুহাম্মদ ফাতেহ ১৪৫৩ খৃস্টাব্দে মুতাবিক ৮৫৭ হিজরীতে ক্রুসেডারদের শক্তিসামর্থ্যের কেন্দ্র ও পূর্ব রোম সাম্রাজ্যের রাজধানী কনস্টাটিনোপল (ইস্তাম্বুল) জয় করেন এবং খৃস্টান বাহিনীকে ইউরোপের ফটক পর্যন্ত তাড়িয়ে নিয়ে যান। তিনি ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকায় তার বিজয়াভিযান অব্যাহত রাখেন। কনস্টান্টিনোপলের বিজয় ছিল ইউরোপের ইতিহাসে এক মোড় পরিবর্তনকারী ঘটনা।
ক্রুসেড যুদ্ধের সময়ে যেমন মুসলমানদের জ্ঞান, বিজ্ঞান ও সভ্যতা ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে তেমনি এ ঘটনার ফলে ইউরোপে মধ্যযুগের অবসান ঘটে এবং রেঁনেসার বিশাল পরিবর্তন শুরু হয়ে যায়। পাঁচশ’ বছর যাবত কনস্টান্টিনোপল উসমানী সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল। এ সময়ে উসমানী খেলাফতের ভেতর শিল্প, সাহিত্য, স্থাপত্য, রাষ্ট্র পরিচালনা, উন্নয়ন, শহর স্থাপন প্রভৃতি ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়। ইউরোপীয় সরকারগুলো সব সময়ই উসমানীদের ভয়ে ভীত সন্ত্রস- অবস্থায় ছিল।
ইরানে সাফাভী রাজবংশের পত্তন ঘটায় এবং শিয়া মাজহাবকে সরকারী মাজহাব বলে ঘোষণা দেয় এবং ইউরোপীয় সরকারগুলো, বিশেষ করে বৃটেনের প্রকাশ্য ও গোপন চক্রানে- ইরান ও উসমানীদের ভেতর দু’শ বছর মেয়াদী বহু রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ অব্যাহত থাকে। উসমানীদের সাথে সন্ধি করার পর ইউরোপ যখন জ্ঞান্তবিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক (রেঁনেসা) আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠিক তখনি ইসলামী জাহানে বিশাল ও গভীর ফাটল সৃষ্টি হয় এবং মুসলমানদের শক্তি-সামর্থ্য দীর্ঘ ধ্বংসাত্মক যুদ্ধে নষ্ট হয়ে যায়। মুসলমানরা ইসলামী সভ্যতা প্রতিরক্ষা করার বদলে অভ্যন্তরীণ গৃহযুদ্ধ ও মাজহাবী হিংসা-বিদ্বেষে মত্ত হয়।
বিংশ শতাব্দীতে বায়তুল মুকাদ্দাস ও ফিলিস্তিন
শিল্প বিপ্লবের পর দিন দিন ইউরোপের চেহারা দ্রুত বদলে যেতে থাকে। ইউরোপীয়রা জ্ঞান্তবিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিভিন্ন ক্ষেত্রে মুসলমানদের ছাড়িয়ে যায়। এ সময় ইসলামী জাহান দীর্ঘ অজ্ঞতার ঘুমে নিম্মজিত হয়। কিন্তু শিল্প বিপ্লবের ফলে ইউরোপ বিপুল পরিমান উৎপাদন ও পণ্য সামগ্রী দিয়ে অভ্যন্তরীণ বাজার ছেয়ে ফেলে। এরপর তাদের বিপুল পরিমাণ উদ্বৃত্ত পণ্য গুদামে গুদামে পড়ে থাকে। এসব পণ্য সামগ্রী বিক্রি ও প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানীর জন্য বিদেশী বাজারে আবশ্যকতা দেখা দেয়। তখন থেকেই উপনিবেশবাদী যুগের সূচনা ঘটে এবং ইউরোপীয় উপনিবেশবাদীরা বাইরের জগতের বাজার দখলের জন্যে লড়াই শুরু করে।
