নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে........

সত্য সুন্দরকে ব্রত করি জীবনে

মেহবুবা

মেহবুবা › বিস্তারিত পোস্টঃ

অসমাপিকা,শেষ চিঠি অধ্যায়

২১ শে মে, ২০২৫ রাত ৮:১৩


"আর কেউ না জানুক, অরু জানে যে জীবনে যা হারিয়ে যায় সে আর ফিরে পাওয়া যায় না। হয়তো কেউই চায় না তবু বেদনা জেগে থাকে যাদের হৃদয় থাকে তাদের হৃদয়ে। সমস্ত কিছু পেয়েও একজনকে না-পাওয়ার বেদনা, সমস্ত প্রাপ্তিকে মিথ্যা করে অনুক্ষণ তার সমস্ত হৃদয় আচ্ছন্ন করে থাকে। একজন পুরুষের সব যশ, সব অর্থ, সব সাম্রাজ্য ম্লান করে তার সাফল্যের সর্বোচ্চ শিখরের ওপরের আকাশে একজনের মুখ, একজনের হাসি, একজনের চোখের উজ্জ্বলতা ঝিলিক মেরে যায়। তখন কেন জানি না, মনে হয় সব মিথ্যা, সব ফাঁকি, সব পাওয়া তার বৃথা হয়ে গেল।"... (প্রথমাদের জন্য)
বুদ্ধদেব গুহের লেখার এই কথাগুলো যেন দীপুর কথা! দীর্ঘশ্বাস ফেলে দীপু ! যদি জানতো লীনা! আর জেনেই বা কি হবে এখন!

মেইল খুলে চমকে গেল দীপু, কতদিন পর লীনার মেইল ! 'শেষ চিঠি' শিরোনাম দেখে চুপ করে বসে রইল কিছুক্ষণ ; কেন শেষ চিঠি, কি আছে এই লেখায় এইসব ভাবনায় কেমন আনমনা হয়ে গেল। বয়সের সাথে সাথে সাহস এবং শক্তি কমে আসছে, জড়তা কেমন পেয়ে বসছে টের পায় দীপু। পড়তে শুরু করল চিঠি।
দীপু তোমার জন্য
'শেষ চিঠি'
ঝরা পাতা বৈ তো কিছু নই
উজ্জ্বল সবুজ ছিলাম, প্রগাঢ় সবুজ গভীর ভালবাসায়,
কখনো রক্তিম ছিলাম ছুঁয়ে যাওয়া বাসনায়,
ছিলাম না থাকবার ছলনায়,
গভীর বেদনায় দীর্ঘ ঘুম
অপেক্ষার দোর খোলা
বন্ধ চোখের অন্ধকারে অপেক্ষা অনন্ত।


