![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]
যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস ও জীবনের উপাখ্যান
ফকির ইলিয়াস
__________________________________________________
৪ জুলাই ২০১৪ যুক্তরাষ্ট্রের ২৩৮তম স্বাধীনতা দিবস। ১৭৭৬ সালের ৪ জুলাই উত্তর আমেরিকার ১৩টি উপনিবেশের প্রতিনিধিবর্গ ফিলাডেলফিয়ায় সম্মেলন আয়োজনের মাধ্যমে ব্রিটিশ উপনিবেশের শৃঙ্খল ছিঁড়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘স্বাধীনতা ঘোষণা’ করেন। নাগরিকরা, যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে প্রতি বছরই নেচে-গেয়ে, জাতীয় সঙ্গীত বাজিয়ে, জাতীয় পতাকা উড়িয়ে, প্যারেড ও রাতে চোখ ঝলসানো আতশবাজির খেলায় আনন্দে কাটায় বিশেষ এই দিনটিতে। এ উপলক্ষে নিউইয়র্ক সিটির হাডসন নদীর পাড়ে, ওয়াশিংটন ডিসি সংলগ্ন পটমেক নদীর ধারে, লাসভেগাস, ডিজনিওয়ার্ল্ড, আটলান্টিক সিটিসহ পুরো যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে আতশবাজির বর্ণাঢ্য উৎসব হবে। যুক্তরাষ্ট্রে সবসময়ই লাখো আমেরিকানের সমাগমের মাঝে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়েই পালিত হয় স্বাধীনতা বার্ষিকী। আনুষ্ঠানিকভাবে ‘স্বাধীনতা ঘোষণা’র রাজ্য ফিলাডেলফিয়ার মুক্তি ঘণ্টা বাজানোর মধ্য দিয়ে প্রত্যুষে শুরু হয় যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচি। এরপর সারা দেশের ছোট-বড় গির্জায় একসঙ্গে ঘণ্টা বাজিয়ে শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে সূচনা ঘটে দিবসটির।
স্বাধীনতার প্রাক্কালে এই ১৩টি উপনিবেশ একসঙ্গে ইংল্যান্ডের রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু করে। ভার্জিনিয়া উপনিবেশের জর্জ ওয়াশিংটন ছিলেন প্রধান সেনাপতি। এরই মধ্যে শুরু হয় স্বাধীনতা যুদ্ধ। আর সেই যুদ্ধে উপনিবেশগুলোর বিজয়ের প্রাক্কালে ১৭৭৬ সালের ২ জুলাই দ্বিতীয় কন্টিনেন্টাল কংগ্রেসে ভোটের মাধ্যমে স্বাধীনতা ঘোষণার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এরপর পাঁচজনের একটি কমিটি স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র রচনা করে। টমাস জেফারসন, জন অ্যাডামস, বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন ছিলেন এ কমিটির অন্যতম সদস্য। টমাস জেফারসন ছিলেন মূল লেখক। রচিত ঘোষণাপত্রটি নিয়ে কংগ্রেসে তর্ক-বিতর্ক হয় এবং পরিশেষে ঘোষণাপত্রটি চূড়ান্ত রূপ লাভ করে। ঘোষণাপত্রটি কংগ্রেসের অনুমোদন পায় ৪ জুলাই ১৭৭৬ সালে। ব্রিটিশদের অরাজকতা থেকে বের হয়ে আসার জন্য ‘প্রতিটি মানুষই সমান এবং একই সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি’ এই বাণীকে সামনে রেখে থমাস জেফারসন লিখলেন স্বাধীনতার বাণী।
শুধু ভৌগোলিকই নয়, এভাবেই ভেঙে যায় সব পরাধীনতার শৃঙ্খল। সংবিধানে যুক্ত হয় বাকস্বাধীনতা, পত্রিকা ও প্রকাশনার স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, এমনকি কোনো আইন পরিবর্তনের জন্যও সরকারের কাছে আবেদন করার স্বাধীনতা সবার, আমেরিকায় বসবাসকারী প্রতিটি মানুষের। নিজেকে প্রকাশ করার যে স্বাধীনতা, সংবাদপত্র, রেডিও-টেলিভিশন তথা গোটা মিডিয়ার যে স্বাধীনতা আছে আমেরিকায়, পৃথিবীর বহু দেশেই এতোটা স্বাধীনতা অনেক মানুষেরই নেই। রয়েছে পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতাও। রাষ্ট্র কখনই কোনো ধর্ম পালনে কাউকে বাধ্য