ইসরাইল সরকার প্রতিষ্ঠার পটভূমি এবং ফিলিস্তিনী ও আরবদের প্রতিক্রিয়া
ঊনবিংশ শতকের শেষদিকে ফিলিস্থিনে কতিপয় বিদ্রোহ দেখা দেয়। এ যাবত উসমানীদের সমর্থক বৃটেন তার নীতি বদলায় এবং বিদ্রোহীদের প্রতি সমর্থন দান করে। কেননা সে সময় বৃটেনের গুরুত্বপূর্ণ উপনিবেশ এবং বৃটেনের শক্তি ও সম্পদের উৎস ছিল ভারতবর্ষ। তাই ভারতবর্ষকে নিজ হাতে রাখার লক্ষ্যে বৃটেন এশিয়ার বিভিন্ন দেশে তার আধিপত্য সংরক্ষণ করে এবং দুই ইউরোপীয় প্রতিদ্বন্দ্বী ফ্রান্স ও রাশিয়ার পক্ষ থেকে ভারতে হামলা ঠেকানোর জন্য সুয়েজ খালের উপর দখল প্রতিষ্ঠা করা জরুরী হয়ে পড়ে। ঐ সময় সুয়েজ খাল উসমানীদের হাতে ছিল।
বৃটিশ সরকার আরবদেরকে তুর্কী উসমানীদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার উস্কানি দিতে থাকে। যেমন মক্কায় আমীর হিসাবে উসমানীদের প্রতিনিধি ছিল শরীফ হুসাইন। সে খুবই ক্ষমতালিপ্সু ছিল। ইংরেজরা তাকে উস্কানি দিয়ে উসমানীদের থেকে আলাদা করে। ১৯১৬ খৃস্টাব্দে (১৩৩৪ হিঃ) ইউরোপের তিন প্রধান শক্তি রাশিয়া, ফ্রান্স ও বৃটেনের মধ্যে ‘‘সাইকস-পাইকো’’ ও ‘‘সাজোনোভ’’ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তির কথা ছিল উসমানী সাম্রাজ্যের যেসব এলাকা বিচ্ছিন্ন করা হবে সে সবকে এ তিন শক্তির ভেতর সমানভাবে বন্টন করে দিতে হবে। কিন্তু কিছুকাল পর বৃটেন এই চুক্তিকে সুয়েজ খালে স্বীয় আধিপত্যের বিরোধী হিসাবে দেখতে পায়। তাই ১৯১৭ সনে রাশিয়ার দুর্বলতা ও সেখানে সংঘটিত বিপ্লবের সুযোগ নিয়ে বৃটেন চুক্তি মেনে চলতে অস্বীকৃতি জানায় এবং ফিলিসি-কে নিজের তত্ত্বাবধানে গ্রহণ করে নেয়।
এসব পদক্ষেপ এমনি এক অবস্থায় গৃহীত হয় যখন উসমানী সাম্রাজ্যকে ছত্রভঙ্গ ও দুর্বল করার পথ হিসাবে সাম্রাজ্যবাদী বৃটেনের পক্ষ থেকে তীব্রভাবে জাতীয়তাবাদী চিন্তা প্রচলন ও শক্তিশালী করা হয়। ফলে বেশীর ভাগ ইসলামী দেশেই ক্রমশ জাতীয়তাবাদী চিন্তা দর্শন ইসলামী ঐতিহ্য ও আদর্শের স্থান দখল করে নেয়। আর এ জাতীয়তাবাদই তৎকালীন উপনিবেশবাদীদের নেতা বৃটেনের উপনিবেশবাদী নীতি অবস্থানের স্বার্থ মেটানোর মূল হাতিয়ারে পরিণত হয়। ফলে অনৈক্য সৃষ্টি এবং ইসলামী দেশসমূহ, বিশেষ করে উসমানী সাম্রাজ্যকে ভেঙ্গে তছনছ করার সামপ্রদায়িক ও বর্ণবাদী আন্দোলনসমূহের জন্ম হয়।
অথচ ঠিক এমনি সময় বৃটেনে বিশ্বের ইয়াহুদী জাতির ঐক্যের কুহেলিকাপূর্ণ আহবানের সূত্রপাত ঘটে যা কিনা ঐতিহাসিকভাবে ছিলো অসঙ্গতি পূর্ণ ও ভিত্তিহীন। বৃটিশ সরকার ইয়াহুদী বর্ণবাদী জাতীয়তার প্রচারণা শুরু করে। এতে করে কিছু সংখ্যক ইয়াহুদী একটি একক ইয়াহুদী জাতির চিন্তা ও তাদের জন্য একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার তৎপরতা শুরু করে। আর এহেন অপতৎপরতার প্রতি সাংঘাতিক শক্তি ও মদদ যোগায় বৃটিশ সরকার।
