![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মুজাদ্দিদে আলফে সানী ও তাঁর সংস্কার আন্দোলন
১৫৬৩ইং----১৬২৪ইং
বাদশা আকবর হতে-------জাহাঙ্গীরের শাসন আমল
#জন্ম_ও_বংশ_পরিচয়ঃ
মুজাদ্দিদে আলফে সানী (রহঃ) ১৫৬৩ খ্রীঃ মুতাবিক ৯৭১ হিঃ ১৪ই শাওয়াল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত্রে ভারতের অঙ্গরাজ্য পাঞ্জাবের সেরহিন্দ নামক স্থানে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর মূল নাম আহমদ। পিতার নাম শায়েখ আব্দুল আহাদ। পৈ্ত্রিক দিক থেক তিনি ফারুকি বংশের সাথে সংশ্লিষ্ট। আমীরুল মু'মেনীন হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) তাঁর ২৮ তম মতান্তরে ৩১ তম পূর্ব পুরুষ। ধর্মীয় পরিবেশে লালিত পালিত হওয়ার ফলে বাল্যকাল থেকেই তাঁর মাঝে বিভিন্ন ধরনের আধ্যাত্মিকতার লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়।
#শিক্ষা_জীবনঃ
প্রচলিত নিয়মানুযায়ী হিফজুল কুরআনের মাধ্যমে তাঁর জীবন শুরু হয়। প্রাথমিক শিক্ষা পিতার নিকট সমাপ্ত করার পর তিনি শিয়ালকোটে গমন করেন এবং মাওলানা শাহ কাশ্মিরী (রহঃ) থেকে দর্শন, তর্কশাস্ত্র, কালাম শাস্ত্র, ও উসুলে ফিকহের উপর গভীর পান্ডিত্য অর্জন করেন। শায়খে ইয়াকুব কাশ্মিরী (রঃ) থেকে হাদীসের জ্ঞান লাভ করেন এবং মাওঃ বাহলুল বদখশানী (রঃ) থেকে তাফসীর ও ফিকাহ শাস্ত্রের জ্ঞান লাভ করেন। মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি দ্বীনের সক্ল বিশয়ে পূর্ণ বূ্্যৎপত্তি অর্জন করেন।
#আধ্যাত্মিক সাধনাঃ
জাহেরী ইলমের পাশাপাশী তিনি ইলমে বাতেনী তথা আত্মশুদ্ধির দিকেও মনোনিবেশ করেন। প্রথমে তিনি স্বীয় পিতার নিকট চিশতিয়া ও কাদরিয়া তরীকায় আধ্যাতিক সাধনা তথা তাসাউফের চর্চা করেন। এ দুই তরিকার পূর্ণ কামালিয়্যাত অর্জন করে যথাক্রমে শাহ সিকান্দার ও শাহ কামাল থেকে খিলাফাত লাভ করেন।
১০০৭ হিজরীতে পিতার মৃত্যুর পর যখন হজ্জ্ব পাল্পনের উদ্দেশ্যে মক্কার পথে রওয়ানা হয়ে দিল্লীতে পৌছেন তখন তৎকালীন নকশবন্দীয়া তরীকার প্রধান পৃষ্টপোষক খাজা বাকী বিল্লাহ (রঃ) এর সাক্ষাৎ লাভ করেন। এই মহান বুজুর্গের নিকট নকশবন্দীয়া তরীকায় কঠোর সাধনা করার পর এক পর্যায়ে খেলাফত লাভের সৌভাগ্য অর্জন করেন। এ ভাবে মুজাদ্দিদে আলফে সানী তাসাউফের প্রতিটি অলিতে গলিতে ঘুরে তার তার প্রতিটি শাখায় পূর্ণ কামালিয়্যাত অর্জন করেন। তার প্রখর মেধা, বুদ্ধিমত্তা, ইখলাস, নিষ্ঠা ও তেজদ্বীপ্ত চেতনার পরিচয় পেয়ে হযরত খাজা বাকী বিল্লাহ এতটাই আনন্দিত হয়েছিলেন যে, তার সম্পর্কে আশাবাদ ব্যক্ত করে এক বন্ধুকে লেখা চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন যে, বর্তমানে সেরহিন্দের এক যুবক আমার দরবারে রয়েছে, তাঁর তেজদ্বীপ্ত প্রতিভা ও গুনে আমি মুগ্ধ। হয়তোবা আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর মাধ্যমে ভারতবাসীর ভাগ্যে পরিবর্তনের সুচনা করবেন।
মুজাদ্দিদে (রহঃ) এর জন্ম লগ্নে ভারতের অবস্থাঃ