শীত বেশী পড়েছে মাফলার জড়িয়ে নিও ঠিক করে আর পিঠের ব্যাথা কি আগের মত আছে ? শান্ত জীবনে শান্তিতে কি থাকতে পারছো?
কি সব কথা বলছি যেন প্রশ্ন করে উত্তরের আশায় আছি ! একেবারে নয়, কোন উত্তর চাইছি না। বলতে চাইছি যে, তোমার সাথে আমার অনেক কথা ছিল, জমে আছে। এখন বলব বলে ভাবছি, শোন।
তোমার সাথে আর কখনো দেখা হবে কিনা জানিনা, হলেও তো আর কিছু পরিবর্তন হবে না আমাদের; যেমন করে চলছে চলুক। কত কি মনে আসে এই অবেলায় ! তোমার মনের বন্ধ দরজার ভেতরে যে আছে থাক্, তুমি যেমন যত্ন করে রেখেছো তাকে সে ঠিক বুঝতে পারে;সে কারনেই তার যন্ত্রণা আরো বেশী ! আর কিছু কি দিতে পেরেছো তুমি আমাকে যন্ত্রণা ছাড়া? তোমার এই যন্ত্রণা আমাকে জাগিয়ে রাখে; আগলে রাখে ভীষন দূর্বিপাকে। দূরে থেকেও কতো কাছের করে রাখে !
আবার মনে হয় তুমিই বেশী কষ্ট পেলে আমার কারনে সারা জীবন। থাক্ এসব হিসেব নিকেষের কালো মলাটে চাপা অন্ধকার খাতা।
ভাবছি আমার ইচ্ছের কথা সব বলে রাখি, যদি সময় না পাওয়া যায়! সুযোগ যদি না মেলে আর কখনও !
তোমার বিরুদ্ধে আমার অভিযোগ অনেক, সব অভিযোগ, রাগ, দুঃখ সব জানাবো তোমাকে, বলবো এতদিনের জমে থাকা সব কথা! হয় তো সারাদিন লেগে যাবে, হয়তো একদিনে ফুরোবে না বলা; যত সময় লাগে আমি সব বলে দিতে চাই! এ আমার অনেক দিনের ইচ্ছে। আমার ইচ্ছে তোমার সামনে বসে অনেক ঝগড়া করবো; সাধ মিটিয়ে করবো। অবশ্য ঝগড়া কি আর এক পাক্ষিক হয়? নাকি করা যায়? তুমি তো চুপ করে থাকবে, জানি সে তোমার চিরকালের অভ্যাস !
আমি রাগ,দুঃখ,অভিমান সব নিয়ে যা যা মনে আসবে সব বলব যত সময় লাগে, যেভাবে পারি ইচ্ছেমত ! তারপর কষ্ট কমে যাবে আমার। ভেবেও হালকা লাগছে !
ধুর ছাই! এতকাল এত কিছু সয়ে এসে জীবনের শেষ সময়ে কি হবে এমন সব দুঃখ জাগানিয়া কথায়? থাক্ এমন এলোমেলো সাধ ! বুড়ো বয়সের আহ্লাদ।
আমাদের সবই কি দুঃখময়? ভাবনার প্রান্তে জমাট বাঁধা আছে মধুময় কত কি সুখের ধারায় ! থাক্ সযত্নে সে সব । ফল্গুধারার কি বা আসে যায় জাগতিক হিসেবের লাভ কিংবা ক্ষতির বৃষ্টিতে !
তার চেয়ে বরং এমনি করে সাজিয়ে নেই ভাবনাগুলো। জীবনের শেষ সময়ে তুমি আমার পাশে বসে থাকবে, শক্ত করে আমার হাত ধরে থাকবে; কোথাও যাবে না মূহুর্তের জন্য! দুজন নীরব থাকবো অথচ আমাদের সব বলা হয়ে যাবে সেদিন; নিঃশব্দের গভীরতা অনেক অব্যক্ত কথা বলে দিতে পারে। পৃথিবী ছেড়ে যাবার ক্ষনে মনে হবে তুমি আছো, ছিলে সবদিন! সে এক অন্য পাওয়ার স্বাদ!!
পরক্ষণেই মনে হয় এমনটি কি করে হবে? এমন সব অবান্তর চিন্তা মাথায় না আনাই ভাল, কি বলবে লোকে! আমার কাছের সকলে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে যাক্ চাই না আমি, জানি তুমিও চাইবে না। এর চেয়ে কত সহজতর কাজ তুমি বা আমি করতে পারিনি পারিপার্শ্বিকতা ভেবে, অন্যে কি ভাববে সেই কথা মনে করে; সেসব দিনে যখন স্বপ্ন সত্যি করবার আলো ছিল, বাতাসে ভালবাসার আবীর ছড়ানো ছিল, প্রাণ ভরা প্রাচুর্য ছিল!
আজকাল কত কি যে সাধ জাগে মনে, এড়িয়ে যেতে চাই; তবু বারবার কড়া নাড়ে মনের দরজায়।
ভেবে দেখেছি সম্ভব নয় এসব কিছুই, তুমি কষ্ট পাবে আর আমারও তোমার হাত ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করবে না শেষ সময়ে। মাঝখান থেকে মুখরোচক গল্প তৈরী হবে আমাদের দুজনকে নিয়ে।
তার চেয়ে বরং তুমি আমার শেষ সময়ে পাশে থেকো, মাথায় হাত বুলিয়ে দিও।
এক গভীর ভাবনা স্রোত মনে আসছে, বেদনার রেখায় আঁকা, চোখের সামনে পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি যেন! আমার মৃত্যু যখন ঘনিয়ে আসবে তুমি আমার পাশে বসে আছো। সময় ফুরিয়ে গেলে পরে কপালে একটু আদর করে দিও, এ জীবনে যে কপালে লেখা ছিল না এমন অনুভব! কোনদিন স্পর্শ করনি আমায় জীবদ্দশায় যখন অনুভূতি ছিল। মরনে তোমার আলতো ঠোঁটের ছোঁয়ায় আমার এক জীবনের না পাওয়া সাধ জড়িয়ে যাবে, খুব বেশী কি চাওয়া হয়ে গেল! খুব কি কঠিন এ অনুগ্রহ!
সম্বিৎ ফিরে আসে! ধর্ম, সমাজ, কত কিছুর পাহাড় সমান বাঁধা ! অবাস্তব, অবান্তরও বটে। ধর্মীয় দিক্ দিয়ে সামাজিকতা বিবেচনার এ একেবারেই অসম্ভব। তুমি তো আমার মৃত্যর পর মুখটাও দেখতে পাবে না, তুমি যে তখন আমার জন্য নিষিদ্ধ পরপুরুষ।
এ সব ভাবনা দূরে সরিয়ে রাখি, সেই ভাল। তার চেয়ে আমার মৃত্যুর পর তুমি আমার কবরের মাথার দিকে বেলী ফুলের গাছ লাগিয়ে দিও। আমার প্রিয় শুভ্র ফুল, মিষ্টি ঘ্রাণ!
চোখ ভিজে আসছে আমার, বেলী ফুলের সুঘ্রাণ কি কষ্ট বয়ে আনতে পারে!
এই বেঁচে থাকা জীবনে মরনের ওপার থেকে ভেসে আসা সুরভীতে কি ভালবাসার আঘাত জড়িয়ে থাকে!
হালকা মিষ্টি অনাবিল সুরভী যেন তোমার ভালবাসার মত পবিত্র !
শেষ ইচ্ছে আশা করছি অপূর্ণ রাখবে না আমার। সারা জীবন আমার কারনে কত কষ্ট মেনে নিয়েছো, সে তুলনায় এ তেমন কঠিন কিছু নয়।
তোমার গোপন ব্যাথা, সব কষ্ট সেই বেলী ফুল গাছের নীচে মাটিতে ছড়িয়ে দিও, আমি জড়িয়ে রাখবো।
ভাল থেকো, ভাল রেখো এই আমাকে।