ওই ইয়াহুদী গোষ্ঠীটি ধনাট্য ইয়াহুদীদের কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য সংগ্রহ শুরু করে দেয় এবং নিজেদের লক্ষ্য হাসিলের জন্য একটি দল গঠন করে। এরা ফিলিস্তিনের একটি পাহাড়ের নামে দেশটির নাম রাখে যায়ন (ুরড়হ)। এ যায়ন পাহাড়ের উপরই রয়েছে হযরত দাউদ ও হযরত সুলায়মান আলাইহিমুস সালামসহ বনি ইসরাইলের অনেক নবীর মাজার। ঊনবিংশ শতকের শেষ দিকে (১৮৯২-১৮৯৮ খৃঃ) জাতীয়তাবাদী ইয়াহুদীরা বিভিন্ন দেশের ইয়াহুদীদের ফিলিস্থিনে গমন ও অভিভাসন দানে তৎপরত হয়ে ওঠে। তবে ইয়াহুদী আলেমরা এ তৎপরতার হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যাবলী এবং উপনিবেশবাদীদের সাথে এ তৎপরতার যোগসূত্র আবিস্কার করতে পেরে বিরোধিতা করায় এ যায়নবাদী আন্দোলন ব্যর্থ হয়ে যায়। কিন্তু বিশ শতকের প্রথমদিকে ফিলিস্তিনের ওপর বৃটিশ উপনিবেশবাদীদের প্রভুত্বের সুযোগে বিশ্ব জুড়ে ইয়াহুদীদের সাথে বিরোধিতা ও এদের নিপীড়নের সমাধান হিসাবে সামনে একটি ইয়াহুদী রাস্ট্র প্রতিষ্ঠার ধুয়া তোলা হয়। কেননা যায়নবাদের লক্ষ্যই ছিল প্রাচীন ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাস-বায়ন করা। বৃটেনও এ সময় এলাকাতে তার আধিপত্য অব্যাহত রাখার জন্য একটি ঘাটির অভাব বোধ করছিল।
যায়ন পার্টি এ পরিকল্পনার ব্যাপারে অন্যান্য ইয়াহুদী সংস্থার বিরোধিতার সম্মুখীন হলেও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে বসেছিল যারা বিরুদ্ধবাদী ওসব সংস্থার মুকাবিলা শুরু করে। এ দলটি প্রথম মহাযুদ্ধের সময় বৃটেন ও আমেরিকার কাছ থেকে এ প্রতিশ্রুতি আদায় করে যে, যুদ্ধ শেষে জার্মানীর মিত্র উসমানী সরকারের পরাজয় ঘটলে ফিলিস্তিনকে ইয়াহুদী রাষ্ট্রে পরিণত করতে হবে। কেননা প্রথম যুদ্ধের আগ পর্যন্ত বায়তুল মুকাদ্দাস সরকারীভাবে উসমানীদের হাতে ছিল। যায়নবাদীদের চেষ্টা ফলবতী হলো এবং এরা বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লর্ড বেলফোরের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়। এরা আমেরিকাতে সেদেশের ব্যক্তিত্ববর্গের মনোযোগ আদায় করতে সক্ষম হয়।
