নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস

এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস › বিস্তারিত পোস্টঃ

মানবাধিকারের বর্ম, বিবেকের বীজতলা

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৫ সকাল ১১:৩৩



মানবাধিকারের বর্ম, বিবেকের বীজতলা
ফকির ইলিয়াস
=======================================

বিশ্বে একটি আলোচিত বিষয় মানবাধিকার। আর এর অন্যতম মাপকাঠি তাদের হাতে, যারা বিশ্বের সুপার পাওয়ার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তা নিয়ে প্রায়ই কথা বলে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নিয়ে তাদের এই মাথাব্যথা। কিন্তু কেমন চলছে যুক্তরাষ্ট্রে মানবাধিকার? এ নিয়ে স¤প্রতি একটি প্রতিবেদন করেছে চীন। চীনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কথা বললেও নিজেদের খারাপ পরিস্থিতি নিয়ে তাদের কোনো অনুতাপ নেই। দেশটিতে মানবাধিকার পরিস্থিতির গুরুতর অবনতি হয়েছে, ওয়াশিংটন অন্যান্য দেশেও মানবাধিকারের নির্লজ্জ লঙ্ঘন ঘটাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের ক্ষেত্রে দেশটির মুখ কালি মাখানো। যে কারণে অনেকবারই লাল কার্ড দেখানো হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রকে। আগ্নেয়াস্ত্রের যথেচ্ছ ব্যবহার, একের পর এক সহিংস অপরাধ যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিক অধিকারকে হুমকির মুখে ফেলছে। যুক্তরাষ্ট্র পুলিশের অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের ফলে অনেক প্রাণহানি এবং জনরোষের ঘটনা ঘটছে।’ উদাহরণ হিসেবে সা¤প্রতিক মিসৌরির ফার্গুসন শহরে ড্যারেন উইলসন নামে এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তার গুলিতে মাইকেল ব্রাউন নামে ১৮ বছর বয়সী নিরস্ত্র এক কিশোরের মৃত্যুর পর যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি তুলে ধরেছে চীন। চীনের প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইএ) নির্বিচারে নিষ্ঠুর নির্যাতনের পথ অবলম্বন করে। টুইন টাওয়ার হামলার পর জঙ্গি সন্দেহে আটকদের জিজ্ঞাসাবাদে কিছু ‘ঘৃণ্য পদ্ধতি’ ব্যবহার হয়।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, অবিরাম পানিতে চুবিয়ে নির্যাতন করা ছাড়াও যৌন নির্যাতনের হুমকি দিয়ে, পায়ুপথে পানি ঢুকিয়ে, চড় মেরে, ঠাণ্ডার মধ্যে রেখে হেনস্তা করে এমনকি দিনের পর দিন ঘুমাতে না দিয়ে বন্দিদের জিজ্ঞাসাবাদ চলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশ ও বিচার বিভাগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মারাত্মক বর্ণবৈষম্য বিদ্যমান বলেও দাবি করা হয়েছে চীনা প্রতিবেদনে। যুক্তরাষ্ট্রে নারী ও শিশু অধিকারও পুরোপুরি সুরক্ষিত নয় দাবি করে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর পুরুষের নির্যাতনের শিকার হয় ২১ লাখ নারী। প্রতিদিন গড়ে তিনজন নারী তার পুরুষ সঙ্গীর হাতে খুন হন এবং নিপীড়নের শিকার হয়ে মারা যান চারজন নারী। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে কয়েক লাখ শিশু গৃহহীন। আরো ভয়াবহ সংবাদ আছে। স¤প্রতি ফেডারেল প্রশাসনের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯ জুন ২০১৫-এর আগ পর্যন্ত দুই বছর ৫ মাস ১৯ দিনে যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুকের গুলিতে ২৯ হাজার ৭৯৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। হতাহতের বড় একটি অংশ শিশু-কিশোর। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, উপাসনালয়, রেস্টুরেন্ট ও জনসমাগমে এসব অতর্কিত হামলা চালানো হয়েছিল। এ হিসেবে প্রতিদিন গড়ে হতাহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৩ জনেরও বেশি। সর্বশেষ বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ক্যারোলাইনায় চার্লস্টনে শত বছরের পুরনো গির্জায়। এ ঘটনায় প্রার্থনারত অবস্থায় নিহত হন নয়জন।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালে গুলিতে ১১ হাজার ৪১৯ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। নিহতদের মধ্যে ৬ হাজার ৪২০ জন ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু-কিশোর। ২০১৪ সালে বন্দুকের গুলিতে নিহত হয়েছে ১২ হাজার ৫৬১ জন। অতর্কিত গুলিতে ২২ হাজার ৯৮৮ জন আহত হয়েছে ওই বছর। নিহতদের মধ্যে ৬২৯ জনের বয়স ১১ বছরের কম। ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী ছিল ২৩৭২ জন। ওই নির্বিচারে গুলি বর্ষণের ঘটনায় নিহত হয়েছে ২৮৪ জন। এছাড়া দুর্ঘটনাক্রমে বন্দুকের গুলিতে মারা গেছেন ১৫৯৮ জন। চলতি বছরের ১৯ জুন পর্যন্ত নিহত হয়েছে পাঁচ হাজার ৮১৫ জন। এর মধ্যে ১১ বছরের কম বয়সী রয়েছে ৩১১ জন। ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী রয়েছে ১১০৮ জন। নির্বিচার গুলিবর্ষণে নিহত হয়েছেন ১৩৮ জন। এছাড়া ৯০৫ জনের প্রাণ গেছে দুর্ঘটনাক্রমে বন্দুক থেকে বেরিয়ে আসা বুলেটে।