***শততম লেখা এটি আমার
বেলী ফুলের ছবি আমার তোলা।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে মে, ২০২৫ রাত ৯:৪৫

শায়মা বলেছেন: আজই ভাবছিলাম তোমার কথা আপুনি!!

আমার মনে হয় ভালোবাসার মানুষকে বিয়ে করতে নেই। সারাজীবন পাশে রাখতে নেই....

দূরে থাকলেই ভালোবাসা বেশি মূল্য পায় ....... মানে বিরহেই ভালোবাসা জেগে থাকে, বেঁচে থাকে.....

২১ শে মে, ২০২৫ রাত ৯:৫৩

মেহবুবা বলেছেন: তোমার ভাবনায় গিয়ে বলে আসিনি এ লেখার কথা?
দূরে থাকলেই ভালোবাসা বেশি মূল্য পায় -- হয়তো ঠিক, তবে দুঃখও বেশী মূল্য চায়!
ভালবাসার মানুষকে বিয়ে করে দ্বিগুণ সুখী হওয়া যায় যদি ভালবাসার মূল্য দিতে পারে!

২| ২১ শে মে, ২০২৫ রাত ৯:৫৬

শায়মা বলেছেন: হুম!!! কত শত মানুষকে দেখি কত কত প্রেম করে ঝামেলা করে বিয়ে করে তারপর সেই প্রেম কোথায় উবে যায়..... তখন দু'জন দুজনের যেন শত্রু হয়ে যায়।

২১ শে মে, ২০২৫ রাত ১০:২৬

মেহবুবা বলেছেন: ঠিকই বলেছো, তবে এই প্রেম সেই প্রেম না তাই তো মারামারি ঝগড়া ঝাটি।
প্রেম ভালোবাসা যাই বল শ্রদ্ধা বোধ আসল বিষয় এবং হঠকারিতা বিষবাষ্প।

৩| ২১ শে মে, ২০২৫ রাত ১০:০৮

অপলক বলেছেন: চোখ ভিজে গেল, লেখাটা পড়তে গিয়ে। সুন্দর করে লিখেছেন...


হয়ত কাকতালীয়, তবুও শুশুন, উপরের মতন কথা কদিন আগে আমার একান্ত মানুষটির সাথে হয়েছে... ৯০ ভাগ মিলে গেল কিভাবে বুঝলাম না...

২২ শে মে, ২০২৫ সকাল ৮:৪৪

মেহবুবা বলেছেন: কাকতালীয় হোক আর যাইহোক্ আমার লেখার মত কথা সত্যি যদি হয়ে থাকে তো মনটা খারাপ হোল। আমি তো সাহিত্য রচনা করেছি মনের মাধুরী মিশিয়ে।

৪| ২১ শে মে, ২০২৫ রাত ১০:২৭

আহমেদ জী এস বলেছেন: মেহবুবা,




ব্লগ খুলতেই শ্বেতশুভ্র বেলী ফুলের ছবি দেখে লগইন হতে হলো। শেষে এসে দেখলুম এটি আপনার শততম লেখা আর ফুলের ছবিটিও আপনার তোলা। অভিনন্দন!

আমাদের সবই কি দুঃখময়? ভাবনার প্রান্তে জমাট বাঁধা আছে মধুময় কত কি সুখের ধারায় ! থাক্ সযত্নে সে সব । ফল্গুধারার কি বা আসে যায় জাগতিক হিসেবের লাভ কিংবা ক্ষতির বৃষ্টিতে !
এখানটাতে এসে এমন ভাবনা নিয়ে ব্লগে আমার নিজেরও একটা চিঠি লেখার কথা মনে পড়লো। দেখতে পারেন এখানে -কি কথা তাহার সাথে .....

আসলে মানুষের জীবনে এমন কিছু না কিছু স্মৃতি থাকে যা দুঃখজনক হলেও নিভৃত সুখের.......

৫| ২২ শে মে, ২০২৫ সকাল ৯:৪৬

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন।
বেলীফুল আমার পছন্দ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.