শেষ পর্যন্ত ১৯১৭ খৃস্টাব্দে ফিলিস্তিন ভূখন্ডে ‘‘ইয়াহুদী জাতির কেন্দ্র’’ স্থাপনের বিষয়টি বৃটিশ মন্ত্রিসভায় স্থান পায়। ইংরেজদের অনুচর এবং মক্কা শরীফের গর্ভনর শরীফ হুসাইন এ ব্যাপারে বৃটিশ সরকারের কাছে ব্যাখ্যা দাবী করেন। বৃটিশ সরকারও জবাব দেয়, ফিলিস্থিনে ইয়াহুদীদের প্রত্যাগমনের সিদ্ধান্ত ফিলিস্তিনী জনগণের অধিকার ও স্বাধীনতার সাথে বিরোধপূর্ণ নয়। এ জবাবে ইসরাইল সরকার গঠনের কোন কথাই ওঠেনি। যুদ্ধের শেষ দিকে যায়নবাদী সংগঠনের অনুচরবাহিনী ফিলিস্তিনের কিছু অংশ দখল করে নিলে আরবদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এর আগে থেকেই ফিলিস্থিনে ছোট ছোট গ্রুপে কলোনীবাসী হিসাবে ইয়াহুদীদের বসবাস করার সুযোগ দেয়া হয়। এরা স্থানীয় আরবদের কাছ থেকে ভূমি কেনা শুরু করে ও ইয়াহুদী কৃষি খামারের পত্তন ঘটায়।
১৯২০ সালে মিত্র শক্তি ও আন্তর্জাতিক সমাজ ফিলিস্তিনের অভিভাবকত্বকে আনুষ্ঠানিকভাবে বৃটিশ সরকারের হাতে ছেড়ে দেয় এবং সেখানে ইয়াহুদী জাতীয় কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে বেলফোর ঘোষণা বাস-বায়নে সহায়তা করার দায়িত্ব অর্পণ করে। সে সময় ফিলিস্থিনে মাত্র পঞ্চাশ হাজার ইয়াহুদী ছিল। কিন্তু ইংরেজরা ফিলিস্তিনের শাসনভার একজন ইয়াহুদীর হাতে অর্পণ করায় তাঁর সরকারের অধীনে সেখানে ইয়াহুদীদের আগমনের দরজা খুলে যায়। কিছুকালের মধ্যেই ইয়াহুদীদের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলে তা আরবদের বিরোধিতা ও বিদ্রোহের কারণ ঘটায়। বৃটিশ উপনিবেশ মন্ত্রী চার্চিল তখন বিদ্রোহ ঠেকানোর জন্যে ঘোষণা দেন যে, সমগ্র ফিলিস্তিনকে একটি ইয়াহুদী দেশে পরিণত করার ইচ্ছা বৃটেনের নেই। আর ইয়াহুদী জাতীয় কেন্দ্র স্থাপনের প্রয়োজন অনুপাতে এবং ফিলিস্তিনের অর্থনৈতিক শক্তির আওতায়ই কেবল ইয়াহুদী অভিভাসন অব্যাহত থাকবে।
ইংরেজদের সহায়তায় অতি দ্রুত ফিলিস্থিনে ইয়াহুদীদের বাণিজ্যিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, এমন কি সন্ত্রাসবাদী সংগঠন তৈরী হতে থাকে। সারা বিশ্বের ইয়াহুদী পুঁজিপতিরা এদের আর্থিক সাহায্য দিতে থাকে। সে সময় আরবরা ছিল ছত্রভঙ্গ, অসংহত ও বিচ্ছিন্ন। কেবল শ্লোগান ব্যতীত এরা ফিলিস্তিনীদের কোন সাহায্যই করেনি। ফিলিস্তিনের আরব ও খৃস্টান জনতা পারস্পরিক বিভেদ ভুলে গিয়ে অভিন্ন শত্রুর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হলো। ১৯২৯ সালের গ্রীস্মকালে একপক্ষে ফিলিস্তিনের আরব ও খৃস্টান জনতা এবং অন্যপক্ষে ইয়াহুদী মুজাহিরদের মাঝে প্রথম রক্তাক্ত সংঘর্ষ বাঁধে। ইয়াহুদী যায়নবাদীরা ও ইংরেজ সৈন্যরা মিলে ফিলিস্তিনের দিকে গুলী বর্ষণ করলে প্রায় ৩৫১ জন ফিলিস্তিনী শাহাদত বরণ করে এবং কিছু সংখ্যক আহত ও বন্দী হয়। এক প্রহসনমূলক বিচারে একদল ফিলিস্তিনীকে আজীবন কারাদন্ড কিংবা ফাঁসি দেয়া হয়। বিশের দশকের শেষ দিক থেকে ১৯৩৬ সাল পর্যন্ত সময়ে শেখ ইযযাদ্দিন কাসসামের সশস্ত্র অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। তিনি বৃটিশ ও ইয়াহুদী বর্ণবাদী সৈন্যদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামেন। শেষ পর্যন্ত তিনি ও তাঁর বেশীর ভাগ সাথী শাহাদত বরণ করেন ও অবশিষ্টরা কারারুদ্ধ হন।