স¤প্রতি সানফ্রান্সিসকোতে যুক্তরাষ্ট্রের সিটি মেয়রদের এক সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেন, ‘বন্দুকের গুলিতে নিহত মানুষের প্রাণ যাওয়ার পর আমরা শুধু চোখের জল ফেলি, শোক-বিবৃতি দিই। এরকম অমানবিক আচরণ রোধে প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে যে কাজটি করার আহ্বান আমি বারবার জানাচ্ছি তার প্রতি কেউ ভ্রƒক্ষেপ করছেন না।’ বলার অপেক্ষা রাখে না, পৃথিবীর মানুষ শান্তি চাইছেন। কিন্তু এর প্রক্রিয়া কী? কিভাবে আসতে পারে এই কাক্সিক্ষত শান্তি?

স¤প্রতি হোয়াইট হাউসের ইফতার পার্টিতে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আবারো সেই উষ্মা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, পিস-চ্যারিটি- ফরগিভনেস আমাদের মানবিক শক্তিকে বলীয়ান করবে। ইফতারের আগে ওবামা বলেন, রমজান মাসে মুসলমানরা তাদের ধর্মীয় চেতনার প্রতি আস্থাবোধকে উজ্জীবিত করেন। আমাদের ধর্মীয় বিশ্বাস যাই হোক, আমরা যে একই পরিবারের সদস্য ও সব মানুষ যে সমান, সেই চেতনার প্রতি অবিচল আস্থার প্রকাশ ঘটাচ্ছি। ইফতার আয়োজন বিষয়ে তিনি আরো বলেন, ‘এই উদ্যোগ এও প্রমাণ করে যে, আমেরিকা ধর্মের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। এখানে যার যা বিশ্বাস স্বাধীনভাবে তা পালন করতে পারে।’ স¤প্রতি চার্লেস্টন চার্চে বন্দুকধারীর হামলায় ৯ কৃষ্ণাঙ্গ হত্যা এবং চলতি বছরে চ্যাপেল হিলে তিন মুসলিম তরুণ হত্যার কথা উল্লেখ করে ওবামা বলেন, ‘তারা কে, দেখতে কেমন, কাকে তারা ভালোবাসেন, কিভাবে তারা প্রার্থনা করেন- এ সবের ভিত্তিতে কাউকে আক্রমণ করা যাবে না। আমেরিকান হিসেবে আমরা এটা দৃঢ়ভাবে বলতে চাই।’ যে প্রশ্নটি আসছে, তা হলো যুক্তরাষ্ট্রে কি মানবাধিকার যথাযথভাবে মানা হচ্ছে?

যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার রিপোর্টে বাংলাদেশ বিষয়ে অনেক কথাই এবারো বলা হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ব্যুরো অব ডেমোক্রেসি, হিউম্যান রাইটস এন্ড লেবারের এই বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। এতে বাংলাদেশ বিষয়ে বলা হয়, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, অনলাইন (সামাজিক গণমাধ্যম) ও গণমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ, শ্রম অধিকার ও দুর্বল কর্মপরিবেশ বাংলাদেশের মানবাধিকারের ক্ষেত্রে বড় সমস্যা। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্যাতন, সরকারি খাতে বিস্তৃত দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারী আটক, দুর্বল বিচার ব্যবস্থা এবং বিচারের পূর্বে দীর্ঘকাল আটক রাখাও বাংলাদেশের মানবাধিকারের জন্য এখনো গুরুতর সমস্যা। ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছে কর্তৃপক্ষ। রাজনৈতিক সহিংসতা ও দলীয় অন্তঃকোন্দলও বাংলাদেশের জন্য বড় সমস্যা। কিছু বেসরকারি সংগঠনের কার্যক্রমে আইনি ও অনানুষ্ঠানিক বাধা এসেছে। নারীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। বাল্যবিয়ে একটি বিদ্যমান সমস্যা। শিশুরা বাধ্য হচ্ছে কাজ করতে। বাংলাদেশ বিষয়ে ৪২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনের সারাংশে বলা হয়, সামাজিকভাবে ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও নৃতাত্তি¡ক গোষ্ঠী সহিংসতার শিকার হচ্ছে। যদিও অনেক রাজনীতিক ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দের মতে এসব ঘটনা ধর্মীয় বিশ্বাসের জন্য নয় বরং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আইনের শাসনের দুর্বলতার কারণে ব্যক্তি ও সরকারি কর্মকর্তারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করে শুধু দায়মুক্তি পাচ্ছেন না বরং সাধারণ নাগরিকদের অধিকারের দাবি করা থেকেও নিবৃত্ত করছে। স¤প্রতি বছরগুলোতে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের হাতে হত্যা, নিপীড়নের ঘটনা ঘটলেও সরকার খুব কমই তদন্তের পদক্ষেপ নিয়ে বিচারের মুখোমুখি করেছে।

এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয়। যুক্তরাষ্ট্র যখন বাংলাদেশের মানবাধিকার বিষয়ে কথা বলছে, তখন বিশ্ব শান্তি সূচক জানাচ্ছে, শান্তি সূচকে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। দ্য গ্লোবাল পিস ইনডেক্স বা বিশ্ব শান্তি সূচকের তালিকায় বাংলাদেশ ৯৮ স্থানে উঠে এসেছে। সূচকের মাঝামাঝি অবস্থানে থাকলেও প্রতিবেশী দেশ ভারত, পাকিস্তান এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। ২২টি নির্দেশিকার ওপর ভিত্তি করে ১৬২টি দেশের এই তালিকা প্রকাশ করেছে বিশ্ব শান্তি সূচক। গত আট বছর ধরে তারা নিয়মিত এই শান্তিপ্রিয় দেশের তালিকা প্রকাশ করে আসছে। বরাবরের মতো এবারো তালিকার প্রথম কুড়িটির ১৪টি হচ্ছে ইউরোপীয় দেশ। এবার বিশ্বের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে শীর্ষে রয়েছে আইসল্যান্ড। তালিকার দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে যথাক্রমে ডেনমার্ক ও অস্ট্রিয়া। এছাড়া নিউজিল্যান্ড চতুর্থ এবং সুইজারল্যান্ড রয়েছে পঞ্চম স্থানে। গত বছর থেকে জর্জিয়া, কোট ডি আইভরি ও লিবিয়ার পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। দেশগুলোর রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় সেখানে স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে। বিশ্বের সবচেয়ে কম শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে তালিকার একেবারে তলানিতে অর্থাৎ ১৬২তম স্থানে রয়েছে সিরিয়া। গত বছর এই স্থানটিতে ছিল আফগানিস্তান। একধাপ এগিয়ে আফগানিস্তান উঠে এসেছে ১৬১টিতে। আর ১৬০-এ রয়েছে দক্ষিণ সুদান। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী দুবছরে আরো ১০টি দেশ নতুন করে রাজনৈতিক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়বে। দেশগুলো হচ্ছে, জাম্বিয়া, হাইতি, আর্জেন্টিনা, চাঁদ, বসনিয়া হার্জেগোভিনা, নেপাল, বুরুন্ডি, জর্জিয়া, লাইবেরিয়া ও কাতার।

তিনটি মূল থিম- নিরাপত্তার স্তর, নিরাপদ সমাজ এবং অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সংঘাতের ব্যাপ্তি ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে বিশ্বের শান্তিপূর্ণ দেশের এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তালিকায় স্থান পাওয়া ১৬২টি দেশের জনসংখ্যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৯৯ দশমিক ৬ ভাগ। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে ভুটান। দেশটির অবস্থান তালিকার ১৬তম স্থানে। শান্তি সূচকে ৭৬ স্থানে রয়েছে নেপাল। বাংলাদেশ রয়েছে ৯৮তম অবস্থানে। এটি প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও এগিয়ে রয়েছে। তালিকায় শ্রীলঙ্কা ১০৬, ভারত ১৪৩ এবং পাকিস্তান রয়েছে ১৫৪তম স্থানে। সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে নেতৃত্বদানকারী যুক্তরাষ্ট্র নেমে গেছে তালিকার ১০১তম স্থানে।