ভারতীয় উপমহাদেশের দোর্দন্ড প্রতাপশালী খেয়ালী শাসক বাদশাহ আকবরের শাসনামলই (১৫৫৬খ্রী-১৬০৫খ্রী) শতাব্দীর এই মহান সংস্কারক (জন্ম ১৫৬৩খ্রীঃ-মৃত্যু ১৬২৪খ্রীঃ) ঘন আমানিশার অন্ধকারে আচ্ছন্ন ভারতে হক ও হক্কানিয়্যাতের প্রদীপ্ত মশাল নিয়ে আবির্ভূত হন। উপমহাদেশে ইসলাম ও মুসলিম উম্মার চরম দুর্দিনে এক সংকট্ময় মূহুর্তেই তাঁর জন্ম। বহু ধর্মের অনুসারীদের আবাস ভূমি এই ভারতে ক্ষমতার সিংহাসনকে নিষ্কন্টক করে তোলার জন্য প্রচলিত সকল ধর্ম-উপাদান মিশ্রিত করে এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু ধর্ম-উপাদাঙ্কে প্রাধান্য দিয়ে বাদশা আকবর তৈরী করলেন দ্বীনে ইলাহী। যার প্রভাবে ইসলামের আক্কীদা-বিশ্বাস, বিধি-বিধান, নিয়ম-নীতি, আচার-আচরণ নিক্ষেপিত হল স্বার্থের আস্তাকুঁড়ে। ইসলামী মূল্যবোধকে বলি দেয়া হল ক্ষমতালিপ্সার যুপকাষ্ঠ। ইরানী শিয়াদের প্রভাবে কুরআন সুন্নাহ ভিত্তিক শিক্ষা ধারা রূপান্তরিত হল গ্রীক-দর্শন ভিত্তিক শিক্ষা ধারায়। স্বার্থন্বেষী দরবারী আলেমরা যখন খেয়ালী সম্রাটদের তোষামোদ ও মনোরঞ্জনে লিপ্ত, সম্রাট যখন ভোগ ও বিলাস ব্যসনে মত্ত, সাধারণ নাগরিকরা যখন ইসলামের প্রকৃ্ত শিক্ষা ও আদর্শ থেকে বিচ্যুত, প্রাচ্যের বাতিল মতাদর্শ ও হিন্দুয়ানী দর্শনের মিশ্রনে ইসলামের আধ্যাত্মিকতা ধারা এক অভিনব স্রোতে প্রবাহিত, বিদ’আত ও কুসংস্কারের দাপটে সুন্নাতে নববী যখন প্রায় বিলুপ্ত, হাজার বছরের ঘুণে ধরা সমাজ ব্যবস্থার প্রভাবে মুসলিম মিল্লাতের জাতীয় চেতনা ও জিহাদী অনুপ্রেরণা যখন মৃতপ্রায়, গাফলত ও গোমরাহীর আবর্তে গোটা জাতি যখন গা ভাসিয়ে দিয়েছে, গাঢ় অমানিশার অন্ধকার ও বিভীষিকায় জাতি যখন পথহারা, রাজদন্ডের ভয়ে মানুষের উন্নতশির যখন রাজ পদতলে সিজদায় নত; এমনি এক যুগ সন্ধিক্ষনে ভারতের আকাশে সত্যের সূর্য হয়ে উদিত হয়েছিলেন মুজাদ্দিদে আলফেসানী (রঃ)।
পিতা তাঁর জন্মের পূর্বেই স্বপ্নে দেখেছিলেন, গোটা দুনিয়া গাঢ় অন্ধকারে আচ্ছন্ন। হিংস্র প্রাণীরা ছিঁড়ে কুরে ধ্বংস করছে আশরাফুল মাখলুকাত বনী-আদমকে। এহেন মূহুর্তে তাঁর বক্ষ থেকে বিচ্ছুরিত হল উজ্জল জ্যোতির্ময় এক আলো, তা থেকে বেরিয়ে এলো একটি কারুকার্য্য মন্ডিত আসন। এক সুঠামদেহী যুবক তাতে হেলান দিয়ে বসে আছে। আর তাঁরই নির্দেশে হত্যা করা হচ্ছে সকল জালিম, বিধর্মী ও ধর্মদ্রোহীতাদের। আর কে একজন ঘোষণা করছে, “সত্য সমাগত মিথ্যা অপসৃত, আর মিথ্যার পতন হবেই।”
যুগশ্রেষ্ঠ কামিল শাহ কামাল কাশ্মিরী (রহঃ) স্বপ্নের তা’বীর করেছিলেন যে, তোমার ঔরসে এমন এক সন্তান জন্মাবে; যার হাতে সব ধরণের ধর্মদোহিতা উপসংস্কারের বিলুপ্ত ঘটবে। কালে তার ঔরসে সেই কাংখিত সন্তান জন্ম গ্রহণ করে, যাকে ইতিহাস মুজাদ্দিদে আলফেসানী নামে স্বরণ করে থাকে। বহু সত্যের সাধক, আলেম উলামা ও পীর মাশায়েখের সান্নিধ্যে এসেছিলেন আহমদ সেরহিন্দ। ফলে ইসলামের প্রকৃত রূপ-সুষমা অনববী জীবনাদর্শ অনুধাবনের সৌভাগ্য হয়েছিল তাঁর, জ্ঞান ও আধ্যাত্ম সাধনার ধাপগুলো অতিক্রম করতঃ বাহ্যিক ও আত্মিক পূর্ণতা লাভের পর তিনি যখন ভারতীয় মুসলমানদের চলমান জীবন ধারার প্রতি চোখ খুলে তাকালেন; তখনই তাঁর দৃষ্টিতে গোমরাহীর দিকগুলো সুস্পষ্ট হয়ে ধরা দিল। উম্মতের কল্যাণ চিন্তা ও সঠিক ইসলামী মূল্যবোধের পূনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য উমরী শুনিত উত্তারাধিকারী এই মহান সাধকের অন্তর ব্যকুল হয়ে উঠল। অন্তরে জেগে উঠল এক
বলিষ্ঠ প্রত্যয়ী চেতনা। শুরু হল জীবনের নতুন পথে তাঁর যাত্রা।
©somewhere in net ltd.