১৯৩৭ সালে আব্দুল কাদের হুসাইনী সংগ্রামের নেতৃত্ব হাতে নেন। তিনি বহু যুদ্ধের পর শেষ পর্যন্ত সঙ্গীসাথীসহ শাহাদত বরণ করেন। ১৯৪৪ সালে হাসান সালামা বৃটিশ ও যায়নবাদী যৌথ বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধের নেতৃত্ব দান করেন এবং কিছুকাল পর তিনি শাহাদত বরণ করেন। চল্লিশের দশক থেকে ফিলিস্তিন ইস্যু একটি আরব ইস্যুতে পরিণত হয় এবং আন্তর্জাতিক বিষয়াদির শীর্ষে স্থান লাভ করে। এ ধরনের একের পর এক সংগ্রাম ও আরবদের রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার মুখে বৃটিশ সরকার বেপরোয়া ইয়াহুদী অভিভাসন সীমিত করতে বাধ্য হলে তা যায়নবাদীদের তীব্র বিরোধিতার সম্মুখীন হয়। ইয়াহুদী বর্ণবাদীরা এমন কি সন্ত্রাসবাদী কাজেও হাত দেয়।
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময়ে ফিলিস্থিনে মোটামুটি শান্তিপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করে। কিন্তু ১৯৪৮ সনের ১৪ই মে তারিখে বৃটিশ সরকার ফিলিস্থিনে তার অভিভাবকত্বের অসান ঘটিয়ে সৈন্যদের বের করে নিলে সেদিনই তেলআবীব শহরে ইয়াহুদী জাতীয় পরিষদ গঠিত হয় এবং ইসরাইল নামক রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা ঘোষণা দেয়। পূর্ব যোগাযোগ অনুসারে এর কয়েক ঘন্টা পরই আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান নয়া ইসরাইল সরকারকে স্বীকৃতি দান করে। ইংরেজরাও সেখান থেকে চলে যাওয়ার সময় তাদের যাবতীয় সাজসরঞ্জাম ইয়াহুদী যায়নবাদীদের হাতে তুলে দেয়। তখন থেকেই ফিলিস্তিনের ব্যাপারে জাতিসংঘ হস-ক্ষেপ শুরু করে। ফলে ফিলিসি-নিদের উপর ইয়াহুদীদের আগ্রাসন ঠেকানোর যাবতীয় প্রচেষ্টা নিস্ফল হয়।
দখলদার যায়নবাদী একের পর এক ফিলিস্তিনী শহর, গঞ্জ ও গ্রাম দখল এবং নিরস্ত্র অসহায় ফিলিস্তিনীদের ঘরবাড়ী থেকে উচ্ছেদ করা শুরু করে। দরিদ্র অসহায় ফিলিস্তিনী মুসলমানরা যায়নবাদীদের বাঁধা দিলে এই হায়েনার দল ১৯৪৮ সনের এপ্রিল মাসে দেইর ইয়াসিন ও কাফার কাসেম গ্রামে গণহত্যার তান্ডবলীলা চালায়। এতে নিরাশ্রয়ী বাস'হারা ফিলিস্তিনীদের ভেতর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং এরা প্রাণের ভয়ে জর্দান সীমানে-র ওপাড়ে পালিয়ে যায়। সে সময় আরবদেশগুলোর সৈন্য বাহিনী ময়দানে নামে। কিন্তু ইসরাইল, ইউরোপ ও আমেরিকার সরাসরি সমর্থন পেয়ে এবং সেখান থেকে বিরামহীনভাবে জঙ্গী বিমান ও সমরাষ্ট্র লাভ করে আরবদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়।
