![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
"মা তুমি যদি চলেই যাবে, তবে একা কেন গেলে? তুমি ওপারে গিয়ে জাগতিক অস্বস্তি থেকে মুক্তি পেয়েছ। কিন্তু যাবার সময় কি একবারও তোমার কলিজার টুকরাটির কথা মনে পড়েনি? তুমি কি একবারের জন্যও ভেবেছিলে, চলে তো যাচ্ছি কিন্তু আমার ময়নাটাকে কোথায় রেখে যাচ্ছি? আমার মৃত্যুর পর কে আমার সোনামনিকে ভালোবাসবে, কে তাকে বিপদের দিনে মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দিয়ে বলবে, ওরে আমার ময়না পাখি, ভাবিস না -সূর্য অস্ত যায় উদিত হবার জন্য।
.
ওমা.......মাগো.........
দেখো আজ আমার জন্য মন খারাপ করারও কেউ নেই। কেউ কখনো শুনতে চায় না - কেমন আছি আমি, আমার খাওয়া হয়েছে কিনা, তুমি নেই তাই আমার ভালো লাগা-মন্দ লাগাও যেন অপরাধ!!!!!!! জানো মা............ যত রাত বালিশে মাথা রেখেছি ততবারই পাশে তোমাকে পাওয়ার আকুল আকাঙক্ষা আমাকে তাড়া করেছে। যতবারই সকালে ঘুম থেকে উঠেছি, দু'হাত বাড়িয়ে তোমাকে জড়িয়ে আরেকটু ঘুমাবার আবদার করতে চেয়েছি। কিন্তু আজ তুমি কত দূরে......। "
.
বিড় বিড় করে একথা গুলোই বলছিল ঝুমা। হ্যাঁ, ঝুমার মা মারা গিয়েছে। ওর বয়স যখন তিন কি চার। তারপর আর কী বাবা পুনরায় বিয়ে করলেন। খুব নম্র আর নিকট আত্মীয়কে। শর্ত ছিল তার মেয়ে ঝুমাকে সে সব সময় নিজের মেয়ের মতো আদর যত্ন করবে।
প্রথম দিকটা ভালোভাবেই কেটেছিল। ধীরে ধীরে সব যেন পাল্টে যেতে লাগল। চেনা মানুষটা কেমন অচেনা হতে শুরু করল। ঝুমা তখন অনেক ছোট এত হিসাব কিতাব বুঝত না। সে মাকে মায়ের মতোই সম্মান করত। কিন্তু নিয়তির পরিহাস- সৎ কখনো আপন হয় না। দিনে দিনে ভালো ব্যবহারগুলো খারাপের দিকে মোড় নিতে শুরু করল। এরপর তা অত্যাচারে রূপ নিল। ওহ!!!.....সহ্য ক্ষমতা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আর পারা যায় না ঐটুকু ছোট্ট মেয়ে, কিইবা বা বোঝে সে। কথায় কথায় নির্যাতন। মাঝে মাঝে বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে চাইত ও। বাবার দিকে তাকিয়ে তা করা হয়নি। কিন্তু কতইবা সহ্য করা যায়। সকাল থেকে শুরু করে রাত অবধি কাজ, তারপর লেখাপড়া। ভোরে ঘুম থেকে উঠে আবারও সেই কাজ। এভাবেই কাটছিল ওর দিন গুলো। যৌবন বসে থাকে না। মনের অজান্তেই শত দুঃখ কিংবা বাঁধা বিপত্তিতেও সে ঠিকই যথাসময়ে তার উপস্থিতি জানান দেয়। তুমি আমি কিংবা আমরা কেউই এর ব্যতিক্রম নই।
একদিন পরিচয় হলো সোহাগ নামের ছেলেটির সাথে। আগে থেকেই চেনাজানা ছিল, কথা হতো না এই যা। ধীরে ধীরে ভালো লাগা তারপর তা ভালোবাসায় রূপ নিল তাদের মনের অজান্তেই। দিনের মধ্যে একটু মন খুলে দু'টো কথা ঐ সোহাগের সাথেই হতো।সারাদিনের একাকিত্ব যেন এতেই কখন মিশে যেত। যতই দুর্ব্যবহার করুক না কেন, সোহাগের সাথে দুঃখ গুলো বলতে পারলে যেন তা সুখে রূপ নিত।
S.S.C, H.S.C পাস করে ঝুমা এখন সম্মান শ্রেণীতে ভর্তি হতে চায়। কিন্তু বাঁধা আসল সৎ মায়ের পক্ষ থেকে। তার মতে, এত লেখাপড়ার দরকার কী!!!!! বাড়ি থেকে সংসার গোছানো শিখুক। সকল বাঁধা পেরিয়ে বাবাই ওকে শহরে ভর্তির ব্যবস্থা করল। কারণ বাবা হয়ত কিছু বলতে পারে না কিন্তু চোখের সামনে তার প্রথম সন্তানের উপর এত নির্যাতন পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো পিতৃ হৃদয় কি কখনো মেনে নিতে পারে? তাই দ্রুত শহরে পাঠিয়ে ঝুমাকে সৎ মায়ের এই কারাগার থেকে মুক্ত করতেই তড়িঘড়ি করে এই ব্যবস্থা করলেন তিনি। এতেই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল শাহানারা। উহ!!! তার নামটা মুখে নিতে ইচ্ছা করছিল না। ভুল করে বলেই যখন ফেললাম তখন বলি, শাহনারা হলো ঝুমার সৎ মা। নির্যাতন বন্ধ হলেও চলতে লাগল অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ। ঝুমাকে অভিশাপ দেওয়াটা যেন শাহানারার নিত্যদিনের কাজে পরিণত হলো। যেমনটা চলছিল হয়ত চলে যেত। কিন্তু এবার শাহানারা এক মদ্যপায়ী ঠিক করল ঝুমার বিয়ের জন্য। ঈদের ছুটিতে বাড়ি আসলে জোর করেই বিয়ে দিতে চাইল। ঝুমা বিপদ টের পেয়ে ধরল সোহাগের হাত ।
.