যুক্তরাষ্ট্র বিচারবহির্ভূত হত্যার কথা বলে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে কি ‘ক্রসফায়ার’ নেই! খুব সা¤প্রতিক একটা ঘটনা উদাহরণ হিসেবে দেয়া যায়। গেল ৬ জুন ২০১৫ নিউইয়র্কের দানেমোরা কারাগার থেকে পালিয়ে যায় একাধিক খুনের দায়ে দণ্ডিত অপরাধী রিচার্ড ও ডেভিড। নিñিদ্র নিরাপত্তার ওই কারাগার থেকে কয়েদি পালানোর প্রথম ঘটনা ছিল এটি। ঘটনার পর ব্যাপক যৌথ তল্লাশি শুরু হয়। কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া দুই অপরাধীর একজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ২৬ জুন ২০১৫ শুক্রবার নিউইয়র্কের উপশহর মেলোনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে জেল পালানো রিচার্ড ম্যাটের মৃত্যু হয়। কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া দ্বিতীয় অপরাধী ডেভিড সুয়েটকে ২৮ জুন ২০১৫ রোববার গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। যুক্তরাষ্ট্রে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বিষয়ে এখানে কিছু তথ্য তুলে ধরা দরকার। ওয়াশিংটন পোস্টের বরাত দিয়ে এএফপি ও রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে অন্তত ৩৮৫ জন নিহত হয়েছেন। সে হিসাবে গড়ে প্রতিদিন দুজনেরও (২ দশমিক ৬ জন) বেশি লোক নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

এছাড়া ২০০৮ সাল থেকে শুরু করে প্রতি বছর ৪০০ জন করে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়ে আসছে। তবে মার্কিন সরকার দেশব্যাপী এর ১৭ হাজার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার বাইরে কোনো পরিসংখ্যান অনুমোদন করে না। এফবিআইয়ের হিসেব মতে, গত এক দশকে প্রতিদিন গড়ে ১.১ জন করে মানুষ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়। হতাহতের শিকার মানুষদের বয়স ১৬ থেকে ৮৩ বছর। পুলিশের দেয়া তথ্য মতে, যারা নিহত হয়েছেন তাদের মধ্যে শতকরা ৮০ জনের হাতে বন্দুক বা অন্য কোনো প্রাণঘাতী অস্ত্র ছিল। নিহতদের মধ্যে ৯২ জন মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন বলেও খবরে বলা হয়েছে। ওয়াশিংটন পোস্টের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, জনসংখ্যার বিচারে পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গরা নিহত হয়েছে অন্য সংখ্যালঘু বা শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় তিনগুণ বেশি হারে। পত্রিকাটি এ বছর যে হত্যাকাণ্ডগুলো পর্যালোচনা করেছে, তার ভিত্তিতেই এ হিসাব। বিশ্বে শান্তি ও মানবাধিকার নিয়ে আমরা যারা বড় গলায় কথা বলছি, তাদের ভেবে দেখতে হবে গোড়ায় গলদ কোথায়? মানুষের জন্য শান্তিময় বিশ্ব নির্মাণের অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে বিবেকের বীজতলা তৈরি করা। সৃজনশীলতার বাইরে দাঁড়িয়ে ব্যক্তিস্বাধীনতা কিংবা মানবাধিকার ভোগ করা যায় না। উগ্র মানসিকতা, বেলেল্লেপনা, সামাজিক অনাচার, অন্যের ধর্মীয়-ঐতিহ্যের প্রতি আঘাত করা বিবর্তনের পথ হতে পারে না। বিবেকহীন মানুষ ও জঙ্গলের প্রাণীর মাঝে তাহলে আর পার্থক্য কী? পেশিশক্তির জোরে পরের ধনে পোদ্দারি করাকে মানুষ চিহ্নায়ন করতে পারছে। পরখ করতে পারছে শান্তি ও অশান্তির পথরেখা। এই বোধোদয় আরো উজ্জ্বল হলেই মানুষ এগোতে পারবে সব সৃষ্টির দিকে।
------------------------------------------------------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ৪ জুলাই ২০১৫ প্রকাশিত

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.