এ যুদ্ধে দশ লাখের অধিক আরব ফিলিস্তিনী বাস'হারা হয়। জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে তখন আরব ও ইয়াহুদী অঞ্চলে ভাগ করে দেয় এবং জেরুজালেমকে সরাসরি আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। কিন্তু ইসরাইল এ পরিকল্পনা মানেনি। অন্যদিকে ফিলিস্তিনীদের মাঝে বিভিন্ন গেরিলা গ্রুপ ও সংগঠন জন্ম নেয়। এরা ফিলিস্তিনীদের ন্যায়সঙ্গত স্বাভাবিক অধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য গেরিলা যুদ্ধে নামে। ১৯৬৪ সালের ২৮ শে মে আল কুদস শহরে (বায়তুল মুকাদ্দাস) ফিলিস্তিন কংগ্রেস বসে এবং ফিলিস্তিন মুক্তি সংস্থায় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়া হয়। সাথে সাথে ফিলিস্তিন মুক্তিবাহিনীও গঠিত হয়। ফলে সংগ্রাম এক নয়া মোড় গ্রহন করে। এরপর থেকে হাজার হাজার ফিলিস্তিনী স্বদেশের মুক্তির পথে শাহাদত বরণ করতে থাকে। উল্লেখ করা আবশ্যক যে, তখনো পর্যন্ত বেপরোয়া ও বিরামহীন ইয়াহুদী আগমন ও অভিভাসন সত্ত্বেও আরব ও মুসলমানদের তুলনায় ইয়াহুদীরা ছিলো সংখ্যালঘু।
ছয় দিনের যুদ্ধ
১৯৬৭ সালের পাঁচই জুন ইসরাইল অতকির্তে মিশর, সিরিয়া ও জর্দানের বিমানবন্দগুলোতে হামলা চালিয়ে আরবদের সাথে যুদ্ধ শুরু করে। এ যুদ্ধে জর্দান নদীর পশ্চিম তীর, গাজা উপত্যকা, সিরিয়ার গোলান পার্বত্যাঞ্চল ও মিশরের সিনাই মরু এলাকা ইসরাইলের দখলে চলে যায়। আরব-ইসরাইলের এ যুদ্ধ ছয় দিনের যুদ্ধ বলে পরিচিত। এ যুদ্ধের পরাজয় থেকে আরবরা যে প্রত্যক্ষ শিক্ষা গ্রহন করলো তা হচ্ছে এরা ক্লাসিক যুদ্ধে ইসরাইলকে পরাজিত করতে পারবে না। কেননা ইসরাইলের হাতে রয়েছে ইউরোপ ও আমেরিকার অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র। তাই তারা গেরিলা গ্রুপগুলোকে শক্তিশালী করে সংগ্রামের সিদ্ধান্ত নেয়। এদিকে জাতিসংঘ ইশতেহার পাশ করে ইসরাইলকে অধিকৃত এলাকাসমূহ হতে পিছিয়ে আসার নির্দেশ দেয়। কিন্তু ইসরাইল তাতে মোটেও কর্ণপাত করেনি। উল্টো জর্দানের পরিচালনাধীনে ন্যস- বায়তুল মুকাদ্দাস শহর, বেথেলহাম (বায়তুল লাহম) এবং ২৭টি গ্রামকে জবরদখল পূর্বক ইসরাইলের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে ঘোষণা দেয়। ইসরাইল বায়তুল মুকাদ্দাসের তিন হাজার সংখ্যক ইয়াহুদী জনতাকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেয়ার লক্ষ্যে এদের সংখ্যা এক লাখ নব্বই হাজারে পৌঁছায়। ১৯৬৯ সালের ১১ই আগষ্ট তারিখে ইয়াহুদীরা মসজিদুল আকসায় আগুন ধরিয়ে দেয় এবং ঘোষণা দেয় যে, বৈদ্যুতিক বিভ্রাটের ফলেই এ ঘটনা ঘটে। অধিকতৃ অঞ্চলগুলোতে ইয়াহুদী শহর তৈরীতে দ্রুত হিড়িক পড়ে যায়। ইসরাইল বায়তুল মুকাদ্দাসের ইসলামী চেহারাকে ইয়াহুদী শহরের চেহেরায় পরিণত করার অপপ্রয়াসে লিপ্ত হয়।