বা নিষেধও করবে না। যে যার ধর্ম পালন করবে। যদিও অধিকাংশ জনগণই ঈশ্বর ও ধর্মে বিশ্বাসী এখানে। কেউ যদি কোনো ধর্মই পালন করতে না চায়, এমনকি ঈশ্বরকেও বিশ্বাস করতে না চায়, সে অধিকারও আছে তার। আছে নিরশ্বরবাদ নিয়ে কথা বলার, বই লেখার সকল অধিকার। এ জন্য তাকে দেশান্তরিত হতে হয় না। নিজ ধর্ম পালনের অবাধ স্বাধীনতার কথা ভেবেই ফ্রান্স, স্পেন, ইংল্যান্ড থেকে বহু লোক আমেরিকায় এসেছিল। এখনো নিরাপদে ও নিশ্চিন্তে স্বাধীনভাবে নিজের ধর্ম পালনের জন্য এটিই একমাত্র ভূমি। কতো ধর্ম-বর্ণের মানুষ এখানে! কি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। বলা দরকার স্বাধীনতা ঘোষণার পরপরই এসব সুফল চলে এসেছে তা কিন্তু নয়। স্বাধীনতার এ ঘোষণার পর গ্রেট ব্রিটেন থেকে উপনিবেশগুলো বেরিয়ে এসে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পায়। প্রথম স্বাধীনতা ঘোষণাকালে ছিল ১৩টি রাষ্ট্র।
কিন্তু এই রাষ্ট্রগুলোর ঐক্য ঠিক রাখা মোটেও সহজ ছিল না। একটা না একটা ঝামেলা লেগেই থাকতো। ১৮৬১ সালের গৃহযুদ্ধে ফেডারেল বাহিনী প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের নেতৃত্বে জয়লাভ করে। তখন যুক্তরাষ্ট্র থেকে চিরতরে বিলোপ হয় দাসপ্রথা। এরই মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অভিবাসীরা এখানে এসে দেশটির কৃষি, খনিজ, অরণ্য সম্পদকে কাজে লাগিয়ে কঠোর পরিশ্রমে বিশ্বের সবচেয়ে সমৃদ্ধিশীল দেশ হিসেবে গড়ে তোলে। ১৭৮৭ সালে আসে যুক্তরাষ্ট্রের বহুল প্রতীক্ষিত সংবিধান। শুরু হয় এক নতুন সরকার পদ্ধতি, যা এখনো বিদ্যমান।
প্রয়োজনে এর ছোটখাটো পরিবর্তন-পরিবর্ধন করার অনুমতিরও ইতিহাস রয়েছে, যাকে বলে অ্যামেন্ডমেন্ট। চার বছর পর পর নভেম্বরের প্রথম মঙ্গলবার হয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। কৃষিপ্রধান সমাজে কৃষকদের সুবিধার কথা ভেবেই এটি লেখা হয়েছিল ১৮৪৫ সালে। কোনো ব্যতিক্রম ছাড়াই শতবর্ষ ধরে চলছে এ নিয়ম। ছয় বছর পর পর সিনেটরদের নির্বাচিত করা হয়। তারা জনগণের প্রতিনিধি। বিভিন্ন স্টেট বা অঙ্গরাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য তারা সংসদে যান এবং সত্যিকার অর্থেই তা করেন। এখন বিশ্বের এক নম্বর দেশের শিরোপা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের।
৫০টি অঙ্গরাজ্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র গঠিত। ‘পোর্টোরিকো’ দ্বীপটিও যুক্তরাষ্ট্রের কলোনিয়াল টেরিটরি। প্রত্যেকটি অঙ্গরাজ্য স্বায়ত্তশাসিত। শুধু মুদ্রা, দেশরক্ষা ও পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনা করে ফেডারেল সরকার। একজন জননির্বাচিত প্রেসিডেন্ট একমাত্র প্রধান নিয়ামক। তাকে কেন্দ্র করেই শাসন ক্ষমতা পরিচালিত হয়। রাষ্ট্র পরিচালনা করে দুটি সভাÑ কংগ্রেস ও সিনেট। বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশটির স্বাধীনতা দিবস আজ অনেকেরই অনুকরণীয় হচ্ছে বিভিন্ন কারণে। একজন মার্কিন নাগরিক হিসেবে মাঝে মাঝে গর্ববোধ যে করি না, তা নয়। হ্যাঁ, গর্বিত মনে হয় নিজেকে যখন দেখি মার্কিন প্রশাসন কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। কিংবা কোনো জঘন্য অপরাধীকে বাইরে থেকে ধরে এনে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছে। তবে একজন মার্কিনি হিসেবে দুঃখবোধ যে নেই, তাও কিন্তু নয়। নিজেকে খুবই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র মনে হয় যখন দেখি রক্তাক্ত মানুষের দেহের ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে মার্কিনি যুদ্ধবিমান বহর।