ততদিনে সোহাগও একটা চাকরি জোগাড় করে নিয়েছে। ঝুমার বাবা যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল। ভলো ছেলে বেছে নেওয়ায় মনে মনে খুশিই হলো।
দু'বছর যেভাবেই হোক কেটে গেল। দু'বছর পর এসে হঠাৎ একদিন শাহানারা তার স্বামীকে সকল সম্পত্তি তার ছেলের নামে লিখে দিতে বলল। ঝুমার বাবা কিন্তু কোনভাবেই এ প্রস্তাবে রাজি হলো না। এবার শাহানারার রাগ দেখে কে?!!!! সে হুমকি দিল - এবাড়ি হয় আমি থাকব নয়তো ঝুমা থাকবে। মোবাইলে ঝুমাকে বলল, "বাস দুর্ঘটনায় এত লোক মরে, তোর মরণ হয়না কেন? মরতেও পারিস না। তোর মুখ যেন আর কখনো দেখতে না হয়। মানুষের বাচ্চা হলে আমার সামনে আর কখনো আসিস না।"
.
মা মরা এই মেয়েটির এ দুঃখ দেখবেই বা কে? তাই গভীর রাতে মায়ের কবরের পাশে অঝোর ধারায় অশ্রু বিসর্জন দিয়ে মনের দুঃখ গুলো বলছিল। এই নির্জন রাত সাক্ষী হয়ে রবে এই নিষ্ঠুর স্মৃতির। দমকা বাতাস গাছের পাতায় পাতায় আঘাতে আঘাতে যেন ওর দুঃখের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছিল। অন্ধকার রাতের আকাশ যেন এ দুঃখে গুমরে কাঁদছিল।
হঠাৎ করেই ঘুম থেকে উঠে ঝুমার বাবা ঝুমার ঘরের দিকে পা বাড়াল। সেখানে তাকে না পেয়ে এক অজানা শঙ্কা মনের মধ্যে খোঁচাদিয়ে উঠল। দুরু দুরু বুকে বাইরে পা রাখল। এদিকে ওদিকে নানান জায়গায় খোঁজার পর শঙ্কাটা যেন বেড়ে গেল একধাপ।" ওর মাও খুব অভিমানী ছিল, তবে কী...... না না.... কী ভাবছি আমি!!!!!!!!! তা হতেই পারে না।" বাড়ির সবদিকে খোঁজার পর পিছন দিকে গিয়ে অন্ধকারে স্ত্রীর কবরের পাশে গাছের নিচে, একেবারে নিচে একটা ছায়ামূর্তি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে শঙ্কাটা এবার হৃদয়ের গভীরে রূপান্তরিত হলো অর্তনাদে। এগিয়ে গিয়ে দেখলেন অঝোরে কাঁদছে মেয়েটি। যাক এবার তাও অসহায় এ পিতৃ হৃদয়ে একটু স্বস্তির বাতাস বয়ে গেল। মেয়েটাকে বুকে জড়িয়ে নিতে আর দেরী করলেন না তিনি। অশ্রু সংবরণ করাটাও সম্ভব হলো না রাতের নিস্তব্ধ নিরবতা ভেঙে পিতা কন্যা পরস্পরকে জড়িয়ে সশব্দেই কেঁদে উঠল। কাঁদতে কাঁদতেই বললেন," কাঁদিস নারে মা, যার কেউ নেই তার আল্লাহ আছে। নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায় বিচারক।"
.
হ্যাঁ আমরাও সেই আশাতেই থাকব। তবে সে রাতের কাহিনী দেখার পর লিখতে গিয়ে দ্বিতীয় বারের মতো কাঁদতে হলো আমায়। কলম থেমে যাচ্ছে, আর পারছি না।
©somewhere in net ltd.