ইয়াহুদী বর্ণবাদী সরকার পুরাকীর্তি, প্রাচীন শিলালিপি ও আম্বিয়া কেরাম এবং অতীত জাতিগুলোর নিদর্শনাদি খঁজে বের করার অজুহাতে মসজিদে ছাখরা, মসজিদে আকসা এবং আল কুদসের নিচে ও আশপাশে খনন কাজে হাত দেয় যাতে করে আরো কিছু সংখ্যক আরব বাশিন্দাকে সেখান থেকে বিতাড়ন পূর্বক ঐসব ঐতিহাসিক স্থাপনাকে ধ্বংস করতে ও নিজেদের খেয়াল খুশীমত গড়ে তুলতে পারে। ইসরাইল আমেরিকা, বৃটেন ও ইউরোপের মদদপুষ্ট হয়ে শক্তি নিয়ে অগ্রসর হতে থাকে এবং আরব বিশ্ব, এমন কি জাতিসংঘের বিরোধিতা সত্ত্বেও ইসরাইল সরকার তেলআবীবের পরিবর্তে বায়তুল মুকাদ্দাসকে (জেরুজালেম) তার রাজধানী হিসাবে ঘোষণা দেয়।
বাকী অংশ দেখুন
http://islamibd.com/home/
২৯ শে নভেম্বর, ২০১২ সকাল ১০:৫৩
ইভা_110 বলেছেন: ধন্যবাদ তবে বাকী অংশটা পড়ে নিবেন।
২| ২৯ শে নভেম্বর, ২০১২ ভোর ৫:০৩
েশখসাদী বলেছেন: পড়ে পড়ব । অনেক বড় লেখা -- কয়েক পর্বে লেখা যেত মনে হয় ।
২৯ শে নভেম্বর, ২০১২ বিকাল ৫:২৩
ইভা_110 বলেছেন: ধন্যবাদ তবে বাকী অংশটা পড়ে নিবেন।
৩| ২৯ শে নভেম্বর, ২০১২ ভোর ৫:৩৭
মাহমুদুর রাহমান বলেছেন: +
২৯ শে নভেম্বর, ২০১২ রাত ১০:৫৫
ইভা_110 বলেছেন: ধন্যবাদ
৪| ২৯ শে নভেম্বর, ২০১২ ভোর ৬:০২
মাহিরাহি বলেছেন: Thank you
০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১২:২২
ইভা_110 বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।
৫| ২৯ শে নভেম্বর, ২০১২ ভোর ৬:৪৪
বীরেনদ্র বলেছেন: ইতিহাস আরোবিস্তারিত হওয়া উচিৎ। জেরুজালেম নগরী ইহুদী খৃস্টান এবং মুসলমানদের কাছে পবিত্রতম স্থান। আপনি যাদেরকে সোলায়মান, দাউদ বা মুসা নবী বলছেন তারাই কিন্তু ইহুদীবাদের প্রবক্তা। যেমন ১০০০ খৃস্টপূর্বাব্দে রাজা ডেভিড বা দাউদ নবী প্রথম ইজরায়েল রাস্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন এবং ডেভিড পুত্র সোলাইমান প্রথম মন্দির নির্মান করেন । রোমান সম্রাট কনশ্ত্যান্টাইন সম্রাটের সময় যখন খৃস্ট ধর্মকে রাস্ট্রীয় ধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এবং এখানেই যীশূকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়। মুসলমানদের কাছে জেরুজালেম পবিত্র নগরী কারন এখানকার টেম্পল মাউন্ট যেখানে এখন ডোম অফ দি রক এবং আল আকসা মসজিদ , সেখান থেকেই নবীজি মিরাজে যান। এখান থেকে মিরাজে যাওয়ার ব্যাপারটা বাস্তব সম্মত নয়, কারন হল সে সময় এই এলাকা ছিল রোমানদের দখলে। যাই হোক একই রাত্রিতে জেরুজালেমে নামাজ পড়া এবং সেখান থেকে মিরাজে যাওয়া বিশ্বাসের ব্যপার, সেই বিশ্বাস অনুসারেই মুসলমানেরা জেরুজালেমকে পবিত্র স্থান হিসাবে মানেন। মসজিদ আল আকসা স্থাপিত হয় অনেক পরে উম্মিয়া খলিফাদের সময়। নবীজির সময়ে ওখানে কোন মসজিদ ছিল না। ৬৩৫/৩৬ সালে হজরত ওমরের সময়ে জেরুজালেম মুসলমানদের করায়ত্ব হয়।