কিছুদিন আগে একটি ঘটনা আমাকে বেশ স্বস্তি দিয়েছে। নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে ফেডারেল কোর্টে একজন দুর্ধর্ষ সোমালিয়ান জলদস্যুর চাঞ্চল্যকর বিচার করেছেন মাননীয় বিচারক। রায়ে ওই জলদস্যুকে ৩৩ বছর ৯ মাস কারাদ- দেয়া হয়েছে। সোমালিয়ান ‘পাইরেট’ আবদুওয়ালি আবু কাদির মুসাকে সশস্ত্র প্রতিরোধের মাধ্যমে পাকড়াও করতে সক্ষম হয়েছিল মার্কিন নৌবাহিনীর কমান্ডোরা। বহুল আলোচিত এ রায়টি শোনার জন্য শতাধিক সাংবাদিক, জুরি বোর্ড এবং আক্রান্তদের আত্মীয়-স্বজন ছিলেন উদগ্রীব। অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য সেখানে উপস্থিত থাকার সার্বিক ব্যবস্থা পূর্ব থেকেই করে রেখেছিলাম। ইউএস ডিস্ট্রিক্ট জজ মিস লরেটা প্রেসকা যখন রায় পড়তে শুরু করবেন তখন ভবনে ছিল পিনপতন নীরবতা। মাননীয় বিচারক কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন বারবার। চোখের পুরু লেন্সের চশমাটি মুছতে মুছতে তিনি আক্রান্তদের বর্ণনা বাণী পড়ে শোনাচ্ছিলেন।
মাননীয় বিচারকের রায় ঘোষণার আগেই পুরো আদালত প্রাঙ্গণে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়েছিল। ২০০৯ সালের এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্রের যে জাহাজটি জলদস্যুদের দ্বারা ভারত মহাসাগরে ছিনতাই হয়েছিল তার নাবিকদের কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন সেখানে। কড়া নিরাপত্তা প্রহরায় জলদস্যু মুসা ছিল নির্বিকার। ইংরেজি না জানা এ জলদস্যুর কাছে দাঁড়িয়ে একজন দোভাষী তাকে রায় বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন।
জলদস্যুরা কিভাবে জিম্মি নাবিকদের হত্যার ভয় দেখিয়েছিল কিংবা কিভাবে তাদের শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ খুলে নিয়ে বিক্রি করার হুমকি দিয়েছিল, সে বর্ণনা ছিল রীতিমতো লোমহর্ষক। বিচারক তার মন্তব্য সমাপনীতে বলেন, বর্তমান সভ্য বিশ্বে এমন হুমকি, ভয়ভীতি কেউ দেখাতে পারে তা বিশ্বাস করা কঠিন কাজ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ এর তীব্র নিন্দা করছে এবং নিশ্চিত করতে চায়Ñ বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে এমন কোনো কর্মকা-ে লিপ্ত ব্যক্তি, গ্রুপ কিংবা সংঘবদ্ধ চক্রকে ধরে এনে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে এদের বিচার ও শাস্তি প্রদানে যুক্তরাষ্ট্র বদ্ধপরিকর।
উপস্থিত সাংবাদিক, সদস্যরা সবাই দাঁড়িয়ে এই বাণীর প্রতি সম্মান ও সংহতি প্রদর্শন করলেন। শ্রদ্ধায় আমারও মাথা নুয়ে এলো। মানবতার পক্ষে এ ধ্বনি, আমার বুকের ছাতি দ্বিগুণ করে তোলে, তা আমি ভালো করেই জানি।
আমরা জানি, যুক্তরাষ্ট্র বর্তমান সময়ে গোটা বিশ্বে একমাত্র পরাশক্তি। মহাপরাক্রমশালী এই শক্তি এখন ব্যস্ত রয়েছে বিশ্বের গণতন্ত্রের নতুন সংস্করণের কাজে। তিউনিশিয়ায় নীরব গণবিপ্লবের পর মিসরের মানুষ রুখে ওঠে। মিসরের গণমানুষের পক্ষ অবলম্বন করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, হোসনি মোবারককে সরে যেতে হবে। আঠারো দিনের মাথায় বিদায় নিতে বাধ্য হন মোবারক। গেলো কিছুদিন আগে স্টেটস অব ইউনিয়নে বারাক ওবামার ভাষণ শুনছিলাম। ওবামা তার ভাষণে বলেছিলেন, আমাদের কূটনৈতিকভাবে