সুতরাং ধর্মীয় ভিত্তিতে বিচার করলে এই এলাকায় খৃস্টান এবং ইহুদীরা মুসলমানদের আগে থেকেই বাস করত। এখন আসি মানবিক ব্যাপারে।
ইজরায়েল রাস্ট্রের গোড়া পত্তন এবং প্যালেস্টাইনীদের উৎখাত একটা যবর দখল। জাতিসঙ্ঘ ইহুদী এবং প্যালেস্টাইনীদের জন্য দুইটি রাস্ট্র প্রতিষ্ঠার যে প্রস্তাব দেয় তাতে ইহুদীরা সম্মত হলেও আরবেরা সম্মত হয় নি এবং না হওয়াটাই স্বাভাবিক। কারন হাজার বছরের বেশী ধরে তারা এখানে বসবাস করে আসছিল আর ইহুদীরা চাইছিল স্বীকৃতি।
অবশেষে যুদ্ধ। যুদ্ধ করেই তারা দখল করে নিয়েছে এই এলাকা গুলো যদিও অনেক এলাকা ছেড়েও দিয়েছে ইজরায়েল , যেমন গাজা, সিনাই, জর্দান নদীর পশ্চিমতীর ইত্যাদি।
জ্ঞান বিজ্ঞানে অর্থে এবং সামরিক শক্তিতে ইজরায়েল বা ইহুদীরা এত বেশী শক্তিশালী, এখন যে তাদের কথা শুনে চলে আমেরিকা, বৃটেন সহ পশ্চিমা দেশগুলো এবং তাদের মদদেই ইজরায়েল টিকে আছে।
৬| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১০:০১
সৈয়দ নাসের বলেছেন: অনেক ভালোলাগা । শুভেচ্ছা রইলো ।
০১ লা ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১০:৪২
ইভা_110 বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।
৭| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৩:৩৭
ইভা_110 বলেছেন: বর্তমান সময়ে ফিলিস্তীন সমস্যার একটিই মাত্র সমাধান হচ্ছে , যেসব ফিলিস্তিনীরা বিদেশে উদ্বস্তু শিবিরে আছে তাদের সমন্নয়ে আর যারা ১৯৪৫ এর আগে ফিলিস্তিনে ছিলেনতাদের উপস্থিতিতেসুষ্ঠভাবে গণভোট হওয়া । আর গনভোটের ফলাফলই ভবিষ্যত অবস্থা নির্ধারণ করবে। কিন্তু যায়ানবাদী ইহুদীরা তা চায় না।
৮| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৩:৫৬
বীরেনদ্র বলেছেন: গনভোট ইত্যাদি ফালতু কথা কি বলছেন? যেখানে ইজরায়েল রাস্ট্রের অস্তিত্বের প্রশ্ন , গনভোট দেবে ফিলিস্তিনিরা আর ইহুদীরা চলে যাবে এ হাস্যকর দাবী ইজরায়েল মানবে কেন? একটুকু ভুখন্ড নিয়ে দুই পক্ষের একই দাবী। এর কোণ যৌক্তিক সমাধান হবে না। যে যতদিন জোর করে দখল করে রাখতে পারে।
৯| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৩:২৫
সৌর কলঙ্কে পর্যবসিত বলেছেন: যে যতদিন জোর করে দখল করে রাখতে পারে।
©somewhere in net ltd.
১|
২৯ শে নভেম্বর, ২০১২ ভোর ৪:৪৫
সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি বলেছেন: ভাল লাগা রইল