এ বিশ্বকে শাসন করতে হবে। কারণ অস্ত্র দিয়ে রক্তাক্ত শাসনের দিন আর নেই। নিজ অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, বিভিন্ন ইস্যুতে ওয়াশিংটনের মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের বিভিন্ন মুখপাত্রের সঙ্গে আমার কথা হয়। তাদের একটি কথা বলতে শুনেছি, ‘দেশটি যাদের সেই দেশের জনগণকেই তাদের সমস্যা সমাধানে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’ কথাগুলো খুবই প্রয়োজনীয়। দেশ যাদের, তাদেরই এগিয়ে আসতে হবে।
বিশ্বে তবে কি রাজতন্ত্রের দিন শেষ হতে চললো? এমন একটি প্রশ্ন আসছে খুব সঙ্গত কারণে। যে যুক্তরাষ্ট্র এতোদিন মধ্যপ্রাচ্যের রাজা, বাদশাহ, খলিফা, সুলতানদের অন্যতম রক্ষক ছিল, সেই যুক্তরাষ্ট্র কি তবে ক্রমশ মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে? নাকি স্বার্থের কোনো অভ্যন্তরীণ টানাপড়েন তৈরি করছে এই রাজবিমুখতা? এসব কথাবার্তাও আসছে নানা প্রাজ্ঞজনের আলোচনার টেবিলে। আবারো জ্বলে উঠেছে ইরাক। কেউ কেউ বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসা উচিত। কিন্তু তা হবে কি? একটি বিষয় লক্ষণীয়, ক’বছর আগে মিসরে যখন গণমানুষ রাজপথ দখল করে রাস্তায় দিনরাত যাপন করছিল তখন মার্কিনি যুদ্ধ জাহাজ অবস্থান নিয়েছিল কায়রোর কাছাকাছি। মুখে যতো কথাই বলা হোক না কেন, যুদ্ধাংদেহী মনোভাব দেখিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে যে রক্তাক্ত যুদ্ধ করেছে তা বিশ্ব ইতিহাসে একটি দুঃখজনক নজির। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ তার সদ্য লেখা গ্রন্থ ‘ডিসিশন পয়েন্ট’ এ সেটা স্বীকারও করে নিয়েছেন। সেই সময়ের মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডোনাল্ড রামসফেল্ড বলেছেন, যুদ্ধের সিদ্ধান্তটি সঠিক ছিল না।
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, বেনিয়াগোষ্ঠী যখন কোনো অহেতুক যুদ্ধের প্ররোচনা করে তখন এর পেছনে মতলবি কারণ নিহিত থাকে। সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধের সময় সে দেশের নিরীহ জনগণের হাতে অটোমেটিক মেশিনগান তুলে দিয়ে মার্কিন নীতিনির্ধারকরা উল্লাসের হাসি হেসেছিলেন। সেই কট্টরবাদী আফগানরাই এখন ‘তালেবান’ নাম ধারণ করে মৌলবাদী জঙ্গিতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। এর সঙ্গে মার্কিনি এজেন্ট বলে কথিত ওসামা বিন লাদেনের আল-কায়েদা গ্রুপ এখন মার্কিনি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে যত্রতত্র। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস এলেই আমরা শান্তি, সংহতির বাণী শুনি। এই বাণীর প্রয়োগ আমরা দেখছি কি?
শুরুতেই বলেছি, যে কোনো মহৎ কাজের সমর্থন দিয়ে একজন মার্কিনি হিসেবে গর্ববোধ আমিও করি। কিন্তু যখন রক্তপাতের নগ্ন উল্লাসে যুক্তরাষ্ট্র উন্মত্ত হয়ে ওঠে? না, তখন যুক্তরাষ্ট্রের হাজারও কবির পঙ্ক্তিমালার সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে বাংলা ভাষায়, নিউইয়র্ক পাবলিক লাইব্রেরির সামনে দাঁড়িয়ে আমিও উচ্চারণ করি আমার কবিতা,-
‘আরো কিছু শকুন উড়ে যাক অন্য কোন গ্রহে/
আমার হাত ধরা দু’বছরের শিশু সাহসে দাঁড়াক
এই ভূমিকুঞ্জে,/ হে মাটি- তুমি দাও প্রিয় উর্বরতা ।’
------------------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ : ০৪/জুলাই/২০১৪ শুক্রবার প্রকাশিত
©somewhere in net ltd.